নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন বিদ্রোহীর গর্জন

কবি ও কাব্য

একজন বিদ্রোহী বলছি ঃ যেখানে দেখিবে কোন অন্যায় অত্যাচার সেইখানে পাইবে শুনিতে আমার হুংকার সময় এসেছে সাথিরা সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে গর্জে উঠার।

কবি ও কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা চলচ্চিত্রের দুই ধারা ও আমার কিছু কথা -

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৪

গতকাল ফেইসবুকের ‘বাংলা চলচ্চিত্র’ গ্রুপে আমার একটি স্ট্যাটাসে ৭০ টির মতো মন্তব্য আসলো যেখানে বাংলা চলচ্চিত্রের মূলধারা , ভিন্নধারা নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন যার একটি পক্ষের বক্তব্যর সারমর্ম হলো ‘ ব্যাচেলর, কমন জেন্ডার, ঘেতুপুত্র কমলা, শ্রাবণ মেঘের দিন এর মতো ছবিগুলো মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি এবং এই ধরনের ছবি বেশি হলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াবে উনাদের তা বিশ্বাস ‘। আর আরেকটি পক্ষ এই বক্তব্যর সম্পূর্ণ বিরোধী যারা মনে করে আমাদের ধ্বংসের মুখে যাওয়া শিল্পকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হলে আম্মাজান, বিক্ষোভ নির্ভর মশলাদার ছবি বেশি করে নির্মাণ করতে হবে ।

একটা স্ট্যাটাসের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্য দেখে একটা বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা পেলাম যে এখানে এমন অনেকেই আছেন যাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মুল উপাদান বা ধারা সম্পর্কে ভুল ধারনা আছে। কেউ কেউ অফট্র্যাক এর ছবিগুলোর সাথে মুলস্রোতধারার বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী ছবিকে এক করে ফেলেন। এই ব্যাপারে খোদ এই গ্রুপের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডমিন এর ধারনাটাও পরিস্কার না। তাদের সবার অবগতির জন্য সংক্ষেপে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি সম্পর্কে একটু ধারনা দিয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত তুলে ধরলাম ।



১৯৫৪ সালে প্রয়াত আব্দুল জব্বার এর পরিচালনায় যার প্রযোজক ছিলেন আমাদের জনপ্রিয় অভিনেতা আলমগীর এর বাবা । 'মুখ ও মুখোশ' ছবির মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলদেশ) এর চলচ্চিত্র শিল্পের জন্ম হয়েছিল । এরপর কেটে গেছে ৫৮ টি বছর বা প্রায় ৬ দশক । এই ৬ দশকে আমাদের চলচ্চিত্রের বহু উত্থান পতন এর মধ্যে আজকে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে । মনে করি এই ৬ দশকে আনুমানিক ২৪০০ এর মতো ছবি মুক্তি পেয়েছে । যার মধ্য দুটি ধারার ছবি আমরা বলতে পারি হয়েছে যা হলো মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি (আমজনতার বিনোদনধর্মী ছবি) ও ভিন্নধারার সমালোচকমুলক ছবি । মুল ধারার বাণিজ্যিক ছবিগুলো হলো - কাচের দেয়াল, টাকা আনা পাই, তালাশ, এই দেশ তোমার আমার, রুপবান, আসিয়া, সুতরাং, বাবুল ,জীবন থেকে নেয়া, আবার তোরা মানুষ হো, হারানো সুর, আলোর মিছিল, মনিহার, অশিক্ষিত, ওরা ১১ জন, সারেং বউ, লাঠিয়াল, সুন্দরী, কসাই, দায়ী কে, খোকনসোনা থেকে শুরু করে আজকের চোরাবালি পর্যন্ত শত শত ছায়াছবি তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক ধারার। তার বিপরীতে ভিন্নধারা ছবি হয়েছে সূর্য দীঘল বাড়ী, তিতাস একটি নদীর নাম, ঘুড্ডি, ছুটির ফাঁদে, দহন, মাটির ময়না একাত্তরের যীশু সহ সর্বোচ্চ ১০০ টি (মুল হিসাবে আরও কম) । মুল ধারার বাণিজ্যিক ছবি দিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ ও গঠন করেছিলেন জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, এহতেশাম, খান আতাউর রহমান, মোস্তাফিজ, ইবনে মিজান, আমজাদ হোসেন থেকে শুরু করে দশকে দশকে শহিদুল ইসলাম খোকন, কাজী হায়াত, সোহানুর রহমান সোহানরা। সেই অক্লান্ত পরিস্রম,মেধার কারনে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিনোদনের সবচেয়ে বড় ও প্রধান মাধ্যম হয়েছিল সিনেমা হলে সিনেমা দেখা । তৈরি হয়েছিল প্রায় ১২০০ এর মতো সিনেমা হল (আজ যার সংখ্যা ৬৫০ এর মতো ) । সেইসব হলে দিনের পর দিন মানুষের ঢল নামতো সুভাস দত্ত, আমজাদ হোসেন, এহতেশাম, জহির রায়হান, শিবলি সাদিক, মিন্টু, ঝনটু দের ছবি দেখার জন্য । সেই জনপ্রিয় মাধ্যমে মাঝে মাঝে শেখ নিয়ামত আলী,আলমগীর কবির, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী , তারেক মাসুদ রা হাজির হতেন পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার বাহিরের কিছু ছবি নিয়ে । তাদের সেই ছবির বক্তব্য সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ বুঝতো না যার ফলে তাঁরা শিক্ষিত শ্রেণী ,সিনেমা সমালোচক শ্রেণী ছাড়া আপামর সাধারন দর্শকদের কাছে তেমন পরিচিত ছিলেন না বা তাদের ছবি দেখতে ইচ্ছুক ছিল না। গত ৬ দশকের মুক্তিপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ছবির তুলনায় শেখ নিয়ামত আলী - তারেক মাসুদ এর ভিন্ন ধারার ছবির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলা যায়। এমনকি বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় যত অভিনেতা অভিনেত্রী ছিলেন,আছেন তাঁরা কেউ কিন্তু ঐঅল্প সংখ্যা ভিন্নধারার ছবি দিয়ে কিন্তু সিনেমা দর্শকদের কাছে কিংবদন্তী হয়ে উঠেননি বা হয়নি। রাজ্জাক,রহমান, আলমগীর, ফারুক, বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, কাঞ্চন, জসিম, জাফর ইকবাল - আজকের শাকিব খান পর্যন্ত কেউই বছরের পর বছর সূর্য দীঘল বাড়ী - মাটির ময়না ঘরনার ছবিতে অভিনয় করেনি। এমনকি এমনও জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন যারা তাদের ক্যারিয়ারে কোনদিন ঐ ভিন্নধর্মী সমালোচকের মন জয় করা ছবিতে অভিনয় করেনি । সেই রাজ্জাক থেকে আজকের শাকিব খান সবার মুল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর বা আমজনতার মন জয় করা । এতে তাঁরা সবাই সফল ,কারন একজন স্রমিক বা নিম্নশ্রেণীর (গরীব) মানুষ থেকে সমাজের একেবারে উচ্চু শ্রেণী সবাই তাদের চিনেছে ও জানতে পেরেছে। ঠিক তেমনি জহির রায়হান - মিন্টু, ঝনটু - খোকন , সোহান এদের নাম ও ছবির নাম সমাজের ঐ নিম্নশ্রেণী যেমন জানে ঠিক তেমনি উচ্চ শ্রেণীও জানে । তার বিপরীতে আলমগির কবির, শেখ নিয়ামত আলী, তারেক মাসুদ কে সমাজের সব শ্রেণী চিনতে ও জানতে পারেনি । এর মুল কারন তাদের ছবিগুলো সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়নি । এমনকি ১৯৫৪-২০০১২ সাল পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে যত বিনিয়োগ হয়েছিল তার প্রায় সবগুলোই ছিল জহির রায়হান থেকে শুরু করে আজকের খোকন, সোহানদের মতো মুল ধারার বাণিজ্যিক ছবির পরিচালকদের উপর আস্থা রেখে যার প্রতিদান তাঁরা একবার নয় অসংখ্যবার দিয়েছেন । খুব সাধারন একজন মানুষ থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন রাজ্জাক, কবরী, আলমগীর ,শাবানা সহ অন্যান্য যারা কিংবদন্তী অভিনেতা অভিনেত্রী হয়েছেন তাঁরা কেউই কিন্তু সূর্য দীঘল বাড়ী, ঘুড্ডি, দহন বা মাটির ময়না ছবি করে কিংবদন্তী হয়নি। তাঁরা সকলেই সুতরাং, সুন্দরী, কসাই, লাঠিয়াল, ভাত দে, রজনীগন্ধা, মরনের পরে’র মতো অসংখ্য অসংখ্য মূলধারার বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী ছবির জন্য সকল শ্রেণীর সিনেমা দর্শকদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন ও থাকবেন । উপরের নামগুলো একটিও কিন্তু ভিন্নধারার ছবি নয়। সবগুলোই পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী ছবির নাম। এমনকি আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের ৬ দশকের মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল ছবি প্রয়াত তোজাম্মেল হক বকুল এর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ এরপর সোহানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত, শহিদুল ইসলাম খোকনের ভণ্ড, কাজী হায়াত এর আম্মাজান একটি ছবিও সেই ভিন্নধারা বা শেখ নিয়ামত আলী, তারেক মাসুদ ,হুমায়ুন আহমেদ ঘরনার ছবি নয় । বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী যত গান দশকের পর দশক সাধারন মানুষের মনে গেঁথে আছে তা সবগুলোই পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক বা আমজনতার বিনোদন নির্ভর ছবির গান । এখানেও ঐ ভিন্নধারার ছবিগুলো ব্যর্থ ।

অনেকে যেমন মূলধারা ছবি বলতে সীমানা পেরিয়ে, মাটির ময়না ,ছুটির ঘণ্টা, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না , শ্রাবণ মেঘের দিন টাইপের ছবি একসাথে গুলাই ফেলে তখনই বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তির বান্নিজিকধারা ও ভিন্নধারার ছবি সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট নয় । এখানে আলমগীর কবির এর ‘সীমানা পেরিয়ে’ আর আজিজুর রহমান এর ‘ছুটির ঘণ্টা’ এক নয় তেমনি তোজ্জামেল হক বকুল এর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ আর তারেক মাসুদ এর ‘মাটির ময়না’ একই ধারার ছবি নয় । এটা জোর করে তর্কের খাতিরে তর্কের জন্য বলে লাভ নেই যে এগুলো সব মুল বাণিজ্যিক ধারার ছবি ।প্রয়াত আলমগীর কবির এর ‘সীমানা পেরিয়ে’ বাণিজ্যিকধারায় মুক্তি পেলেও সেটি মুক্তির পর বাণিজ্যিক ধারা বা আমজনতার ছবির কাতার থেকে ছিটকে একটি বিশেষ শ্রেণী বা সমালোচক শ্রেণীর ছবি হয়ে যায় । কারন আলমগীর কবির এর গল্প বলার ধরন আমজনতার কাছে সবসময় বোধগম্য ছিল না। এমনকি ছবির প্রধান সব পাত্রপাত্রীও (বুলবুল আহমেদ ব্যতিত) আমজনতার কাছে পরিচিত ছিলেন না। অন্যদিকে পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক আজিজুর রহমান এর ‘ছুটির ঘণ্টা’ একটি কালজয়ী বাণিজ্যিক ছবির স্থান করে নিয়েছে তাঁর গল্পের ধরন, অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয় দক্ষতার কারনে। ‘ছুটির ঘণ্টা’ কে কেউ যদি ভিন্নধারার ছবি মনে করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে সেটা উনার একান্ত ব্যক্তিগত ধারনা । ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবির প্রযোজক , পরিচালক, প্রধান অভিনেতা অভিনেত্রী সবাই ছিল মূলধারার ১০০% বাণিজ্যিক ছবির ধারায় জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ। অনেকে হয়তো জানে না যে ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবির পরিচালক আজিজুর রহমান এর আগের ও পরের ছবিগুলোর নাম ।সেক্ষেত্রে অনেকে যদি আজিজুর রহমান কে তারেক মাসুদ বা শেখ নিয়ামত আলী ধারার মনে করে থাকেন তাহলে তাদের জন্য আজিজুর রহমান এর ‘ছুটির ঘণ্টা’র আগে ও পরের ছবিগুলোর মাত্র তিনটি নাম বলছি - ‘অশিক্ষিত’ (রাজ্জাক ,অঞ্জনা,মাস্টার সুমন), লজ্জা (ওমর সানী , মৌসুমি,রাজিব), কথা দাও (ওমর সানী , মৌসুমি) । আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন এবং বিশ্বাস করবেন যে আজিজুর রহমান একজন পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন এবং তাঁর ছবিগুলোর তৈরি হতো ব্যবসায়িক মুনাফা লাভের আশায় । অন্যদিকে তোজাম্মেল হক বকুল এর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ‘ আর তারেক মাসুদ এর ‘মাটির ময়না’ অথবা হুমায়ুন আহমেদ এর ‘আগুনের পরশমনি’কে একই ধারায় ফেলে দেন তাদের জন্য কিছু তথ্য দিচ্ছি। বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বসেরা ব্যবসসফল ছবি ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ছিল পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল এর প্রথম পরিচালিত ছবি যা ছিল ১০০% বিনোদন নির্ভর যেখানে কোন বিশেষ বার্তা বা বক্তব্য প্রযোজক ,পরিচালক কেউ দিতে চায়নি বা দেয়নি । একটা অতিসাধারন ফোক ফ্যান্টাসি নির্ভর ছবি ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ বাংলা চলচ্চিত্রের ব্যবসাসফল জনপ্রিয় ছবির ইতিহাস হয়ে আছে যা তৈরি করেছেন বাণিজ্যিক ছবির একজন নবীন পরিচালক, অভিনয় করছিলেন বাণিজ্যিক ছবির অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা এবং ছবিটি দেখেছিলেন বাণিজ্যিক ছবির অতি সাধারন মানের দর্শকরা যারা ছিল নিয়মিত সিনেমা হলে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অংশ। যারা বছরের পর বছর নিজের পকেটের টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ছবি দেখে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকার পথকে মসৃণ করে দিয়েছিলেন । যাদের হলে যাওয়া না যাওয়ার উপর নির্ভর করতো একজন ব্যবসায়ীর লক্ষ টাকার বিনিয়োগ লাভ সহ উঠে আসা। যাদের উপর নির্ভরছিল ইন্ডাস্ট্রির হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকার ভাগ্য । যারা তৈরি করেছেন একজন রাজ্জাক, আলমগীর, শাবানা, কবরীর মতো অসংখ্য অভিনেতা অভিনেত্রী। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদী টেলিভিশনের পর্দায় সময় কমিয়ে দিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবির খলনায়ক হয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনেক উচুতে। সেই ফরিদির ছবির নাম উঠলে ভণ্ড, বিশ্বপ্রেমিক, টপ রংবাজ, টাকার অহংকার এর মতো ১০০% বাণিজ্যিক মশলাদার ছবির নাম সাধারন মানুষের কাছ থেকে বের হয়। কেউ বলে না যে ফরিদি শুধুমাত্র ‘দহন’ ছবির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরদিন বরং ফরিদি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ভণ্ড, অপহরণ বা বিশ্বপ্রেমিক টাইপের বাণিজ্যিক মশালদার ছবির জন্য ।

আজ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ধংসের মুখে কেন দাঁড়িয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকে সেই বাণিজ্যিক মশালদার ছবির দিকে আঙ্গুল তুলে আর শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী , আগুনের পরশমনির ছবির গুণগান গায়। তাদের জন্য বলি যে অল্প বিদ্যা ভয়ংকর সেটা ঐসব নতুন সিনেমা বোদ্ধাদের দেখলে বুঝা যায়। কি জানেন আপনারা বাণিজ্যিক ছবির ইতিহাস? তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, শেখ নিয়ামত আলী বা হুমায়ুন আহমেদ কিংবা আজকের ফারুকীদের দিয়ে কি সিনেমা শিল্পের উন্নতি ঘটিয়ে ফেলবেন? তাদের কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলছি যে ফারুকি আরও ১০ বছর যদি টানা ছবি পরিচালনা করে যায় তবু এই ইন্ডাস্ট্রির এক কানাকড়ি উন্নতি ঘটাতে পারবে না। উনারা ঐ কোরিয়া উৎসব, কান উৎসব যেতে পারবেন কিন্তু আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এক পয়সাও লাভ হবে না। আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া শিল্পকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে ঐ খোকন, সোহান, এফ আই মানিকদের ধারার ১০০ ভাগ বাণিজ্যিক ছবি দিয়ে বাঁচাতে হবে। প্রতিবশি দেশ ভারতের দিকে তাকান ,দেখেন ওখানে ভিন্নধারার ১ টি ছবি সুপারহিট হলে তার আগে পিছে একাধিক মশলাদার বাণিজ্যিক সুপার হিট ছবি থাকে। ঠিক একই রকম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জনপ্রিয় হলিউড ইন্ডাস্ট্রির বেলাতেও । সেখানে গাজাখুরি কাল্পনিক ছবিগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করে আর ভিন্নধারার ছবি বছরে ৪/৫ টি মুক্তি দিয়ে দর্শকদের শুধু একটু স্বাদ পরিবর্তন করা মাত্র আর কোন ভুমিকা নেই। মুল ইন্ডাস্ট্রি ঐ ধুমধাম মারমার কাটকাট সিনেমা দিয়েই চলছে ও চলবে । অথচ হলিউড দর্শকদের ১০০ ভাগই থাকে শিক্ষিত । সেখানে তো পরিচালকরা চাইলে বিলিয়ন ডলার এর মারমার কাটকাট ছবি না বানিয়ে বেশি করে ভিন্নধারার ছবি বানিয়ে সব দর্শকদের উচ্চমর্গীয় সিনেমা বোদ্ধা বানিয়ে ফেলতে পারতেন । কিন্তু না তাঁরা তা কোনদিন করবে না। কারন তাঁরা ছবি বানায় সাধারন দর্শকদের বিনোদন দেয়ার জন্য , কোন পাঠদান দেয়ার জন্য বানায় না।





এই ফেইসবুকেই গতকাল এই প্রজন্মের এক সিনেমা দর্শক বলেছেন ‘’হুমায়ুন আহমেদ, ফারুকিরা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না।‘’ যারা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না তাঁরা কি করে ধ্বংসের অতলে যাওয়া সিনেমাশিল্পকে বাঁচিয়ে তুলবেন? তাঁরা কি ভাবে হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকার যোগান দিবেন? ব্যবসা যদি না হয় তাহলে একটি ছবির পেছনে থাকা মানুষগুলোর জীবন চলার মুল শক্তি অর্থ আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি তানভীর মোকাম্মেল, ফারুকি, নোমান রবিন, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, মুরাদ পারভেজরা কালো টাকা সাদা করতে ছবি বানিয়ে থাকেন? এমনও কথা বা যুক্তি অনেকে দেখান যে ‘ গত ১০/১২ বছরে কয়টি বাণিজ্যিক ছবি সুপারহিট হয়েছে? ‘আগুনের পরশমনি’র মতো কয়টা ছবি হয়েছে ?’ তাদের জন্য বলি যে এখনও যে ৪৫০টি সিনেমা হল টিকে আছে তার পেছনে গত ১০/১২ বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত বোমা হামলা , এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে, প্রেমের তাজমহল, কাজের মেয়ে, ইতিহাস, দানব, রুস্তম, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, জীবন এক সংঘর্ষ, বর্তমান, চাচ্চু, কোটি টাকার কাবিন, মনের সাথে যুদ্ধ, পিতা মাতার আমানত এর মতো ১০০ ভাগ বাণিজ্যিক মশলাদার সুপারহিট ছবিগুলোর কারনেই টিকে আছে । এখনও এই ইন্ডাস্ট্রি দাঙ্গা, ত্রাস, অপহরণ, সতর্ক শয়তান, স্বপ্নের পৃথিবী, অন্তরে অন্তরে, লুটতরাজ, আত্মঅহংকার, বিক্ষোভ , বিশ্বপ্রেমিক, ভণ্ড , আম্মাজান এর মতো মশলাদার বাণিজ্যিক ছবি বেশি বেশি পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে । ‘আগুন পরশমণি’র মতো ১০০টা ছবি দিয়েও ঐ সব ছবিগুলোর মতো ব্যবসায়িক সফলতা আর বেশি সংখ্যক দর্শকদের মন জয় করার ক্ষমতা হবে না। ‘আগুনের পরশমনি’ পুরস্কারের জোয়ারে ভেসে একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রশংশা কুড়াতে পারে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি বাঁচামরা যাদের হাতে সেইসব অতিসাধারন মানের দর্শকদের (নিম্নবিত্ত - মধ্যবিত্ত) জয় করতে পারবে না যারা বড় একটি অংশ সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার।



এইসব নতুন সিনেমা দর্শকরা বারবার বুঝাতে চাচ্ছে যা টা হলো ‘ ব্যাচেলর, কমন জেন্ডার, মাটির ময়না, রানওয়ে টাইপের ছবি যত বেশি হবে ততবেশি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির আবার মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে ও দর্শকরা হলে ফিরবে’ । তাহলে বলছি শুনেন, আপনাদের ধারনা ও যুক্তি ১০০ ভাগ ভুল । ব্যাচেলর, কমন জেন্ডার , ঘেঁটুপুত্র কমলা , মাটির ময়না টাইপের ছবি বেশি হলে আপনারা নিজেরাও সিনেমা হলে যাবেন না এটা আমি নিশ্চিত। ঐ সব ছবির পেছনে যে অর্থ খরচ হবে এবং যা উঠে আসবে তা দিয়ে একটা মঞ্চ নাটকের দল চালানোর খরচ বহন করা যাবে কিন্তু একটা ইন্ডাস্ট্রির হাজার হাজার মানুষকে ভালোভাবে বাঁচাতে পারবে না। একটা শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করার মতো শক্তিশালী মাধ্যম হবে না। যদি তাই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে হাজার গুন এগিয়ে থাকা হলিউড মশলাদার মারমার কাটকাট ছবির পেছনে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতো না। তাঁরা ১ লাখ ডলার খরচ করে বেশি করে ভিন্নধারার ছবি বানিয়ে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাভ করতে পারতো। কারন তাদের বাজার সারা বিশ্ব জুড়ে । অযথা কেন তাঁরা মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে একটি ছবির পেছনে? আমাদের নতুন এই দর্শকরা জানেন না যে চালের দাম এখন ৪০-৫০ টাকা । এই দামে চাল কিনে জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে রানওয়ে বা ঘেটুপুত্র কমলার মতো ছবির বাজেট দিয়ে চলবে না। বিনিয়োগ করতে হবে অনন্ত জলিল এর মতো কোটি কোটি টাকা। একাধিক ফারুকি, তানভীর মোকাম্মেল, হুমায়ুন আহমেদ এর চেয়ে আমাদের শিল্পের জন্য আজ বেশি দরকার সবার কাছে হাসির পাত্র অনন্ত জলিল এর মতো আরও একাধিক শিল্পপতি প্রযোজকদের । যারা কোটি টাকা অনায়াসে ঢালবে মশলাদার বাণিজ্যিক ছবির পেছনে এবং তৈরি করবে বিশ্বমানের বাণিজ্যিক মারমার কাটকাট ছবি ।

বাণিজ্যিক ধারার মারমার মশলাদার ছবি দিয়ে কি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেয়া যায় না ? বক্তব্য দেয়ার জন্য ‘টেলিভিশন’ ব্যাচেলর, ‘কমন জেন্ডার’ ধারার মতো ছবিগুলো প্রয়োজন ? তাহলে তাদের এই ধারনার জন্য কিছু তথ্য দিচ্ছি যে জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান এর মতো কিংবদন্তী পরিচলকরা বাণিজ্যিক ছবির মাধ্যমেই তাদের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা, অন্যায়ের প্রতিবাদ সব ফুটিয়ে তুলেছিলেন ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় কাজী হায়াত ,খোকন রা একাধিক বাণিজ্যিক ছবির মাধ্যমে তাদের চিন্তাধারা, চেতনা, প্রতিবাদ, সব প্রকাশ করেছেন যা সাধারন শ্রেণীর কাছে অতি সহজে ও অতি দ্রুত পৌঁছে গেছে । কাজী হায়াত এর দাঙ্গা, ত্রাস, চাঁদাবাজ, সিপাহী, দেশপ্রেমিক, দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, সমাজকে বদলে দাও , ইতিহাস এর মতো মশলাদার ছবিগুলো দিয়ে যে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিকও রাজনীতির যে অসংগতির বাস্তব চিত্র দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন এবং উনাদের তীব্র প্রতিবাদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরেছিলেন তা বাংলাদেশের কোন ভিন্নধারার ছবিগুলোতে এতবার ফুটে উঠেনি আর হয়তো আগামীতেও উঠবে না। সেইসব ছবির বক্তব্য হলে থাকা সব শ্রেণীর দর্শকদের মনে খুব সহজে গেঁথে গিয়েছিল যা তাদের আজো জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন । ঠিক তেমনি শহিদুল ইসলাম খোকন সেই স্বৈরাচার এরশাদ সরকার এর আমলে ‘বীরপুরুষ’ ছবির শুরুতেই ৭১ এর যুদ্ধঅপরাধী বা পরাজিত শক্তি যে আজো কিভাবে এই দেশকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে সেটি ১ মিনিটের একটি বক্তব্য তুলে ধরে ছবি শুরু করেছিলেন সেই বক্তব্যর আগাগোড়া স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন সেই বীরপুরুষ ছবিটির মধ্য দিয়ে। সেদিন কারো বুঝতে কষ্ট হয়নি যে পরিচালক কাদের কথা ইশারায় বুঝাতে চেয়েছিলেন। ঠিক একই ভাবে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘ঘাতক’ নামক একটি বাণিজ্যিক মশলাদার ছবির মাধ্যমে চিহ্নিত চক্রের প্রধান কে ইঙ্গিত করে পুরো ছবিটা তৈরি করেছিলেন যা দর্শকদের বুঝতে কোন কষ্ট হয়নি । বরং দর্শকের কাছে পরিচালকের বার্তাটি খুব দ্রুত পৌঁছে গেছে যা তাঁরা আজো ভুলেনি। এভাবে মালেক আফসারির ‘ঘৃণা’ ছবিতেও যে বার্তা দর্শক বুঝতে পেরেছিল তা ভিন্নধারার কোন ছবিতেও এতো স্পষ্ট ভাবে কেউ বুঝাতে পারেনি ,কেউ বলার সাহস করেনি । বরং সব সময় বাণিজ্যিক মশলাদার ছবির পরিচালকরা আমাদের সমাজের অসংগতি র বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিলেন যা তাদের একাধিক ছবিতে তাঁরা স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছিলেন । তাহলে আমি কেন সমাজের অসংগতির প্রতিবাদ করতে সবার বোধগম্য ক্ষমতার বাহিরে থাকা ‘টেলিভিশন’ ‘মাটির ময়না’ ‘রানওয়ে’ ছবিকে বেছে নিবো ? আমি কি শুধু একটা বিশেষ শ্রেণীকে আমার বক্তব্য জানাতে চাই নাকি দেশের প্রতিটা শ্রেণীর মানুষের কাছে আমার বক্তব্য জানাতে চাই? কোনপন্থায় আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চলবে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে হবে সেটা নির্ধারণ করবে একজন পরিচালক । একজন সত্যিকারের সচেতন ‘জ্ঞানী’ আর ‘জ্ঞানপাপী’ মানুষের মধ্য পার্থক্য এখানেই । সচেতন জ্ঞানী তাঁর জ্ঞানটা সবার মাঝে বিতরন করে সমাজে আলো ছড়াতে চায় আর জ্ঞানপাপী সবকিছু বুঝে জেনেও চুপ থেকে শুধু নিজেকে মহাপুরুষ বানাতে চায় সমাজকে আলোকিত করা তাঁর উদ্দেশ্য নয় । সময় ও ইতিহাস নির্ধারণ করে দেয় কে বা কারা সবচেয়ে বেশি মানুষের মনে ঠাই পাবে আর কে পাবে না।



আমি ও আমার মতো চিন্তাধারা যা করেন তাদের কে অনেকে মনে করে থাকেন যে আমরা বোধ হয় ফারুকি বা ছবিয়ালে এলারজিতে আক্রান্ত । তাদের জন্য স্পষ্ট করে বলছি যে ফারুকি বা ছবিয়ালের কাজে আমাদের কোন এলারজি নেই। বরং আমরা ফারুকির অনেক বিজ্ঞাপন, নাটক , টেলিছবির ভক্ত। আমার নিজের ব্যক্তিগত নাটক টেলিছবির সংগ্রহের তালিকায় বড় একটা অংশ জুড়ে আছে এই ‘ছবিয়াল’ বা ফারুকি গ্রুপের কাজগুলো । কিন্তু এই গ্রুপের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো দেখে আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য তাদেরকে মানতে পারিনা কারন ঐ ছবিগুলো কখনই সব শ্রেণীর দর্শকদের হলে ফেরানোর মতো মনে হয়নি তাই । আমি ও আমরা যারা এই গ্রুপের ছবিগুলোর মতো আরও অনেকের ছবিকে বাংলা চলচ্চিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শুন্য অবদান মনে করি তাঁরা সকলেই বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের নিয়মিত হলে ছবি দেখা খুব সাধারন মানের দর্শক। আমরা দেখেছি দিনের পর দিন একেকটা ছবি কিভাবে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রন করেছে, কিভাবে একেকটি মানুষ মুহূর্তে চোখে জল এনেছে , পর মুহূর্তে কিভাবে সেই চোখে আনন্দ ,বিস্ময় , ভালোলাগার তৃপ্তি খেলা করেছিল। যা কোনদিন ভুলার নয়। দিনের পর দিন পরিবারের মুরুব্বীদের কড়া শাসন উপেক্ষা করে, চোখ ফাকি দিয়ে হলে একেকটি ছবি দেখতে যেতাম। কতিদন কতবার যে স্কুল পালিয়ে হলে ছবি দেখার জন্য বাবা বড় ভাইয়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসাব নেই । তবুও সেই বেতের আঘাতের সব কষ্ট ভুলে যেতে হলে ছবি দেখতে যেতাম আর মনের তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরতাম । আমরা নিজেদের কোনদিন চলচিত্রের বোদ্ধা সমালোচক বানানোর জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করিনা করবোও না কোনদিন । কখনও ব্লগে ,ফেইসবুকে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য বাংলা ছবি নিয়ে একের পর এক পচানিমূলক পোস্ট বা রিভিউ লিখিনি ও লিখবো না কোনদিন। আমরা বাংলা চলচ্চিত্রকে অন্তর থেকে ভালোবাসি বলেই এর সুদিন ফেরানোর জন্য বারবার নিজেদের সামর্থ্যর সবটুকু দিয়ে ভালো ভালো গল্প শুনিয়ে যাচ্ছি , গান প্রচার করে যাচ্ছি । আমি ও আমার মতো যারা আমরা চাই বাংলা চলচ্চিত্রের সেই হারানো সুদিন ফিরে আসুক । সেই দর্শকদের ঢল নামুক । আমরা কোন আতলামি চাইনা, চাই এই শিল্প এগিয়ে যাক ।

ফজলে এলাহী (পাপ্পু )

১৩/০১/১৩

একটি http://www.radiobg24.com এর প্রকাশনা।



মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২০

সিডির দোকান বলেছেন: ভালা অইছে রে.....

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৫

ঘুম িপ্রয় বলেছেন: লাইক দিয়া গেলাম ;)

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫২

মোহাম্মেদ তারেক হোসাইন বলেছেন: প্রথমত লাইক।। আপনার শেষ কথাগুলোর সাথে আমি একমত।। বিশেষ করে বলতে হয়, বর্তমানে বিশেষ শ্রেণীর এক প্রকার ব্লগার আছে এরা বছরে একবার হয়তো বাংলা সিনেমা দেখে ।। কিন্তু কেন দেখে?? ব্লগে এসে পচানো রিভিউ লেখে হিট হওয়ার জন্য।। যেই পাবলিক চোরাবালি দেখার সময় এত কিছু খেয়াল করে, এত বেশি সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখে সেই আবার হলিউড, বলিউড সিনেমা গোগ্রাসে গিলে স্রেফ একজন দর্শক হিসেবে।। শালার যত সমালোচক বাইর হয় খালি আমাদের বাংলা সিনেমা দেখার সময়।। এই পাবলিকগুলো যেই সমালচনার দৃষ্টিতে বাংলা ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে তার অর্ধেক দৃষ্টিতেও যদি হলিউড বলিউড মুভিগুলো দেখতো, অনেকাংশে থুথু ফেলতো।।
আর বাংলা সিনেমা সেই ছোটবেলা থেকে দেখেছি( কত মার খেয়েছি তার হিসেব নেই) সামনেও দেখে যাবো।। তবে স্রেফ দর্শক হিসেবে(সমালোচক হিসেবে নয়)।।
আর বাণিজ্যিক ধারার ছবি বা ভিন্নধারার ছবি নিয়ে আমি এখনো কনফিউজড।। আপনি তৎকালীন যেই ছবিগুলার নাম বললেন এগুলা যদি আবার তৈরী করা হয় তাইলে এগুলা কোন ক্যাটাগরীতে পড়বে??
যেমন ধরেন খোকনসোনা, ছুটির ঘন্টা, মরণের পরে তৎকালীন এই বাণিজ্যিক ছবিগুলা আবার তৈরী করেন তাইলেতো মনে হয় এগুলাকে আর্ট ফিল্মই বলা হবে।।
একটু বাংলাদেশের বাইরে যাই, উত্তম কুমারের " থানা থেকে আসছি" (এটা কি বাণিজ্যিক ধারার না আর্ট ফিল্ম?) ।।তৎকালীন এই ছবিটার রিমেক "থানা থেকে আসছি" এটা কিন্তু আবার আর্ট ফিল্ম।।
আর একটা কথা " মনপুরা" সিনেমাটা কোন ক্যাটাগরীতে পড়বে? আর্ট ফিল্ম নাকি বাণিজ্যিক ধারা? আপনার কাছে আসলে আর্ট ফিল্ম বা ভিন্নধারার ছবির সজ্ঞা কি>??

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৯

কবি ও কাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যর জন্য। ভাই আমি আর্ট ফিল্ম বলতে বুঝি যে ছবি সব শ্রেণীর দর্শকদের জন্য বুঝতে কষ্ট হয়, যে ছবি দিয়ে নিজেকে মহান আর ইন্ডাস্ট্রির চার আনার লাভ হয় না সেই সব আতেল মার্কা কম বাজেটের ছবি ।
আমি বাণিজ্যিক মূলধারার ছবি বলতে বুঝি যে ছবি সমাজের সব বয়সের সব শ্রেণীর মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারে, সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে একই দুঃখে দুখী, একই সুখে সুখী হতে শেখায়। সবার মনে গেঁথে যাবে এমন ছবি চাই ।

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩৪

বাদ দেন বলেছেন: ভাল লিখেছেন অন্যের তিন চার পুরূষ না টাইনা এমনে সুন্দর ভাবে এক্সপ্লেন করলেই ত জটিল হয়,
অনেক গুলার কথার সাথেই একমত

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫১

কবি ও কাব্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। অন্যজন যদি আমাকে না জেনে না বুঝে উনার তিন পুরুষ টানার মতো কথা বলার সুযোগ করে দেয় সেখানে আমার দোষ কি?

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৪

নিষ্পাপ কয়েদি বলেছেন: চরম হইসে। ব্যাচেলর, কমন জেন্ডার, ঘেতুপুত্র কমলা, শ্রাবণ মেঘের দিন-- এগুলাকে সিনেমা না বলে নাটক বলাই ভালো। এদের পরিচালকদের সিনেমা বানানোর যোগ্যতা নাই। এগুলাকে সারা বাংলাদেশে মুক্তিদেবার সাহস পরিচালকদের নাই, আর মেধার দিক দিয়ে বলতে গেলে---- কাজি হায়াত হতে ফারুকির আরও সাত জন্ম তপস্যা করতে হবে। ফারুকির বউ তিসার ন্যাকামির (নিচের পাটির দাত সামনে এনে 'করতেসিস, খাইতেসিস- টাইপের কথা) চাইতে মুনমুনের একসন দেখা অনেক ভালো। আর ফেরদৌস, ইমন, নিরব-- এই লাল্টুগুলা মান্না, রুবেল, সাকিব খানের পায়ের কাছেও যাবে না।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

কবি ও কাব্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । ফারুকির বউ তিসার ন্যাকামির (নিচের পাটির দাত সামনে এনে 'করতেসিস, খাইতেসিস- টাইপের কথা) চাইতে মুনমুনের একসন দেখা অনেক ভালো। '' দারুন বলেছেন

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আসলেই ভাল ছবি নির্মিত হলে এখনও সিনামা মানুষের বিনোদন
হিসাবে অন্য কোন বিকল্প খুজবেনা ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৪

কবি ও কাব্য বলেছেন: এই কথাটাই বুঝাতে চাইছি সবাইকে । অনেক ধন্যবাদ

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

অপরাজিতা হিমু বলেছেন: অনেক সময় লাগল পড়তে.......
তবে মনে হচ্ছে সময়টা বৃথা যায়নি।
অনেক ধন্যবাদ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৪

কবি ও কাব্য বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

রাসেল ভাই বলেছেন: অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে বলেছেন । আশা করি সবাই বুঝতে পারবে এবং পজিটিভলি চিন্তা করবে ।



এত কষ্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৫

কবি ও কাব্য বলেছেন: হ্যাঁ ভাই আশাকরি সবাই বুঝবে।

৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩

তির্থক আহসান রুবেল বলেছেন: সিনেমা টিকাতে হলে...... অনেক অনেক কাজি হায়াত, শাহিদুল ইসলাম খোকনকে প্রয়োজন.......

১০| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭

রিফাত হাসান০২২৮ বলেছেন: ’হুমায়ুন আহমেদ, ফারুকিরা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না।‘’ যারা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না তাঁরা কি করে ধ্বংসের অতলে যাওয়া সিনেমাশিল্পকে বাঁচিয়ে তুলবেন

আমরা যতই আনন্তকে পচাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাচাতে হলে ওর মত বিনিয়োগকারি দরকার ....



View this link

১১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮

মোজাম্মেল হোসেন (ত্বোহা) বলেছেন: অনেক কষ্ট করে লিখেছেন এবং লেখাটাও ভালো হয়েছে। আপনার চিন্তা-ভাবনার গোড়াতেই একটু সমস্যা আছে। আপনি শুরুতেই সংজ্ঞা ঠিক করে নিয়েছেন যে, ব্যবসায়িকভাবে সফল হলেই সেটাকে মূলধারা, আর ব্যার্থ হলেই সেটাকে বিকল্পধারা বলা হবে। এজন্যই বিজ্ঞজনেরা মূলধারা আর বিকল্পধারার মধ্যে বিভাজন করেন না। তারা বলেন, ফিল্ম দুই প্রকার: ভালো ফিল্ম এবং খারাপ ফিল্ম।

আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ফারুকীদের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোন উন্নতি হবে না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাই পারে পরোক্ষভাবে এর উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে। জহির রায়হানের উদাহরণ টেনে কোন লাভ নেই, তাঁদের মতো পরিচালকরা এখনও বেঁচে থাকলে এই বিতর্কটারই হয়তো প্রয়োজন হতো না।

কিন্তু আমাদের তথাকথিত মূলধারার ইন্ডাস্ট্রি পতনের এমন তলে গিয়ে ঠেকেছে যে, সাধারণ মানুষ বাংলা সিনেমার নাম শুনলেই নাক সিঁটকায়। এর মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কাজই পেরেছে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর প্রশংসা অর্জন করতে। কিন্তু ব্যাবসায়িকভাবে সফল হওয়ায় মনপুরাকে আপনি মূলধারা বলছেন আর সেই মাপে সফল না হওয়ায় ব্যাচেলরকে বলছেন অফট্র্যাক।

ফারুকীর ফিল্ম হয়তো জনপ্রিয় হবে না এবং ইন্ডাস্ট্রিতে বড় কোন অবদান, এটা ঠিক। কিন্তু ফারুকীর হাত ধরে আসা রেদোয়ান রনির চোরাবালিই কিন্তু দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।

সুতরাং আর্ট বলুন আর কমার্শিয়ালই বলুন, আমি মনে এই ধরনের লোকদের আরও বেশি করে ভালো মানের মুভি বানিয়ে প্রচলিত মূলধারার নির্মাতাদের একটা ধাক্কা দেওয়া, যেন তারা শাকিব খানীয় বস্তাপচা একই স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয় এবং তাদের হাত ধরেই বাংলা সিনেমার নতুন যুগের সূচনা হয়।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪১

কবি ও কাব্য বলেছেন: 'আপনার চিন্তা-ভাবনার গোড়াতেই একটু সমস্যা আছে। আপনি শুরুতেই সংজ্ঞা ঠিক করে নিয়েছেন যে, ব্যবসায়িকভাবে সফল হলেই সেটাকে মূলধারা, আর ব্যার্থ হলেই সেটাকে বিকল্পধারা বলা হবে।' আপনার এই কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত নই। আমি আমার লিখার কোন লাইনে একবারও বলিনি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে মূলধারা আর ফ্লপ হলে বিকল্পধারা। আপনি পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন । আমি বাংলাদেশে মূলধারার ২০০০+ বাণিজ্যিক ছবি থেকে খুবই নগণ্য সংখ্যক ছবি নাম দিয়েছি ভালো গল্পের বাণিজ্যিক ধারার সফল ছবির উদাহরন স্বরূপ। সব নাম দিতে গেলে এই পোস্ট আর লিখা হতো না। নাম দিয়েই একটা পোস্ট দিয়ে দিতে পারতাম । কিন্তু মুল বাণিজ্যিক ধারার এমন বহু ফ্লপ ছবি আছে যেগুলোর গল্প ও মান ভালো ছিল যেমন সহযাত্রী, সান্ত্বনা, দিনকাল, পদ্মার চরে, পদ্মা মেঘনা যমুনা সহ আরও অনেক । উল্লেখিত সবগুলো ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত কিন্তু ব্যবসায়িক ভাবে ফ্লপ ছিল ছবিগুলো । ঐগুলো একটিও বিকল্পধারার ছবি নয়, সবগুলোই পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারা বিনোদন নির্ভর ছবি । আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন শুরুতেই সমস্যাটা কার ? আমার না আপনার?
মন্তব্যর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

১২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: নিসন্দেহে নিরীক্ষাধর্মী পোস্ট।ভালো হয়েছে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৮

কবি ও কাব্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আরও অনেক কথা বলার ছিল বলতে পারিনি সারাদিনের ক্লান্তির জন্য ।

১৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৯

শয়ন কুমার বলেছেন: রিফাত হাসান০২২৮ বলেছেন: ’হুমায়ুন আহমেদ, ফারুকিরা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না।‘’ যারা ব্যবসা করার জন্য ছবি বানায় না তাঁরা কি করে ধ্বংসের অতলে যাওয়া সিনেমাশিল্পকে বাঁচিয়ে তুলবেন

আমরা যতই আনন্তকে পচাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাচাতে হলে ওর মত বিনিয়োগকারি দরকার ....

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৯

কবি ও কাব্য বলেছেন: আমাদের পুরস্কার দরকার নাই,আমাদের বিগ বাজেটের ভালো বাণিজ্যিক ছবি চাই যেন সব পেশার সব শ্রেণীর মানুষ হলে যায় । অনেক ধন্যবাদ ।

১৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫০

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: বিভিন্ন ধরনের সিনেমা হবে - এটাই বাস্তবতা। তবে টাকা উপার্জন করতে পারে না যে সিনেমা - সেটা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির কোন লাভ হয় না। সুতরাং ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে হলে টাকা উপার্জনকারী সিনেমা বানাতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.