নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ম্যাজিক ড্রাগ

২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

একটা গল্প বলি। জাদুকরী ওষুধের গল্প।১৯৫০/৬০ এর দশকে একটা ওষুধ খুব জনপ্রিয় হয়। সিডেটিভ/ট্রাঙ্কুইলাইজার/ স্লিপিং পিল এসব হিসেবে। ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়াই ওভার দা কাউন্টার এই ওষুধ খুব জনপ্রিয় হয়।১৯৫৭ সালে জার্মানিতে প্রথম এই ওষুধটা বাজারে আসে। উৎপাদনকারী কোম্পানি দাবি করে এই ওষুধ সম্পূর্ণ নিরাপদ এমনকি গর্ভবতী মা, শিশু এদের জন্যও। দুশ্চিন্তায়,অনিদ্রায়,গর্ভবতী মায়েদের মর্নিং সিকনেস এসবের চিকিৎসায় এই ওষুধ ইউরোপজুড়ে দেদারসে বিক্রি হতে থাকে। ১৯৬১ সালের দিকে প্রথম একজন লক্ষ্য করেন যেসব মায়েরা সেই ওষুধটা নিতেন এমন অনেক মা যেসব বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন তাদের ফোকোমেলিয়া হচ্ছে( একধরণের জন্মগত ত্রুটি যেখানে বাহু ছোট, বিকৃত কিংবা অনুপস্থিত থাকছে) । একটা জার্মান পত্রিকা ১৬১ জন এমন বাচ্চার রিপোর্ট করল। তারপর ইউরোপ জুড়ে অনেক দেশে এবং আমেরিকায় এমন অনেক শিশু জন্ম নিল। ধারণা করা হয় শুধুমাত্র জার্মানিতে দশ হাজার এমন শিশুর জন্ম হয়েছিল। ২০১১ র বিবিসির এক রিপোর্টে দেখা যায় পৃথিবীতে তখনো তিন হাজার এমন ব্যক্তি বেঁচে আছেন যারা সেই ওষুধটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন। ওষুধটার নাম থ্যালিডোমাইট। বিশ্বের প্রায় ৫০ টা দেশে থ্যালিডোমাইট বেবির জন্ম হয়েছিল।আমরা যারা মেডিকেল সায়েন্স পড়ি আমাদের কারিকুলামে এই থ্যালিডোমাইট ট্রাজেডি একটুখানি পড়ানো হয়।
থ্যালিডোমাইট ট্রাজেডির পরে কিছু পরিবর্তন আসে। এর আগে ড্রাগ ট্রায়ালের ব্যাপারটায় খুব একটা রেগুলেশন ছিল না। যেমন উৎপাদনকারী কোম্পানী থ্যালিডোমাইট শুধুমাত্র ইঁদুরের উপর ট্রায়াল দিয়েই ঘোষণা দেয় যে এটা মানুষের জন্যেও নিরাপদ।আমেরিকায় প্রায় বিশহাজার রোগীর উপর থ্যালিডোমাইট ট্রায়াল হয় যেখানে হাজারখানেক ডাক্তার অংশ নেন। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগের পরে সেসব রোগীর আর যথাযথ ফলোআপ করা হয় নি। থ্যালিডোমাইট ট্রাজেডির পরে ড্রাগ ট্রায়ালের ব্যাপারটায় আরো অনেক নিয়মনীতি আনা হয়। মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে এখন আর হুট করে চাইলেই কোন একটা ড্রাগ মানুষের উপর প্রয়োগ করা যায় না। ল্যাবরেটরিতে ট্রায়াল হয়, এনিম্যাল ট্রায়াল হয়, কয়েক ধাপে হিউম্যান ট্রায়াল হয় । তারপর একটা ওষুধ মানুষের জন্য উপযোগী কিনা সেটা ঠিক করা হয়।
থ্যালিডোমাইট এখনো পৃথিবীর অনেক জায়গা ব্যবহৃত হয়। লেপ্রসি বা কুষ্ঠ আর মাল্টিপল মায়েলোমার মত কিছু অসুখে । এই কথাটা বলার উদ্দেশ্য হল আসলে এটা বলা যে একটা ওষুধ একটা রোগের জন্য নিরাপদ হলেই যে সেটা আরেকটা রোগের জন্য কার্যকরী হবে তা আসলে নিশ্চিত করে বলা যায় না। এর জন্য গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণা একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আধুনিক ড্রাগ ট্রায়ালগুলো অনেক সময় ৬-৮ বছর ও লেগে যায়।
এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই করোনাকালে কেন আমি থ্যালিডোমাইটের সুপ্রাচীন গল্প ফেঁদে বসেছি। এর কারণ হল এই গল্প বোধহয় এখন সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।শুধু চিন্তা করুন গোটা দুনিয়া যখন একটা মহামারীতে কাবু হয়ে আছে তখন কেউ যদি কোন ম্যাজিক ড্রাগের দাবি করে তাহলে তার ফলাফল কি হবে? আমাদের দেশের কথাই ধরি। আঠারো কোটির দেশে যদি আট কোটি মানুষ ও সেই ম্যাজিক ড্রাগ কেনেন তাহলে ওষুধ কোম্পানীগুলোর কি পরিমাণ ব্যবসা হবে সেটা চিন্তা করুন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলে যে প্রায় নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে করোনা রোগিরা কিছু উপসর্গের পরে ভাল হয়ে যায়। এখন এই সময়টায় আপনি যদি ঐ ম্যাজিক ড্রাগটা নেন তাহলেও আপনি ভাল হবেন, না নিলেও আপনি ভাল হবেন। ম্যাজিক ড্রাগটা নেয়ার কারণে আপনার আপাতত মনে হতে পারে যে আপনার সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়েছে।কিন্তু সেটার কি কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো আছে ? নাহ। এবং যেহেতু কোন নির্ভরযোগ্য রিসার্চ বা ট্রায়াল এখনো নেই , তাই একটু চিন্তা করুন যে যদি সেই ওষুধটার বিন্দুমাত্রও কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তাহলে তাতে কতজন আক্রান্ত হবে? সংখ্যাটা হবে কোটির ঘরে। আমাদের অনেক চিকিৎসকেরা আপাতত এই যুক্তিতে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ রোগীদের প্রেস্ক্রাইব করছেন যে তারা এটা ট্রায়াল হিসেবে দিচ্ছেন। কিন্তু আউটডোর বেসিসে কিংবা টেলিমেডিসিনে যেসব রোগিকে তারা এসব ড্রাগ দিচ্ছেন তাদের কি কোন রেগুলার ফলো আপ তারা করছেন? এই ওষুধগুলোর কোন লং টার্ম সাইড ইফেক্ট যদি ডেভোলাপ করে তার জন্য তারা কি কোন দায়িত্ব নিবেন? কিংবা ওষুধগুলো দেয়ার সময় এর উপযোগিতার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য যে এখনো হাতে নেই , এই ওষুধেরও যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এসব রোগীদের জানিয়ে তারা কি কোন ইনফরমরড কন্সেন্ট নিচ্ছেন?
দুনিয়াজুড়েই চিকিৎসকেরা অনেক ড্রাগের অফ-লেভেল প্রেস্ক্রিপশন করে থাকেন।কিছুক্ষেত্রে সেটা বেশ ভাল কাজ করে । কিন্তু সাধারণ সময় আর একটা গ্লোবাল প্যান্ডেমিক কিন্তু এক না। সাধারণ সময়ে অফ-লেভেল প্রেশক্রিপশনে যদি ক্ষতি হয় তবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দুজন-চারজন/ পাঁচজন-দশজন। আর গ্লোবাল প্যান্ডেমিকের সময় যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে হবে কোটি কোটি ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫

আহলান বলেছেন: থেলিডোমাইট যারা খেয়েছেন সবাই তো আর ফেকোমিলিয়া শিশু জন্ম দেয়নি। আবার হয়তো অনেকে এই অষুধ খায়নি, কিন্তু অসুস্থ্য বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। সব অসুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে .. নির্বিচারে তাই অষুধ খাওয়া ঠিক না ...পরে দোষ পড়ে অষুধের।

২| ২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ওষুধ যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

৩| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২২

কল্পদ্রুম বলেছেন: চিকিৎসক যারা প্রেসক্রাইব করছেন তারা ফলো আপ নিচ্ছেন কি না সেটা বোধহয় চিকিৎসক কমিউনিটিতে পোস্ট দিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সদুত্তর পাওয়া যাবে।তবে এই ধরণের প্লাটফর্মে এই পোস্ট পড়ে আমাদের যে সচেতনতা তৈরি হবে তা হলো আমরা অপ্রচলিত কোন ড্রাগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবো।কিন্তু কথা হচ্ছে ড্রাগটা যখন কোন চিকিৎসকই প্রেসক্রাইব করেন তখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসুস্থ ব্যক্তির বলার কিছু থাকে না।তিনি বিশ্বাস করে সেই ড্রাগটা ব্যবহার করেন।বিপদের সময় মানুষ খড়কুটো নিয়েও বাঁচতে চায়।এ ধরণের এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগের নিরাপদ এবং বৈজ্ঞানিক ট্রায়াল চালানোর জন্য সরকারকে আগ্রহী হতে হবে।জনতা এখানে নিরুপায়।

৪| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২৭

বিজন রয় বলেছেন: ওষুধ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল।

৫| ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:১২

আজাদ প্রোডাক্টস বলেছেন: কি ভয়ংকর!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.