নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানি দেখা হবে

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৫৫


পাহড়ি এই জায়গাটায় পোস্টিং নিয়ে শাহেদ বরাবরই অসন্তুষ্ট ছিল।অন্তত চাকরির প্রথম দিকটায় ।জেলাসদর থেকে অনেক দূরে।ঠিকমত ইলেক্ট্রিসিটি থাকেনা।মাঝেমাঝে ইন্টাররনেটের গতি ও খুব অসহ্য রকমের ধীর হয়ে যায়।
জীবনের বেশিরভাগ সময় দেশের দুইটা মেগাসিটিতে কাটিয়ে আসা মানুষের জন্য এমন এলাকায় মানিয়ে নেয়াই কষ্টের। শাহেদের ও কষ্ট হত।তার উপরে জায়গাটা অসহ্য রকমের নির্জন ।আশেপাশে বিশাল বিশাল চা বাগান।আর এতসব চা বাগানের জন্য একটা মাত্র হেলথ সেন্টার।জায়গাটা সীমান্তের কাছাকাছি ও বটে। এমন জায়গায় প্রথম ছয় মাস সত্যি কষ্টে গেছে।হেলথ সেন্টারে রোগী প্রচুর।দিনের বেলায় একজন ডাক্তারের বেশ ব্যস্ত সময় যেত। যদিও ভাষাটা বুঝতে কষ্ট হত। ঢাকা বা চট্টগ্রামের ভাষার সাথে মেলে না খুব একটা। এতসব এর মাঝেও আশার ব্যাপার এই যে এখানে বেতন বেশ ভাল।বিদেশি অনুদানে পরিচালিত এই হেলথ সেন্টারে বছর দুয়েক কষ্টেশিষ্টে কাজ করে যেতে পারলে পোস্টগ্রাজুয়েশন করার জন্য পরের পাঁচবছরের খরচ হয়ত উঠে যাবে।আপাতত এটাই লক্ষ্য ।
মাসছয়েক পর থেকেই শাহেদের মনে হতে লাগল যে জায়গাটা আসলে অত বেশি মন্দ না। হেলথ সেন্টারের সাথেই ওর কোয়ার্টার।একটু দূরেই বয়ে গেছে ছোট্ট একটা নদী।স্বচ্ছ টলটলে পানি।পাড়টা বালিতে ঢাকা । সুন্দর একটা নাম ও আছে -খোয়াই। নামটা শুনলেই কেন জানি বুকটা হু হু করে উঠে। মনে হয় কে যেন কিছু একটা খুইয়ে ফেলেছে। কর্ণফুলীর নামটার সাথে যেমন কোন এক পাহাড়ি মেয়ের কানের ফুল হারিয়ে ফেলার কাহিনী আছে ,এখানে ও তেমন কিছু হারিয়ে ফেলার কাহিনি আছে কিনা কে জানে!জায়গাটা সুন্দর।নিশ্চই আগেও সুন্দর ছিল।ছয়মাস চলে যাবার পরে কেন সৌন্দর্য ধরা দিল এটা নিয়ে বরং সে বিস্মিত হচ্ছে।এখন রোজ বিকেলে নদীধারে হাঁটতে যাওয়াটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সংগে থাকে তার কেয়ারটেকার কাম রাঁধুনি শম্ভু ।হাঁটতে হাঁটতে অনেক সময় তারা চলে যায় কাছের চা শ্রমিকদের গ্রামটায়। স্থানীয় কিছু লোকের সাথে বেশ জানাশোনা হয়েছে।তাদের মাঝে বসে তাদের গল্পগুলো শুনতে এখন আর কেন জানি খারাপ লাগেনা। ডাক্তার হিসেবে সে এলাকার লোকজনের আস্থা মোটামুটি অর্জন করতে পেরেছে।এখন অনেকসময় রাতবিরেতে ইমারজেন্সি ডাক ও পড়ে।
আশেপাশের দুই-একটা চা বাগানের ম্যানেজারের সাথে ও পরিচয় হয়েছে।ম্যানেজারদের বেশ আলিশান অবস্থা ।বিশাল ডাকবাংলো ,কেয়ার টেকার, গাড়ি সবই আছে ।কিন্তু বেচারিদের দুঃখ তাদের স্ত্রী-পরিবার তাদের সাথে থাকতে চায় না।বিয়ের পর কয়েক বছর হয়ত কষ্ট করে থাকে।কিন্তু তারপর সন্তানদের ভবিষ্যতের অজুহাতে শহরে পাড়ি জমায়।গুগলিছড়া টি এস্টেটের ম্যানেজার তো বেশ আক্ষেপ করে বলছিলেন কথাগুলো। তার আক্ষেপ শুধু এটাই না।বরং নিজের চা বাগানের নাম নিয়ে ও আক্ষেপ আছে।ছেলেটা কোথাও বাবার চা বাগানের নাম বলতে চায় না।এই নামেই নাকি তার গন্ধ গন্ধ লাগে।বেচারি ম্যানেজার একবার মালিককে নাম পাল্টানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মালিক পাত্তাই দিলনা। মালিকের আর দশটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। সীমান্তবর্তী এই চাবাগানের নাম নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কই!যতদিন বাগান প্রফিট দিচ্ছে ততদিন সব ঠিকঠাক।
বিভিন্ন ম্যানেজারদের সাথে পরিচয়ের সুবাদে ওনাদের রাতবিরেতের পার্টিতে ডাক পড়ে শাহেদের ।ভাল খাবার দাবারের ব্যবস্থা থাকে সেখানে। সঙ্গে গলা ভেজানর জন্য থাকে বিভিন্ন পানিয়ের ব্যবস্থা।কঠিন এবং তরল -দুই ধরনেরই।শাহেদের অবশ্য কোনটাতেই কোন সমস্যা নেই। রাজধানীর বিখ্যাত মেডিকেল কলেজে পড়ার সুবাদে নানাধরনের বন্ধুবান্ধবের সাথেই উঠাবসা ছিল। তারা তাকে রঙ্গিন-সাদা সব ধরনের পানিয়র সাথেই পরিচিত করেছে।প্রথম দিকে গিয়েছিল কৌতূহলে ।পরে অবশ্য অনেকটা নিয়মিতই হয়ে গিয়েছিল।বিশেষ করে শ্রুতি চলে যাবার পরের সময়টায়। ওদের সংগেই পড়ত শ্রুতি। শ্যামলা,ছিমছাম মেয়েটা। ঠোঁটের কোনায় একটা তিল।বড় বড় চোখ। অন্য গ্রুপে ছিল।শাহেদের সাথে পরিচয় হুট করেই । কলেজের এনুয়াল কালচারাল ফাংশানের রিহারসাল চলছিল।সাহেদ দেখতে পেলে একটা মেয়ে বারান্দায় পায়চারি করছিল।স্টেজে উঠতে ভয় পাচ্ছে।সাহেদ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভয় পাচ্ছেন?
মেয়েটা ইতস্তত হয়ে বলল , আরেহহ নান্না হ না মানে...... -আপনি তাহলে তোতলাচ্ছেন ক্যান?
মেয়েটা তখন হেসে দিল। যেন হাজারটা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে পড়ল।শাহেদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
পরিচয়টা শুধু পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকতে পারত। কিন্তু শাহেদের সৌভাগ্য ( কিংবা দুর্ভাগ্য) যে সম্পর্কটা আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। ব্যাচমেটরা ওদের লাইব্রেরির সামনের সিঁড়ি ,কলেজ চত্বর ,শহীদ মিনার -বিভিন্ন জায়গায় আবিষ্কার করতে লাগল। অগোছালো শাহেদের জীবনটা হুট করে অন্যরকম হয়ে গেল।পয়লা বৈশাখের পাঞ্জাবি, ভ্যালেনটাইন্স ডের টি শার্ট এসব নিয়ে ও অনেক সচেতন হয়ে উঠল। ব্যাপারটা এই ভাবেই চলতে পারত।কিন্তু হুট করে খবর আসল যে শ্রুতির বিয়ে হয়ে গেছে।তারসংগে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় শ্রুতি। ফোন , ফেসবুক সব জায়গায় ওকে ব্লক করে দেয়া হয়। কলেজে ও শ্রুতিওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু শ্রুতিই মানা করে। এমনকি একবার সবার সামনে ওকে চড় ও মারে।
শাহেদ তাই আর জানতে চেষ্টা করে নি। বরং লালপানির দোকানে ওর যাতায়ত বেড়ে গিয়েছিল। পরিবর্তনই জগতের নিয়ম। শাহেদ ও বদলে গিয়েছিল অনেক।এর পরেও তার জীবনে প্রেম এসেছিল।দুইবার ।কিন্তু কেন জানি খুব একটা কাছে টানতে পারেনি কেউই।আগ্রহটা বিছানায় নিয়ে যাবার আগে পর্যন্তই থাকত।তারপর ও সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলত।
পাশ করার পরের বাস্তবতাটা বেশ রুঢ।যে স্বপ্ন নিয়ে পেশাটাতে এসেছিল তা এই বাস্তবতায় হারিয়ে যেতে লাগল সেই স্বপ্নগুলো । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।সুন্দরিরা কোটিপতি বরের সন্ধানে ,কেউ উচ্চ শিক্ষার সন্ধানে ,কেউ চাকরির সন্ধানে একেকজন একেক স্রোতে ভাসতে লাগল। এমন কোন একটা স্রোতে ভাসতে ভাসতেই শাহেদ এখানে এসে থেমেছে। থেমেছে বললে আসলে ভুল হবে। মৃত্যুর আগে জীবন আসলে কখনো থামে না। নাগরিক ব্যস্ততা ,প্রতিযোগিতায় ফিরে যাবার আগে সাহেদ বছরদুয়েক এখানে জিরিয়ে নিচ্ছে -এভাবেই সে ব্যাপারটাকে দেখে।
রাতে শম্ভু বোয়াল মাছ রেঁধেছিল।শম্ভুর রান্নার হাত বেশ ভালই।খালি ঝালটা একটু বেশি দেয়। অনেক বলে কয়ে ও শম্ভুর ঝাল ঝাল দেয়া কমানো যায় নি। বরং আস্তে আস্তে শাহেদ বেশি ঝালেই নিজেকে সইয়ে নিয়েছে।এখানে রাতগুলো যেন তাড়াতাড়িই গভীর হয়ে হয়ে যায়।প্রথম প্রথম ঘুম আসতেচাইত না এত তাড়াতাড়ি। কিন্তু এখন আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই এগারোটার দিকেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।
রাত একটার দিকে শম্ভুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। বের হয়ে দেখে বাইরে একটা জিপ দাঁড়িয়ে আছে। শঙ্খচূড়া টি এস্টেটের ম্যানেজার সাহেব গাড়ি পাঠিয়েছেন।তার বউয়ের নাকি লেবার পেইন উঠেছে। শাহেদ জিজ্ঞেস করল,ম্যানেজারের বউতো শুনেছিলাম ওনার সাথে থাকে না?
-কাল ম্যানেজারের জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ দিতে ম্যাডাম নাকি কাউকে না জানিয়ে হুট করে চলে এসছেন
-এ অবস্থায় উনি এতদুর আসার সাহস করলেন কিভাবে ?
- ডেলিভারির ডেট আরো একমাস পরে ছিল
যেতে যেতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগল ।চারপাশে প্রচুর কুয়াশা।যেতে যেতে আর ইন্তারেস্টিং যে তথ্যটা জানা গেল তা হল ম্যানেজারের স্ত্রী নিজেই নাকি একজন ডাক্তার।
শাহেদ যতক্ষণে শঙ্খচুড়া টি এস্টেটে পৌছুলো ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গেছে। কাছের গ্রাম থেকে প্রায় শতবর্ষী এক দাইকে এনেও শেষ রক্ষা হয় নি।ম্যানেজার সাহেব উদ্ভ্রান্তের মত বারান্দায় পায়চারি করছিলেন । আর নিজে নিজে বিড়বিড় করছে , আমাদের ঝগড়া চলছিল তিনমাস ধরে। আমার রাগ ভাঙ্গাতে, জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিতে এতদূর চলে আসল।
শাহেদ ভেতরটায় একবার উঁকি দিল।সেই শ্যামলা মুখ ,ঠোঁটের কোনায় তিল সব একই আছে। একদম আগের মত।
ও বেশিক্ষন তাকাতে পারছিল না। দৌড়ে বেরিয়ে এল ম্যানেজারের বাংলো থেকে ।
এখন ওর শম্ভুকে ভীষন দরকার।শম্ভুদের পাড়ায় যে বাংলা পানির আসর বসে সেখানে যাওয়াটা খুব দরকার ।ঐ মুখটা শাহেদ ভুলতে চায়

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:০৫

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: জানি দেখা হবে, ঠোটের ভেতরে, ঘুমের আদরে (অনুপম রায়)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৫

লিসানুল হাঁসান বলেছেন: দেখা হয়েছিল কি?

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০২

ওমেরা বলেছেন: সেই শ্যামলা মুখ ,ঠোঁটের কোনায় তিল সব একই আছে । তো !! এগুলো কি কোন পরিবর্তন হয় নাকি !!

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২০

লিসানুল হাঁসান বলেছেন: ভাল বলেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.