নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন বিদ্রোহীর গর্জন

কবি ও কাব্য

একজন বিদ্রোহী বলছি ঃ যেখানে দেখিবে কোন অন্যায় অত্যাচার সেইখানে পাইবে শুনিতে আমার হুংকার সময় এসেছে সাথিরা সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে গর্জে উঠার।

কবি ও কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ছবি ‘ছুটির ঘণ্টা’র গল্প -

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫





আমাদের মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে বহুজনের বহুমত আছে। চলচ্চিত্রের প্রান মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে নেতিবাচক ধারনার মানুষের সংখ্যা অনেক । এর মধ্য বর্তমান সময় যুক্ত হয়েছে বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে ছবিয়ালের ‘টেলিভিশন’ , ‘ব্যাচেলর’ , ‘প্রজাপতি’ , ‘কমন জেন্ডার’ হুমায়ুন আহমেদ এর ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’, ‘চন্দ্রকথা ‘ আর ইম্প্রেস এর নির্মিত ছবিগুলোর নাম । অথচ এই ছবিগুলো যে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি নয় সেটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললেও আপনাকে পাগল বলে বর্তমান কালের সিনেমাবোদ্ধারা উপহাস করবে । আজ সেই সমস্ত পণ্ডিত দর্শকদের জন্য আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের ৮০র দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত , একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত একটি পরিপূর্ণ মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির কথা তুলে ধরবো যেখানে ছবির সাথে যুক্ত প্রযোজক, পরিচালক , শিল্পী কলাকুশলী আমাদের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির মানুষ । যে ছবিতে দর্শকদের কোনকিছু পড়াশুনার ভিডিও লেকচার দিয়ে শিক্ষিত বানানোর জন্য নির্মিত হয়নি , এমনকি কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার আশায়ও নির্মিত হয়নি । ছবিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি ভালো ও মৌলিক কাহিনী দিয়ে হলের দর্শকদের বিনোদন দিয়ে মুনাফা অর্জন যা অর্জন করতে ছবিটি পুরোপুরি সফল ও সার্থক । ছবিটি যদি পুনরায় বর্তমান সময়ে নির্মিত হয় তাহলে বর্তমান প্রজন্মের তথাকথিত বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরা ছবিটিকে ‘আর্টফিলম’ মনে করবেন যা মূল ছবিটিকে অপমান করা ছাড়া কিছুই নয় ।





বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহার প্রযোজনা সংস্থার নাম ছিল ‘স্বরলিপি বাণীচিত্র’ । সেই প্রযোজনা সংস্থা থেকেই সত্য সাহা স্ত্রী রমলা সাহাকে প্রযোজক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন । ‘স্বরলিপি বাণীচিত্র’ থেকে যতগুলো ছবি নির্মিত হয়েছিল তার সবগুলোতেই প্রযোজক হিসেবে রমলা সাহা ছিলেন । এই ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রের নিবেদনে ১৯৮০ সালে নির্মিত হয় ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবিটি যার পরিচালক ছিলেন আজিজুর রহমান । ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবিটির নাম শুনেনি বা দেখেনি এমন দর্শক বাংলা চলচ্চিত্রের খুব কমই আছে। যারা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির যে ৪/৫টি ছবির নাম বলতে পারে তাদের কাছেও এই ‘ছুটির ঘণ্টা’ নামটি থাকে । এই ছবিটির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল সেই সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি নির্মম ও বেদনাদায়ক সত্য ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছিল । যা সেই সত্য ঘটনাকে আরও এবশি মানুষের মনে নাড়া দিয়েছিল । আজো ছবিটির কথা উঠলে দর্শকদের মন নাড়া দিয়ে উঠে ।



পরিচালক আজিজুর রহমান বাংলা চলচ্চিত্রের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির একজন জনপ্রিয় ও সফল পরিচালক ছিলেন । এই পরিচালক কখনও কোন ভিন্নধারা বা তথাকথিত ‘আর্টফ্লিম’ নির্মাণ করেছিলেন বলে আমার জানা নেই এবং তিনি ঐ আর্টফ্লিম’ ধারার ছবি নির্মাণ করবেন এটা ভাবতেও আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় । কারন আমার দেখা ও জানা আজিজুর রহমান এর সবগুলো ছবি ছিল মূলধারার পরিপূর্ণ বিনোদনধর্মী ১০০% বাণিজ্যিক ছবি । আজিজুর রহমান এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তিনি ছবির সামাজিক ছবির গল্প হিসেবে এমন কিছু কাহিনী নির্বাচন করতেন যা আমাদের সমাজে নিয়মিত দেখা যায় এমন কিছু শ্রেণী যাদের আমরা প্রতিদিন দেখি কিন্তু তাদের ভেতরের মন, আবেগ , প্রেম -ভালোবাসা, চাওয়া -পাওয়া ও জীবন দর্শন সর্বোপরি তাদের স্বাভাবিক জীবন সম্পর্কে কেউ কোন খোঁজ রাখিনা ও রাখতে চাইনা । সেইসব অবহেলিত মানুষগুলোকেই তিনি বাণিজ্যিক ছবির ফর্মুলায় খুব চমৎকারভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলতেন যার ফলে সব শ্রেণীর দর্শকদের মনের ভেতর তাঁর ছবিগুলোর চরিত্রগুলো খুব সহজেই ঠাই করে নিতো ।





কাহিনী সংক্ষেপ : - ঢাকা শহরের নিজের বাড়ীতে একমাত্র কিশোর ছেলে খোকন (মাস্টার সুমন) কে নিয়ে মিসেস খান (সুজাতা) বসবাস করেন । খোকন ঢাকার শহরের একটি স্কুলে পড়ে। হাসিখুশি চঞ্চল ও উচ্ছল কিশোর খোকন কে স্কুলের শিক্ষক -শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা খুব পছন্দ করে ।



সেই স্কুলের দপ্তরি আব্বাস মিয়া (রাজ্জাক) ও ঝাড়ুদাড় আঙ্গুরি বেগম (শাবানা) । আব্বাস ও আঙ্গুরি বেগমের খুনসুটি সবসময় লেগে থাকে যা একসময় তাদের মধ্য প্রেমের সম্পর্কের দিকে গড়ায়। আব্বাস এর সাথে খোকনের খুব ভালো সম্পর্ক । দপ্তরী আব্বাস কিশোর খোকনকে খুব স্নেহ করে । ২দিন পরেই স্কুল ঈদের বন্ধ শুরু হবে। এই ছুটিতে খোকন মায়ের সাথে নানাবাড়ী যাবে ঈদ করতে। নানা শওকত আকবর মেয়ে ও নাতীকে নিতে স্কুলের ছুটি শুরু হওয়ার দুদিন আগেই চলে এসেছেন ঢাকায় । খোকন তার মা ও নানাভাইয়ের সাথে ঈদের কেনাকাটা করতে যায় । পথে যাদুকর জুয়েল আইচের যাদু প্রদর্শনী দেখে যাদু দেখার বায়না ধরে। মা ও নানাভাই সহ খোকন জুয়েল আইচের যাদু দেখে অবাক হয়। খোকন জুয়েল আইচের কাছে যাদুটা শিখতে চাইলে যাদুকর খোকন’কে আরও বড় হওয়ার পর যাদুটা শিখিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দেয় । এভাবেই খোকনের দিনগুলো খুব ভালোই যাচ্ছিল । যেদিন স্কুলে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হবে সেদিন সকালে স্কুলে আসতে খোকনের মন চাইছিল না, কিন্তু খোকন মায়ের আদর ভরা কণ্ঠের আদেশ মেনে স্কুলে আসতে বাধ্য হয় ।



স্কুল ছুটির পর খোকন দপ্তরী আব্বাস কে নতুন কাপড় দিয়ে আব্বাস এর কাছ থেকে বিদায় নিলো । খোকন কে স্কুল থেকে নিতে গাড়ী আসতে দেরি হওয়ায় খোকন তার বন্ধু পিকলু, রবার্ট, গনেশ কে বেবি ট্যাক্সিতে তুলে বিদায় দিয়ে প্রকৃতির ডাকে স্কুলের বাথরুমে যায় । দপ্তরী আব্বাস মিয়া স্কুলের সব কক্ষ তালা মেরে চলে যাওয়ার সময় ভেতর থেকে লাগানো বাথরুমে থাকা খোকনের বাথরুমের দরজা তালা মেরে চলে যায় । খোকন বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় বুঝতে পারে সে ভেতরে আটকা পড়েছে । সেদিনের পর স্কুল আর খুলবে ১১ দিন পর । এই বাথরুমে আটকে পড়া খোকনের দিনগুলো আর খোকন কে খুঁজে না পাওয়ার অসহ্য কষ্টের দিনগুলো নিয়ে ছবিটা শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যায় । শুরু হয় ছবির নাটকীয়তা যা খুব করুন এক পরিনতির মাধ্যমে শেষ হয় যা সম্পূর্ণ বলে এই প্রজন্মের নতুন দর্শকদের কাছে ছবিটি দেখার আগ্রহ শেষ করতে চাইনা ।



ছবিটি আমি মুক্তি পাওয়ার অনেক পরে পরিবারের সাথেই হলে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই শৈশবকালেই । সেই বয়সেই ছবির খোকনের কথা মনে গেঁথে গিয়েছিল । বাথরুমে আটকে পড়া অসহায় খোকনের চিৎকার , কান্না , কষ্টের দিনগুলো চোখে ভাসতো বহুকাল । সেই অনাধুনিক যুগে চিত্রগ্রাহক সাধন রায় খুব চমৎকার করে প্রতিটি দৃশ্য ধারন করেছিলেন যার ফলে বাথরুমে অসহায় খোকনের দিনগুলো দর্শকদের চোখে জল আনতে পেরেছিল । পরিচালক আজিজুর রহমান একটি সাধারন গল্পকে অসাধারনভাবে তুলে ধরেছেন । ছবিটি দেখার সময় একবারও মনে হয়নি পরিচালক কোন ছোট কাহিনীকে টেনে অযথা লম্বা করেছেন । আজিজুর রহমানের চিত্রনাট্য সম্পাদক নুরুন নবী সমঝোতা ও বোঝাপড়া দারুন । সম্পাদনার ক্ষেত্রে নুরুন নবী ও পরিচালকের সবচেয়ে প্রশংসা করতে হয়ে বাথরুমে থাকা খোকন কল্পনার যাদুকরের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে গান যুক্ত করাটা । যে গানটি ইচ্ছে করলেই পরিচালক যাদু দেখার সময় যুক্ত করে দিতে পারতেন যা তিনি করেছেন এর অনেক পরে যার ফলে খোকনের মুক্তি পাওয়ার কল্পনা আর বাস্তবে বাথরুমে বন্দী থাকার কষ্ট দুটো দৃশ্য একসাথে দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিল । সঙ্গীতে সত্য সাহা বরাবরের মতোই অসাধারন যার ফলে এই ছবির ‘খোকনের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গাওয়া ‘একদিন ছুটি হবে ‘ এবং কল্পনার ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’ গান দুটো হয়ে আছে কালজয়ী গানগুলোর মধ্য অন্যতম । .........ফজলে এলাহী (পাপ্পু ) ,১৫/০২/২০১৩

Presented by RaDiO bg24

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭

কালোপরী বলেছেন: ++++++++++

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৩

কবি ও কাব্য বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৪

মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেছেন: আপু অনেক দিন পর ব্লগে দেখলাম। আসেন না কেন?.....................@কালোপরী।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২২

হাঁসি মুখ বলেছেন: বরাবরের মতই সুন্দর একটা পোস্ট। ভালোলাগা রইল। :)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৩

কবি ও কাব্য বলেছেন: ভালো লাগার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ ।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন একটা ছবি।

আসলে বলতে হয়- এখন মেধারই বুঝি খুব আকাল পড়েছে!!!!!

নইলে এমন ছবি আর হয় না কেন?

আর আর্টফিল্মের নামে বড় নাটক বা একটা কিছু ভাবুকদের খাদ্য হলে হতে পারে- আমজনতারতো নয়।

তাই চাই ভাল মানের সআধারন সিনেমা।

শাহবাগের প্রজন্ম আন্দোলন জনজাগরন নিয়েও কিন্তু দারুন ছবি হতে পারে।

আছে কি সেই মেধাবী সাহসী নির্মাতা??

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

কবি ও কাব্য বলেছেন: আজিজুর রহমান , দেওয়ান নজরুল , কামাল আহমেদ সহ প্রমুখ মেধাবী পরিচালকরা ছিলেন বলেই আগে এতো দারুন সব ছবি আমরা পেয়েছিলাম । ধন্যবাদ ।

৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৪

ইমরান খান সবুজ বলেছেন: বরাবরের মতই সুন্দর একটা পোস্ট।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০২

কবি ও কাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ ইমরান ভাই ।

৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার পোস্ট

++++++ দিয়ে গেলাম :)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০১

কবি ও কাব্য বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ।

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩১

রঁমাকান্তকামারঁ বলেছেন: আমাদের স্কুলে শ্যুটিং হয়েছিল ছবিটার :) অনেক ভালো ছবি !

৮| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৬

দিপ বলেছেন: অসাধারন

৯| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২১

C/O D!pu... বলেছেন: মুভিটা কি কোনও সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.