নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ কক্সবাজার

মানবধর্ম ও সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী

কালাম আজাদ কক্সবাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদ ফরহাদ হত্যাকাণ্ড, মামলা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়

২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ ফরহাদ। আসল নাম ফরহাদউদ্দৌল্লাহ মোহাম্মদ এজহারুল ইসলাম। বাবা খান সাহেব রফিক আহমদ চৌধুরী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি কনজারভেটর অফ ফরেস্ট। জেঠা-সাবেক এমএলএ খানব বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী। মা শামসুন নাহার গৃহিণী। ফরহাদের জন্ম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল, পিতার চাকরির সুবাদে রাঙ্গামাটিতে। ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে ফরহাদ ৬ষ্ঠ। ফরহাদদের গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি গ্রামের উজির বাড়ি, অধুনা খান বাহাদুর বাড়ি। ফরহাদ ১৯৬২ সালে বৈলছড়ি নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলেজ জীবন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে রাজনীতি জড়িত হন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বি.এ.পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই ফরহাদ খেলাধুলায় উৎসাহী উদ্যমী ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে ইউএসটিসির ক্যাডেট হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান যান। ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি স্বৈরাচার বিরোধী, ছয় দফা আন্দোলন এবং গণঅভূত্থ্যানের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে রাজরোষের শিকারও হন তিনি।একাত্তরের যুদ্ধের সময় ইতিহাস বিভাগের এমএ ফাইনাল পরীক্ষার্র্থী। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের অন্য সবার মত ফরহাদও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে শহরে চলে আসেন তার বোন জামাই বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগ নেতা ডা. একে আবু জাফরের দেব পাহাড়ের বাসায় এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন আলাওল হলের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পাকিস্তানীদের দখলে চলে যাবার পর রনাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম শহরে এবং হাটহাজারী এলাকায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং কোনো কোনো সময় ইপিআরদের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইউটিসি ক্যাপ্টেন ফরহাদ চট্টগ্রাম শহরে যুদ্ধ করা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের শিয়ালডুক্কা ডাক বাংলো হতে পাকিস্তান সরকারের পদলেহী কর্মচারী লে. কর্নেল আব্দুল আজিজ শেঠ, মেজর ইকবাল ও আরও ১১ জন হানাদার বাহিনীর অফিসারকে বন্দী করে। বন্দিরা পাকিস্তান সরকারের পদলেহী কর্মচারী ও কনভেনশন মুসলিম লীগের কর্মকতা ছিলেন। তারা পাকিস্তানে আশ্রিত মিজো গেরিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রাঙামাটি যাচ্ছিলেন। ক্যাপ্টেন ফরহাদ ইপিআর এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন বাঙালি সদস্য নিয়ে তাদের ঘেরাওপূর্বক গ্রেফতার করে রামগড়স্থ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে প্রেরণ করে। চট্টগ্রাম শহর এবং কালুরঘাট এলাকা শত্র“ কবলিত হওয়ার পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কৌশলগত কারণে স্বাধীনতাসংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণপূর্বক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫ এপ্রিল হতে ফরহাদ কক্সবাজার চলে আসেন। কক্সবাজার এবং আরাকান সড়কের পাহাড়ী এলেকায় দুইশত ই,পি,আর ও মুক্তিসংগ্রামীদের সংঘবদ্ধ করে গেরিলা পদ্ধতিতে প্রতিরোধ বুহ্য রচনা করে যা স্থানীয় পাকিস্তান পন্থীদের আঁতে ঘা লাগে। কতিপয় দৃস্কৃতকারী আ’লীগ নেতার সহায়তায় কক্সবাজার শান্তি কমিটির সভাপতি এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকে সালামত উল্লাহ,এম এ ছালাম প্রকাশ সালাম মিয়া, ঝিলংজা ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আবু বকর ছিদ্দিক, এডভোকেট বদিউল আলম, নাজির মকবুল আহমদ, বড় বাজারের আবদুর রহিম মাস্টার, আনসার কমাণ্ডার আবু তাহের চৌধুরী, সুলতান আহমদ খান, আবদুল আজিজ, প্রমুখ স্বাধীনতা বিরোধিদের সহায়তায় সরকারি উচ্চ পদস্ত এসডিও সাহেদসাদ উল্লাহ, এসডিপিও এ এম ও আর খান, এসডিও টু আইসি দারেগা আবু শহীদ চৌধুরী, কক্সবাজার সদর থানার ওসি মইজ উদ্দিন আহমদ, এ এস আই আজিজ আহমদ এবং মুসলিম লীগের সমর্থকরা মিলে মুক্তিসংগ্রামীদের ধরিয়ে পাক বাহিনীকে ধরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে এবং পাক বাহিনীকে কক্সবাজারে আসার আমন্ত্রণ এবং কক্সবাজারকে পাক বাহিনীর হাতে তোলে দেয়ার চক্রান্ত করে গোপন সভার মাধ্যমে। কিন্তু শহীদ ফরহাদও অন্যান্য সংগ্রামীদের উপস্থিতি তাদের হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্বাধীনতাবিরোধিরা নেতৃস্থানীয় মুক্তিসংগ্রামীদেরকে পুলিশ ও আনসারদের সহায়তায় বন্দি করার পরিকল্পনা করে। যা এসডিপিএর letter memo No . 833 dt 24 . 4. 71প্রমাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহনযোগ্য।ইউটিসি ক্যাপ্টেন ফরহাদ কালুরঘাট পতনের হারবাং এবং আরাকান সড়কের জঙ্গলী এলাকা গেরিলা ঘাটি সুদৃঢ় করতে হয়ে যায় এবং ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকে রাখে এবং কক্সবাজার তথা চকরিয়ায় পাক বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেয় নি অন্যান্য মুক্তিসংগ্রামীদের সহায়তা। এ অবস্থায় ২৪ এপ্রিল কক্সবাজারে কৃষি অফিসের কম্পাউন্ড থেকে তার রক্ষিত এক ট্রাক ভর্তি অস্ত্রসস্ত্র গোলা বারুদ তার ঘাটিতে নিয়ে যায়। পরদিন ২৫ এপ্রিল দুপুরে ইপিআরের নায়েব সুবেদার আবদুল জলিল লতিফ (সৈনিক নং ৪১৪, পটিয়াস্থ চরকানাই পাড়ার লাল মিয়ার ছেলে), ইপিআর সিপাহী আবুল হোসেন (সৈনিক নং- ১৬৩১৫; ফরিদুপর জেলার নড়িয়া থানার সুংড়া গ্রামের আবদুল আওয়ালের ছেলে), ইপিআর হাবিলদার এজাহার মিয়া ( সৈনিক নং ১২৪১৪৩১; টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার ওয়াজুদ্দিনের ছেলে), সিপাহী নেছার আহমদ ( নোয়াখালী), স্বাধীনতার ঘোষণার খবর কক্সবাজারে প্রথম প্রদানকারী ইপিআর সুবেদার জোনাব আলী, ইপিআর শামসুদ্দিন প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধাকে একটি লাল টয়োটা জীপে করে কক্সবাজারের আনসারদের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে এবং তার সঙ্গে হারবাং এলাকায় অনুরোধ করতে বাহারছড়াস্থ আনসার ক্লাবে আসেন। কিন্তু আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান, আবদুল আজিজ, আবু তাহের চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা আগে থেকেই গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি জানালে আনসারদের কাছে ফরহাদের দেয়া ১০টি এলএমজি ফেরত দিতে বলে। উপস্থিত সদস্যরা ওইসব এলএমজি আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান এর কাছে রয়েছে বলে জানিয়ে এনে দিতে সম্মত হয়। এলএমজি ফিরিয়ে আনার অজুহাতে আনসার সদস্যরা সুলতান আহমদ খান কমাণ্ডারকে ফরহাদ ও তার সঙ্গীদের আনসার ক্লাবে উপস্থিতির সংবাদ জানায়। এই সংবাদ পেয়ে সুলতান আহমদ খান মকবুল আহমদ নাজিরের বাড়িতে গিয়ে এসডিও শাহেদসাদ উল্লাহ, এসডিপিও এ এম ও আর খান, এসডিও টু আইসি দারেগা আবু শহীদ চৌধুরী, কক্সবাজার থানার ওসি মইজুদ্দিন আহমদ, ঝিলংজা ইউনিন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আবু বকর ছিদ্দিক, কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটির সভাপতি এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরীর সাথে মকবুল আহমদ নাজির এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে। মইদুর রহমান চৌধুরী, মকবুল আহমদ নাজিরসহ পাক বাহিনীর দোসর প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের হীন ষড়যন্ত্র কার্যকর করার কুমানসে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ফরহাদ ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করার আদেশ দেয়। এদিকে আনসাররা ১ ঘণ্টা যাবত ফেরত না আসাতে আনসার ক্লাব থেকে বের হয়ে বর্তমান বাহারছড়া বাজার হয়ে ক্যাপ্টেন ফরহাদ তার সঙ্গীদের নিয়ে আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান প্রকাশ মুইচ্চা সুলতানের বাড়ির দিকে যায় এবং আনসার কমাণ্ডার সুরতানকে রাস্তার পার্শ্বে আরো কয়েকজন আনসারসহ রাইফেল ও এলএমজি তাক করে অপেক্ষা করতে দেখতে পায়। তাতে ফরহাদ ও তার সঙ্গীরা ভীত না হয়ে সুলতান আহমদের কাছে যায় এবং তাকে এলএমজি দিয়ে দিতে অথবা মুক্তিযুদ্ধে সঙ্গী হতে অনুরোধ করে। কিছুক্ষণ কথাবার্তার বলার পর সুলতান আহমদ খান এলএমজি ফরহাদের সঙ্গীদের হাতে তোলে দিতে বাধ্য হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা গন্তব্যস্থলে চলে যাওয়ার জন্য লাল টয়োটা জীপ গাড়ি চালু করে। ইতোমধ্যে সুলতান আহমদের দল পিছন হতে ফরহাদ গ্র“পকে গুলি ছুড়লে গাড়ির চাকা বিকল হয়ে যায়। গাড়ি হতে ফরহাদ গ্র“পের সঙ্গীরা লাফ দিয়ে নেমে পড়ার সাথে আনসার কমাণ্ডার আবু তাহের চৌং , আনছার সদস্য রসিদ আহামদ , আমিন উল¬াহ , মোহাম্মদ নাছের , মফিজুর রহমানেরা উপর্যপুরি গুলিতে সিপাহী নেছার আহমদ জখমী ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ওই দিকে ওসি মইজুদ্দিন আহমদ, সেকেন্ড অফিসার এমএস হাসান, আবু শহীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ ওৎ পেতে আছে। অন্যোন্যপায় হয়ে ফরহাদ গ্র“প স্ট্যাণ্ড গান এর ফাঁকা আওয়াজ করতে করতে নিরাপদে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। গুলির আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা কি হয়েছে দেখতে বাইরে আসে। এদিকে স্বাধীনতা বিরোধী মকবুল আহমদ নাজির জনসাধারণকে ধোকা দেয়ার জন্য ‘ইহারা ডাকাত এবং ট্রেজারি লুট করিতে আসিয়াছে’ বলে চিৎকার করে। মুফিজুর রহমান প্রকাশ মফিজ মিস্ত্রি একটি গুলি করে ফরহাদের কাছ থেকে এলএমজি কেড়ে নেয়। পরে কতিপয় মুফিজুর রহমান, মুইচ্চা সুলতানের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা ফরহাদের সঙ্গী ইপিআর হাবিলদার এজাহার মিয়া, সিপাহী আবুল হোসেন, সুবেদার আবদুল লতিফসহ কয়েকজনকে ধরে ফেলে। শোনা গেছে, মকবুল আহমদ নাজিরের নেতৃত্বে ভুল বোঝানো বাহারছড়াবাসী হাবিলদার এজাহার মিয়াকে দা নিয়ে মারতে গেলে ‘আমি ডাকাত নয়, আমি মুক্তিযোদ্ধা, দেশকে স্বাধীন এবং তোমাদের মুক্তি করার জন্য যুদ্ধে নেমেছি’ বলে চিৎকার করে। ওই চিৎকার শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে মকবুল আহমদ নাজির, মোহাম্মদ নাছের, আমিন উল্লাহ প্রমুখরা তাকে ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এদিকে উক্ত হামলা থেকে কোনোরকম রক্ষা পেয়ে সিপাহী নেছার আহমদকে কাঁধে নিয়ে এক মাইল দুরে সুফি রসিদ আহমদ চৌধুরীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সুফি সাহেব আহত ব্যক্তির সেবা শুশ্র“ষা করেন এবং নিজের জীবনের বিনিময়ে ফরহাদ ও নেছার আহমদকে রক্ষা করার ওয়াদা করেন। ইতোমদ্য সুলতান আহমদ খান, বাহারছড়ার খলিল বকসের ছেলে জালাল আহমদ ও আবদুস ছাত্তার, আনসার কমাণ্ডার আবু তাহের চৌধুরী (যিনি পরবর্তীতে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অন্তর্ভূক্ত হন এবং সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন), আবদুল আজিজ, আনসার সদস্য আমান উল্লাহ, ইকবাল, রাজা, মনির আহমদ, মোস্তাক আহমদ, বসির আহমদ ড্রাইভার, নুর আহমদ প্রকাশ ওটকাটাসহ আরো ৫০/৬০ জনের লোক মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সুফী সাহেবের বাড়ি ঘেরাও করে। সুফি সাহেবের আশ্রতি ব্যক্তিদের (তাদের ভাষায় ডাকাতদের) বের করে দিতে বলে নতুবা গুলি ছুড়ার হুমকি দেয়। লোকজনের সোরগোলে মোজাহিদ কমাণ্ডার নুরুল হুদা চৌধুরী, প্রেস সার্ভার আবদুল কাদেরসহ অন্যান্যেরা নিকটস্থ আওয়ামী লীগ অফিস ও সরকারি কলোনি হতে সুফি সাহেবের বাসার সামনে গমন করেন। নুরুল হুদা চৌধুরী ও আবদুল কাদের সুফী সাহেবের সাথে আলাপ করে মুক্তিসংগ্রামীদের ছাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে ডাব্লিউ,টি,এ এয়ারপোর্ট টারমিনালে নিয়ে আসে। সে মুহূর্তে বাহারছড়ার জালাল আহমদ ক্যাপ্টেন ফরহাদের বুকের সঙ্গে রাইফেল লাগিয়ে গুলি করতে উদ্যত হয়। সুফী সাহেবের হস্তক্ষেপে ফরহাদ প্রাণে রক্ষা পান। ডাব্লিউ,টি,এ এয়ারপোর্ট টারমিনাল হাউসে নাজির মকবুল আহমদ, ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও অন্যান্যেরা আনসার ও পুলিশের সহায়তায় ফরহাদ ও গ্রেফতারকৃত তার সঙ্গীদের জেল হাজতে পায়ে বেড়ি লাগিয়ে বন্দি করে যেতে বলে নতুনবা ওখানেই তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে পুলিশের ওসি ডেকে আনা হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হাজতে বন্দি করতে অস্বীকার করে। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মকবুল আহমদ নাজির, আনসার কমাণ্ডার আবু তাহের চৌধুরী, সুলতান আহমদ খান তাদের দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে ফরহাদ এবং নেছার আহমদ থানায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে আহত সিপাহী নেছার আহমদকে হাসপাতালে এবং ফরহাদকে অন্যান্যের সঙ্গে জেল হাজতে প্রেরণ করে। দুস্কৃতিকারীগণের কৃতকর্ম কক্সবাজার P.S Case No.3/21 , Dated 25/04/71 1900 Hours-এ লিপিবদ্ধ আছে বলে ১৯৭২ সালে ফরহাদের ভগ্নিপতি ডা. এ কে আবু জাফর দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ আছে। ফরহাদ ও তার সঙ্গীদের হত্যা এবং বন্দি পরিকল্পনায় ষড়যন্ত্রকারী মকবুল আহমদ নাজির, এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট সালামত উল্লাহ, পুলিশ অফিসার আবু শহীদ চৌধুরী, এসডিপি এএমআর খান প্রমুখ আনসার কমাণ্ডার এবং আনসারদের সহায়তায় ফরহাদ গ্র“পকে ধরে থানায় প্রেরণ করার পরে কয়েকটি মিটিং করে। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ৭৯ জন পাকিস্তান পন্থী নিয়ে কক্সবাজার শান্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে মইদুর রহমান চৌধুরীকে কনভেনার এবং সাবেক এমএলএ জাফর আলম চৌধুরীকে যুগ্ন আহ্বায়ক এবং সালামত উল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির অন্যান্যেরা হলেন, নজির আহমদ, এডভোকেট আবু আহমদ চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম মওলা চৌধুরী, শামসুল হক, এডভোকেট মমতাজুল হক, আবদুস সালাম মিয়া, আবু বকর ছিদ্দিক, মকবুল আহমদ নাজির, বদিউল আলম। ওই কমিটির সভায় মকবুল আহমদ নাজির, আবু বকর সিদ্দিক, আবদুল জলিল সওদাগর, বদিউল আলম, আবদুস ছালাম প্রমুখ শান্তি কমিটির সদস্যরা মিলে এসডিও শাহেদসাদ উল্লাহ, এসডিও টু সেকেন্ড অফিসার আবু শহীদ চৌধুরী, থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার মিলে সাব্যস্থ করে যে, দোহাজারীতে অবস্থানরত পাক বাহিনীকে কক্সবাজারে নিয়ে আসার জন্য মইদুর রহমান, নাজির মকবুল আহমদ, বদিউল আলম এডভোকেট, আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান এসডিও এর চিঠি নিয়ে যাবে এবং পাক হানাদার বাহিনী কক্সবাজারে আসলে ফরহাদ ও অন্যান্য ইপিআর সদস্য এবং ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সুভাষ দাষকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে উপহার স্বরূপ তোলে দেবে এবং নিজেদের পাক সরকারের একান্ত অনুগত বলে প্রমাণ করবে। এ ব্যাপারে নাজির মকবুল আহমদ নাজির, সোলতান আহমদ খান এসডিপি এবং আরো একজনের সরকারি পুরষ্কার ঘোষনা করা হয়। যা এস,ডিও এর Memo No 936/g Dated 13/04/71 Addressed to deputy Commissioner ctg - তে উল্লেখ আছে ।তাছাড়া ২১ মে দৈনিক আজাদ ও দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত ‘কক্সবাজারে নাগরিক সভা’ নামে রিপোর্টে শান্তি কমিটি গঠন এবং ট্রেজারিকে রক্ষা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জেল হাজতে প্রেরণ করতে সহায়তা করায় আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহম্মদ খাঁন (প্রকাশ মুইচ্চা সুলতান) মকবুল আহমদ, নাছির, এম এ জলিল সওদাগর, তানহা মিয়া, সিরাজ আহমদ নাজিরসহ প্রমুখের ধন্যবাদ জানিয়ে শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। (দ্রস্টব্য, কক্সবাজারে নাগরিক সভা, ২১ মে ৭১, দৈনিক আজাদ, উদ্ধৃতি: ইফতেখার আমিন, একাত্তরের দালালনামা, পৃ: ১১)এদিকে ফরহাদ ও তার সঙ্গীদেরকে আটকের পর খরব পেয়ে ফরহাদের ভাই চক্ষু বিশেষজ্ঞ একে আবু জাফর ২৯ এপ্রিল’৭১ কক্সবাজারে আসেন বলে শহীদ ফরহাদ হত্যা মামলার কপিতে উল্লেখ আছে। এ মামলার কপিতে ডা. এ কে আবু জাফর উল্লেখ করেন-‘এই ঘটনার খবর পাইয়া আমি নিজে ২৯/০৪/৭১ ইংরেজীতে কক্সবাজার গমন করি এবং জনাব ন্রুুল হুদা ও জনাব নুরুল ইসলাম চৌং সহ আসামী মকবুল আহাং নাজীর, আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্দুল জলিল সওদাগর এস,ডিও ও ওসি কক্সবাজার প্রভৃতির সঙ্গে দেখা করি এবং মুক্তিসংগ্রামীদের ছাড়িয়া দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করি। তাহারা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করিবার জন্য মুক্তি সংগ্রামীদের ছাড়িয়া দিতে অস্বীকার করে । সেই রাত্রে আমাকে বন্দী করার জন্য মৃত সইদের রহমান চৌং এস,ডি,পিও নাজীর মকবুল আহামদ আবু শহীদ চৌং এবং আবু বকর সিদ্দিক গোপনে ষড়যন্ত্র করিতেছে খবর পাইয়া আমি রাত্রে কক্সবাজার ত্যাগ করি এবং ০৩/০৫/১৯৭১ ইং আমার ভায়েরা ফরিদ আহামদ এডভোকেট সাহেবকে ফরহাদ ও তাহার সঙ্গীদেরকে মুক্তির চেষ্টা করার জন্য প্রেরন করি । ইতিমধ্যে অনেক সুহৃদয় ব্যক্তি ছাত্র ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ( যাহারা কক্সবাজার ছিলেন) সকলেই এদের মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে কিন্তু এই সব স্বার্থান্বেষী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর Collavator গন তাহাদের হীন মানসীকতা ও পাকিস্তান সরকারের পুরষ্কারের আশায় শহীদ মুক্তি যোদ্ধাদের ছাড়িয়া দিতে অস্বীকার করে ।’পরে নিজে উপায়ন্তর দেখে চট্টগ্রামে চলে যান এ কে আবু জাফর। এ কে আবু জাফর দায়েরকৃত মামলায় ২৫ এপ্রিলের ঘটনায় যাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী এবং আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে বাহারছড়ার মৃত হাফেজ ছবদর আহামদ এর ছেলে মকবুল আহামদ নাজির, বাঁচা মিয়ার ছেলে আনসার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান, সোলতান আহামদ এর ছেলে আনসার কমাণ্ডার আবু তাহের চৌধুরী,এসডিপিও এবিএমও আর খান, সেকেন্ড অফিসার টু এসডিও, বাহারছড়ার নজির আহমদ এর ছেলে ছালামত উল্লাহ, ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, কক্সবাজার থানার ওসি মইজউদ্দিন আহমদ, কক্সবাজার সদর থানার এস আই আজিজ আহামদ, বাহারছাড়ার খলিল বকসের ছেলে জালাল আহমদ ও আবদুস সাত্তার, আবদুল আলীর ছেলে নুর আহামদ প্রকাশ ওটকাটা, বাহার ছড়ার আনসার সদস্য মুহাম্মদ আলী, আবু বকর ছিদ্দিক চেয়ারম্যানের ছেলে মোহাম্মদ ( মাহমুদুল হক ওসমানী চেয়ারম্যান), বনখালী এলাকার এডভোকেট বদিউল আলম, বাহারছড়ার সোলতান আহমদের ছেলে আবদুল আজিজ ও আমীন উল্লাহ, সুলতান আহমদের ছেলে ইকবাল, রাজা, মনির আহমদ, আবদুল মোতালেবের ছেলে মোস্তাক আহমদ, বসির আহামদ ড্রাইভার, মফিজুর রহমান (পিএস কেইস নং ৩/২১, ২৫.৪.৭১), মোহাং নাছের আনসার (পিএস কেইস নং ৩/২১, ২৫.৪.৭১), আমীন উল¬াহ আনছার (পিএস কেইস নং ৩/২১, ২৫.৪.৭১), হেদায়েত আলী ড্রাইভারের ছেলে রফিক আহামদ আনছার (পিএস কেইস নং ৩/২১, ২৫.৪.৭১), বদিউর জমান, টেকপাড়ার এম, এ রহিম মাস্টার, বাহারছড়ার আব্দুল জলিল সওদাগর, টেকপড়ার এসটিসি সোলতান আহামদ, টেকপাড়ার নাজিম উদ্দিনের ছেলে এম জে সি (কমিশনার) বদিউল আলম, কক্সবাজার পৌর চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বড়বাজারের সাদাত হোছেন, সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এস এম হাছান, বাহারছড়ার নিয়াজ, ঠান্ডা মিয়া, কক্সবাজার মহকুমার এসডিও শাহেদউল্লাহ সিএসপি, কক্সবাজার শান্তি কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরী ও কক্সবাজার আর্মি ক্যাম্পের কোম্পানী কমাণ্ডার আসিফ রেজভ।কক্সবাজার পতনকক্সবাাজর মহকুমা শান্তি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কনভেনর মইদুর রহমান চৌধুরী, নাজির মকবুল আহমদ, আবু বকর ছিদ্দিক, সোলতান আহমদ খান দোহাজারীতে অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর মেজর আসিফ রেজভীকে সমব্যবহারে কক্সবাজারের পাক আর্মিকে দোহাজারী থেকে নিয়ে আসেন। ধৃত ফরহাদ সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা জেল হাজত থেকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে সিভিল রেস্ট হাউসস্থ কক্সবাজার হানাদার ক্যাম্পের মেজর আসিফ রেজভীর নিকট হাজির করে এবং অন্য অফিসার সহ পাক বাহিনীর দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের নিজেদের প্রচেষ্টা প্রচেষ্টায় কক্সবাজারে খতম করেছে এবং তাদের ক্যাপ্টেন ফরহাদ এবং তার সঙ্গীদের পাক বাহিনীকে উপহার দেয়ার ধরে রেখেছে বলে দোসরা সগর্বে বলে। তৎক্ষণাৎ পাক হানাদার বাহিনীর মেজর আসিফ রেজভী ফরহাদ সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলার আদেশ দেন। আদেশমতে শহীদ ফরহাদ, নায়েব সুবেদার আবদুল লতিফ, এজাহার মিয়া, সিপাহী আবুল হোসেন, স্বাধীনতা বিরোধী আবু বকর ছিদ্দিক চেয়ারম্যানের পুত্র মাহমুদুল হক ওসমানী প্রকাশ মোহাম্মদ কর্তৃক ধৃত ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সুভাষ দাশ এবং আরো তিনজনকে গুলি করে ডাব্লিউবি গোডাউনের পাশের বালির মধ্যে পুতিয়ে রাখে। এ সময় পাক জল্লাদ আফ্রিদীর গুলিতে তরুণ যোদ্ধা কমা-ার ফহাদের পায়ের গোড়ালি ও বাহু গুরুতর ভাবে বিদ্ধ হয়ে যায়, তিনি গড়িয়ে পড়ে নদীর ঢালুতে, তার প্রায় শরীর ছুয়ে অজস্র তপ্ত বুলেট উড়ে যায়। কাদায় জলে অর্ধ ডুবো হানাদার বাহিনীর রাতে তাকে গুলি করলেও সরে যাওয়ায় বুকে সরাসরি গুলি না লেগে পাশে আঘাত হয়। এমনি তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হানাদারেরা তাঁর মৃত্যু হয়েছে মনে করে মাটি চাপা দিয়ে চলে যায় এবং ফরহাদও মৃতের ভান করে পড়ে থাকে। অনেকক্ষণ পর ফরহাদ বালি সরিয়ে মৃত্যুপরী থেকে উঠে হামাগুড়ি দিয়ে বাঁকখালী নদীর পাড়ে আসেন এবং এক সহৃদয় মাঝি তাকে আহত এবং পায়ে বেড়ি লাগিয়ে নৌকায় তুলে খুরুস্কুল গ্রামে পার করিয়ে দেয় এবং ওই রাত্রে খুরুস্কুলে আশ্রয় গ্রহণ করে ফরহাদ। ধৃত নেছার আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এবং ওসি মইজুদ্দিন আহমদ এর দেশী লোক হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। সুলতান আহামদের ০৬/০৫/১৯৭১ ইংরেজীতে পাকিস্তান আর্মির কক্সবাজার এর কমান্ডিং অফিসারের নিকট লিখিত চিঠিতে তাহার নিজের স্বীকারোক্তি আছে এবং ইহাতে এস,ডি,পিও ও,আর খানের Re-comendetion, S.D.PO এর মারফতে ০৭/০৫/৭১ ইংরেজীতে এস,ডি,পিও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার প্রমাণ বহন করে । ফরহাদের দ্বিতীয় হত্যাখুরুস্কুলে রাতের অন্ধকারে ফরহাদ আত্মগোপন থাকার পর পরদনি ভোরে কিছু গ্রামবাসী তাকে আহত এবং পায়ে বেরী দেওয়া অবস্থায় দেখিতে পেয়ে স্থানীয় মৈালভী ওবাদুল মন্নান, হাজী আমির হোসেন মাঝি, হাজী ফজলুল করিম প্রমুখকে খবর দেয়। তারা স্থানীয় রাজাকার সলিম উল্ল¬া এবং আব্দুল করিম দফাদারকে এডভোকেট বদিউল আলম, মকবুল আহামদ নাজির প্রমুখের কাছে কি করবে তা জানার জন্য পাঠায়। এডভোকেট বদিউল আলম, আবু বকর সিদ্দিক, সালামত উল¬া এডভোকেট ও নাজির মকবুল আহমদ ফের এস,ডিও , এস,ডি,পিও , সেকেন্ড অফিসার টু এস,ডিও এবং কক্সবাজার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মইদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের নির্দেশে থানায় গিয়ে পুলিশের ওসি মইজুদ্দিন আহমদ, সেকেন্ড অফিসার এসএম হাছানের যোগসাজশে দুই জন পুলিশ ও সুলতান আহমদ খানসহ কয়েকজন আনসার দস্য নিয়ে সলিম উল্লাহ ও আবদুল করিম দফাদারের সাথে নদীর ওপাড়ে খুরুশকুলে পাঠায়। খুরুশকুল হতে চৌকিদার আবদুর বার, দফাদার আবদুল করিম, হাজী আমির হোসেন মাঝি, মৌলভী ওবাইদুল মান্নান, হাজী ফজলুল করিম ও সলিম উল্লাহ মিলে পুলিশের সাথে আহতাবস্থায় ফরহাদ কস্তুরাঘাটে নিয়ে আসে এবং তাদের সহায়তায় ফের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। থানার কর্মকর্তারা আহত ফরহাদকে দেখে আপ্লুত হয়ে মিলিটারির হাতে তুলে না দেয়ার জন্য গ্রেফতার দেখিয়ে তাড়াতাড়ি থানা হাজতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু দালাল অধ্যুষিত কক্সবাজার শহরে এ সংবাদ ছাপা থাকা সম্ভব নয়। যথাসময়ে সালারে আউয়াল পাক হানাদার বাহিনীর অনেক নিমর্মতার সাথী নুরুল হুদা চৌধুরী কাছে খবর গেল। তিনি কালবিলম্ব না করে শত্র“সেনাপতি আসিফ রিজভীকে গ্রেফতারের কৃতিত্বের দাবির জন্য দৌড়ে পাঞ্জাবী দস্যুদের ঘাঁটিতে ছুঁটে যায়। হানাদার বাহিনী তাাকে একবার খরচ করে ফেলেছে এবং আল¬াহ তায়ালা বাচিয়ে রেখেছেন বিধায় ছাড়িয়া দিতে বলা হয় । কিন্তু হাজী আমির হোসেন মাঝি, বদিউল আলম এডভোকেট এবং মকবুল নাজীর তাকে পুনরায় হত্যা করার জন্য জেদ ধরেন। হানাদার বাহিনীর লোকদের বলে তারা বলেন যে , ‘ফরহাদ খুবই বড় মুক্তিযোদ্ধা তাহাকে ছাড়িয়া দিলে সে আবার দলবল যোগাড় করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে। তাহাকে আমাদের সম্মুখে হত্যা করিয়া নদীতে ফেলিয়া দাও।’ তাতে হানাদার বাহিনীর লোকজন তাাকে ফের গুলি করে হত্যা করতে সম্মত হয়ে এবং সাম্পানে করিয়া নদীর মাঝে নিয়া তিনটা গুলি করার হুকুম দেয়। পরদিন ৭ মে সকালে থানা থেকে বের করে বদর মোকাম জামে মসজিদের সামানে পৌঁছলে হানাদার বাহিনীর একটি জীপ এসে দাঁড়ায়। বর্তমানে কস্তুরাঘাটের উত্তর পার্শ্বে দিয়ে ফরহাদকে নৌকাতে উঠোয়। নদীর মাঝে নিয়ে তিনটি গুলি করে হত্যাকারীরা মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। নাজীর মকবুল এবং আবু বকর সিদ্দিকের নির্দ্দেশে মোহাম্মদ, সুলতান আহাং খান ও কতিপয় আনসার নদীর উপকুলে ফরহাদের মৃত দেহ পাহারা দিতে থাকে । যাতে তিনি আবার জীবিত হতে না পারে বা তার মৃতদেহ কেউ গোরস্থ করিতে না পারে।এ কে আবু জাফর দায়েরকৃত মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, খুরুশকুলে মৌলভী ইছমাইলের ছেলে মৌলভী আবদুল মান্নান, তমিজ উদ্দিনের ছেলে হাজী আমির হোসেন মাঝি, হাজী ইজ্জত আলীর ছেলে হাজী ফজলুল করিম, হাজী ফজলুল করিমের ছেলে সলিম উল্লাহ, আবুদল করিম দফাদার, আবদুল বারী চৌকিদার, এডভোকেট বদিউল আলম, বাহারছড়ার নজির আহমদের ছেলে কক্সবাজার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি এডভোকেট সালামত উল্লাহ, বাহারছড়ার মকবুল আহমদ নাজির, আনছার কমাণ্ডার সুলতান আহমদ খান, ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, কক্সবাজার শান্তি কমিটির কনভেনার এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরী, এসডিও সাহেদসাদুল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার টু এসডিও আবু শহীদ চৌধুরী, এসডিপিও এবিএম ও আর খান, ও সি মইজ উদ্দিন আহম্দ, কক্সবাজার সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এস এম হাছান। ওই মামলার কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লে¬খিত আসামীগন সমাজের প্রতিষ্টিত এবং প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি এবং কতিপয় ব্যক্তি প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের আত্মীয় উপরন্তু কিছূ দু®কৃতিকারী দায়িত্ব পূর্ন সরকারী চাকুরীতে বহাল আছে । এমতাবস্থায় তাহার তাহাদের দু®কৃতির দলিল পত্র নষ্ট করিবার চেষ্টা করিতেছে এবং সাক্ষীগনকে প্রতিনিয়ত দেখাইয়া দিবে অথবা হত্যা করিবে বলিয়া হুমকী দিতেছে। উল্লেখিত ঘটনা সমুহে নাজীর মকবুল আহামদ, সেকেন্ড অফিসার আবু শহিদ চৌং এবং মইদুর রহমান ( খুনী মোকদ্দমার আসামী ছিল )। বদিউল আলম এডভোকেট ও আবু বক্কর সিদ্দিক এস,ডিও এবং এস,ডি,পিও এর উপদেষ্টার কাজ করে। এমতাবস্থায় প্রার্থনা যে, আসামীগনকে অবিলম্বে বাংলাদেশ Collaborator Ordinance অনুযায়ী গ্রেফতার করিয়া হাজতে প্রেরন করা হোক , যাহাতে সাক্ষী গন নির্ভয়ে তাহাদের বক্তব্য পেশ করিতে সমর্থ হইবে ।’ওই মামলার স্বাক্ষীগণের নাম এখানে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি। কারণ হিসেবে বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অনেক হয়েছে কিন্তু রাজাকারদের তেমনভাবে তৈরি করা হয়নি। সরকারের উচিত রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে পারলেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হবে। ওই মামলার কী হয়েছে তা জানা না গেলেও শোনা গেছে ১৯৯১ সালের বিএনপি সরকারের আমলের সময় ডা. এ কে আবু জাফরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কামরুন্নাহার জাফর উপমন্ত্রী থাকাকালে তাকে দিয়ে ওই মামলার আসামীরা মামলা খারিজ দিতে বলায় এবং ওই বিএনপি সরকার মামলা খারিজ দিয়েছে ( শোনামতে)।
কালাম আজাদ : কবি-সাংবাদিক। প্রকাশিত গবেষনা গ্রন্থ : ‘২।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.