নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি আমরা নিজেরা বদলে যাই,\nতবেই আমাদের সমাজ বদলাবে।

লাল মাহমুদ

লাল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প: "ডিজিটাল চুরি"

২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:২০

দু'চোখ ভরে আছে ভারী লোনা জলে। ছল ছল করছে কিন্তু পড়ছে না। মনে হয় পড়বার মত জল তার চোখ সরবরাহ করতে পারছে না। বসে আছে ভাঙ্গা -চূরা খুপরি ঘরের বারান্দার খুঁটি ধরে। তাকিয়ে আছে সমনের দিকে। তার দু'চোখ জুড়ে তীব্র ঘৃণা। যে ঘৃনার ছাপ পড়েছে তার মুখেও। হাত-পা, মুখের চামড়ায় বয়সের ছাপ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। মাথায় দপদপে সাদা চুল। যে চুল গত কয়েক বছর কোন তেলের ছোঁয়া পায়নি।

রহিমা বেওয়া। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম। যদিও তার বেওয়া নামে ঘোর আপত্তি আছে। তার ধারনা তার স্বামী একদিন ফিরে আসবে। তার বয়স আনুমানিক ৬০-৬৫ হলেও, সে তার স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় আজও পথ চেয়ে আছে। এই দীর্ঘ জীবনে মুদ্রার এপিট-ওপিটের মত তিনি জীবনের এপিট-ওপিটও দেখেছেন। তিনি যা কোন দিন কল্পনাও করেন নি তাই আজ তার চোখের সামনে ঘটে গেল।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল রহিমার।স্বামী সোবহান শেখকে নিয়ে তার আড়াই বছরের দাম্পত্য জীবন। সুখেই ছিল তারা। শুধু শূন্যতা ছিল একটি সন্তানের। সোবহান কথা দিয়েছিল, দেশ স্বাধীন হলে যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাকে নিয়ে ভাল কবিরাজের কাছে যাবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু সোবহান ফিরে আসে নি। তারই প্রতীক্ষায় রহিমা পথ চেয়ে বসে আছে আজও। যদি সে ফিরে আসে। যদি তার এতকাল পরেও মনে হয়, দেরি হোক যায় নি সময়।

স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে রহিমা যে সম্মান - মর্যাদা বা সহযোগীতা পাওয়ার কথা ছিল তা সে পায় নি। যা পেয়েছে তা হলো রহিমা নামের শেষে বেওয়া টুকু। যত দিন গায়ে জোড় বা শক্তি ছিল ততদিন পরের বাড়ীর কাজ করে নিজর পেট চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু মানুষের গায়ের শক্তি তো আর চিরদিন থাকে না। একসময় তিনি ভাবতেন হয়তো মানুষের দুয়ারে হাত পাততে হবে তাকে। আবার পর মুহূর্তের সে ভাবনা বিলিন করে দিতেন। যদি সোবহান ফিরে এসে শুনে একথা। ইহ জনমে না হোক পরজনমে তো তার সাথে দেখা হবে। বয়স নামের শব্দটা তাকে বৃদ্ধ করেছে অনেক আগেই। তাই বেশ কয়েক বছরই অন্যের বাড়ীর কাজ তিনি করতে পারেন না। গ্রামের মেম্বার কে বলে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করেছেন তিনি। তা দিয়েই চলে যায় তার একক সংসার। শুধু যে চলে যায় তা না, সেখান থেকে কিছু কিছু সঞ্চয়ও করেছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগে সেই সঞ্চয়ের টাকা দিয়েই দুটি ছাগল কিনেছিলেন রহিমা বেওয়া। ভেবেছিলেন সামনেই ঈদে ছাগল দুটি বিক্রি করে নিজের খুপরি ঘরটা মেরামত করাবেন তিনি। যদি সম্ভব হয় আরও একটা ছাগল কিনবেন আবার।

আজ তার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-ভাবনা গুলো চোখের সামনে ভেসে গেল মাত্র কয়েক সেকেন্ডে। তার বাড়ীর অদূরে পাকা রাস্তার পাশে প্রায় প্রতিদিনই ছাগল দুটো চড়াতে নিয়ে যেতেন তিনি। চোখে চোখেই রাখতেন সব সময়। আজও তাই করেছিলেন। ছাগল দুটোকে পাকা রাস্তার পাশে একটু দূরে একটি খুঁটিতে বেধে রেখে যাচ্ছিলেন রহিমা বেওয়া। একটু দূরে যেতেই একটি গাড়ী থামার শব্দ পেলেন তিনি। পিছন ফিরে তাকাতেই তিনি দেখলেন, দু'জন বালক গাড়ী থেকে নেমে ছাগল দুটোর দড়ি কেঁটে, কুলে নিয়ে গাড়ীতে উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ী চলতে শুরু করে দিল। রহিমা বেওয়া চিৎকার দিয়ে দপ করে মাটি বসে পড়লেন আর বলতে লাগনেল 'আমার ছাগল নিয়ে গেল, আমার ছাগল নিয়ে গেল।' পাশেই কাজ করতে থাকা একজন পুরুষ মানুষ রহিমার চিৎকার শুনে গাড়ীর পিছন পিছন দৌড়াতে লাগনেল। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে.........


বি:দ্র: রহিমা চরিত্রটি কাল্পনিক কিন্তু ছাগল চুরির ঘটনাটি সত্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.