নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হংকং

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:৪১


আই এফ এম সা র এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল মিটিং এ যাওয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে একদম শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। একবার অলরেডি ভিসা এপ্লিকেশন রিজেক্টেড হয়েছিল তারপর আবার তখন চলছে হংকং এ আন্দোলন। সব মিলিয়ে ভিসা লেবেল হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ভরসাই ছিলনা। মিটিং এর ৬ দিন আগে ভিসা হাতে পাই। তারপরে শুরু হয় চূড়ান্ত তোড়জোড়। অতঃপর ১৮ তারিখ আমরা ছয়জন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশর প্রতিনিধিত্ব করতে হংকং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিই। প্রথমবারের মত যাচ্ছি দেশের বাইরে। তাই অনেকখানি উত্তেজনা ছিল, একটুখানি ভয় ও ছিল।আমরা যখন মালয়েশিয়ায় ট্রাঞ্জিট নিচ্ছি তখন জানতে পারলাম আমাদের হোটেল বুকিং তখনো কনফারম হয় নি। পরে হংকং ইউনিভার্সিটির পি এইচ ডি স্টুডেন্ট মিজান ভাইয়ের সহায়তায় আমরা হোটেল বুক করি। মালয়েশিয়ায় ট্রাঞ্জিট শেষে পরদিন দুপুর ৩টায় আমরা পৌঁছে যাই হংকং এ। যেহেতু আমরা প্রি এপি আর এম এরও একদিন আগেই পৌঁছে যাই তাই আমাদের ঠাই হয় শিম শা শুই নামের একটা জায়গায় এক হোটেলে। হোটেলে চেকইন শেষে আমরা সবাই ঘুরতে বের হই রাতের শহরটা দেখার জন্যে। আমাদের কোন আইডিয়া ছিলনা আশেপাশের কোন জায়গায় যেতে হবে। লোকাল লোকজনও খুব একটা ইংরেজি বোঝে না। ।আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে জনৈক ইন্ডীয়ান ইঞ্জিনিয়ার এর দেখা পেয়ে গেলাম। লোকটা আমরা যতটা না আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ভাল। আমাদের পথ দেখিয়ে এম টি আর স্টেশনে নিয়ে গেল।অক্টপাস কার্ড কিনতে সাহায্য করল। তারপর নিয়ে গেল ভিক্টোরিয়া হারবারে। এভিনিউ অফ স্টারস থেকে আমরা দেখলাম হারবারের অপূর্ব রাতের ছবি। তারপর উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো। আস্তে আস্তে জায়গাটা নির্জন হতে লাগল।কেউ একজন মিউজিক বাজাচ্ছে আর আমরা স্পেস মিউজিয়ামের সিঁড়ি তে বসে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। পুরো রাত বসে থাকার ইচ্ছে থাকলে পরের দিনের জন্য আমাদের প্লান থাকায় আমরা চলে গেলাম হোটেলে। পরদিন খুব ভোরে হোটেল থেকে চেক আউট সেরে আমরা মিজান ভাইয়ার বাসায় আমাদের লাগেজ রেখে রওনা দিলাম ল্যান্টাও আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। প্রথম দিন বলে হংকং এর বিখ্যাত এম টি আর সিস্টেম টা বুঝতে একটু সময় লাগছিল। ল্যান্টাও আইল্যান্ডে গিয়ে আমরা বিগ বুদ্ধ , পোচিন টেম্পল , নং পিং ৩৬০ ডীগ্রি ভিলেজ এসবে ঘুরলাম। জায়গা গুলো আসলে ছবি তে যত না সুন্দর দেখায় তার চেয়ে হাজার গুনে সুন্দর। বিগ বুদ্ধায় পাহাড়ের চূড়া থেকে আকাশ ,সমুদ্র আর পাহাড়ের সম্মিলনের যে দৃশ্য দেখা যায় সেটা আসলে কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। ইউনিভার্সিটি অফ হংকং এ আমাদের চেক ইন এর সময় ছিল বিকেল তিনটা। তাই তিনটার মাঝেই আমরা চি সান কলেজ অফ ইউনিভার্সিটি হংকং এ চলে এলাম। আগামী তিনদিনের জন্য এটাই আমাদের ঠিকানা। চেক ইন শেষে প্রি এ পি আর এম এর ওপেনিং ডীনার। এইচ কে ইউ শহরের মাঝখানে পাহাড়ের গা ঘেঁষে । পরদিন ভোর থেকেই শুরু হয়ে গেল আমাদের ওয়ার্কশপ । আমাদের টিমের একজন ট্রেইনার হিসেবে আর আমরা বাকিরা ট্রেইনি হিসেবে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে জয়েন করলাম। আমি যেহেতু এক বছরের জন্য বাংলাদেশে নোরা ছিলাম তাই আমি স্বাভাবিকভাবেই আই পাসের ‘এক্সেস টু সেফ এবরশন ‘ ওয়ার্কশপে জয়েন করি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের ব্রেকফাস্ট কল। আমরা ভোরে ভোরে উঠে এম টি আরে করে চলে যাই ইউনিভার্সিটি তে। আই পাস ওয়ার্কশপে আমি আমার কো ট্রেইনি হিসেবে পাই ১৫ জনের মত চমৎকার মেডিকেল স্টুডেন্ট কে। সবাই এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনের বিভিন্ন অঞ্চলের । আমাদের ট্রেইনার ছিল লিথুনিয়ার এগলে আর অষ্ট্রেলিয়ার স্টেফানি। তিনদিনের সকাল সন্ধ্যা ট্রেনিং এ সময় কিভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারি নি। এর মধ্যে একটা মজার অভিজ্ঞতা ছিল আমরা যারা হালাল খাবার খেতে যেতাম তাদের একসাথে এবনিজার নামে হালাল সারটিফাইড রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া। লোকাল ভলান্টিয়াররা আমাদের ‘হালাল পিউপল ‘ হিসেবে ডাকতে শুরু করল।রাতের বেলায় চি সান কলেজের কমন রুমে বসে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সাথে গল্প করা মনে থাকবে অনেকদিন। সবাই কত বন্ধুবতসল! কেউ কাউকে চিনি না, এ কয়দিনের পর হয়ত জীবনে আর কখনো দেখব না, তবুও আন্তরিকতার কোন কমতি নেই। একরাতে ওয়ার্কশপ শেষে ইউচ কে ইউ র মিজান ভাইয়ার সাথে রাতের শহরটা ঘুরে দেখলাম, জীবনের প্রথম ট্রামে চড়লাম। তিনদিনের ওয়ার্কশপ শেষে আমরা চলে এলাম চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকং এর এস এইচ হো কলেজে। বাকি কয়েকদিনের জন্যে আমাদের ঠিকানা এখানে। প্রথম দিন সন্ধ্যায় ম্যারিয়ট হোটেলের হয়ে গেল এ পি আর এম এর অফিশিয়াল ওপেনিং সেরেমনি। ব্যুফে খাবার দাবার , কালচারাল পারফরমেন্স আর অনেক অনেক ফটোসেশন এর মধ্য দিয়ে শেষ হল ওপেনিং সেরেমনি। পরের দিন থেকে আবার বিভিন্ন টপিক এ সেশন।আমি স্কোরা সেশন এ জয়েন করলাম। পাশাপাশি হ্যারাস্মেন্ট ইন মেডিকেল এডুকেশন, রিসার্চ ইন মেডিকেল এডূকেশন, এইচ আই ভি , একশন ২০১৯ ইন মালয়েশিয়া , এসব বিভিন্ন সেশনে জয়েন করলাম। দ্বিতীয় দিন রাতে ছিল ন্যাশনাল ফুড এন্ড ড্রিংক্স পার্টি। সঙ্গে ছিল বিভিন্ন দেশের কালচারাল পারফরমেন্স। সবাই যার যার দেশের ট্রাডিশনাল ড্রেস পরে যাবার নিয়ম। আমি প্রথমে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পড়ে যাব ভাবলেও শেষতক সাহস করলাম না। সবুজ পাঞ্জাবি , পাজামা , লাল উত্তরীয় আর মাথায় গামছা – এই নিয়ে বানালাম আমাদের ট্রেডিশনাল ড্রেস। আমাদের লোকাল ফুড হিসেবে আমরা দেশ থেকে নিয়ে গেছিলাম তিন পদের চানাচুর, ঝালমুড়ি , দুই পদের শুকনো পিঠা, নারকেলের নাড়ু আর নারকেলের চিড়া। নারকেলের দুইটা আইটেম বেশ হিট খেল । আমাদের ও সুযোগ হল স্টলে স্টলে ঘুরে বিভিন্নদেশের খাবার চেখে দেখবার। আমার নেপালি আর পাকিস্তানি স্টল দুইটা বেশ পছন্দ হয়েছিল। এপ পি আর এম এর মেইন থিম ইভেন্টে এবারের থিম ছিল ‘ হেলথ কেয়ার টু পয়েন্ট ও’ । সেদিন এক্টভিটিস ফেয়ার ও হয়েছিল। এই দুইটার ভেন্যু ছিল হংকং সায়েন্স পার্ক। বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা যার যার দেশে কিসব চমৎকার কাজ করছে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ হল এক্টিভিটিজ ফেয়ারে। আর থিমেটিক সেশনে বিভিন্ন বক্তা বলে গেলেন কিভাবে হেলথ কেয়ারে আমরা মডার্ন টেকনলজি কে ইউজ করতে পারি। মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে কিভাবে আরো বেশি ইনোভেটিভ হতে পারি।মেডিকেল এডুকেশনে আরটিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ব্যাবহারের মত চমকপ্রদ সব আইডিয়া ও সেখানে ছিল। এদিন হেলথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জের প্রাইজ দেয়া হল। মিন্সট্রুয়াল প্যাড দিয়ে কিভাবে কম খরচে পলিসিস্টিক ওভারি ডায়াগনোসিস করা যায় এমন একটা প্রোজেক্ট দিয়ে এক দল জিতে নিল পাঁচ হাজার ডলার। পরদিন রাতে আবার আমাদের ছিল সিটি এক্সপ্লোরেশনের সুযোগ। গেলাম শিম শা শুই আর মং কং যেটা লেডিস মারকেট নামে পরিচিত। রাতে ফেরার পথে লোকাল ফেভারিট বাবল টি ট্রাই করে ফিরতি এম টি আরে ফিরে এলাম ভারসিটি তে। দেখতে দেখতে এপি আর এম শেষের দিনে চলে এলো। যথারীতি প্রতিদিনের বিভিন্ন সেশনের পাশাপাশি ছিল এদিনে স্পেশাল প্লিনারি সেশন। আই এফ এম সা র ন্যাশনাল মেম্বার হিসেবে বি এম এস এস বাংলাদেশের ভোটিং রাইট আছে। এদিন বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের হয়ে আমাদের প্রেসিডেন্ট আপু ভোট দিলেন। এরপরে শুরু হল ক্লোজিং সেরেমনি। বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাওয়ায় সবার কন্ঠে বিষাদের সুর। শেষ সময়টাকে সবাই চাইল অনেক অনেক ফটোসেশণে স্মরণীয় করে রাখতে। আমরা যে যার বন্ধুদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্যুভেনির পেলাম ও দিলাম। অনেক উপহারের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে আমার ইন্দোনেশিয়ান রুমমেটের কাছ থেকে পাওয়া ‘ সারো’ ( লুঙ্গির ইন্দোনেশিয়ান ভার্সন। রাতে আমরা আবার কিছু বন্ধু মিলে পাশের একটা জায়গায় খেতে গেলাম। হালাল খাবার খাই বলে লোকাল খাবার খুব একটা ট্রাই করার সুযোগ আগে হয় নি। শেষদিন আমাদের গ্রুপে আমি এবং আরেক ইন্ডিয়ান ভেজিটেরিয়ান ফ্রেন্ড বেশ কিছু লোকাল ভেজ আইটেম আর ফিশ ট্রাই করলাম। জনৈক থাই বন্ধু আমাকে চপ্সটিক ব্যবহার করা শেখালো। আমি ও জানাতে ভুললাম না যে তার নাম আমি কোন দিন ভুলব না কারণ জীবনে আমি যখনি চপস্টিক দিয়ে খাব ইউকির নাম আমার মাথায় আসবে। রাত সাড়ে বারোটা বাজতে তখন মাত্র ৫ মিনিট বাকি। শেষ এম টি আর ধরতে আমরা দিলাম দৌড়। তাড়াহুড়া হলেও শেষতক এম টি আর মিস হলো না। দুনিয়ার বিভিন্ন কোনার ১০-১২ টা ছেলে মেয়ে একটা অচেনা শহরে গভীর রাতে ট্রেন ধরার জন্যে দৌড়াচ্ছে যারা দুদিন আগেও একে এপরকে চিনত না এবং আগামী কালের পর হয়ত জীবনে কখনো তাদের দেখা হবে না- এমনটা বোধহয় চিজি বলিউড মুভিতেও হয় না। কেমন জানি স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছিল। ইউনিভারসিটি স্টেশনে নেমে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের ডরমে একটু ঘুর পথে যাব। যেই কথা সেই কাজ – ইউনিভার্সিটির আধো আলো আধো ছায়ায় ঘেরা হন্টেড প্লেস গুলো ঘুরে আমরা ফিরলাম আমাদের হলে। এবার বিদায় নেবার পালা। কাল সকালের প্রথম শাটলেই আমরা রওনা দেব যে যার দেশে । কিছু ছবি আর অনেক অনেক স্মৃতি নিয়ে । এই ৭ দিনে আমাদের যে অভিজ্ঞতার বিনিময় হল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে যতটুকু জানলাম এটুকুই আমাদের সম্বল। এখন যার যার দেশে গিয়ে কাজ করার পালা । বিদায়বেলায় বলে এলাম’ See you , when I see you. Till then stay blessed ‘

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: খুব খরচের শহর।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:০২

অগ্নিবেশ বলেছেন: বিদেশে গিয়েও হালাল হালাল করেন আর দশ বারোটা বেপর্দা পোলা মাইয়ার সাথে রাত বারোটায় ট্রেন ধরেন। অসহ্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.