নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো। পর্ব ১১ হান্টিং “মোনায়েম” ডাউন!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯

১৯৬২ সালের ২৮ শে অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নির্বাচিত হবার পরে এইখানে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ব্যাক্তি ছিল এই “মোনায়েম খান”। আইউব খানের পা চাটা কুকুর ৬ বছরের বেশি সময় ধরে বাঙ্গালির সাহিত্য- সংস্কৃতি, শিল্প, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের উপর চালিয়েছিল অকথ্য নির্যাতন। ৬৯ এর গণআন্দোলনে আইয়ুব এর পতনের কিছু আগে এই কুকুরটির বিদায় ঘটে। এরপর কিছুকাল এই জানোয়ার বেশ নীরব ছিল কিন্তু ৭১ এর জুলাই- আগস্ট মাস থেকে সে আবার তৎপর হতে শুরু করে। তখন এই কুকুরের বনানীর বাসায় পশ্চিম পাকি পুলিশের কড়া প্রহরা ছিল। গেরিলারা পরিকল্পনা করে এই মানুষরূপী “কুকুর” কে হত্যা করবার।





মোনায়েম খানকে হত্যা করেন ৭১ এর সদ্য কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, বীর প্রতীক।

চলুন তাঁর মুখেই শুনে আসি এই অপারেশনের কথা। চলুন চলে যাই ১৯৭১ এর অক্টোবর এ।



(লেখার এই অংশটি নেয়া হয়েছে – মুক্তমনা ব্লগ এ প্রকাশিত “বিপ্লব রহমানের”- অপারেশন মোনায়েম খান কিলিং” লেখাটি হতে।)

“ওই দিন বাসার ভেতরে ঢুকতে পারলেও সেদিনই অপারেশন করতে পারিনি। পর পর দুবার ব্যর্থ হই। ... প্রথমবার ওই সন্ধ্যায় মোনায়েম খানের বাসায় ঢুকে গেটের পাশের কলাবাগানের ঝোঁপে ঘাপটি মেরে বসে থাকি। একটু পরে তার রাখাল সেই শাজাহান ভাই এসে খবর দেয়, মোনায়েম খানের শরীর খারাপ। সে দোতলায় উঠে গেছে। দোতলায় যেতে গেলে তার ছেলের ঘরের সামনে দিয়ে যেতে হবে। আবার বাড়ি ভর্তি লোকজন।”

“অপারেশন ওইদিন স্থগিত রেখে আমি সেখান থেকে চলে যাই পাশের বনানী খ্রিস্টান পাড়ায়। সেখানে প্রচুর ইটের পাঁজা ছিল। ইটের পাঁজায় হাতিয়ারের ব্যাগটি লুকিয়ে চলে আসি।”

“পরে আরেকদিন সন্ধ্যায় হাতিয়ারের ব্যাগ নিয়ে শাজাহান ভাইয়ের সঙ্গে আবার মোনায়েম খানের বাসায় যাই। আবার সেই কলাবাগানে ঘাপটি মেরে বসা। কিন্তু তখন একটি উজ্জল বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোয় চারপাশের সব কিছু পরিস্কার। আমি অন্ধকারের আড়াল পেতে সেই বাতিটি ইট মেরে ভেঙে ফেলি। এতেই বিপত্তি দেখা দেয়।”

“একজন চাকর ভাঙা বাল্ব দেখে চিৎকার - চেঁচামেচি শুরু করে, বাড়িতে চোর ঢুকেছে! মোনায়েম খানের বাসা পাহারা দিতো যে সব বেলুচিস্তানের অবাঙালি পুলিশ, তারা হুইসেল বাজিয়ে, টর্চ মেরে চোর খোঁজাখুঁজি শুরু করে। আমি বিপদ দেখে আবার পালাই।”





“তো তারপর তো আমার মন খুব খারাপ। পর পর দুবার অপারেশনে বাধা। আর বুঝি হবে না! এদিকে শাজাহান ভাই ভাটারা এসে একদিন আমাকে ধরে, কী ভাই, যুদ্ধ হবে না? তার কথায় আবার মনোবল ফিরে পাই।”

“এবার সহযোগি হিসেবে সঙ্গে নেই আনোয়ার ভাইকে (আনোয়র হোসেন, বীর প্রতীক)। আবারো সন্ধ্যার পর মোনায়েম খানের বাসার ভেতরের সেই কলাঝোপে দুজন লুকিয়ে বসে থাকি। একটু পরে শাজাহান ভাই এসে খবর দেয়, আজকে অপারেশন সম্ভব। মোনায়েম খান, তার মেয়ের জামাই (জাহাঙ্গীর মো. আদিল) আর শিক্ষামন্ত্রী (আমজাদ হোসেন) বাসার নীচ তলার ড্রইং রুমে বসে গল্প - গুজব করছেন।”

“আমি জানতে চাই, কে মোনায়েম খান, চিনবো কী ভাবে? শাজাহান ভাই জানান, একটি সোফায় তিনজনই একসঙ্গে বসে আছে। মাঝের জনই মোনায়েম খান, তার মাথায় গোল টুপি রয়েছে।...আমি অপারেশনের পরের পরিস্থিতি আন্দাজ করে গোয়লা জব্বার চাচা আর শাজাহান ভাইকে জামা - কাপড় নিয়ে বাসা থেকে পালাতে বলি।”

“শুনশান নিরবতার মঝে হাতিয়ার বাগিয়ে আমরা দুজন মূল বাড়িটির দিকে এগিয়ে যাই। আমার প্ল্যান হচ্ছে, স্টেন গানের একটি ম্যাগজিন পুরো খরচ করবো মোনায়েম খানের ওপর। বাকি দুজনকে আরেকটি ম্যাগজিন দিয়ে ব্রাশ করবো।...ব্যাকআপ আর্মস হিসেবে হ্যান্ড গ্রেনেড আর ফসফরাস বোমা তো আছেই।”

“আমরা বাড়ির ড্রইং রুমের দরজায় পৌঁছে দেখি দরজাটি খোলা। দরজার দিকে মুখ করে তিনজন একটি সোফায় ঘনিষ্টভাবে বসে মাথা নীচু করে কোনো শলা - পরামর্শ করছে। মাঝখানে গোল টুপি মাথায় মোনায়েম খান। আমি স্টেন দিয়ে ব্রাশ করি। কিন্তু একটি মাত্র সিঙ্গেল ফায়ার বের হয়, গুলিটি মোনায়েম খানের পেটে লাগে। সে ‘ও মা গো’ বলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ...বাকি দুজন ভয়ে ‘বাবা গো, মা গো, বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুরু করে।...আমার স্টেন গান দিয়ে আর ফায়ার হয় না। আমি ম্যাগজিন বদলে বাকী ম্যাগজিন দিয়ে ফায়ার করার চেষ্টা করি, তাতেও কাজ হয় না। আনোয়ার ভাই সেফটি পিন খুলে গ্রেনেডটি ছুঁড়ে মারেন। এবারো ভাগ্য খারাপ। গ্রেনেডটিও ছিলো অকেজো, সেটি দেয়ালে বারি খেয়ে ফেরত আসে।”

“এদিকে তার বাড়ির বেলুচিস্তানী পুলিশরা চিৎকার - চেঁচামেচি শুনে একের পর এক ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করতে থাকে। আমরা দেয়াল টপকে পালাই।”

দৌড়ে গুলশান - বনানী লেকের কাছে পৌঁছে দেখি জব্বার চাচা আর শাজাহান ভাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি আনোয়ার ভাইকে ওদের সঙ্গে লেক সাঁতরে ওপারে চলে যেতে বলি। স্টেন গান নিয়ে আমার পক্ষে সাঁতার দেওয়া হয় না। ...খুঁজতে খুঁজতে আমি একটি কোষা নৌকা পেয়ে যাই। সেটা নিয়ে আমি গুলশান ২ নম্বর ব্রিজের কাছাকাছি আসি।”

“এদিকে গোলাগুলির শব্দে একের পর এক পাক আর্মির ট্রাক মোনায়েম খানের বাসার দিকে রওনা হয়েছে। দূরে বড় রাস্তা দিয়ে ট্রাকের চলাচল দেখি। ওই ব্রিজটির ওপর আর্মির চেক পোস্ট ছিলো। আমি ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়েই ক্রলিং করে ব্রিজের নীচ দিয়ে একটু একটু করে ভাটারা পৌঁছাই।”

“ভাটারা বাজারে তখন একটি চায়ের দোকানে সহযোগি তিনজন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। স্টেনগান কাঁেধ সেই প্রথম গ্রামের মানুষ আমাকে দেখে। এর আগে তারা কানাঘুষায় শুনেছিল, আমি ট্রেনিং নিয়েছি। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি। তখন আমাকে দেখে ভয়ে সবাই দৌড়ে পালায়। আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে (তখন অক্টোবর মাস) কোন রকমে আনোয়ার ভাইকে স্টেনগান দিয়ে বলি, আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে! এর পর আমি জ্ঞান হারাই।”

“জ্ঞান ফিরে আসে রাতে আমার বাড়িতে। দেখি, বাড়ির লোকজন ছাড়াও জব্বার চাচা, শাজাহান ভাই আর আনোয়ার ভাই আমাকে ঘিরে আছেন।

আনোয়ার ভাই বলেন, এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আমরা নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে যাচ্ছি। তুমিও আমাদের সঙ্গে চলো। আমি তাদের বলি রওনা হয়ে যেতে। আমি রাতটুকু এখানেই বিশ্রাম নিয়ে পরদিন রূপগঞ্জে পৌঁছাবো।”

“পরদিন সকালে ঘুমিয়ে আছি, আমার এক চাচা এসে বললেন, রাতে আকাম করে এসে এখনও তুই বাড়িতে! রেডিও খবরে বলছে, মোনায়েম খান মারা গেছে। এখনই তুই পালা।...আমি রূপগঞ্জে পালিয়ে যাই। সেখানে আমাদের গ্রুপের অন্য সহযোদ্ধারা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”



তথ্যসূত্রঃ সেলিনা হোসেন, "একাত্তরের ঢাকা", আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ১৯৮৯।

বিপ্লব রহমান, “অপারেশন মোনায়েম খান কিলিং”, মুক্তমনা ব্লগ এ প্রকাশিত



পর্ব ১২ঃ অপারেশন “স্টেট ব্যাঙ্ক ২” এবং “ডি. আই. টি”















মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ! চমৎকার।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭

আছিফুর রহমান বলেছেন: মোনায়েম খান বাংলার কলঙ্ক। ভাগিস এই কুত্তাটা বেচে নাই, থাকলে হয়তো এই কুকুরটার বিচার নিয়েও অনেক ফালাফালি হতো। পোস্টে ++++++++++++++++++

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: চলুক, মোনায়েম তো অনেকের ঘৃণার বস্তু ছিল। তার কমলা রঙের গাড়িতে পোলাপান ইট দিয়ে ঢিল ছুঁড়তো শুনেছি। ট্যামা-টুমা (ট্যাপ খাওয়া) জীপটা আমিও দেখেছি সচিবালয়ের (সাবেক সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং) সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে।

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৪

অগ্নিপাখি বলেছেন: "কুত্তাটা বেচে নাই, থাকলে হয়তো এই কুকুরটার বিচার নিয়েও অনেক ফালাফালি হতো।" -
আছিফুর রহমান - সহমত আপনার সাথে।

৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: অন্যমনস্ক শরৎ , ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য।

৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: জুলিয়ান সিদ্দিকী , ধন্যবাদ

৭| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: +++++++

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩

মামুন রশিদ বলেছেন: এই অপারেশনটা জবরদস্ত ছিল, পাকিপ্রেমিদের দিল খানখান করে দিয়েছিল ।

৯| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

অগ্নিপাখি বলেছেন: মামুন রশিদ , এই অপারেশনের বিস্তারিত আরও পড়তে পারবেন এই লিঙ্ক এ
mukto-mona.net/Articles/biplob_rahaman/monayem_killing.htm‎

১০| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

অগ্নিপাখি বলেছেন: আদনান শাহ্‌িরয়ার , ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য।

১১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

মোঃ আসিফ-উদ-দৌলাহ বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ :: পোস্টটি পড় ও রটিয়ে দাও

১২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২

ব্লকড বলেছেন: বাপ্রে দুর্দান্ত পোস্টে ++

১৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৪

নিয়েল হিমু বলেছেন: সুন্দর

১৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১২

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ হিমু

১৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২২

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: গ্রেট পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫১

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.