নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলিল মিয়ার ভয়

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৬

রাস্তার সস্তার হোটেল থেকে জলিল মিয়া যখন অতিরিক্ত ঝাল দেয়া রুই মাছ আর একগাদা মোটা চালের ভাত খেয়ে বের হলেন তখন ঘড়িতে সময় রাত নয়টা। আর দু ঘণ্টা সময় আছে বাস ছাড়বার। দু ঘণ্টা অনেক সময়। এ সময়টুকু সে কি করবে তা বাইরে দাড়িয়ে চিন্তা করতে থাকে।

চারদিকে মানুষের ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি। ঈদ এর আগে এ সময়টা ঢাকা যেন উৎসবের নগরীতে পরিনত হয়। চারদিকে উৎসবের আমেজ। সে আমেজ এ শহরের বাস স্টেশন গুলোতেও দেখা যায়। চারদিকে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়, বাস এর গর্জন আর হেল্পারদের চেঁচামেচিতে জায়গাটা থাকে সরগরম।

হোটেল থেকে বের হয়ে বাইরে দাড়িয়ে এ ব্যাস্ততা দেখতে জলিল মিয়ার খারাপ লাগে না। এক কাপ চা হলে মন্দ হত না – মনে মনে ভাবে সে। এই সব জায়গায় টং দোকানের অভাব নেই ; তারই একটাতে বসে ছোকড়া দোকানদারের “ইস্পিশাল” চা আর “হাকিমপুরি জর্দা” দেয়া পান খেতে খেতে তার মত অভাবি মানুষেরও মনে হয় – বেঁচে থাকাটা তো মন্দ না!

মেয়েটার কথা মনে পড়ে জলিল এর। আট বছর বয়সের মেয়েটার অনেক শখ একটা লাল ফ্রক এর। এবার বেতন পাবার পরেই ফুটপাথের সস্তার দোকান থেকে একসাথে দুটা লাল ফ্রক কিনে ফেলে জলিল মিয়া। তার মত ব্যাঙ্কের সামান্য ফাইফরমাশ খাটা কেরানির জন্য এইটাই অনেক বিলাসিতা মনে হয়। তার বউ আকলিমার জন্যও শখ করে একটা শাড়ি নেয়। আসন্ন সুখের সম্ভাবনায় সে খুশিতে একটা “স্টার” সিগারেট ধরায়। জলিল মিয়ার সিগারেটের অভ্যাস নেই কিন্তু মাঝে মাঝে সিগারেটের বিলাসিতা করতে ভালো লাগে। আজ সেরকমই একটা দিন।

বাস ছাড়বার আর আধা ঘণ্টা বাকি। দ্বিতীয় সিগারেট ধরাবার সময়ই সে লক্ষ্য করে নোংরা কাথা গায়ে, উষ্কখুষ্ক চুল দাড়িওয়ালা এই বৃদ্ধ পাগল অনেক্ষন ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অদ্ভুত শীতল দৃষ্টি। জলিল মিয়ার অস্বস্থি লাগে। সিগারেট টা শেষ করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে বাস এর দিকে রওনা দেয়।জানালার পাশে বসবার পরে পাগলটা তার দিকে তাকিয়ে শীতল চোখে ক্রুর হাসি হেসে আস্তে আস্তে শহরের কোলাহলের মাঝে মিলিয়ে যায়।

বাস শহরের কোলাহল ছেড়ে বড় রাস্তায় পড়তেই জলিল এর মন ভালো হয়ে যায়। দুপাশের খেতের দূরে দূরে আলোজ্বলা বাড়িগুলো এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বিপ এর মত লাগে।আরামে তার চোখ বুজে আসে। আধো ঘুম আধো জাগরনে সে তার মেয়েটাকে দেখে। তার মেয়েটা লাল ফ্রক পড়ে বাড়ির উঠানে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে- “বাজান আইসে...... বাজান আইসে”......

হঠাৎ তীব্র একটা গন্ধে জলিল মিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পুরো বাস অন্ধকার। গন্ধটা আর অসহ্য হয়। মাংসপোড়া, ধূপ আর রক্তের বোটকা গন্ধ। হঠাৎ হাইওয়ের আলো আধারিতে সে তার সামনে নোংরা কাথা দেয়া সেই পাগলটাকে দেখতে পায়। প্রচণ্ড আতঙ্কে সেদিকে তাকিয়ে থাকে সে। কি তীব্র শীতল দৃষ্টি! কি ক্রুর হাসি। হঠাৎ তার দিকে লিকলিকে নোংরা একটা আঙ্গুল তুলে অশুভ জিনিসটা। এরপর প্রচণ্ড শব্দ... আলোর ঝলকানি...... আর্তচিৎকার......

মানুষের কোলাহল আর চেঁচামেচিতে জ্ঞান হয় জলিল মিয়ার। সামনে অনেক মানুষ। বাসটা দুমড়ে মুচড়ে এমন অবস্থা যে চেনার উপায় নেই। রাস্তার পাশের নিচু জায়গাটায় সারি সারি লাশ। সব লাশ বের করে আনা হচ্ছে। জলিল মিয়া অবাক চোখে দেখতে থাকে। হ্যা সে বেঁচে আছে... সে বেঁচে আছে... হঠাৎই নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় তার। সে চিৎকার করে, সবাই যেন শুনেও না শোনার ভান করে। হঠাৎ সে তার পরিচিত ব্যাগটা দেখতে পায়। এগিয়ে গিয়ে তুলে নেবার আগেই দুজন ধরাধরি করে আরেকটা রক্তে ভেজা লাশ পাশে রাখে লোকগুলো। আজ প্রচণ্ড বাতাস। বাতাসের তীব্রতায় লাশের মুখের আলগা আবরন সরে যায়।

জলিল মিয়া আর এগোয় না। পা আর চলতে চায় না। মনে হয় পা টা কেউ জোর করে ধরে রেখেছে। জলিল মিয়ার চোখ পলকহীন। সে তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে তারই প্রাণহীন দেহের দিকে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: বড়ই দুঃখময় গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.