নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ কক্সবাজার

মানবধর্ম ও সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী

কালাম আজাদ কক্সবাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দলবাজী

১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৫



ভিশন কিন্তু আদর্শ শিক্ষক হবার। কলেজে পর্দাপনের পর ওই শিক্ষকের প্রতি তার আর বিশ¡াস ভক্তি শ্রদ্ধা থাকেনা। আজাদ ভাবে ওই অংকের স্যার তাকে ঠকিয়েছে। যেসব ছাত্র স্যারের কাছে কোচিং করেছে তিনি তাদেরকে অধিক সহযোগীতা করেছেন। ক−াসে উজাড় করে তিনি অংক শিক্ষা দেননি। ওই স্যারকে আর ভাল লাগেনা। স্কুল জীবন শেষে কলেজে পর্দাপনের পর একজন অধ্যাপক তার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠে। কিন্তু সে যখন খুব কাছ থেকে দেখে ওই অধ্যাপক রাতের অন্ধকারে জুয়ার আসর, নেশা আর দলবাজী নিয়ে মহাব্যস্ত। আজাদ তাকে ঘৃনা করে। বাবাকে আদর্শ মানলে জেনারেশনকে কষ্ট পেতে হবে। কারন বাবার সততার কারনেই তাদের সংসারে অসচ্ছলতা। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে বড় হতে হয়েছে। তারপরও বাবা তার শেষ ঠিকানা। অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের অধিকারি বাবার কর্ম তাকে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে পথ শেখায়। কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সৎনিষ্ঠাবান একজন সহজ সরল ব্যক্তি বাবা । স্থির করে বাবাকে আদর্শ মেনেই বেঁচে থাকবে সে। কখনো দূনীতিতে জড়াবেনা, কাউকে ঠকাবেনা এটা বাবার কাছে তার শিক্ষা । এ শিক্ষা জীবনে কখনোই লংঘন করবেনা আজাদ। স্কুল জীবনের সহপাঠি রায়হানের কথা তার মনে পড়ে। কিছুদিন হলো এক সকালে লালদিঘির পাড়ের এক চা দোকানের সামনে রায়হানকে আজাদ-

কিরে ভাল আছিস।

কিছুটা বিব্রত হয়ে মাথা নেড়ে রায়হান, হ্যাঁ। আর কোন কথা না বলে তড়িঘড়ি করে মটর সাইকেল হাঁকিয়ে স্থান ত্যাগ করে। আজাদ, হা করে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখে। রায়হানের আচরন খুব ব্যথিত করে তাকে। ক−াসের পেছনের বেঞ্চে বসে থাকা স্যারদের অপদার্থ ছাত্রটি রায়হান। স্কুলের গন্ডি পার না হওয়া ছেলেটি এখন এলাকার সবার পরিচিত টাইগার । সমাজে তার ক্ষমতা অনেক, মানুষ তাকে ভয় করে। বয়সে বড়রা তাকে পথে ঘাটে দেখলেই বিনয়ের সহিত সালাম জানায়। এসব রাজনীতির কথা। রাজনীতি করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। আজাদ এক সময় রাজনীতি পছন্দ করতো, এক সময় জড়িয়েও পড়েছিল। সে বদনাম থেকে এখনো রেহাই পায়নি আজাদ। কিন্তু বর্তমানে লূম্পেন পুজিঁবাদী আর সাম্রাজবাদী রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড দেখে রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ছেড়ে দিয়ে মুক্ত চিন্তার মানুষ ও দলিত মানুষের পক্ষে কাজ করতে আগ্রহী। তাই আজাদ এখন রাজনীতি বোঝেনা, বুঝতে চায়না। এ সব নিয়ে ভাবতে তার ভাল লাগেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিস ফিস করে বলে হায়রে ক্ষমতা হায়রে দলবাজী ধীক্তোরে।

বিকেল শেষে এখন সন্ধ্যাবেলা, কোথাও যেতে ভাল লাগছেনা। একাকী ঘরের বারান্দায় পায়চারী করছে আজাদ। বেকারত্ব জীবনাটাকে মনে হয় খুব বেশী অভিশপ্ত । একটা চাকুরীর জন্য চেষ্টা কম হয়নি, তবুও সোনার হরিন চাকুরীটা অধরা থেকে যায়।

একটি কোম্পানীতে ক'দিন চাকুরীর ত্যক্ত অভিজ্ঞতা এখনো তাকে পীড়া দেয়। চাকুরীটি ছেড়ে দিয়ে বাড়ী আসার পর বাবা ছেলের মুখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলেন,- বাবা তুই চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিস।" এ প্রশ্নের উত্তর সে দিন মেনে নেয়নি বাবা। কোন ভাবেই বোঝানো গেলনা তিন মাসের চাকুরী জীবনের নানান প্রতিকূলতা। উচ পদস্থ কর্মকর্তাদের গালমন্দ আর প্রতিদিনের অপমান। ধৈর্যচুতি শেষে মার্কেটিং এর শখের চাকুরী ইতিটানা। বিশাল আকাশের মতো বাবার সেই অসহায় মুখখানি এখনো ভেসে উঠছে চোখের সামনে। দৃষ্টি যায় বহুদূরের ওই কুয়াশায়। এসব ভাবতে আর ভাল লাগেনা। বিষন্ন মন, রাতের অন্ধকারের মতো অজস্র হতাশা, ভালো লাগছেনা কিছু। শরীরটা লেপে দেয় বিছানায়। জীবনের মতো শরীরটাও যেন বড্ড বেশী ক্লান্ত। দীর্ঘক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ, ঘুমাবার বৃথা চেষ্টা। হঠাৎ কানে লাগে দূর থেকে ভেসে আসে গানের সুর। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি.....। গানের শব্দে সতব্দতা দূর হয়। দৃষ্টি যায় দেয়ালে টাঙানো ঘড়িতে। ঘড়ির কাটা ছুইছে বারোই। একটু পরেই উদ্যাপিত হবে মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সহ বিভিন্ন সংগঠনের অজস্র মানুষ ছুটে আসবে। প্রভাতফেরী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিল, দিনব্যাপি নানান আয়োজন। বিছানা ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবে ১৫কোটি মানুষের কথা। এই রাতে ক'জন যাবেন শহীদ মিনারে। আমরা কি রক্তে কেনা মায়ের ভাষাটির সঠিক প্রয়োগ আদৌ করছি, করতে পারছি? মগজে লোমেলো নানান প্রশ্ন বিদ্ধ হয়। মন টানছেনা মিনারে। বন্ধুদের অনেকই মিনারে আসবে না। রাতে শহীদ মিনার আসা নিয়ে তাদের একটুও আগ্রহ দেখা যায়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক ভালবাসা দিবস নিয়ে তাদের যতটা উচ্ছাস দেখা গেছে তার বিন্দুও না। সকালে খুব আগ্রহ নিয়ে অনিক নামের এক বন্ধু রাতে শহীদ মিনার আসার কথা জিজ্ঞেস করতেই-

রাখ তোর শহীদ মিনার। এসব পালন করবে স্কুল ছাত্রছাত্রীরা। শহীদ মিনার যেয়ে কি লাভ হবে।

-লাভ মানে, এখানে আবার লাভের হিসেব কেন,

-হ্যাঁ আছে। লাভ আছে বলেই-তো রাজনৈতিক দলের নেতারা শহীদ মিনারে মারামারিতে লিপ্ত হয়। ফুলের ঢালা ছুড়ে মারে।

-সেটা ভিন্ন জিনিস, দলবাজি, আধিপাত্য বিসতারের নামে নোংরা রাজনীতি।

অনিকের সাথে কথা বলে কি যেন কাজ করার এক ফাঁকে রাসেল হন্তদন্ত হয়ে বলে-

-দোসত, এ বয়সে এসব বাদ দে। টাকা- রোজগারের কথা বল, জগত সংসারে টাকাই সব।

বন্ধুর উপদেশ নীরবে হজম করে আজাদ।

সকালেই শহীদ মিনার যাওয়ার আগ্রহ হারিয়েছে আজাদ। ভাবনার রাজ্যে ভেসে ওঠে বন্ধুদের কথা। রাসেলের কথাই সত্য, জগতে টাকাই সব। টাকা হলেই এ অসম্ভবের দেশে সব সম্ভব। রাতের আঁধারীর মতো নিজেকে ঘোর কালো অন্ধকার মনে হয়। চারদিক থেকে ভেসে আসছে মাটির গানের হৃদয় কাাঁপানো মায়াবী সুর। ভেসে আসা সুরের সাথে নিজের কন্ঠ মিলিয়ে বিড় বিড় করে উচ্চসিত হৃদয়ে গেয়ে উঠে আজাদ, আমার রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি.... এবং সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরনে...। এসব গানের সুরের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বিড় বিড় করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় তার কোন খবর নেই। চোখ খাটা মাত্রই স্বপ্ন দেখে- বাহিরে যেন মিছিল হচ্ছে বজ্র কঠিন অধিকার আদায়ের মিছিল। মিছিলকারীদের তীব্র গর্জনে প্রকম্পিত আকাশ বাতাস। শ্লোগানে শ্লোগানে কেঁপে উঠছে বিদ্রোহী বাংলা। তোমার ভাষা আমার ভাষা বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা ..। রাষ্ট্রভাষা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই। নানান শ্লোগানে গর্জে উঠছে সবাই। মিছিলে ঘাতকের ব্রাশ ফায়ার, বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত রাজপথ, তবুও মিছিল সামনে এগিয়ে যায়। জানলার বাহিরে তাকায় আজাদ, বাহিরে, কোথাও মিছিলের শব্দ নেই। এটা তার ভাবনার রাজ্যে ভেসে উঠা মিছিল। জন্ম তার বায়ান্ন একাত্তরের অনেক পরে। কিন্তু কেন সে ভাবছে ওসব। দুচোখ ভরে ওঠে নোনা জলে। ছায়ার মতো পাশে থাকা কে যেন বলে উঠে- তারুণ্যের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হে তরুœন, এসো অধিকার আদায়ের শ্লোগানে, সত্যের আহবানে, এসো রাজপথে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাধক এর বিরুদ্ধে শ্লোগান ধরি বজ্র কঠিন, স্বাধীনতার সুফল ছড়িয়ে দেবার শ্লোগান। বাায়ান্ন একাত্তর নব্বই এর চেতনায়, মিছিলের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে দিই বাংলার সর্বত্র। টেকনাফ থেকে তেতুলীয়া, রুপসা থেকে পাথুরীয়া, যৌবনের জাগরনে, বিক্ষোভে ফেটে পড়ি সবাই। মিছিলের ওপর হয়ে যাক আরেকটা ব্রাশ ফায়ার, আবার রক্তে রঙিন হোক পিচঢালা কালো রাজপথ, ইতিহাস হবে চিরচেনা। আজাদ আর ঘরে বসে থাকতে পারেনা। মিছিলে যেতে ইচ্ছে করছে খুব। সুখী সমৃদ্ব দেশ গড়ার প্রত্যয়ে। স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে দেওয়ার শপথে। আজাদ ছুটে যায় মিনারে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে মিনার। অশ্রুসিক্ত নয়নে পরখ করে আজাদ। শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় নীরবে ক’ফোটা চোখের জল বিসর্জন। অভিমান ভাঙ্গে মাটির গানের সুরের মূর্চনায়। বিষাদের যন্ত্রণা যেন চোখের জলে নির্গত হয়। নিজের প্রতি সকল ক্ষোভ অভিমান ভুলে নব উদ্দীপনায় নব শপথে মেতে উঠে প্রাণ। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে হবে। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৈরী করতে হবে নিজেকে। শত সহস্র প্রতিকূলতায়ও বাচঁতে হবে নিজের জন্য দেশ মাতৃকার জন্য। কিন্তু পথে দেখা হয় দু:গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। এর পর থেকে আজাদ তেমন একটা যায়না শহীদ মিনারে। তবু সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে যেতে হয় শহীদ মিনারে। এক দিন দলিত মানুষের পক্ষে মিছিল ও শহীদ মিনারে অবস্থান করতে গিয়ে...

লেখক- কবি ও সংবাদকর্মী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.