নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ কক্সবাজার

মানবধর্ম ও সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী

কালাম আজাদ কক্সবাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কক্সবাজারে স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে সড়ক

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫১

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদার ঠিকানা। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার বিরোধীতা করতে গিয়ে গুটি কয়েক এদেশীয় কুলাঙ্গার পাক বাহিনীর সহযোগী হয়ে অংশ নিয়েছিল মুক্তিকামী জনতাকে হত্যা, বাড়ী-ঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের উপর ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী অসহায় বাঙালি হত্যা, নির্যাতন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরণকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকা- করেছেন স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তাদের নামে বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে কক্সবাজারে। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে-আতঙ্কে এবং কেউ এর প্রতিবাদ করে নি। প্রতিবাদ করেও কি লাভ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সরকারের প্রশাসনই যখন স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে সড়ক করে তাতে জনগণের করার কিছু থাকে।
শহীদ সুভাষ, ফরহাদ, হাবিলদার এজাহার মিয়া, এডভোকেট জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরী, সতিষ মহাজন, শরীফ চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য মুক্তিকামী জনতা ও মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তাদের সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে যে সব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, কক্সবাজার শহরে এবিসি সড়ক, বাজারঘাটায় সালামত উল্লাহ সড়ক, এম এ ছালাম রোড, সিরাজ আহমদ নাজির সড়ক, বাহারছড়ায় এম এ জলিল সওদাগর রোড়, খরুলিয়ায় মোকতার আহমদ সড়ক, কালামারছড়ায় জালাল উদ্দিন সড়ক, দলিলুর রহমান সড়ক প্রভৃতি।
এখন আলোচনা করা যাক এডভোকেট সালামত উল্লাহ সড়ক নিয়ে। এ সড়কটি সুপ্রীম কোর্ট ও কক্সবাজার কোর্টের আইনজীর্ব সালামত উল্লাহর নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ষাটের দশকে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে রামুÑউখিয়া- টেকনাফ থানা নিয়ে গঠিত পি-ই-২৯৮-চ-১৮-রামু-উখিয়া-টেকনাফ আসনে জামায়াত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তার প্রাপ্ত ভোট হলো ৯৩২০। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাবিরোধী সংক্রান্ত যে সব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সবকটিতে জড়িত ছিলেন বলে ইতিহাস পাঠে জানা যায়। ক্যাপ্টেন ফরহাদ হত্যা মামলার ৮ নং আসামী। তাছাড়া ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার বিমানবন্দরে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় মইদুর রহমান চৌধুরী নিহত হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার পৌরসভা রেজুলেশন করে বাজারঘাটায় তার নামে এ সড়কটি করা হয়।
কক্সবাজার টাউন কমিটির তৎকালিন চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটির সদনস্য এম এ ছালাম এর নামে বাহারছড়ায় এম এ ছালাম সড়ক নামকরণ করা হয়েছে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নময় তিনি পাকিস্তানের পক্ষে অবলম্বন শান্তি কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে শহীদ ফরহাদ, সুভাষ, হাবিলদার এজাহার মিয়া, সিপাহী আবুল হোসেন, সুবেদার আবদুল লতীফসহ অসংখ্য হত্যাকা-ের ক্রীড়ানক হিসেবে করেন। ১৯৭২ সালে শহীদ ফরহাদের ভগ্নিপতি আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এ কে আবু জাফর কর্র্তৃক দায়েরকৃত হত্যামামলার ১৫ নং আসামী।
সিরাজ আহমদ নাজির সড়ক
বাহারছড়ার সিরাজ আহমদ নাজির একজন স্বাধীনতা বিরোী ছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মহকুমা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা হিসেবে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে কাজ করেছেন এবং আইনজীবী, শিক্ষকসহ অন্যান্য স্বাধীনতাকামী লোকদের হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন দলীল দস্তাবেজ এবং পত্রিকায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের ২১ মে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত ‘কক্সবাজারে নাগরিক সভা’ রিপোর্টে যে কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় তাতে তিনিও ছিলেন। দৈনিক আজাদের ভাষ্যমতে,
...উক্ত সভায় সাতজন রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিকে বন্দী ও উচ্ছেদের জন্য এবং কক্সবাজার ট্রেজারী ও সাব জেলকে রক্ষা করার ব্যাপারে বাহারছড়া এলাকার আনসার, মুজাহিদ ও জনগণ পুলিশকে যে বীরোচিত সাহায্য প্রদান করিয়াছেন সেই জন্য তাহাদের সকলের প্রতি সশ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
উক্ত দুষ্কৃতিকারী উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দান করেন জনাব মকবুল আহমদ নাজির, জনাব নাছির, জনাব এম এল জলিল সওদাগর, জনাব তানহা মিয়া, জনাব সিরাজ আহমদ নাজির এবং আরও কয়েকজন। 

এবিসি সড়ক
আবু বকর ছিদ্দিক চেয়ারম্যানের সংক্ষিপ্ত নাম এবিসি। তিনিও একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করে কক্সবাজার শান্তি কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দেন। তার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। তিনি সুভাষ, সিপাহী আবুল হোসেন, শশী কুমার বড়–য়া, শামসুল আলম ও ফরহাদ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২ সালে শহীদ ফরহাদের ভগ্নিপতি আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এ কে আবু জাফর কর্র্তৃক দায়েরকৃত হত্যামামলার ১৫ নং আসামী। তাছাড়া তার নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবিসি ঘোনা নামে একটি এলাকাও রয়েছে।

মাওলানা মোকতার আহমদ সড়ক
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার, খরুলিয়া, ঝিলংজায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযেগে অভিযুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা মাওলানা মোকতার আহমদ এর নামে খরুলিয়ায় একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ঝিলংজা ইউপির চেয়ারম্যান থাকাকালে এ সড়কটি নামকরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুক্তিযোদ্ধা তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে দালাল আইনে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল।
জালাল উদ্দিন সড়ক

মহেশখালী উপজেলার কালামারছাড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ্উদ্দিন চৌধুরীর নামেও জালাল উদ্দিন সড়ক। গত জোট সরকারের আমলে এ সড়কটির নামকরণ হয়।
মাহমুদ চেয়ারম্যানের নামে সড়ক নামকরণের ষড়যন্ত্র
দেশকে কংলকমুক্ত করতে চলছে ৭১’র যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম। এমন সময়ে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদ সুভাষ ও শহীদ ফরহাদ হত্যাকারী, দালাল আইনে গ্রেফারকৃত মাহমুদুল হক ওসমানী নামে একজন চিহ্নিত রাজাকারের নামে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় সড়কের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ খবর পেয়ে কক্সবাজার গণসাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী সকলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন এবং বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে সড়ক-স্থাপনা নামকরণ প্রতিরোধ মঞ্চ এর উদ্যোগে আয়োজিত এসব বিক্ষোভ মিছিলের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ মাহমুদুল হক ওসমানী নামে সড়ক করার সিদ্ধান্তটি স্থগিত করে রাখে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.