নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসিক মুকুল

সম্পাদনা করি আমিরাত-বাংলা মাসিক মুকুল। ভালবাসি মা, মাটি ও মানুষকে..

লুৎফুরমুকুল

আমি এক উদাসী পাখি নিঝুম রাতে নদীর তীরে করি ডাকাডাকি। আমি এক মুকুল সবুজ লালের বুকে আছি জুড়ে মায়ের দু'কূল। আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।

লুৎফুরমুকুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মরণ:

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

স্মরণ:
বিয়ানীবাজারের হেডমাস্টারদের হেডমাস্টার আজির উদ্দীন স্যার
লুৎফুর রহমান

১০ জানুয়ারি ২০১৬। দুবাই সময় দুপুর ১.৩০ -এ আমার অফিস টাইম। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩.৩০ হয়। অফিসে এলাম। ফেসবুকের কল্যাণে সাপ্তাহিক দিবালোক এর পেজে দেখলাম 'আজির উদ্দীন স্যার আর নেই'। পরমাত্মীয় হারানোর ব্যথায় কাতর হলাম। ফোন দিলাম লেখক-গবেষক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমানকে। তিনিও শোকার্ত কণ্ঠে একি কথা বল্লেন। এই ফয়জুর ভাইয়ের কল্যাণে আজির উদ্দীন স্যারের কাছে যাওয়া। বিয়ানীবাজার তথা পূর্ব সিলেটের ইতিহাসের সাক্ষি এক বটগাছ ছিলেন আজির উদ্দীন স্যার। তাঁর কাছে যাওয়া সে কথাগুলো আমি পরখ করে নিয়েছি। বিয়ানীবাজারের হেডমাস্টারদেও হেডমাস্টার ছিলেন তিনি। আজির উদ্দীন স্যার ছিলেন পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক হেডমাস্টার আলী আহমদ স্যারেরও হেডমাস্টার। আর আমাদের বরেণ্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আবার আলী আহমদ স্যারের ছাত্র। এমনো হাজারো আলোকিত প্রাণ তৈরীতে আজির উদ্দীন স্যারের ভূমিকা আর ইতিহাস বেঁচে থাকবে কালান্তরে। শেষজীবনে দীর্ঘদিন জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এখান থেকে অবসার গ্রহণ করেন। কিন্তু অবসর নেন নি মানুষ গড়ার কাজ থেকে। সমাজ বিনির্মাণের প্রয়াস থেকে। তাই বার্ধক্য শরীর নিয়েও ছুটেছেন নানাবিধ কর্মকাণ্ডে। আবার অনেকে ছুটেছেন তাঁর কাছে। তিনি খুব বন্ধুসুলভ ছিলেন। নানা মতের নানা মানুষও তাঁর কাছে শান্তি পেতেন। কাউকে নিরাশ করতেন না। ঠিক একজন খাঁটি শিক্ষকের কাছে যেমন তাঁর ছাত্র সবাই সমান। ঠিক তেমনি।

২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় স্যারের কনিষ্ঠা কন্যা সাকি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। কোথাও মেধাবির উত্থানের খবর পেলে ফয়জুর ভাই বসে থাকেন না। এদের নিয়ে ফিচার করা হয়ে যায় তাঁর নেশা। আর তিনি সবসময় এমন কাজে আমাকে সঙ্গি করতেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। বল্লেন পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া (বড়দেশ) যেতে হবে। আজির উদ্দীন স্যারের বাড়ি। আমিও নিমিশে রাজি হলাম। যে মানুষটি বিয়ানীবাজারের ইতিহাসে এক আলোকবর্তিকা তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাবো। গেলাম, সাকি'র তথ্য নিলাম। আমরা দুজনই নানা পত্রিকায় সাকি'র সাফল্যের ফিচার করলাম। আর আমার সাথে থাকা টেপ রেকর্ডার (তখনো স্মার্ট ফোন এতো সস্তা ছিলোনা) থেকে 'কালাউচি' খাল সহ 'পঞ্চখণ্ড কালা' সম্বন্ধে নানা তথ্য সংগ্রহ করলাম। স্যারের স্নেহ আর উৎসাহ আমার এ কাজে আরো মাত্রা বাড়লো। ঠিক তখনি বিয়ানীবাজার বিষয়ক প্রামাণ্যগ্রন্থ 'বিয়ানীবাজার কণ্ঠ' আমার সম্পাদনায় বের করলাম। এমনকরে স্যারের বাড়িতে যাওয়া আসা চলতে থাকে। আর স্যারের বেগম আমাকে ঠিক পুত্রস্নেহ দিতে লাগলেন। যতোবারই গেছি ফয়জুর রহমান ভায়ের সাথেই গেছি। তাই আমাদের বিয়ানীবাজার বিষয়ক আলোচনায় মাঝে মাঝে পর্দার ওপাশ থেকে স্যারের বেগমও টুকিটাকিতে যোগ দিতেন। স্যারের বিনয় আমাকে মুগ্ধ করতে থাকে। জ্ঞানের পূর্ণসীমায় পৌঁছা মানুষ নিজে বিনয়ী হয়-এটি স্যারের বেলায় অক্ষরে অক্ষরে সত্য। কেননা আলী আহমদ স্যার হলেন আজির উদ্দীন স্যারের ছাত্র আর আলী আহমদ স্যারের ছাত্র ফয়জুর রহমান ভাই। তবুও স্যার ফয়জুর রহমান ভাইকে 'আপনি' বলে সম্বোধন করতেন। ২০০৯ তে আমি চলে এলাম দুবাইতে। স্যারের সাথে কথা হতো ফোনে। খুব খুশি হতেন প্রবাসে থেকেও আমার পত্রিকা ও ছড়াগ্রন্থের কথা শোনে। আরো চালিয়ে যেতে তাগদা দিতেন।

২০১১। আমি পরবাস জীবন থেকে প্রথম দেশে গেলাম ছুটিতে। একদিন পিএচজি হাইস্কুলে বসে আলী আহমদ স্যার বল্লেন আজির উদ্দীন স্যারকে দেখতো যাবো। আমি, ফয়জুর রহমান ভাই ও বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ছড়াকার লোকমান আহম্মদ ভাই ছিলাম সেখানে। গেলাম স্যারকে দেখতে আমরা সবাই। স্যারের সাথে ক্যামেরা বন্ধিও করলাম একটি ছবি। যে ছবিটা আজ কেবলই স্মৃতি! ২০১৫ সালের মধ্যদিকে আমি দেশে গেলাম। স্যারকে দেখতে যাবার জন্য আবার ফয়জুর রহমান ভায়ের ডাক। কিন্তু এবার কি একটা ঝামেলার জন্য যাওয়া হলোনা। দেখা হলেনা আর শোনা হলোনা স্যারের শেষ কথাটি। এই আফসোস আমাকে কুঁড়ে খায়। আজ স্যারের মৃত্যুতে আমি ভেঙে পড়েছি জেনে আম্মা আমাকে শান্তনা দিয়ে বল্লেন-'নামাজ পড়ে দোয়া করো স্যারের জন্য। পরকালে যেন দেখা হয়।' আম্মার এই কথাটি যেন সত্যি হয় সেই কামনা মহান আল্লাহর কাছে।

আজির উদ্দীন স্যার শুধু নিজে আলোকিত নয়। বরং আলোকিত করেছেন আপন সন্তানদেরও। তাঁর বড়ছেলে বিসিএস ক্যাডার একসময় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় থাকলেও পরে পাড়ি জমান আমেরিকায়। আর বাকি দু ছেলে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আছেন লণ্ডন ও কানাডায়। একসময় বিয়ানীবাজারের হাই স্কুল শিক্ষকেরা অবসর গ্রহণের পর শুধু হাতে একটি ছাতা আর বুকে আদর্শ নিয়ে ঘর ফিরলেও অভাব আর অনটন থাকতো পিছে। তাঁদের এই সমস্যা নিরসন কল্পে স্যার একটি সমিতি গঠন করে শিক্ষকদের মুখে হাসি ফোটান। এছাড়া বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠা উত্তর সময়ে দেখবাল করেছেন অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে। বয়সের ভারকে হার মানিয়েছিলেন তিনি মনের ভার দিয়ে। তাই ঠিক শয্যাশয়ি অবস্থায় স্যার চলেছেন মানুষের কাছে। আর মানুষ ছুটেছেন স্যারের কাছে। এমন মহাপ্রাণের মহাপ্রয়াণে কাঁদবে মাটি ও মানুষ। এই মানুষ গড়ার কারিগর আলোকিত মানুষটিকে আল্লাহ যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এই কামনা।

লেখক: সম্পাদক মাসিক মুকুল, দুবাই। বাড়ি-নিদনপুর, বিয়ানীবাজার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৬

চন্দ্রপ্রেমিক বলেছেন: এই আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরকে আল্লাহ তার আলোর গৃহে স্থান দিক। আ-মি-ন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.