নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কয়েছ আহমদ বকুলের লেখা

কয়েছ আহমদ বকুল

কবিতার জন্য আমি বাঁচি

কয়েছ আহমদ বকুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিলয় নীলের মৃত্যু এবং আমাদের পালিয়ে বেঁচে থাকা

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫২

নিলয় নীলের মৃত্যু এবং আমাদের পালিয়ে বেঁচে থাকা
----------------------------------কয়েছ আহমদ বকুল


রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন পৃষ্টপোষকতায় আরো একটি হত্যা, আরেক মায়ের বুক খালি, আরেক বিধবার আর্ত- হাহাকার। নিলয় চক্রবর্তী নামের এক মুক্তমনা ব্লগার খুন হয়েছেন নিজের বাসায়। মধ্যযুগিয় পৈশাচিকতায় গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে নিলয়কে, লোমহর্ষক - বেদনাময় এ মৃত্যু। কিন্তু কতটা লোমহর্ষক, কতটা বেদনাময়? আমরা কি মনে মনে এ রকম একটি মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলামনা?

অনেকটা পেছন ফেরার দরকার নেই, নিকট অতীতকে হাতড়ে আমরা একটু জেনে নেই আমাদের অপেক্ষাটা কতো নির্মম আর কাপুরুষোচিত। অভিজিৎ রায়, ওয়াশিক বাবু, বিজয় দাস নামগুলো খুব চেনা, পাশাপাশি সাজালে কবিতা হয়। জীবনমুখি তরঙ্গ রঙে সাজানো একেকটি অধ্যায় যেনো এরা। অথচ কি নিষ্টুর ধারাবাহিকতায় খসে গেলো খসে যাচ্ছে দীপ্তমান তারকাগুলো। বাংলা একাডেমীর বইমেলায়, আমাদের চেতনার মহোৎসবে জনসম্মুখে পুলিশের প্রায় উপস্থিতিতে নিহত হলেন অভিজিৎ রায়। রাষ্ট্রযন্ত্র নির্বাক, আইনের স্বাভাবিক তৎপরতা অনুপস্থিত। বরং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির ফসলে নিহত অভিজিতকে নিয়ে আনুষ্টানিক কিছু বললে নাকি প্রবল প্রতিক্রিয়ার সম্মুখিন হওয়া লাগতে পারে সরকারকে। বাহ বাহ বেশ। সয়ং প্রধানমন্ত্রীকে সংশ্লীষ্ট করে এমন বক্তব্যের পর হত্যাকারীরা উৎসাহিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলত আরেকটি হত্যা, ওয়াশিকুর রহমান বাবু। কারণ একই, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি। হত্যা প্রক্রিয়াও সমান। প্রশাসনের একই উদাসিনতা। অতঃপর বিজয় দাশ লিটন। তারপর আজ নিলয় চক্রবর্তী। আমরা জানি আমাদের রাষ্ট্র জানে আমাদের সরকার জানে আইন আদালত প্রশাসন জানে এই তালিকাটা আরো দীর্ঘ হবে, দীর্ঘ হতে হতে একদিন এসে আমার আপনার গাঢ় ছুঁবে গ্রীবা ছুঁবে, লাল সবুজ পতাকা জুড়ে থাকবে কেবল ছুপ ছুপ রক্তের দাগ। আমরা জানি তবুও আমরা নীরব, আমরা অপেক্ষায় থাকি পরবর্তি নামটা আসে কার! আমাদের রাষ্ট্র সন্তর্পনে ধর্মের চাদর পরা ঐ খুনি চক্রকে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যায় কেবল এক চেয়ারের আশায়।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি ঐতিহ্যবাহি রাজনৈতিক সংঘটন। নিশ্চীহ্ন - নিঃশেষ হতে হতে তারা আবার ফিরে দাঁড়িয়েছে কারণ এ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগ অনুভূতির খুবই কাছাকাছি ছিলো এই দলটির অবস্থান। আমাদের স্বাধীনতা আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে এ দেশের মানুষ আওয়ামীলীগকে জেনে এসেছে। আওয়ামীলীগ কোনদিনই কেবল মুসলমানের সংঘটন বা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানের সংঘটন হিসাবে পরিচিত ছিলোনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ছিলো তাদের প্রধান শ্লোগান। সময়ের ব্যবধানে সেই আওয়ামীলীগ আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে? নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর বলে চাপাতি চালানো হচ্ছে মানুষের উপর আর আওয়ামীলীগ সেই ধর্মীয় উগ্রতাকে মেনে নিয়ে একের পর এক মানুষ হত্যা নীরবে দেখে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ ভুলে গেছে এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান কিন্তু তারা ধর্মীয় ভাবে উগ্র নয়। ইসলাম শান্তীর ধর্ম সহনশীলতার ধর্ম ভ্রাতৃত্ববোধ আর সামাজিক সহ অবস্থান নিশ্চীত করার ধর্ম। সেই ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে যারাই উগ্রপন্থা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবে বা তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে মনে হয়না বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদেরকে ক্ষমা করবে। চেয়ার বাঁচানোর সহজ পথ হিসাবে আওয়ামীলীগ যদি ধর্মীয় উগ্রতাকে নীরবে মেনে নেয় বোধকরি এটা তাদের একটা বিরাট ভুল হবে। আওয়ামীলীগকে ভুলে গেলে চলবেনা এদেশের মানুষ ধর্মকে পুঁজি করা রাজনীতির প্রাণ পুরুষ খ্যাত জামাতিয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মানসেই ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে নিরঙ্কুষ সংখ্যাঘরিষ্টায় নির্বাচিত করেছিল, ২০১৪এর বিতর্কিত নির্বাচন নীরবে মানুষ মেনে নিয়েছিলো মূলত সে কারণেই। মানুষ চায়নি ৬৩ জেলায় আবার এক সাথে বোমা বিষ্পোরিত হোক, মানুষ চায়নি উদিচির বোমা হামলা , মানুষ চায়নি পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে রক্তে রঞ্জিত চিৎকার। সহজ কথা এদেশের মানুষ ধর্মীয় উগ্রতা চায়না বলেই আওয়ামীলীগ আজ ক্ষমতায়, যদু মধু আজ মন্ত্রী। বাংলাদেশের মানুষের সরল স্বাভাবিক অনুভূতির মুল্যায়ন যদি আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান সরকার করতে না পারে, আর সত্যি সত্যি যদি আমাদের রাষ্ট্রকে একটি ধর্মীয় উগ্রতার পৃষ্টপোষক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্টার দিকে এভাবে নীরবে তারা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশের মানুষ হয়তোবা আরেকবার রাষ্ট্র রক্ষার নিমিত্তে একটা কিছু করেও বসতে পারে।

হত্যাগুলো খুবই নির্দিষ্ট ও উদ্দেশ্যমন্ডিত। সরকার জানে কারা এসব করছে, কোন মাদ্রাসার কোন শিক্ষক কি বক্তব্যের মাধ্যমে কোমলমতি কিশোরদের এসব কাজে অনুপ্রাণিত করছে সকলের জানা। তবু সবাই নিস্কৃয় নীরব, এই নীরবতাই মূলত পৃষ্টপোষকতা। নিলয়রা মরছে, আমরা যারা পারছি পালিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু কতদিন, মরে পালিয়ে আর কতদিন, এ জন্যেই কি আমার বাবা আপনার ভাই উনার ছেলে যুদ্ধ করেছিলো? আমরা কি আমাদের আজন্মের লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলাকে এভাবে বিচ্ছিন্ন ভাবে মরে মরে অথবা নীরবে পালিয়ে বেড়িয়ে গুটিকয় স্বার্থান্বেষি মানুষের চেয়ারের খোরাক বানিয়ে দেব?


কয়েছ আহমদ বকুল
০৮/০৮/২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.