নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ কক্সবাজার

মানবধর্ম ও সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী

কালাম আজাদ কক্সবাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষাসংগ্রামী ও লণ্ডনে স্বাধীন বাঙলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী ডা. এমবি জামান

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

ডা. এমবি জামান। পারিবারিক ও সার্টিফিকেট নাম মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। ১৯৪৮ সাল থেকে একুশ শতাব্দীর প্রথম দশক সাল পর্যন্ত বাংলায় যত ধরনের কক্স রাজনৈতিক ও বিভিন্ন আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে তার অন্যতম পূরোধা হিসেবে স্বীকৃত। পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ। জন্ম ১৯৩০। রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের আহমদ আলী মাতব্বর ও মছুদা বেগমের সন্তান তিনি। সাত ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। যথারীতি পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করলে পড়ালেখার স্বার্থে ঈদগাঁও কালিরছড়াস্থ নানা খলিলুর রহমান মুন্সির বাড়িতে শৈশব উত্তীর্ণ করেন।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদ করায় এবং ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদ ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) লেকচারার ফরিদ আহমদকে ডেকে সতর্ক করে দিলে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন।
সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফাদানকারী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে এ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থানগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের মহকুমা কক্সবাজারের রামুতেও এ খরবটি পৌঁছে। অনেক আগে থেকেই তথা খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আবদুল মজিদ সিকদার, মাওলানা মজহেরুল হক চৌধুরী, রাস মোহন বড়–য়ার বদৌলতে রাজনৈতিক দিক থেকে রামুর পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কক্সবাজারে ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। ওই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন মো. বদরুজ্জামান। তিনি বরাবরই শ্রেণির প্রথম হতেন। সেই হিসাবে বিদ্যালয়ের অধিনায়ক তথা ছাত্র মনিটরের ভিপি। তার নেতৃত্বে তৎক্ষনাৎ ক্লাস বর্জন করে মিছিল বের হয়ে রামু চৌমুহনীতে মিলিত হন। এ দিকে বড় ভাইদের মিছিলে অংশগ্রহণ দেখে রামু সেন্ট্রাল প্রাইমারী স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী, মোশতাক আহমদ (প্রফেসর), ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী (১৯৩৭-২০১০) প্রমুখ মিছিলে যোগ দেন। মিছিল পরবর্তী সময়ে চৌমুহনীতে এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বক্তব্য রাখেন মো. বদরুজ্জামান (১৯৩০-২০০৮), নবম শ্রেণির ছাত্র ওবায়দুল হক (১৯৩২-২০১২; যিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা থেকে মুসলিম লীগের প্রার্থী কবির আহমদ চৌধুরীর একজন ক্ষুদে কর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন), রসিক চন্দ্র বড়–য়া, ৮ম শ্রেণির ছাত্র নুরুল ইসলাম হেলালী (পরবর্তীতে অধ্যাপক, বর্তমানে বাংলাদেশ লেখক শিবির-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি), জাকের আহমদ (গর্জনিয়া) প্রমুখ। ওই সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমরণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে (ওই সময় কক্সবাজার জেলায় কোনো কলেজ ছিলো না)।
ওই কলেজে পড়াকালিন সময়ে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির অধিকার হরণের চুড়ান্ত অপচেষ্টাস্বরূপ গঠিত মূলনীতি কমিটি (Bacic Principle committe) বিরোধী আন্দোন। এ আন্দোলনে তিনিও শরীক হন। ১৯৫১ সালে সাফল্যের সাথে আই এস সি পাশ করেন এবং হাজী মহম্মদ মহসিন বৃত্তি লাভ করে। আই এ পাশের পর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এ কলেজে অধ্যয়ন কালে ১৯৫২ সালে সংঘটিত হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিটিং ও মিছিল। ১৯৪৮ সালে রামুতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বাকারী মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ওই সব মিছিল ও সমাবেশে মেডিকেলের একজন ছাত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পরে এমবিবিএস পাশের পর চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন এবং অল্পদিনেই শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যা- এডিনবরা ইউনিভার্সিটি (ভিটিএম এন্ড এইচ) ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বাঙলার আকাশে সংঘটিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধে এডিনবরা ইউনিভার্সিটির প্রবাসী বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করে ডা. এএফএম তালুকদার, ডা, এ হোছাইন, জাফর উল্লাহ, জাহেদুল হক, ডা. মোহাম্মদ শরীফসহ মুক্তিকামী প্রবাসী বাঙালি নিয়ে ‘এ্যাকশন কমিটি ফর অব পিপলস রিপাবলিক বাঙলাদেশ ইন ইউকে’ নামে এ্যাকশন কমিটি করে বিশ্ব নেতাদের নিকট প্রতিবাদ প্রেরণ, প্রতিবাদ মিছিল, স্বাধীন বাঙলাদেশর পতাকা প্রণয়ন ও উত্তোলন, তহবিল গঠন, মুক্তিযুদ্ধের জন্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রি প্রেরণ, ভিজিলেন্স টিম গঠনে নেতৃত্বে দেন। গ্লাসগো, অ্যাবাডিন, ম্যানচেষ্টার প্রভৃতি নগরীতে জনসভা করে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্বুব্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও পাকিস্তানের প্রতি চাপ সৃষ্টির প্রয়াস চালান। ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির ডেভিড হিউম হলের দেশি বিদেশী ছাত্রদের নিয়ে মিছিল মিটিং করেন। পরে ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন সভাপতি (নামটি অজ্ঞাত) কে সভাপতি এবং ডা. এমবি জামানকে সদস্য সচিব করে ‘বাঙলাদেশ সাহায্য ও সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি মিউজ্যিকাল নাইট, বাংলাদেশ ইভনিং নামক শো করে তহবিল সংগ্রহ করেন । তহবিলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বৃটিশ কমন্স ভার এমপি ডেভিড স্টোনহাউস। ওই তহবিলের অর্থ এ্যাকশন কমিটির জাফর উল্লাহস চার সদস্যের কমিটির মাধ্যমে ভারত হয়ে বাংলঅদেশে ওয়াকিটকি, কাপড়, ঔষুধ টাকা ইত্যাদি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক রেডক্রস ওয়্যার অন ওয়ান্ট, ওয়াক্সফামসহ নানা সংস্থা, ধন্যাঢ্য ব্যক্তি, বাণ্যিজিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সংগ্রহ মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করা হয়।
১৯৭৩ সালে তিনি বালাদেশে বাংলাদেশে ফিরে জামাল খান রোডে সাপ্তাহিক ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হন। এ থেকে ২০০৮ সালে আমৃত্য তিনি এ পেশায় জড়িত ছিলেন। মাঝে বেশকিছু দিন অসুস্থ থাকায় অবসর জীবন যাপনও করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম পল্টর রোডস্থ জামাল ভিলায় মৃত্যুবরণ করেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশে সংঘটিত সবকটি আন্দোলনে জড়িত থেকে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকলো এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি তাকে। এ দায় কাদের, আমাদের নাকি রাষ্ট্রের। যে ব্যক্তি জীবনের ঝুকি নিয়ে ইংল্যা-ের অলিগলি ঘুরে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্বুব্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও পাকিস্তানের প্রতি চাপ সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছেন তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে না পারার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও পরিবারের সদস্যরাও এ দায় এড়িয়ে পারি না। পারি না আমরাও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.