নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে...

C:\Users\asusmobile\Desktop\FF.jpg

কেএসরথি

ভালো আছি, ভালো থেকো...আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো!

কেএসরথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বিদেশ ভ্রমন - ৩ - উড্ডয়ন ও অবতরন

১৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৬

আমার বিদেশ ভ্রমন - ২ - আকাশে উড়াউড়ি



...সে প্রায় ১৬-১৭ বছর আগেকার কথা। লেখি লেখি করেও আর লেখা হয়নি। তো আজ ভাবলাম - লেখা শুরু করি, দেখি কতদূর যাওয়া যায়...



প্লেন তখন রানওয়ে দিয়ে ছোটা শেষে মেঘ চিড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হলো সমস্ত ঢাকা শহরটাই যেন বন্যায় ডুবে আছে, যদিও তখন বর্ষাকাল ছিল না। চেনা ঢাকা শহরটাকে ওপর থেকে এতটাই অচেনা মনে হয়, কি আর বলব! যেন এই প্রথম শহরটাকে দেখছি। ছোট ছোট বাড়িঘর, রাস্তা - কে বলবে জীবনের সব ক'টি বছর ঐসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করেই কেটেছে। দেখে মনে হয় মাইলের পর মাইল শুধু ধানক্ষেত আর মাঠ, আমাদের দেশে জায়গা নিয়ে এতটা সমস্যা - উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সব নাগরিকরাই যেন ১০ বিঘা জমির মালিক!



যারাই প্লেনে চড়েছেন তারা জানেন (যারা চড়বেন তারা ভবিষ্যৎে জানবেন) - বিমান ভ্রমন ভয়ংকর রকম সাদামাটা একটা ভ্রমন। বাস, ট্রেন, স্টীমার - সবখানেই মুক্ত বাতাস আর চলাচলের জায়গা থাকে। কিন্তু বিমানের ভেতর একেবারেই উল্টো। সিটগুলো ছোট ছোট, বেশি লম্বা হলে হাটু সামনের সিটের সাথে বারবার ধাক্কা খাবে, পাশের লোক ঘাড় ত্যাড়া হলে আপনার হ্যান্ডরেস্ট দখল করে নিবে, পিছনে কোন ত্যাদড় বসলে একটু পরপর পিছন থেকে আপনার সিটে লাথি মারতেই থাকবে - এসব কিছু ঘটতে থাকবে আর আপনি বসে থাকবেন একটি পুরোপরি বন্ধ, সীল্ড একটি ধাতব যানের মাঝে - এবং আপনি যদি সৌভাগ্যবান হন, তাহলে এইসব অত্যাচার সহ্য করতে হবে কয়েক ঘন্টার জন্য - আর যদি কপাল খারাপ থাকে, তাহলে হয়ত ১৫-২০ ঘন্টা!



আমরা যাচ্ছিলাম কুয়েতের উদ্দেশ্য, তো যাত্রাকালে লাগবে ৫-৬ ঘন্টার মতো। খারাপ না, তার উপর এক মামার বদৌলতে বিজনেস ক্লাসে বসে আরামেই যাচ্ছি। সত্যিকার অর্থে সেটি ছিল আমার প্রথম বিমান ভ্রমন, তাই বিজনেস-ইকোনমী এসবের তফাৎ খুব একটা বুঝিনি।



একটু পরই দেখলাম বিমানবালাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল। দেখে মনে হলো যেন কোথাও আগুন লেগে গেছে, আর উনারা পানি খুজে পাচ্ছেন না। একবার এদিক যায়, দু'মিনিট পর আবার ওদিক। উনাদের দৌড়াদৌড়ি দেখে মনে হচ্ছিল, সব জিনিসপত্তর এক জায়গায় রাখলেই তো হয় - তাহলেই তো বারবার এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে হয় না :P



যাইহোক অল্প কিছুক্ষন পরই, একজন বিমানবালা একটি ছোট ট্রলিতে করে চা-কফি নিয়ে আসলেন। আমার কাছে এসে খুব স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করলেন "চা য়ে?" - আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম - 'চা য়ে' মানে কি? উনি কি বাংলা বলছেন নাকি হিন্দী? উনি যে চা সাধছেন সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু শুধু 'চা' না বলে 'চা য়ে' বলছেন কেন? শেষে 'য়ে' টা কেন লাগালেন?



যাই হোক আমি গম্ভীরভাবে বললাম "কফি"। ইসমার্ট মানুষ তো তাই, আর তাছাড়া প্রথমবার প্লেন চড়ছি কফি খেয়ে একটু ভাব দেখানো দরকার! যাই হোক, উনি খুব ছোট একটা ট্রেতে এক কাপ ব্ল্যাক কফি ঢেলে সাথে ২ প্যাকেট ক্রিম/চিনি দিয়ে ট্রে টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমিও ভ্দ্র ছেলের মতো ট্রে টা নিতে গেলাম। ওমা!!! মহিলা দেখি ট্রে ছাড়ে না। আমি ট্রে টানি, উনি ট্রে ধরে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। কিরে বেটি কফি সাধলি, এখন আবার দিচ্ছিস না কেন? :-* এটা কেমুন ব্যবহার? উনি দেখি এদিক ওদিক মাথা নাড়ছেন - আমি তো পুরোই বেকুব - তখন আমার সামনের সিটের দিকে তাক করলেন, আর আমি দেখলাম সামনের সিটের পেছনের দিকেই একটি ট্রে আছে, যা খোলা যায়, আবার খাবার পরে উঠিয়ে রাখা যায়। আমি দেখেছিলাম ঐ ট্রেটা আগেই, কিন্তু ওটাই যে এখন ব্যবহার করতে হবে, আমি কি করে জানব :P আমি একটু লাজুক হাসি দিয়ে উনার কাছ থেকে শুধুমাত্র কফির কাপটা নিলাম। আমার হাসিতে উনার মন গলেছিল বলে মনে হয় নি।



এদিকে আমার ছোটভাই সমানে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, হাজার হাজার সব প্রশ্ন। আর আমি মনিটরে খালি দেখছি কোন দেশের উপর দিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে যখন পাকিস্তান পেরিয়ে আসলাম, তখন নদীনালা, গাছপালা সব উধাও হয়ে গেল - শুরু হলো বিস্তীর্ণ পাহাড়ের সারি। মেঘ আছে তবে অতটা না। একসময় পাহাড়ের চুড়াতে তুষাড়ে ছাপ দেখতে শুরু করলাম, সম্ভবত আফগানিস্তান এলাকার সীমানা, মনে নেই ঠিকঠাক। সে এক অপূর্ব দৃশ্য - সবুজের কোন ছিটেফোটাও নেই কোথাও, সব রূক্ষ পাথরের পাহাড় অথচ পাহাড়ের চূড়াটা শুভ্রশ্বেতকায়। কোন জনবসতি চোখে পড়ছিলনা। আর থাকলেও সেটা এত উপর থেকে চোখে পড়ার কথাও নয়।







একসময় দুপুরের খাবার সময় এলো। আমি তো মনে হয়, শুধু এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম :P আমাদের ভেজিটারিয়ান/চিকেন অফার করা হলো, চিকেন নিলাম, প্লেনে উঠে শুধু সবজি খাব নাকি? যাই হোক খাওয়া খুব একটা খারাপ ছিলনা। চিকেন, ম্যাশড পটেটো (আলুর ভর্তা মাখনসহ), রুটি, বিস্কুট, মাখন, জেলী, কমলার রস (ভয়ংকর তেতো), পেস্ট্রী - আমার মা দেখি শুধু রুটিটা মুখে দিয়ে বললেন "এই এসব সরা আমার সামনে থেকে, কি বাজে গন্ধ এসব খাওয়াতে" - আমি বললাম "এক কাজ কর তুমি আমার রুটিটা খাও, আর আমি না হয় তোমার পুরো খাবারটাই..............." :P







যাই হোক, সিনেমা চলছিল মনিটরে। সিনেমা দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ করলাম। ব্যাটারা দেখি একই সিনেমা বারবার দেখাচ্ছে। কিছুক্ষন সিনেমা বাদ দিয়ে হেডফোনে গান শুনলাম। গানের চ্যানেল বদলাতে বদলাতে হঠাৎ করে কানে লাগল একটা গান। তখন অবশ্য জানি না, কিন্তু ওটা ছিল আরব রাজ্যের তৎকালীন সুপারহিট একটি গান। গানের কথা গুলো আমার কানে এইরকম লাগছিল:



"আম্মা লে এএএএএএএএ, আম্মা লে এএএএএএএএ

আম্মা লে এএএ, আম্মাআআআআ লে এএএএএএএএ।

আম্মা লে এএ, হালাতামা

হিছালা সাইআ লে এএএএএএএ!" :D



গানের কথায় তো আমি কাইৎ!!! একি কিম্ভূৎকিমাকার টাইপ গান!



আম্মা নিব কেন? আপনার আম্মা আপনে রাখেন!!! কিন্তু গানের তালটা ভালই। গানটা এতটাই ভাল লেগেছিল, যে এখনও মনে আছে। পরে অনেক কষ্টে গানটা খুজে বের করেছিলাম, এবং দেখলাম গানের কথাটা "আম্মা লে এএ" না.... হবে "আম্মা নে এএ" :D !







গায়িকা: ডায়ানা হাদ্দাদ

গানটির ইউটিউব লিংক: Diana Haddad - "Ammanih"



এর মাঝে আবার কফি ও বিস্কটু দেয়া হলো। ধীরে প্লেন নামার সময় হলো। কুয়েতের উপরে এসে দেখি প্লেন আর নামে না, খালি ঘুরছে, আর ঘুরছে। পরে জেনেছি বিমানবন্দর থেকে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত বিমান মাটিতে অবতরন করে না।



কিছুক্ষন পর প্লেন নিচে নামা শুরু করল। জানালা দিয়ে দেখি অদ্ভূত এক দেশ। যতদুর চোখ যায়, শুধু বালি আর পাথর, এরই মাঝে আলোর ছড়াছড়ি। সবকিছু সাজানো, যেন মনে হয় এই মাত্র কেউ ধুয়ে মুছে রঙ করে গেছে। রাস্তায় কোন জ্যাম নেই, বাড়ীগুলো সব একই রকম, হাইওয়ে গুলো মাইলের পর মাইল চলে গেছে - যেন কেউ নিখুত কোন পরিকল্পনায় সাজিয়েছে আর এই সাজানো খেলাঘর সাজানোই থেকে যাবে যুগের পর যুগ। কিন্তু সব কেমন যেন ধুসর! একটা দম বন্দ্ধ - বন্দ্ধ ভাব।



প্লেন টেক অফের সময় যতটা ধরা খেয়েছিলাম, ল্যান্ডিং-এ তেমন কিছু টের পেলাম না। খুব মৃদু একটি ঝাকুনি লাগল, রিকশায় চড়ার সময় এর চেয়ে বেশীই লাগে। ধীরে ধীরে প্লেন থামল, আমরা সব নেমে যাবার জন্য রেডী, কিন্তু দরজা খোলা আর হয় না। অধৈর্য্য হয়ে গেলাম, আর কতক্ষন আটকে থাকব, এতটুকু বাতাসের জন্য বুকটা হাসফাস করছিল! অবশেষে দরজা খোলা হলো আর কুয়েতের আবহাওয়ার উষ্ম অভ্যর্থনা জানাল। মনে হচ্ছিল চুলার সামনে এসে দাড়িয়েছি। অথচ আমরা কিন্তু টানেলের মাঝ দিয়েই হেটে যাচ্ছিলাম। আর ওটা নাকি কোন গরমই না! সরাসরি রোদের মাঝে দাড়ালে না জানি কি হতো!







টানেল পেরিয়ে এসে ঢুকলাম বিমানবন্দরে। কয়েক ঘন্টা আগে ছেড়ে এসেছি আমাদের বিমানবন্দর, আর এখন দেখছি কুয়েতের বিমানবন্দর - কত পার্থক্য, কত তফাৎ! যেদিকেই তাকাই সবকিছু আলোতে ঝলসে যাচ্ছে। দুনিয়ার সব ব্রান্ডের দোকান দেখা যাচ্ছে, একই সাথে তারা আপনার পকেট খালি করে দিবে, আবার আপনার হাতে তুলে দেবে প্রথম শ্রেনীর কোন বস্তু। অর্থাৎ আপনার পয়সা খরচ হবে ঠিকই, কিন্তু এর বিনিময়ে কোন নকল বা দুনম্বরী কিছু পাবেন না। আমার ভাই কিছু চকলেটের দিকে ইশারা করল, আমি বললাম "মাইর দিব"।















মৃদু এয়ারকন্ডিশনে মনে হচ্ছিল চেয়ারে একটু গা এলিয়ে দেই। কিন্তু বিশ্রাম নেবার সময় তো তখন নেই। যেদিক তাকাই সব আরবী, ইংরেজীও আছে, কিন্তু খুব কম। চারদিকে বোরখা পড়া মহিলা, আবার একই সাথে শার্ট-প্যান্ট পড়াও মহিলাও দেখলাম। জগাখিচুড়ী অবস্থা। এদের মাঝে মা আর ভাই কে নিয়ে ইমিগ্রেশনের দিকে চললাম।



ছবি: গুগুল

(চলবে)




******************************************

আমার বিদেশ ভ্রমন - ১ - পূর্বকথা

আমার বিদেশ ভ্রমন - ২ - আকাশে উড়াউড়ি

******************************************

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯

বিতর্কিত বিতার্কিক বলেছেন: তিনটি খণ্ড একটানে পরে আসলাম। বর্ণনা ভঙ্গী ও লেখার হাত ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান। শুভকামনা।

১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

কেএসরথি বলেছেন: ধন্যবাদ, চেষ্টায় আছি।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন লাগছে ভাই! চলুক। গানটা দেখে শুনে বড়ই প্রীত হইলাম। :#)

১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

কেএসরথি বলেছেন: অনেকদিন পর গানটা শুনলাম/দেখলাম, আপনার সাথে সহমত, বড়ই প্রীতিকর ;)

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০০

চড়ুই বলেছেন: ভাই খালি বিদেশ ভ্রমন নিয়ে যতগুলো পর্ব লিখলেন আমি ভাবছিলাম বিদেশ কি পৌছাইতে পারবেন কিনা কে জানে ? অবশ্য পরে ভুল প্রমাণিত করে অবশেষে পৌছাইতে পারছেন ভালো।

২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১২

কেএসরথি বলেছেন: ভাইজান, আপনাকে ভূল প্রমানিত করতে পেরে আমিও বড় আনন্দ পেলুম! ;)

৪| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০৮

জল কনা বলেছেন: একটানে পড়লাম তিনটা পর্ব!!! :#) লেখার ভঙ্গিমা ভাল লেগেছে!
ভাইয়া কি এখনো কুয়েত থাকেন?

পরের পর্বের অপেক্ষায়! B-)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

কেএসরথি বলেছেন: নাহ আপু, এখন দেশেই আছি। তবে আবারো কোথাও পালানোর চিন্তায় আছি। :-P

৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

জল কনা বলেছেন: যেখানে যান, তার আশের পাশের বর্ণনা দিতে ভুইলেন না । B-)
আমরা কোথাও যাইতে পারব না দেখে কি পড়তে আর ছবি দেখতে পারব না বুঝি!! B-))

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

কেএসরথি বলেছেন: যেতে পারবেন না কেন? আপনিও লিখবেন সময় পেলে।

৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪২

ইমরান আশফাক বলেছেন: বিমান উঠা-নামার সাথে যে কান বন্ধ বা খুলা যায় সেটা আপনার পোস্টে দেখলাম না :D :D

যাই হোক খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আমাকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আপনাদের সাথে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.