নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন হুদাহুদি মানুষ(এ ব্লাডি সিভিলিয়ান)

কাশাচ

একজন হুদাহুদি মানুষ(এ ব্লাডি সিভিলিয়ান)

কাশাচ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামী সম্রাট

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৪

মোস্তাক ভাইরে মেসের সবাই গুণদা ব‌ইলা ডাকে তার মুখভর্তি দাঁড়ির খাতিরে।নির্মলেন্দু গুণের সাথে দাঁড়ি ছাড়া আর কিছুতেই তার কোন শারীরিক মিল নাই,তবুও।মোস্তাক ভাই মেস ম্যানেজার।আমার সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ একটু কম হয়।তিনি যখন মেসে উপস্থিত থাকেন,আমি সেই সময়টা বাইরে বাইরে কাটাই।খুঁজতে গেলে এর পেছনে দুইটার বেশি কারণ খুঁজে পাওয়া যাবেনা।এক টাকা,দুই নূরজাহান।নূঁড়ি আমার অতি ফ্রি-প্রেমিকা।স্বাধীন অর্থে না।তার স্বভাব এবং চিন্তায় ফ্রি ভাব প্রবল।কোনকিছু কিনতে গেলে সে আগে দেখে জিনিসটার সাথে কিছু ফ্রি দেয় কিনা।যে জিনিসের সাথে কিছু ফ্রি দেয়না,সেই জিনিসের প্রতি নূঁড়ির দরদ আর আগ্রহ কম।

তো এই নূঁড়ি বেশি খাতির দেখাইতে গিয়া একদিন আমার মেসে আইসা সবার সাথে পরিচয় হ‌ইয়া গেছে,গুণদার সাথেও।নূঁড়ির মেসে আসার এই ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো ঠ্যাকে নাই।এমনিতেই মেসে সবার পরে টাকা দিয়া রেহাই নেই আমি।নূঁড়ির পর থেকে পলায় পলায় থাকাকালীন সময়ে দূর্ভাগ্যচক্রে গুণদার সাথে দ্যাখা হয়ে গেলে তিনি যেই হাসিটা আমারে উপহার দেন তার তাৎপর্য খুব‌ই অশ্লীল।তারপর সেই অশ্লীল হাসি মুখে টাঙাইয়া রাইখাই বলেন-"এইভাবে তো ব্রাদার প্রেম চললেও মেস চলে না।সুন্দরী প্রেমিকা না হয় মন ভরায় দেয়,টাকা না দিলে তো আমি পেট ভরাইতে পারবো না।"

আমি মেকি হাসি মুখে আইনা বলি,"গুণদা,কাল পরশুর মধ্যে আপনের হাতে টাকা পৌঁছায় যাবে।"

সেয়ান ম্যানেজার আমার কথারে গা না ক‌ইরা উল্টা জিগায়,"কাইল না পরশু?"

উপরের দিকে তাকাইয়া আন্দাজেই হিসাব মেলানোর ছলে কথা আওড়াই,যেন কতজনের কাছে টাকা পাই আমি,আর সেই টাকা দুয়েকদিনের মধ্যেই আমারে তারা দিয়েও দিতেছে।তারপরে কনফার্ম একটা ভাব নিয়া ব‌ইলা ফেলি,"পরশু রাতে ১০০% শিওর।"

-দেইখো ব্রাদার শাহ্জাহান,কথার হেরফের যাতে না হয়।পরশু যেন কাজের বাহানা দিয়া সময় দুইদিন আর‌ও না বাড়ে।

-ঠিকাছে গুণদা।

শাহ্জাহান আমার নাম নয়।আব্বা আম্মা শখ ক‌ইরা নাম রাখছিলো শাহ্ জামাল।প্রথম প্রথম মেসের সবাই জামাল ব‌ইলা ডাকতো।নূরজাহানের সাথে ঘুটা দিয়া তারা এখন আমারে শাহ্জাহান বানায় দিছে।এতে আমার মন খারাপ করে নাই,বরং ভালোই লাগে।সম্পদে না হ‌ইলেও নামে তো সম্রাট সম্রাট ভাবটা ফুটে উঠছে।

নূঁড়ির আব্বা আম্মা বাঁইচা নাই।ও ওর বড় মামার বাসায় থাকে মোহাম্মদপুরে।আমিও এতিম।তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে,গানের মতো আমাদের দুই এতিমের প্রেম জমেছিলো ফার্মগেটে।ফার্মগেটের প্রেম তারপরে আমরা পুরা ঢাকা শহরের অনেক জায়গাতেই জমায় দিছি।

নূঁড়ি একটা চাকরি পাইছে।সেই উপলক্ষে আয়োজিত মোটামুটি একটা দাওয়াতে আমি ওর মামার বাসায় ব‌ইসা আছি।নিজে বেকারী ক‌ইরা প্রেমিকার চাকরি পাওয়ার উছিলায় বিয়ার কথা ক‌ইতে আমার মতো ছ্যাবলার কোথাও আটকানের কথা না।তাই ওর বড় মামা ডাকাতেই আইসা পড়ছি।ওর বড় মামার দুই মেয়ে,দুইটাই ভার্সিটিতে পড়ে।ওরা দুইজনের একজন‌ও নূঁড়িরে দেখতে পারে না দুই চোখের কিনার দিয়া।বড় মামাও চায় আপদ ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় হোক।

ঘামছোটা প্যাঁচানো একটা ভাইবা দেয়ার পর বিয়ে মোটামুটি ঠিক ক‌ইরা বাসা থেকে বের হ‌ইছি।নূঁড়িও আমারে আগাইয়া দেয়ার ছুঁতা নিয়া বের হ‌ইছে সাথেই।ওর মুখটা হাসি হাসি।

-এত তাড়াতাড়ি বিয়ার কোন দরকার ছিলো না নূঁড়ি।আর কয়ডা দিন জমাতি প্রেমের দোকান চালাইলে ক্ষতি ছিলো না কোন।

-মিনুরে তোমার পছন্দ হ‌ইছে জামাল?

-মিনু কে?

নূঁড়ি আমার দিকে কোনাইচা ক‌ইরা তাকাইয়া দাঁতে দাঁত চাপতেছে।ঘটনা টের পাইয়া আমি ক‌ইলাম-"ও হ্যাঁ!তোমার মামাতো বোন বড়টা?আরেহ্ না!অরে আমার পছন্দ হ‌ইবো ক‌ইত্তে?"

-তুমি চোরাচোখে অর দিকে কয়েকবার তাকায় ছিলা।আশা বুইনো না,বাদ দেও বুঝছো।ও আমার থেইকা অনেক বেশি সুন্দরী হ‌ইলেও তোমার মতো পোলারে অয় পাত্তাই দিবো না।তোমার নামটাই তো অর পছন্দ হয় নাই।জামাল গোটা ক‌ইয়া ডাকে তোমারে অয়।"-ব‌ইলাই নূঁড়ি খুব হাসা শুরু ক‌ইরা দিলো।

জামাল গোটা নামটাতে আমি অভ্যস্ত।স্কুলের বন্ধু থেকে শুরু ক‌ইরা ভার্সিটিতে আইসাও বন্ধুরা আমারে জামাল গোটা ক‌ইয়া ডাকতো।নূঁড়িও রাইগা গেলে গালিগালাজ না ক‌ইরা এই নামেই ডাকে।কিন্তু মিনুর ব্যাপারটা আলাদা।হনেওয়ালী শিক্ষিতা সুন্দরী শালী যদি নাম‌ই পছন্দ না করে,বিয়ের পরে তো তার সাথে খাতির জমবে না।

-অয় যখন আমারে জামাল গোটা ব‌ইলা তোমার কাছে কথা জুইড়া দেয় তখন তোমার খারাপ লাগেনা নূড়া পাগলা?

নূঁড়ি দাঁত কিটমিট ক‌ইরা ক‌ইলো-"তরে না কয়দিন ক‌ইছি নূড়া পাগলা ক‌ইয়া ডাকবি না আমারে?"

-আরেহ্ চ্যাতো ক্যা!আদর ক‌ইরা ডাকলাম।তুমি তো জানো না,মিশা স‌ওদাগরের একটা সিনেমার নাম নূরা পাগলা।হিট সিনেমা খুব।

-তর মিশারে বুকে ল‌ইয়া তুই সংসার করিস,গেলাম আমি।

-এই এই ক‌ই যাও?আমি তো মজা উড়াইতেছিলাম।

-এত মজা না উড়াইয়া একটা সস্তার বাসা খোঁজা শুরু করো।আমারে নিয়া তো আর মেসে থাকতে পারবা না।আর চাকরি বাকরি করবা না নাকি?

-হ করমু তো।বিয়া করতে হ‌ইলে চাকরি তো লাগে।চাকরি নিয়া দুইজনে সংসার শুরু করুম।বছর দুই না যাইতে না যাইতেই মিশা স‌ওদাগরের মতো একটা ফুটফুইটা পোলার বাপ হমু।পোলার নাম দিমু ড্যানি।অরে কোলে নিয়া এইডা ওইডা খাওয়াইতে খাওয়াইতে তুমি একটা সংসারী গান ধরবা।এক গানে অয় বড় হ‌ইয়া যাইবো।তারপরে গান শেষে আমারে ডাক দিয়া ক‌ইবো-ড্যাডি তোমার বন্ধুর মাইয়াডা জোশ আছে।অরেই আমার লাগবো।

নূঁড়ি হাইসা গড়াগড়ি খাইতেছে আমার সস্তা রসিকতায়।ওর চেহারায় জেল্লা নাই।যাগো চেহারা সুন্দর না আল্লায় তাগো ভূবনভোলানো হাসির প্যাকেজ দিয়া দুনিয়ায় পাঠায়।হাসি দিয়াই তারা জগতের সব সুন্দর তুচ্ছ বানাইয়া নিজের দিকে ফোকাস করায়।নূঁড়ির হাসি সেইরকমের।এই হাসি দেখার সাধ বাদ দিয়া মিনুর মতো সুন্দরী মেয়েরে পছন্দ করা একজীবনের সবচেয়ে বড় পাপ,ঘোর অপরাধ।আমি পাপী জীবন পাশে রাইখা নূঁড়ির দিকে হা ক‌ইরা তাকায় আছি।ও হাসতেছে এখন‌ও।হাসতে হাসতে চোখ দিয়া পানি গড়াইয়া পড়তেছে।আমি একটু পানি ওর চোখসমুদ্র‌উপকূল থেইকা হাত দিয়া নিয়া আমার শার্টে মাখলাম আতর মাখার ভঙ্গিতে।এই কাজটা আমি মাঝেমধ্যেই করি।নূঁড়িও খুশি হয়।খুশি হয়ে আমার দিকে প্রেমভরা চোখে তাকায় থাকে।আমি তখন ওরে বলি-"নূরজাহান,তুমি আমার ভীষণ একটা অসুখ।যারে আপন ভাইবা আমি বুকে পুষি।"

কথা শুইনা নূঁড়ি আমার দিকে তাকাইয়া তাকাইয়াই অঝোরে কাইন্দা দেয়।আমার তখন ইচ্ছা করে অরে কঠিন ক‌ইরা বুকে ঠাইসা ধ‌রি।কিন্তু পারিনা লোকলজ্জার খাতিরে।হোটেলের ভাত আর ঘরের ভাত আলাদা।নূঁড়ি আমার ঘরের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.