নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা-৬

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১২

কক্ষচ্যূত নক্ষত্রঃ
বইমেলায় গোটা মাস জুড়ে প্রতিদিন যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সে ইচ্ছে সফল হয়নি। গড়ে প্রতি তিনদিনে একদিন যাওয়া হয়েছে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যে গড়াতো। সেদিন সন্ধ্যায় জাগৃতির স্টলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে অনেক নামী দামী লেখকের বই এর তুলনায় আমার বই “গোধূলীর স্বপ্নছায়া”র বিক্রী যৎকিঞ্চিৎ হচ্ছিলো। তাই চাচ্ছিলাম সেখানে একটু দাঁড়িয়ে থেকে যদি দুই এক জনের কাছে বইটিকে প্রমোট করা যায়। এতদিনে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেছি যে বইমেলায় সাধারণতঃ তিন শ্রেণীর মানুষ যাতায়াত করে। এক, তরুণ ও যুবক শ্রেণী যারা প্রায় প্রতিদিনই সবান্ধবে বইমেলায় যায় মূলতঃ আড্ডা দিতে, ঘোরাঘুরি করতে আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্টলে থেমে থেমে একটা প্রাথমিক যাচাই করে রাখতে, পরে সে যাচাই অনুযায়ী যেন কিছু বই কিনতে পারে। দুই, অফিস ফেরতা মানুষ, তারাও দুই একজন করে বন্ধু বান্ধবী নিয়ে আসেন, আগে থেকে ঠিক করে রাখা তালিকা থেকে দুচারটে করে বই কিনে নিতে। আর তৃতীয় দলে আছে কিছু সিরিয়াস পাঠক এবং সিরিয়াস অভিভাবক। তারা আগেই ভেবে চিন্তে তালিকা করে রাখেন বইমেলা থেকে কি কি বই কিনবেন তাদের নিজেদের জন্যে এবং সন্তানদের জন্যে। তারা সাধারণতঃ আসেন কোন ছুটির দিনে কিংবা ছুটির আগের দিনটিতে। এমনই একজন সিরিয়াস পাঠকের দেখা পেয়েছিলাম বইমেলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারীতে, শনিবার ছুটির দিনে। তিনি জাগৃতির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে অনেকগুলো বই এর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর একটারও পৃষ্ঠা না উল্টিয়ে দুটো বই কিনলেন। দুটোই ছিল প্রবন্ধ জাতীয়। তাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম কবিতার প্রতি তার কোন আগ্রহ আছে কিনা। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আগে কবিতা লিখতাম, পড়তাম, আবৃত্তিও করতাম। আজ কিছুই করিনা। জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? তিনি জানালেন, তিনি আজ ‘কক্ষচ্যূত নক্ষত্র’। আমাকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন, আমি লিখি কিনা। আমি আমার কবিতার বই “গোধূলীর স্বপ্নছায়া” দেখিয়ে তাকে বললাম, এটা আমার বই। তিনি সাথে সাথে একটা পৃষ্ঠাও না উল্টিয়ে বইটা কিনে নিলেন। ধন্যবাদ, তাপস প্রামাণিক। কামনা করি আপনি দ্রুত আপন কক্ষে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করুন, কবিতা লিখুন, কবিতা পড়ুন, কবিতা আবৃত্তি করুন।

তিনি সুদূর শার্ষা, যশোর থেকে বইমেলায় আসেনঃ
মুহাম্মদ রুহুল আমীন প্রচুর কবিতা লিখেন। বাংলা কবিতা ডট কম এ লিখেন। আমিও সেখানে লিখি, সেই সূত্রে তার সাথে পরিচয় বছর দুয়েক থেকে। গত বছর বাংলা কবিতা ডট কম কর্তৃক “শতরূপে ভালোবাসা” নামে একশ’টি নির্বাচিত কবিতার একটা সংকলন বের করা হয়, প্রকাশক ছিল ‘জাগৃতি প্রকাশনী’। সেখানে আমারও দুটো কবিতা ঠাঁই পেয়েছিলো, মুহাম্মদ রুহুল আমীন এরও। তিনি সুদূর শার্ষা, যশোর থেকে বইমেলায় এসেছিলেন বই এর মোড়ক উন্মোচনের দিনে। স্বভাবে অত্যন্ত বিনয়ী এই কবি ব্যক্তিজীবনে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কবিতা লিখে চলেছেন এবং কবিতার প্রতি তার অনুরাগ অব্যাহত রেখেছেন। জীবনে যে স্ট্রাগল তিনি করেছেন, তার পরেও তার কলম থেকে এমন ফল্গুধারার মত কবিতা ঝরে, তা জেনে তার প্রতি সমীহ জাগে। এবারের বই মেলায়ও ‘কাব্য মঞ্জুষা’ নামে একটা কবিতা সংকলনের বই এ তার চারটে কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারীতে। এর আগের দিনেই তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে মোড়ক উন্মোচনের পর তিনি আমার বই দুটো সংগ্রহ করতে আমার স্টলে আসবেন। এসেছিলেনও, কিন্তু প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমার সেদিন বই মেলায় পৌঁছতে কিছুটা বিলম্ব হয়ে যায়। আমাকে না পেয়ে তিনি মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরাফিরা করে পুনরায় যখন ‘বইপত্র প্রকাশন’ এর স্টলে আসেন, ততক্ষণে আমি মেলায় প্রবেশ করেছি। কিছুক্ষণ আলাপের পর তিনি আমার বই দুটো সংগ্রহ করে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নেন। কথায় কথায় আমি তার দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার কথা জানলাম। এত কাজ করেও তিনি নিষ্ঠার সাথে কাব্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন, এটা জেনে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হ’লাম। বাংলার আনাচে কানাচে এমন কত না কোমল হৃদয়ের কবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন! কবি মুহাম্মদ রুহুল আমীন, আপনার মনের ভেতরে জমে থাকা কবিতাগুলো শতদলে বিকশিত হোক! কামনা করি, অচিরেই সেসব বই আকারে এই বইমেলাতেই আগামী বছরগুলোর কোন একটাতে আত্মপ্রকাশ করুক!

আত্মজীবনীর অনুসন্ধানেঃ
সেদিনটি ছিল ২৭শে ফেব্রুয়ারী। মেলার যবনিকাপাত হতে আর মাত্র দু’দিন বাকী। এর আগে একদিন ঝড়বৃষ্টির কারণে মেলা পন্ড হওয়ায় শেষের তিনটা দিনে মেলা শুরুর সময়টা এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল, যদিও প্রকাশকদের দাবী ছিল মেলা শেষ হওয়ার সময়টা এক ঘন্টা করে পিছিয়ে দেয়ার। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয় নি। যাক, এবারের মেলাটা ভালোয় ভালোয় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে এবং শেষের তিনদিনে প্রচুর ক্রেতা সমাগম হয়েছিলো। অন্যান্য দিনের মতই আমি আমার কবিতার বই প্রমোট করার জন্য ‘জাগৃতি’ স্টলের সামনে সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক ভদ্রলোক এলেন তার শিশুকন্যাকে সাথে নিয়ে। এটা ওটা দেখার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সেখানে কোন আত্মজীবনীর বই পাওয়া যাবে কিনা। আমি ভেবেছিলাম, তিনি হয়তো তার শিশুকন্যাকে কোন বিখ্যাত লোকের আত্মজীবনী পড়ে শোনাতে চান। তাই আমি পাল্টা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি ঠিক কার আত্মজীবনী খুঁজছেন। উনি বললেন, যেকোন আত্মজীবনী হলেই চলবে। আমি স্টলের একজন বিক্রেতার কাছে তাকে রেফার করলাম। সেলসম্যান দুটো বই তার হাতে দিলে তিনি বই দুটো খানিক নাড়াচাড়া করে দেখে ফেরত দিয়ে বললেন, “এগুলো তো আত্মজীবনী নয়, এগুলো ভ্রমণ কাহিনী। আমি চাই এমন বই যেখানে লেখক তার নিজের জীবনের কথা বলেছেন”। আমি তখন আমার “জীবনের জার্নাল” বইটার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু সেটাকে আত্মজীবনী বলার সাহস আমার ছিলনা, কারণ আমি জানি আত্মজীবনী কেবল বিখ্যাত লোকদেরই লেখা হয়ে থাকে। সেটা বাদে ছোটবেলায় আমরা সবাই কেবল স্কুলের পরীক্ষার খাতায়ই একটি চোর, ডাকাত, পথ, নদী, কলম ইত্যাদির আত্মজীবনী লিখে হাত পাকিয়েছি। তাকে শুধালাম, কোন অজানা অচেনা লেখকের আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিকথা হলে চলবে? উনি আবার সোৎসাহে জানালেন, “যেকোন আত্মজীবনী হলেই চলবে। আমি মানুষের অজানা কথা জানতে ভালবাসি”। আমি তখন তাকে একটু দূরে কিন্তু দৃষ্টিসীমার মধ্যে অবস্থিত “বইপত্র প্রকাশন” স্টলটি দেখিয়ে তাকে বললাম, ঐ স্টলে “জীবনের জার্নাল” নামে এক আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিকথার বই পাবেন, ওটা একটু দেখে যেতে পারেন। উনি আরেকটু আগ্রহ প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, বইটির লেখক কে? আমি বললাম, ‘আমি’। উনি এবারে প্রথম আমাকে আপাদমস্তক দেখে নিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার বই ঐ স্টলে, তো আপনি এখানে কী করছেন”? আমি বললাম, ‘এখানেও আমার একটা কবিতার বই বিক্রী হচ্ছে’, বলে তার হাতে আমি এক কপি “গোধূলীর স্বপ্নছায়া” দিলাম। বই এর প্রচ্ছদে তিনি আমার নাম দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারাও কবিতা লেখেন”?

ভদ্রলোক বিশেষ আগ্রহ নিয়ে আমার একটা কবিতার বইও নিলেন, “জীবনের জার্নাল”ও নিলেন। পরেরটা দেখিয়ে বললেন, ‘আমি এ ধরণের বই বেশী ভালোবাসি’। মানুষ মানুষের জীবনের গল্প শুনতে চায়। হয়তো সে গল্পে কখনো নিজের জীবনের ছোটখাট ঘটনার প্রতিফলন দেখতে পায়, হয়তো পায়না। তবুও সে সত্য গল্প শুনতে চায়। জনাব সামছুল আলম, আপনার আত্মজীবনী পড়ার স্পৃহা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। জানিনা, আমার বইটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে, তবে আগামী বইমেলাতে যদি দেখা হয়, তবে আপনার হাতে এর চেয়ে ভালো কিছু একটা তুলে দিতে পারবো বলে আশা রাখছি।

খায়রুল আহসান
ঢাকা
২০ মার্চ ২০১৬
(ইতোপূর্বে প্রকাশিত)



শার্ষা, যশোর থেকে আগত কবি মুহাম্মদ রুহুল আমীন এর সাথে....


আত্মজীবনীর ভক্ত জনাব সামছুল আলম ও তার মিষ্টি কন্যার সাথে....

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪২

শায়মা বলেছেন: তাই এ লেখাটা আগেও পড়েছিলাম মনে হচ্ছিলো।
অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, শায়মা, লেখাটা 'লাইক' করার জন্য এবং লেখাটা ভালো লাগার কথা জানানোর জন্য।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:০১

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার,অনেক বড় পোষ্ট আপনার অনেক সময় লাগলো পড়তে। খুবই ভালো লিখেছেন। আসলে পেটের ধান্ধায় ব্যস্ততার কারনে প্রায় দিনই ব্লগে ঢুকতে পারি না ঢুকলেও বিশেষ লম্বা পোষ্ট পড়া হয় না। শুধু আপনার লেখা বলেই এতসময় নিয়ে পড়লাম। ভালোই লাগলো। ভালো থাকুন এই কামনা করি । নমঃস্কার।।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক সময় ব্যয় করে আমার এই অনেক বড় পোষ্ট পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায়। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম অনেক।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৯

তার আর পর নেই… বলেছেন: আত্মজীবনী আমার ভালো লাগে না। শুধু হুমায়ূন আহমেদের নিজের কথা যেখানে যা পেয়েছি গোগ্রাসে পড়েছি। সব টুকরা টুকরো গল্প।
আপনার লেখাটা পড়তেও ভালো লেগেছে।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়তেও ভালো লেগেছে। - বেশ খুশী হবার মত এ তথ্যটুকু জানানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের পরে পরেই নিজের নামটি শুনতে খুব ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা রইলো।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: মানুষ মানুষের জীবনের গল্প শুনতে চায়। হয়তো সে গল্পে কখনো নিজের জীবনের ছোটখাট ঘটনার প্রতিফলন দেখতে পায়, হয়তো পায়না। তবুও সে সত্য গল্প শুনতে চায়।

পুরোপুরি সহমত। লেখা খুবই ভালো লেগেছে।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ, মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম। পুরোপুরি সহমত পেয়ে অনুপ্রাণিত হ'লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.