নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৭

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৬

আগের পর্ব
মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৬

শিরোটীকা: আমার শৈশব কৈশোরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১১ এর এপ্রিল মে মাসে কয়েকটি পর্ব পোস্ট করেছিলাম। ২০১২ এর জানুয়ারীতে ১৬শ পর্ব পোস্ট করে থেমে গিয়েছিলাম। এতদিন পরে ইচ্ছে হলো আরো কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার। তা হলে শুরু করা যাক।

শোভা ভাই

হাতিয়ায় থাকার সময় চরইশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক খান ওরফে খোকা মিয়া আমার আম্মাকে বোন ডেকেছিলেন। তখন থেকে তিনি আমার মামার দলে ঢুকে পড়েছেন। তাঁর ছেলে শোভা খান একদিন আমাদের বাড়িতে এসে উঠলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম বেড়াতে এসেছেন। যখন দেখি তাঁর নড়ার কোন লক্ষণ নেই তখন আম্মার কাছে বললাম বিষয়টা। আম্মা জানালেন, শোভা ভাই আমাদের বাড়ীতে থেকে লেখাপড়া করবেন। ক'দিন পরে তিনি কবির হাট কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হলেন। এটা ১৯৭০ খিস্টাব্দের কথা। কলেজটি চালু হয় ১৯৬৭তে। শোভা ভাই নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি লজিং মাস্টারের স্টাইলে আমাকে পড়াতে শুরু করলেন। তবে পড়ার চেয়ে শোভা ভাইয়ের আড্ডা আর গানবাজনায় বেশি আগ্রহ দেখা গেলো। আমার এক জ্যেঠাতো ভাই আবুল হোসেন ওরফে আবু ভাই জুটলেন তাঁর সাথে। আবু ভাই তবলা বাজান, শোভা ভাই গান করেন। আমাদের বাপচাচারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তবে শোভা ভাইয়ের গানবাজনা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করতেন না। কিন্তু দাদাদাদী সেটা পছন্দ করতেন না। দাদী প্রকাশ্যে কিছু বলতেন না। গান শুরু হলে আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে পড়তে দূরে চলে যেতেন। দাদা বলতেন, ইবলিশগুন কি শুরু কইচ্ছে ? (ইবলিশগুলো কি শুরু করেছে) দাদা খুব রেগে গেলে মূলতঃ দুটি শব্দ ব্যবহার করতেন-ইবলিশ আর হার্মাদ। আর কোনো কথা তাঁকে কখনো বলতে শুনি নাই। দাদা আবার কট্টর ছিলেন না। আমাদের গ্রামের বাজারের মসজিদের জমি তিনি ওয়াকফ করেছেন,আবার ১৯৪৪ সালে প্রাইমারী স্কুলের জন্যও জমি দিয়েছেন। শোভা ভাই যখন দেখলেন, গানের সমঝদার নেই, তখন বাইরে গান গাইতে চলে যেতেন। আড্ডা মেরে অনেক রাতে ফিরতেন। তখন তো গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না। (আমাদের গ্রামে ১৯৮০তে বিদ্যুৎ চালু হয়েছে) সাপখোপের রাজত্বে সেটা অনেক সাহসের ব্যাপার ছিলো। আরেকটা বিপদ ছিলো কুকুর। আমাদের বাড়িতে লেজকাটা একটা কুকুর ছিলো। সে আবার ভীষণ মেজাজী। কতোবার যে শোভা ভাই আর আবু ভাই রাতের বেলা সেই কুকুরের তাড়া খেয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। একবার শীতের রাতে কুকুরের তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে।

ছোট্ট নতুন বোন, বোয়াল মাছের ডিম

এক বর্ষার দিনে সকাল বেলা চাঁদি-ফাটা রোদ উঠেছে। নাস্তা সেরে উঠানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাড়ির ভেতরের বিরাট উঠানটি ভীষণ পিচ্ছিল। কতোবার যে কতোজন আছাড় খেয়েছে, প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে তার হিসাব নেই। আমি ছিলাম আছাড়-মাস্টার। প্রায় দৈনিকভিত্তিতে আছাড় খেতাম। সেদিনও ব্যতিক্রম হলো না। বাড়ির পূব দিক থেকে হৈচৈ কানে আসতেই সব ভুলে দৌড়। যথারীতি ধপ করে পড়ে পিছলে চলে গেলাম অনেক দূর। জামাকাপড় মায় চুলের পেছন পর্যন্ত কর্দমাক্ত। তাতে একবিন্দু দমলাম না। ছুটলাম হৈচৈ লক্ষ করে। গিয়ে দেখি এলাহী কারবার। বাড়ির পাশের বিশাল দীঘির যে নালা দিয়ে মাঠের সাথে যুক্ত (নোয়াখালীর ভাষায় দীঘির জান) তাতে সেজ জ্যেঠা জালের ফাঁদ পেতেছিলেন। তাতে বিশাল এক বোয়াল মাছ আটকেছে। সবাই বছলে তার ওজন হবে কমসে কম ১৫ সের। (তখনো কেজির কোন নাম নিশানা ছিলো না।) আমাদের ভাইবোন বাহিনীর বিশাল মিছিলের আগে আগে বোয়াল চললো বাড়ীর পথে। মাছ কাটার পর যে ডিম বের হলো তার ওজনই ৫ সের ! সবার চোখ ছানাবড়া। এই হৈচৈয়ের মদ্যে সেজ জ্যেঠা দেখি আজান দিচ্ছেন। ঘটনা কি ? শোনা গেলো ছোট চাচী একটি ফুটফুটে কন্যার জন্ম দিয়েছে। ভাইবোন বাহিনীর মধ্যে ভাইয়ের সংখ্যা একটু বেশি ছিলো বলে ফুটফুটে বোন পেয়ে আমাদের খুশি দেখে কে !
(চলবে)


মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: জেগে উঠবে একদিন পৃথিবী

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২২

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ইনশাল্লাহ। ভালো থাকবেন।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২২

সমুদ্রনীল বলেছেন: ইনি শোভা ভাই।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪৪

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: এ অবস্থা তাঁর ! আমার সাথে শেষ দেখা হয়েছে ১৯৭৬ বা ৭৭ সালে (সঠিক মনে নেই)। আমাদের চৌমুহনীর বাসায় ভাবীসহ এসেছিলেন। বন্ধুর বাড়ী থেকে তবলা হারমোনিয়াম ধার এনে ভাই ভাবী দুজনেরই গান শুনেছিলাম। এর পর ২০০২ সালে তাঁর ছোট ভাইয়ের (জেবু ভাই) বউ রাজিয়া ভাবীর সাথে দেখা হয় রাজবাড়ীতে। (রাজিয়া বেগম তখন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিনি সচিব থাকাকালে গোপালগঞ্জ যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন)। তিনি তখন বলেছিলেন শোভা ভাই বোহেমিয়ান জীবন যাপন করছেন।

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: Click This Link

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪৯

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ওপরের লিঙ্কে আমার সাত পর্বের একটা স্মৃতিকথা আছে। এর ঠিক আগের পর্বে শোভা ভাইদের বাড়ীতে বেড়াতে যাবার কথা লিখেছি।
অ.ট. শোভা ভাইকে আপনি চেনেন কিভাবে ?

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: শোভা ভাইকে দেখলাম। বুড়ো হয়ে গেছেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৪

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: খুব স্বাভাবিক। কারণ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বিএ ভর্তি হয়েছেন। যদি কোন সেশন লস না করেন তাহলে তিনি ১৯৬৮তে এসএসসি এবং ১৯৭০এ এইচএসসি পাশ করেছেন।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩১

সমুদ্রনীল বলেছেন: জ্বী শোভা ভাই এখন ও বোহেমিয়ান জীবন যাপন করছেন।
আমি চিনার কারন হলো আমার জন্মস্থান চরকিং ইউনিয়নে।
আপনার স্মৃতিচারনগুলো ভাল লাগে। নতুন পর্বের প্রতীক্ষায়।
শুভকামনা নিরন্তর।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৫

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। হাতিয়ার জীবন নিয়ে আমার সাত পর্বের একটা সিরিজ আছে। ৬নং কমেন্টে লিঙ্ক আছে। ৭ থেকে ক্লিক করে ১ পর্যন্ত যেতে পারবেন। সবগুলোর শুরুতে আগের পর্বের লিঙ্ক দেয়া আছে।
ভালো থাকবেন।

৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৯

আখেনাটেন বলেছেন: আছাড়-মাস্টার। হা হা হা হা হা। পুরোনো স্মৃতি মনে করায়ে দিলেন। গ্রাম থেকে আইল পথে হেঁটে স্কুলে যেতে কতবার যে আছাড় খেয়েছি। আর এখন বড় পাকা রাস্তা। দুই-তিন দশকেই কত পরিবর্তন।

লেখা ভালো লাগল।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। আমাদের চোখের সামনে দেশের যে পরিবর্তন তা অকল্পনীয়। ইংরেজি ছবিতে যে রাস্তা, বাস, গাড়ি দেখে মনে মনে ভাবতাম এইসব আমাদের দেশে কবে হবে। সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেই এ দেশে হয়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার মতে এটা ত্বরান্বিত হয়েছে স্বাধীনতার কারণে।
আমাদের বাড়িটি একটি গ্রামীণ বাজারের সাথে। সেখানেই স্কুল, হাঁটার দূরত্বে তিনটি হাই স্কুল, একটি কলেজ এবং বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা, জেলা শহর আর চৌমুহনীর মতো বিশাল বাণিজ্যিক শহরের সাথে স্থল ও নৌযোগাযোগ সব মিলে সেই কালের বিচারের ঈর্ষণীয় ছিলো আমাদের বাড়ির অবস্থান। এখনো তাই আছে। সে জন্য আমাদের পূর্বপুরুষ বিশেষতঃ আমার দাদার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমার বাপচাচারা পাঁচ ভাই, চার বোন ছিলেন। দাদা সবগুলো বৈবাহিক সম্বন্ধ করার সময় যোগাযোগের বিষয়টি খেয়াল রেখেছিলেন। দূরত্বকে তিনি ভয় পানিনি। ফলে তাঁর নাতিপুতিরা ছড়িয়ে পড়েছে দেশে, বিদেশে।
ভালো থাকবেন।

৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার এ সিরিজ পড়া শুরু করলাম ......

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২২

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: স্বাগতম।
ভালো থাকবেন।

৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৯

ডার্ক ম্যান বলেছেন: এইভাবে পড়তে ভাল লাগে না। মলাটবন্দী করুন।
হাতিয়ার লায়ন বদিউজ্জামানকে কি চিনেন??? বছর দুয়েক আগে দুদক চট্টগ্রামের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৪

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: মলাটবন্দী করার পরিকল্পনা আছে। না, ওনাকে চিনি না। আমি তো হাতিয়ার লোক না। ঘোর শৈশবে বাবার কর্মসূত্রে সেখানে ছিলাম। ১৯৬৮ সালের শেষ দিকে বা ১৯৬৯ এর শুরুতে চলে এসেছি। আর কখনো যাইনি। যখন আবার যাবার কথা ভাবছিলাম তখন জানলাম আমার শৈশবের স্মৃতিময় জায়গাগুলো নদী/সাগরগর্ভে চলে গেছে। তাই আর যাইনি।
ভালো থাকবেন।

১০| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০১

সমুদ্রনীল বলেছেন: সবগুলো পড়েছি। পড়তে পড়তে কখনযে অতীতে চলে গেলাম নিজে ও জানিনা।
আমাদের অতীত সমসাময়িক।৯০ এর দশক থেকে শুরু। তাই বেশি মিল পেলামনা।
অনেক ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৯

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে। এখানে এনেছি ১৯৬৮ থেকে আমার স্মৃতি কথা। আমাদের এক জীবনে কি নাটকীয় পরিবর্তন দেখেছি সেটাই তুলে ধরছি। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.