নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলেটি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৩


অবশেষে ছেলেটি মরে গেল। কেউ খবর পাবার আগেই। নিঃসঙ্গ আর নিষ্ঠুর মৃত্যু। অফলাইনের শূন্য আর অনলাইনের হাজারদুয়েক বন্ধু রেখে সে মরে গেল। ও , বাসায় বাবা-মা আর একভাই ও ছিল। ছিল আর বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন। যারা ছেলেটার সুসময়ে অনেক কথাই বলেছিল।কিন্তু আজ কেউ ছিল না। মরার পরে অবশ্য তারা এসেছিল। যে আত্মিয়টি একসময় বলেছিল যে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়তে না পারলে জীবনে আর কিছু নেই সে আজ মানবজীবনের অর্থহীনতা আর পরকালের আবশ্যকতা নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিল। যে ক্লাসমেটটি একসময় তাকে মারতে রড় নিয়ে ছুটেছিল আজ সে ও চলে এসেছে। দুঃখ দুঃখ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও তার আসলে বেশ হাসি পাচ্ছে। মৃত ছেলেটার কিছু গেঁয়ো আত্মীয়া সুর করে বিলাপ করছে। তাদের কাব্যপ্রতিভা যেমন মুগ্ধ করার মত তেমনি তাদের সুরটা হাস্যকর। বন্ধুরা ও এসেছে। যাদের সাথে মৃত ছেলেটা হাজারখানেক সেলফি তুলেছিল, যার অসুস্থ্যতায় ছেলেটা হাসপাতালে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে দেয়ালে তেলাপোকার ছোটাছুটি দেখে ,যার বাবার জন্য রক্ত দিতে মাঝরাতে ছুটে গেছে হাসপাতালে ,যার জ্বরের সময় জলপট্টি দিয়েছে -তারা সবাই এসেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সবাই। মৃত্যু সবার কাছে নিত্য পরিচিত এক ব্যাপার । চেষ্টা করছে যথেষ্ট দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু আসলে একেকজনের মাথায় একেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা, মৃত ছেলেটার ফেসবুক প্রোফাইলের কি হবে! এত লাইক ! এত ছবি!
আচ্ছা , ছেলেটার নামে একটা ফান্ড বানালে হয় না ! এই চিন্তাটা একজনের মাথায় আসে। সে ভাবে ,দ্রুত আইডিয়াটা ব্যাচের গ্রুপে পোস্ট করে দিলে ভাল হয়। নাহয় অন্য লবির কেউ যদি আগে কথাটা তোলে তবে ফান্ডের নিয়ন্ত্রনটা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর ছেলেটার জন্য এক শোক পোস্টার ও বানাতে হবে। একটা শোক সভা করা যেতে পারে।
তাবলিগের সেই ক্লাসমেটটা ও এসেছে। মৃত ছেলেটাকে অনেক দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করেছে সে। সে ভাবে, প্রথমদিকে ভালই ছিল ছেলেটা।পরে অবশ্য গান বাজনা , নাটক এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছিল। এসব করলে কি আর জান্নাত মেলে!দ্বীনের পথে আসতে হয়।
বেশ কিছু মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। যারা আজ মাথায় কাপড় দিয়ে এসেছে। জটলা করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ওরা ।নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছে ওরা!। ওদের একজনকে ছেলেটা একদিন রাতে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়েছিল। একজনের বয়ফ্রেন্ড কে অনেক রাতেই জায়গা করে দিয়েছিল ছেলেদের হোস্টেলে তার রুমে। আর একজন আছে যে কিনা তার বয়ফ্রেন্ডের হাতটা শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা গোপনে ভালবাসত তাকে। সমবয়সী একটা ছেলের হুট করে মরে যাওয়ায় মেয়েটা শংকিত। নিজের ছেলে বন্ধুকে সে এভাবে হারাতে চায় না। তারা দুজনে ঘর বাঁধবে, ছোট্ট একটা বাচ্চা হবে। বাচ্চার নাম পর্যন্ত ঠিক করা হয়ে গেছে।
সবার চেয়ে আলাদা হয়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে । অঝোরে কাঁদছে সে। কান্নার দমকে তার শরীর কেঁপে উঠছে একটু পর পর। মৃত ছেলেটাকে ভালবাসত সে। যদিও কখনো সরাসরি বলতে পারেনি সে। এমনি হয় পৃথিবীতে। ‘ আমি যারে ভালবাসি সে আমারে বাসে না। যে আমারে ভালবাসে আমি তারে বাসি না’
ছেলেটার লাশ জড়িয়ে ধরে কাঁদছে একটা ছেলে। ভাইয়া , ভাইয়া ডাক শুনেই বোঝা গেল যে ছেলেটা ওর ভাই। বেঁচে থাকতে ভাইয়ের সাথে খুব একটা সখ্যতা ছিল তা বলা যায় না। সে সুযোগই ওরা পায় নি। পড়াশুনার খাতিরে দুজনের বেড়ে ওঠা ছিল দুজায়াগায়। যখন একসাথে থাকার সময় হল তখন মৃত ছেলেটা শহর ছেড়ে চলে এল রাজধানীতে ।চিকিৎসক হবার স্বপ্ন নিয়ে।
আহারে স্বপ্ন! আজকের এই মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি স্বপ্নভঙ্গ হল কার!গোপন প্রেমিকার, বন্ধুদের, ভাইয়ের নাকি বাবা-মার? কত আশা নিয়ে বাবা-মা ছেলেটাকে পাঠিয়েছিল এখানে। একেকটা বছর যেত আর বাবা-মা বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলত। আর আজকে তারা একপাশে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আকস্মিক এই শোকে তারা আজ পাথর হয়ে গেছেন।
এই যে এতসব ঘটনা ঘটে চলেছে এই ছোট্ট একটা মৃত্যুকে নিয়ে- একজন কিন্তু ঠিকই দেখছেন। এমন লক্ষ -কোটি ঘটনা তিনি রোজ দেখেন। তিনিই যে সব কিছুর কলকাঠি নাড়েন। তিনি তো তিনিই...............

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.