নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্রোতে গা ভাসানো যাবে না.

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০০

''সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে''।কথাটির স্পিরিট বোঝাতে গিয়ে বিভিন্ন প্রথিতযশা আইনজীবী এবং সাবেক বিচারপতিকে একটি কথা বলতে প্রায়ই শুনি বা তাদের লেখায় পড়ি আর তা হচ্ছে ''আইনের ফাক গলে শত অপরাধী ছাড়া পেতে পারে কিন্তু একজন মাত্র নিরাপরাধও যেনো শাস্তি না পায়''।আর সেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনেই নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত কয়েকটি স্তরে মামলার বিচারকার্য পরিচালিত হয়। এবং এ জন্যেই বিচারবিভাগের উচ্চ স্তরে ক্রমান্বয়ে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।যাতে পুংখাণুপুংখভাবে মামলা পর্যালোচণা করা সম্ভব হয়।বিষয়টি আরো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন আইনপেশার সাথে জড়িতবিজ্ঞজনেরা।
গত ২৪ ঘন্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু ভুইঁফোর অনলাইন নিউজ গ্রুপ মাধ্যমে গুলশান ট্রাজেডিতে নিহত ফারাজকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু সংবাদ দেখে ন্যায়বিচার প্রসংগে বহুল প্রচলিত কথাটিই বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,......'একজন মাত্র নিরাপরাধ ব্যক্তিও যাতে শাস্তি না পায়'।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আর এড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় নেই। আমরা মানি আর না মানি এর গুরুত্ব বর্তমানে অত্যন্ত শক্তিসালী। তাই সেই মাধ্যমে নিমিষের মধ্যে একজন নিরাপরাধকেও ভয়ংকর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।যেটা ফারাজের ক্ষেত্রে হচ্ছে বলে আমি মনে করি। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি কেন ফারাজকে জঙ্গী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি গোষ্ঠী । এতে কার লাভ। এক্ষেত্রে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান যে কারণ সমূহ খুঁজে পেয়েছে সেটা আমি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
১।প্রথমত ঘটনা ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই , আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স যে পাঁচজনের ছবি দিয়েছে, তাঁরাই মূলত হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই অভিযানে নিহত হন। এই পাঁচজনের মধ্যে ফারাজের ছবি নেই।শুধু তাই নয় তথাকথিত আইএস তাদের কোনো বিবৃতি থেকে ফারাজকে তাদের লোক বলে ঘোষণা করেনি।আমেরিকাতে পড়াশোনা করে এরকম একজন ছাত্র তাদের কর্মী এই বিজ্ঞাপনটি তারা ব্যবহার করবে না এটা কি হতে পারে? যেখানে শুধুমাত্র আমেরিকায় জন্ম নেয়ার জন্যেই বাংলাদেশী অবন্তী কবীরকে মেরে ফেলা হলো।
২।ফারাজ যদি জঙ্গী সদস্য হত তাহলে সে নিশ্চয়ই নিজেকে প্রচার করতে চাইত। কারণ একজন ২০ বছরের তরুণ তথাকথিত বিপ্লব করতে গিয়ে নিজের জীবন উতঁসর্গ করে দেবে আর তা প্রচারের আলোয় আসবে না তা কি করে হয়।কারণ এ ধরনের তরুণ আত্মঘাতী বিপ্লবীরা বিশ্বাস করে তাদের আত্মত্যাগের কাহিনী অন্য তরুনদের বিপ্লবের পথে আসতে উৎসাহিত উজ্জীবীত করবে।
৩।ফারাজ যদি নিজে জঙ্গী সদস্য হত তাহলে সে কেন তার দুই বান্ধবীকে নিয়ে যাবেন ।বরং তারতো সেক্ষেত্রে নিজের বান্ধবীদের মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল।তাছাড়া তার ভারতীয় বান্ধবী তারুশী বাবার কাছে সর্বশেষ ফোনে বলেছে তারা তিনজন টয়লেটে আটকা। (সূত্র ; টাইমস অব ইন্ডিয়া । প্রথম আলো হলে না হয় বিশ্বাস করতাম না!)
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেন ফারাজকে একটি গোষ্ঠী জঙ্গী বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। কি তাদের উদ্দেশ্য ? আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে
১।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এধরনের জঙ্গী হামলায় অংশ নেয়া তরুণেরা ভার্চুয়াল জগতে অনেকের কাছে হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।যা নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সকল সন্ত্রাসী সংগঠনে নতুন নতুন কর্মী যোগদানে বিশেষ ভূমিকা রাখে । ১ জুলাই বাংলাদেশের গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে অংশ নেয়া তরুণদের অস্ত্র নিয়ে আরবীয় ড্রেস পরিহিত হাস্যেজ্জবল ছবি মিডিয়াতে প্রচার হিরোইজমেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু তাদের হিরোইজমে চরম্ভাবে বাধ সাধে কয়েক ঘন্টা পরে যখন ফারাজের বন্ধুদের জন্যে নিজের জীবনের উৎসর্গের সংবাদ প্রচার হতে থাকে।
মুহূর্তের মাঝে প্রচার সকল আলো গিয়ে পড়ে ফারাজ আইয়াজ হোসেনের উপরে। দেশী বিদেশী বাঘা বাঘা সংবাদ মাধ্যম ফারাজের আত্মত্যাগের ঘটনা তারুশির বাবার উদ্ধৃতি সহ প্রচার পায়। স্তম্ভিত হয়ে পড়ে জঙ্গী গোষ্ঠী ও তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল গোষ্ঠী।বন্ধুত্বের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বস্ততা থেকে একজন ২০ বছরের তরুণের জীবন দান জঙ্গী হামলায় নিহত ও আহতদের জন্যে হতাশায় নিমজ্জিত লাখ লাখ মানুষকে এক নতুন আশার আলো দান করে। নিমিষের মধ্যে কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে হিরো হয়ে যান ফারাজ আইয়াজ হোসেন।যা ভাবতেই পারেনি জঙ্গীগোষ্ঠী বিশেষ করে বাংলাদেশে এদের সহযোগী গোষ্ঠী।তাই নতুন করে ফারাজকে জঙ্গী বানানোর নতুন যুদ্ধ শুরু করে।এর সাথে বুঝে হোক না বুঝে হোক ভার্চুয়াল জগতে আমাদের অজান্তেই আমরা জড়িয়ে পড়ছি।তাই আমাদের যেকোনো নিউজ লাইক বা শেয়ার করার আগে সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিচারবিবেচনা করতে হবে। স্রোতে গাঁ ভাসানো চলবে না।
পরিশিষ্টঃকোলকাতা বাংলা ছবি ''কানামাছি'র শেষ দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে শেষ করব। দৃশ্যেটি ছিল এরকম অভিমন্যু একজন তরুণ জনপ্রিয় চিফ মিনিস্টার ।যে কিনা শত শত মানুষকে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু সাংবাদিক বন্ধু আবিরের কাছে তার সকল রাজনৈতিক ভণ্ডামি একসময় ধরা পড়ে জয়ায়। যথারীতি আবির সাবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তা প্রকাশ করতে উদ্যত হয়। ঠিক তখন অভিমন্যুর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাটি আমাদের সমাজ ,রাজনীতি সবকিছুর জন্যে প্রণিধানযোগ্যে।সেখানে যা বলেছিল তার অর্থ দাঁড়ায় ''যে মানুষটি স্বপ্ন দেখায় , যাকে অবলম্বন করে মানুষ স্বপ্ন দেখতে চায়, তার কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি যদি সবার সামনে তুলে ধরা হয়, তাতে সাধারণের বিশ্বাস নস্ট হয়ে যাবে। মানুষ তখন ভবিষ্যতে আর কাউকে বিশ্বাস করবে না।
তাই ফারাজকে নিয়ে আমরা কোনো কাটাছেড়া করতে চাইনা।কারণ সে আমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের জন্যে জীবন দিতে শিখিয়েছে। হয়ত তার দেখানো পথে একদিন কেউ আসবে যে শুধু বন্ধুদের জন্যে নয় ,পুরো জাতির জন্যে , দেশের জন্যে, মানবতার জন্যে রুখে দাঁড়াবে।
সুতরাং আত্মকেন্দ্রিক সমাজ জীবনে ফারাজ হয়ে উঠুক আমাদের স্বপ্নসারথী !!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:২২

বিজন রয় বলেছেন: ওগুলো তাদের প্রোপাগন্ডা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.