নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ কক্সবাজার

মানবধর্ম ও সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী

কালাম আজাদ কক্সবাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম কী সত্যি গণতন্ত্রবিরোধী?

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

সত্যি কি ইসলাম গণতন্ত্র বিরোধী?

মুসলিম বিশ্বের গণতন্ত্রের বড় দুর্দিন। মরুভূমির কর্কশ বালুকণায় গণতন্ত্রের প্রবাহ নিষ্প্রাণ, স্তব্ধ। কারণ কী? ইসলাম কি গণতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী? গণতন্ত্র বিরোধী? পাশ্চাত্যের কোন কোন পর্যালোচক বলেন, এজন্য ইসলামই দায়ী। ১৯৭৯ সালে লিখিত প্রবন্ধে স্টিফেন হামফ্রেজ বলেন, খ্রিষ্টধর্মে যেমন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সমাজের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ইসলামে তেমন পার্থক্য বিরাজমান নয় স্টিফেন হামফেজের মন্তব্যের ঠিক দশ বছর পরে ১৯৮৯ সালে আর্নেষ্ট গেলনার বলেছেন, খ্রিস্টধর্মে যেমন ঈশ্বর ও রাজার অধিকারের যে যুগ্ম সাম্য অবস্থা বিদ্যমান, ইসলামে তা নেই। খ্রিষ্টীয় তত্ত্বে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে রাজার যা প্রাপ্য রাজাকে দাও আর ঈশ্বরের প্রাপ্য ঈশ্বরকে দাও (Render unto caesar thing that are caesor’s and to God tnat belong to him) ইসলামে কিন্তু মুসলমানদের কাছ থেকে তার চেয়ে অনেক বেশী দাবী করা হয়েছে। ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, শাসক হবেন একজন বিশ্বাসী এবং ধর্মপ্রাণ। খেলাফতে বিশ্বাস করা হয় একজন উত্তম নাগিরক সর্বপ্রথম হবেন একজন সৎ ব্যক্তি, বিশ্বাসী, একজন নীতিনিষ্ট মুসলমান। ইসলামী রাষ্ট্রের শরীয়া হবে মৌল বিধিবিধান। শরিয়া এবং কোরআন বিশেষজ্ঞ হবেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক। সরকারী নীতি নির্ধারণে ওলেমার ভূমিকা হবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বৈধতা এবং সরকারী নীতির গ্রহণযোগ্যতার মূলে নিহিত রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন, ধর্মতত্ত্বে সঠিকভাবে ধর্মের অনুশাসন ব্যাখ্যার দক্ষতায়। এসব থেকে পাশ্চাত্যের পন্ডিতরা অনুমান করেছেন, ইসলামী ভাবধারা গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপূর্ণ অবয়র গঠনে ইসলাম হয়ে ওঠেনি সহযোগি। এসব অভিযোগ কতটা সঠিক, কতটা বাস্তব? এসব অভিযোগ বিশ্লেষন করার পূর্বে মুসলিম বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। বিশ্বের ৫৬টি রাষ্ট্রে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট। এই ৫৬টি রাষ্ট্রে কোনটিতে গণতন্ত্রের শেকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়নি। কোনটিতে সমাজ জীবনকে অন্তরঙ্গভাবে গণতন্ত্র স্পর্শ করেনি। কোথাও গণতন্ত্র সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠতে পারেনি। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর রয়েছে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য। রয়েছে জলবায়ু ও আবহাওয়া সংক্রান্ত ভিন্নমুখিতা, কুলগত বৈচিত্র্য। সম্পদের দিক থেকে কোন কোনটি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয়। কোনটি আবার দরিদ্রতম। সংস্কৃতি এবং জীবনবোধেও রয়েছে প্রচুর পার্থক্য। মিল কিন্তু এক জায়গায়। গণতন্ত্রর উৎসবে কোন মুসলিম রাষ্ট্র এখনও তেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠেনি। বলিষ্ট গণতান্ত্রিক জীবনাবোধে কোনটি এখন পর্যন্ত সিক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র তুরস্কই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কাছাকাছি এসেছে। এ সম্পর্কেও কেউ বলেন-তুরস্কের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কামাল আতাতুর্ক পাশার জন্য। তিনি সমাজ এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলামিক তত্ত্ব পরিত্যক্ত করে তুরস্ককে ইহজাগতিক ধর্ম নিরপেক্ষ একটি জাতীয় রাষ্ট্রে রুপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তুরস্কের অভিজ্ঞতার পূর্ণতা সত্ত্বেও হয়ে উঠেনি সুখকর। অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতাও তেমনি তিক্ত। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গৃহিত হয়েছে। এখনও কিন্তু বলা যাচ্ছে না এসময় দেশে গণতন্ত্র সুনিশ্চিত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত কিনা। তুরস্কে গতন্ত্রান্তিক ব্যবস্থা কার্যকারিতা ব্যাহত রয়েছে মাঝে মাঝে অভ্যুত্থানের দ্বারা। পাকিস্তানের কিন্তু স্বৈরশাসনে মাঝে মাঝে ছেদ পড়েছে গণতন্ত্রের আগমনে, খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবে। ৪১বছরের স্বাধীন বাংলাদেশ স্বৈরশাসনের সাথে সংসার করেছে ৯ বছর। আরব রাষ্ট্রগুলো মধ্যে একমাত্র লেবাননেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। খৃষ্টান ও মুসলমান জনসমষ্টি সহাবস্থানের লক্ষ্যে নিজেদের মত করে রচনা করে এক ধরণের ন্যায়ভিত্তিক গণতন্ত্র। তাও কিন্তু ঠিকলোনা। খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘকালিন গৃহযুদ্ধের কুয়াশা ঢাকা পড়েছে শ্যামল প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের চারাগাছটি। ফ্রীডম হাউজের বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৯৯০ সালে ঘোষণা করা হয় ৩৭টি মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রের মধ্যে দুটি কিছু দিনের জন্য মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেছে। গ্যামবিয়া দু বছরের জন্য এবং উত্তর সাইপ্রাস চার বছরের জন্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একমাত্র মালয়েশিয়া গণতন্ত্রের অবসর টিক রেখেছে কিন্তু গণতন্ত্রের মর্মবাণী জনগণের রাজনৈতিক জীবনে এখনও হয়নি স্পন্দিত। ইরান পরীক্ষা ও নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে ইসলামী গণতন্ত্রের নীতিকে কেন্দ্র করে । কিন্তু ইতিহাসের মহা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বর্তমানে সাম্যজ্যবাদে লোলুপদৃষ্টি পড়েছে এবং পড়ছে। এশিয়ার এ পাঁচটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের হাওয়া কতটুকু বেগবর্তী হয় তা এখনও অনিশ্চিত। তাই হাজারো মনে অসংখ্য প্রশ্নঃ কেন এমনটি হচ্ছে? ইসলামে এমন কি আছে যা গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় হতে দিচ্ছেনা? কেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের প্রবাহে আবেগসিক্ত হয়ে উঠছে না? এর উত্তর সহজ নয়। উত্তর দেবার লক্ষে এ লেখা নয়। এ সম্পর্কে সমাজ বিজ্ঞানীদেরকে ভাবিয়ে তোলায় এর প্রধান উদ্দেশ্য। সত্যি কি ইসলাম গণতন্ত্র বিরোধী? গণতন্ত্রের অবশ্য রকমফের রয়েছে। রয়েছে এর বিভিন্নতা। কিন্তু সব ধরণের গণতন্ত্রের কয়েকটি শর্ত অবশ্য পালিত হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতায় উৎস যে জনগণ এবং জনগণের সম্মতি সাপেক্ষেই যে বৈধ সরকার পরিচালিত তা গণতন্ত্রের সব ধারায় স্বীকৃত ও পূর্বশর্ত। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, সরকারের দায়িত্বশীলতা আইনের শাসন গণতন্ত্রের মৌল বক্তব্য। এদিক থেকে বিচার করলে ইসলামী দর্শনের যে ছবি পরিস্ফুট হয়ে উঠে, তা কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। আর্নেষ্ট গেলনার নিজেই একসময় বলে ফেলেছেন যে, ইসলামের উন্নত মানের সংস্কৃতি অনেক দিক থেকেই বিশিষ্ট। একত্ববাদ, নৈতিকতাভিত্তিক শাসন প্রশাসন, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ধর্মের প্রতি অগাঢ় বিশ্বাস, নীতিনিষ্ঠতা, স্বরভেদ ও কারো মাধ্যমে চলার প্রতি অনীহা, অতিপ্রাকৃতের প্রতি উদাসীন্য-সবই আধুনিকতা বা আধুনিকী করণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সংগতি সম্পন্ন। কিন্তু বাস্তবে অবস্থাটা ভিন্ন কেন? পাশ্চাত্যের গবেষকেরা এ ক্ষেত্রে একটি মস্ত বড় ভূল করেছেন বলে আমার মনে হয়। তাঁরা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়েছে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে রচনা করে ধর্ম। তার শর্ত নির্ধারণ করে ধর্ম। কোন সমাজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি হবে না, হলে গণতন্ত্র স্থিতিশীল হবে কি না, তার মুখ্যনির্ধারক আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, আত্মশাসন ও মননশীলতায় বৃহত্তর ক্ষেত্র, অগ্রগতির মাত্রা এবং সব কিছুকে চাপিয়ে সমাজ জীবনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। মুসলিম সমাজে সংস্কৃতির নির্ধারণে এবং সাংস্কৃতিক জীবনের মানান্নোয়নে ইসলাম অবশ্যই এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে, কিন্তু আর্থ সামাজিক পরিবেশ বিনির্মাণে ধর্ম ছাড়াও রয়েছে অনেক উপদান। আভ্যন্তরীন সংকট,অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আধুনিক চিন্তাভাবনার প্রসার, এমনকি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষনও এ ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাই শুধু ইসলামের দোহাই দিয়ে মুসলিম বিশ্বের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ব্যাখ্যা করা যথার্থ নয়। ইসলামের অনেক ক্ষেত্রে গণন্ত্রকে পরিপুষ্ঠ করতে পারে ব্যক্তিস্বতন্ত্র, নীতি নিষ্ঠতা, একত্ববাদে বিশ্বাস, সাম্য এবং মৈত্রীর বিশ্ব জোড়া আহ্বানের মতো ইসলামী মূল্যবোধ গণতন্ত্রের আদর্শকে আরো অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে। তাই স্বৈরতন্ত্রের সাথে ইসলামের আদর্শকে একসাথে ভাবা যথার্থ নয়। পাশ্চ্যত্যের পন্ডিতগণ আরও একটি ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। তাদের ধারনা-মুসলমান মানেই মৌলবাদী। অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যাবে, খৃস্টানেরাই প্রথম মৌলবাদী শব্দটি আত্মপ্রচার করেন এবং মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আসছেন যা সকলেই অজানা নয়। ইসলাম অনেকটা মুক্ত চেতনার ধর্ম। বিবেক জাগ্রত রেখে ধর্মাচরণের বিশ্বাস সবাইকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হবার নৈতিকতা। কোন সংকীর্ণ গহ্বরে মুখ লুকিয়ে নিজেদের সবকিছুকে শ্রেষ্ঠতম ভাবার ধর্ম ইসলাম নয়। অতীত চার্চের একাধিপত্যের যুগে মানব সন্তান যে ভাবে ধর্মের নামে বদলী হয়েছে ইসলাম তা সমর্থন করেনা। মুসলিম বিশ্বে যা ঘটেছে তার পর্যালোচনা করলে এটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে এখানে গণতন্ত্র বিধ্বস্ত হয়েছে প্রধানত সেনা নায়কের দ্বারা। এখানে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি প্রধানত বংশানুক্রমিক রাজা-বাদশাহদের কারণে। ইসলাম এ জন্য কতটুকু দায়ী? বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়। জনসমষ্টির শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলিম ঐতিহ্য আদর্শ এবং প্রতিষ্ঠান দৈনন্দিক জীবনের অংশ। অনেকের নিকট একমাত্র সামাজিক সত্ত্বা ও সচেতনতার মূর্ত রূপও। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুসলমানরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে দ্বিধা করেননি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সর্বাত্মক ত্যাগের বিনিময়ে তুলে এনেছে স্বাধীনতার লাল গোলাপ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে লাল সবুজের পতাকায়। স্বাধীন বাংলাদেশে মুসলমানরা গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেই শুরু করেছিল সগর্বে রাজনৈতিক অভিযাত্রা। গণতন্ত্র সুষম আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় কার্যকর হয়। মননশীলতার উচ্চ পর্যায়ে সজ্ঞান উদ্যোগে গণতন্ত্র বিকশিত হয়। উন্নত রাজনীতিক সৃষ্টি এবং এ ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিবন্ধক নয়, নয় কোন বাধা বরং স্বৈরচারের বিরুদ্ধে ইসলামই উৎসাহ যোগায়। সত্যি বটে, মুসলিম বিশ্ব এখন পর্যন্ত উন্নতি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুকরণের স্পন্দিত। তাই মুসলিম বিশ্ব গণতন্ত্রের সংগ্রামে এত পেছনে যেমন রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার ক্যাথলিক বিশ্বের একাংশ।

আসুন আমরা গণতন্ত্রকে পুর্ণজীবিত করে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করি এবং গণতান্ত্রিক জাগিয়ে তুলে সুন্দর ও সাবলিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.