নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে পারিবারিক মনোজগতে ভয়াবহ ধস নেমেছে

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭

আমার এক আত্মীয়ার বিয়ে হয়েছে এইতো সেদিন।পাত্র আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত বলতে বোঝায় তাই।পাত্রী নিজেও দেশের সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছে।তাই বাহ্যিকভাবে এটাকে হিন্দি সিরিয়ালের ভাষায় ''পারফেক্ট জোড়ি'' বললে ভুল বলা হবে না।এ ধরনের বিয়েতে সবারই আনন্দিত হবারই কথা ।বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় বিয়ের আনন্দ শুধুমাত্র দুটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা ছড়িয়ে পড়ে সকল আত্মীয় স্বজনের মাঝে।কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান এগিয়ে আসার সাথে সাথে পারিবারিক বন্ধনের ফাঁটল ধরার যে কদর্য রূপ বের হয়ে আসল, যা দেখে হতাশার সাগরে ডুবতে হল।যে ঘটনাটি আমার ব্যাক্তি জীবন থেকে উল্লেখ করলাম এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় ।
বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এটা এখন নিত্য দিনের ঘটনা।আর পারিবারিক অভ্যন্তরীণ মনোজগতের যে ভয়াবহ ধস নেমেছে, তার ক্ষতিকর প্রভাব আজ সমাজের সর্বোস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।এর ভয়বহতা যে ধীরে ধীরে মহামারি আকার ধারণ করছে তা কিন্তু আমরা বুঝতে পারি যখন দেখি সদ্যপ্রসূত সন্তানকে মা পাঁচ তলা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে।যখন দেখি কিশোরী মেয়ে ঐশিকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে নিজ বাবা মাকে হত্যা করে। অবস্থা কতটা ভয়াবহ তা এক পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারব । গত চার বছরে ১ হাজার ৮৫ জন শিশু হত্যার শিকার, আর এ বছরের প্রথম দুই মাসেই ৪৯ জন!এর বেশির ভাগই আপনজনের হাতে মৃত্যু ঘটেছে।এটা আমাদের সমাজব্যবস্থা যে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।মানবিক মুল্যবোধ কতটা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তা বোঝা যায় , ডাকাতি করার অভিযোগে যখন দেখি নারায়নগঞ্জে সাতজন মানুষকে উৎসব করে মেরে ফেলে অথচ পুরো সমাজ নির্বিকারভাবে দেখছে, কেউ টু শব্দটি করল না। মেনে নিচ্ছি ওরা ডাকাত ছিলো ।কিন্তু ডাকাত ছিলো বলেই কি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ওদেরকে মেরে ফেলব। একবার ভাবুনতো ঐ এলাকার যে শিশুটি এই নৃশংস ঘটনা নিজের চোখের দেখল বা কানে শুনল এটা তার মনোজগতে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে।সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে একটি সমাজে যখন সকলের চোখের সামনে দিনের পর দিন অনাচার , অসংগতি ঘটে চলে অথচ সমাজের এমন কেউ নেই যে কিনা এর প্রতিবাদ করবে তখন বুঝতে হবে এই পুরোসমাজ এক ভয়ংকর ব্যাধিতে আক্রান্ত। এর চিকিৎসা দরকার। আর সামাজিক ব্যাধি এমন এক ব্যাধি যার চিকিৎসা করতে হলে প্রথমেই এই ব্যাধি উৎপত্তির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এজন্যে সর্বপ্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে সমাজের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গকে।
সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশে পুঁজিবাদী চাকচিক্যময় কিছু অনুষঙ্গ এত গভীরভাবে গ্রোথিত হয়েছে, যার ফলে সমাজের মৌলিক অসংগতি নিয়ে যাদের ভাবার কথা তাঁরা সারাক্ষণ দিঘির জলের উপরিভাগের পদ্মফুলের প্রেমেই নিজেকে মশগুল রাখেন ।জলের নীচের অংশে যে ময়লা জমেছে, যা মৎস্যকূলের জীবন ত্রাহি ত্রাহি করে তুলেছে সেইদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।আমাদের অনেক জনপ্রিয় লেখক , সাহিত্যিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের তারকা শিক্ষক, সাংবাদিক রয়েছেন যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা থাকলে স্টেডিয়ামে গিয়ে টিনএজ বালকের মত লাফাঁলাফি করেন , এভারেস্ট বিজয়ের আনন্দে নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না তাদের কাউকে দেখি না ঐশির মনোজগতের অবক্ষয়ের কারণ খুঁজে বের করতে । তাদের কখনো দেখিনা পারিবারিক বন্ধন, পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনতে জনসচেতনা গড়ে তুলতে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে রাজপথ দিয়ে হেটেঁ বেড়াতে। অথচ আমাদের সমাজে সেই ধরনের আলোর দিশারী আজ বড়ই দরকার।যারা সমাজব্যবস্থা ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে জনগণকে সচেতন করে তুলবেন। আমাদের সেলিব্রেটি বুদ্ধিজীবী , লেখক আপনারা যারা সমাজের বিবেক হিসেবে নিজেদের দাবী করবেন অথচ এস্টাব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করবেন না , এটাতো হতে পারে না।তাছাড়া মানুষ যেহেতু আপনাদের মত মানুষদের ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, তাই সে দায় থেকেওতো শুধুই মানুষের জন্যে,সেই মানুষের সমাজের জন্য কিছু করুন।
পরিশিষ্টঃশুরুতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে , বাস্তবিক অর্থে আমাদের সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে পরিবার থেকে। তাই আন্তঃপারিবারিক বন্ধনে যখন ভাঙন ধরে ,পারস্পরিক আস্থাহীনতা যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন তা সামাজিক দৃঢ়তায় ফাঁটল ধরায়।যার ভয়াবহতা একসময় সমাজের সর্বকোণে ছড়িয়ে পড়ে।তাই সমাজের ব্যাধি দুরীভূত করতে হলে প্রথমেই আমাদের পারিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং মায়ার বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যতে দিনের পর দিন হায়দার হোসেনের গান শুনেই চোখের জল মুছতে হবে -
কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত
কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য
নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.