নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৯

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৩১

আগের পর্বের লিঙ্ক
মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৮

ফসল বোনা, চারা লাগানো

জমি তৈরি হবার পর ফসল বোনা হতো। ডাল জাতীয় ফসল,ধনিয়া, লাল শাক এসবের বীজ ছিটিয়ে দেয়া হতো। বেগুন, টমেটো, কপি এসবের চারা লাগানো হতো। বীজ বোনার কাজে আমাদের চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো ভূমিকা ছিলো না। কিন্তু চারা লাগানোর সময় আমরাও অংশ নিতাম। আব্বা গাছের লম্বা ডালের মাথা চোকা করে তৈরি করা খন্তা টাইপের জিনিস দিয়ে (নামটা মনে পড়ছে না) মাটিতে সেটা গেঁথে গেঁথে সরল রেখায় একটু দূরে দূরে গর্ত করতেন। আমাদের কাজ ছিলো সেই গর্তে একটা করে চারা দিয়ে চারপাশের মাটি দিয়ে চারার গোড়া আটকে দিয়ে গাছের গোড়ায় একটু পানি দেওয়া। এই কাজটি সাধারণতঃ আসরের নামাজের পর শেষ বিকালে করা হতো, যাতে পরের দিন সকালে রোদ চড়ার আগেই চারাটি নতুন মাটিতে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বীজ বোনার পর আমাদের কাজ ছিলো বীজ থেকে নতুন গাছ উঠছে কিনা সেটা দেখতে যাওয়া। খুব আগ্রহ করে দেখতাম কচি কচি ধনিয়া গাছ, লাল শাক এই সব। মাঝে মাঝে খুব আলতো করে আদর করে দিতাম নতুন চারাগুলোকে। সবাই খুব সাবধান থাকতাম কোনো চারা বা গাছ যেন নষ্ট না হয়। ছাগল বা মুরগীর দলের দিকেও নজর রাখতাম।

চারার যত্ন, ফসল তোলা

প্রতিদিন চারা দেখা ছাড়াও আমরা সারা ক্ষেতে খুঁজে দেখতাম কোন আগাছা উঠলো কিনা। সেই আগাছা তুলে আনতাম। অনেক সাবধানতার পরেও দেখা যেতো কিছু কিছু চারা আমাদের পায়ের নীচে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। তখন আমরা একে অন্যকে দোষ দিতাম চারা মাড়িয়ে দেবার জন্য। ধনিয়া পাতা, লাল শাক, পালং শাক যদি রান্নার জন্য তুলে আনার দরকার পড়তো তখন সেটা জমি থেকে তুলে আনার জন্য আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতো। তাজা তাজা শাক তোলার মজাই আলাদা। সকালে তুলতে গেলে দেখতাম শিশিরে পাতা গুলো সিক্ত হয়ে উজ্জ্বল সবুজ দেখাচ্ছে। খুব ভালো লাগতো দেখতে। নিজের ক্ষেতের তাজা শাক সবজি খাবার মজাই ছিলো আলাদা।

মটরশুটি, মূলা চুরি করে খাওয়া

বাড়ির কাছের নীচু জমিতে যখন মটরশুটি ধরে থাকতো। সেটা দেখতে খুব ভালো লাগতো। আমরা করতাম কি , চুপিচুপি মাঠে গিয়ে মাথা নীচু করে রেখে কচি মটরশুট খেতাম। কাঁচাই । কেমন জানি একটু মিস্টি লাগতো। তখন দেশি লালচে ঝাঁঝালো এক ধরনের মূলা চাষ করতেন দাদা। সাদা মূলার চাষও তখন কিছু কিছু করতেন। সেটা চাহিদা ছিলো কম। আমরা আস্তে করে লুকিয়ে মূলা তুলে নীচের অংশটা ভেঙে নিয়ে পাতাটুকু আবার মাটিতে পুঁতে রাখতাম। দু'তিন দিন পর যখন সেই পাতাগুলো শুকাতে শুরু করতো। তখন মূলা গায়েব হয়ে যাবার বিষয়টি দাদার নজরে আসতো। দাদা তখন রাগ করতেন। বলতেন, হার্মাদগুনের কারবার দেইখ্ ছোনি। (হার্মাদগুলোর কাণ্ড দেখো)। খুব রাগলে বলতেন, ইবলিশ। এর চেয়ে খারাপ কোনো কথা তাঁর মুখ থেকে কখনো শুনি নাই।
(চলবে)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ভাগ্য খারাপ। আমি গ্রামের জীবন পাই নি।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আমি পেয়েছি কিছুটা। ঘোর শৈশবে ছিলাম উপজেলা শহরে। এরপর পাঁচ বছর গ্রামের বাড়িতে। এরপর উপজেলা শহরে আট বছর। তারপর জেলা শহরে। মাঝে কিছুদিন গ্রামে। আবার জেলা শহর হয়ে ঢাকায়। পরে কর্মসূত্রে সাত বছর উপজেলা শহরে, সাত বছর জেলা শহরে। এরপর থেকে আবার ঢাকায়। গ্রামে কিছুদিন না থাকলে জীবনের একটা অদেখা দিক থেকে যায়। তাই আমার ছেলেদের নিয়ে উপজেলা আর জেলা শহরে থেকেছি। গ্রামীণ জীবনের কিছুটা ছোঁয়া দেবার চেষ্টা করেছি। গ্রামের বাড়িতে প্রায়ই বেড়াতে নিয়ে যেতাম। এখন আর যেতে চায় না। তবে এখন সেই গ্রাম আর নাই খুব বেশি। নাগরিকতা সেখানে হানা দিয়েছে। তার কিছু ছবি পাবেন সালাহউদ্দিন লাভলু, মোশাররফ করিমের নাটকে।

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মা.হাসান বলেছেন: ছাগল আটকানো খুব সমস্যা ছিলো না, কিন্তু মুরগী বড় সমস্যা করতো। মটরশুটি খেয়েছি। আমাদের এলাকায় ছোলা বুটও খাওয়া হতো। আগুনে পুড়িয়েও খাওয়া হতো। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো আমার টমেটো।
পুরাতন দিনের সুন্দর স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। অনেক ধন্যবাদ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: একমত। ছাগল তো বড়ো। বেড়া দিলেও চলতো। মুরগী আটকানোই কঠিন ছিলো। অনেক সময় ছিটানো বীজ খেয়ে ফেলতো। আবার পাতা খেয়ে ফেলতো কচি গাছের। আপনার অভিজ্ঞতা আমার কাছাকাছি। ভালোই লাগছে। ভালো থাকবেন।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গ্রামের জীবন দারুণ উপভোগ্য

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৯

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক কিছু আছে উপভোগ করার জন্য। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৪

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: মটরশুটি ঠিক আছে কিন্তু মূলা চুরি চাল চুরির মতো নির্দয় ৷ :P

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২০

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হা হা হা । ঠিকই বলেছেন। মূলা পুকুরে ধুয়ে নিয়ে কামড়ে খেতাম। অনেক সময় সালাদ বানিয়ে খেতাম।

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪২

শের শায়রী বলেছেন: দারুন এক নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলাম। মেট্রিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতি বছর দুই বার নিয়ম করে নানাবাড়ী, দাদাবাড়ী যেতাম। সেখানে মটরশুটি, মুলার সাথে, ডিম, ডাব হরহামেশা চুরি করে খেতাম সম বয়সী কাজিনদের নিয়ে। কামলাদের সাথে প্রায়ই দল বেধে গরু চড়াতে যেতাম কোলায় (ধানের জমি)। গোলাপ ফল ( এক ধরনের ফল যাতে তেল হয়) টুকিয়ে বেচা। আরো অনেক কথা মনে পড়ে গেল। মধ্য বয়স প্রায় শেষ হয়ে পৌঢ়ত্বে উপনীত হতে দেরী নেই। খুব ইচ্ছা করে সেই সোনা ঝরা দিন গুলোতে আর একবার ফিরে যেতে।

পোষ্টে ভালো লাগা জানবেন।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হা হা হা। আমরা যারা কাছাকাছি বয়সের এবং গ্রামের সাথে যোগাযোগ ছিলো তাদের সবার অভিজ্ঞতায় কিছু মিল আছে। ফসলের ক্ষেত তেকে এইসব চুরিকে সমাজ খুব বেশি দোষের কিছু মনে করতেন না। সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠছে।
আমাদের এক জীবনে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটার কথা বলার জন্যই এই লেখা। আমাদের ইতিহাসে তো গণমানুষের কোন খবর নেই। আমরা আমজনতার একজন হিসাবে আমজনতার যাপিত জীবনের কথা লিখে যাই। আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে এই সব রূপকথার মতো মনে হবে।
ভালো থাকবেন।

৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: স্মৃতি জাগানিয়া লেখা।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: স্মৃতি বড়ো বেদনার। নাকি আনন্দের !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.