নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন হতে হলে.........!!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সর্বজনীন নেতা হিসেবে সকল রাজনৈতিক দলকে মেনে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। প্রস্তাবটিকে দুটি প্রক্ষাপটে বিচারের দাবী রাখে। প্রথমত বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি সুষ্ঠু ধারায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এটা একটি ভাল প্রস্তাব। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে অনেক সুন্দর রাজনৈতিক প্রস্তাব সময়ের সীমাবদ্ধতার নিরিখে মুখ থুবরে পড়ে । এটাও সেই ধরনের একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক প্রস্তাব। প্রস্তাবটি আতুঁড় ঘরেই সমাধিস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গণতন্ত্রহীনতা। সেই বিচারে চরম অবিশ্বাস, হিংসামিশ্রিত বর্তমান বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে প্রস্তাবটি আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনৈনিক দলগুলোর কাছে খুব বেশি সমাদৃত হওয়ার আশা নেই বললেই চলে।
দ্বিতীয়ত সর্বজনীন নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা হতে হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হচ্ছে তাঁকে দলীয় সিন্দুক হতে সবার মাঝে উন্মুক্ত করতে হবে।অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধুকে মহামানব হিসেবে নয় , রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যিনি তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে নানা চড়াই উতড়াই পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে সাধারণ মানুষের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।কিন্তু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাত্রদেরকে বঙ্গবন্ধুর সেইসব ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার আলোচনা বা নিরেপেক্ষ বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিয়ে সর্বজনীন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে । বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে ,তিনি কি তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবনে সর্বজনীন নেতা হিসেবে বাস্তবিক অর্থেই রাজনীতি করেছেন কিনা ?
সর্বজনীন নেতা হওয়ার গূণাবলী বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল কিনা সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর সূদীর্ঘ রাজনৈনিক জীবনে তিনি যে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাকে উতড়ে যেতে পারেননি রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে সে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারি।
এক, ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভূমিধবস বিজয় অর্জন করে।শেরে-বাংলা ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটা কি জানি সেই হক মন্ত্রীসভা’ বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি।অথচ সময়ের বিচারে এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।
দুই, আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান মন্ত্রী আতাউর রহমান খাঁনের বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবস্থান ছিলো তাঁর ইগোস্টিক রাজনীতির একটা বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসনে দলীয়করণের শুরু মুলত সেই সময় হতেই। আর তা শুরু হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই।ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান তাঁর সরকারের পুরোটা সময়ই অস্বস্তির মধ্যে সরকার পরিচালনা করতে হয়।
তিন, দলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর সাংগঠনিক শক্তিকে একচ্ছত্র করার অভিপ্রায়ে মাওলানা তর্কবাগীশকে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করেন।এটা ছিলো তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসের প্রথম পদক্ষেপ। কারণ সে সময় দলীয় ঐক্যের অংশ হিসেবে আবুল মনসুর আহমদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিলো ।
চার , প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মীর্জার ষড়যন্ত্রে কেন্দ্রীয় সোহরাওয়ার্দী সরকার রিপাবলিকান দলের সমর্থন হারালে পদত্যাগ করলে কে এস পি’র একটি অংশ আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের জন্যে রাজী হয় তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ত্রিশজন। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী শেষ মুহূর্তে তাদের সমর্থনে সরকার গঠনে রাজী হননি আর এর পিছনে ভূমিকা ছিল শেখ মুজিবের।
পাঁচ, ইসকান্দার মির্জা সবসময়ই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি তৈরি ছিল তারমধ্যে অন্যতম। তার অংশ হিসেবে চুন্দ্রীগড় মন্ত্রীসভাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে তিনি আওয়ামী লীগের একটি অংশকে মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে অপতৎপরতা চালান। অথচ সোহরাওয়ার্দী সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মন্ত্রীসভায় যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে শেখ মুজিবেরও সম্মতি ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে তিনি কাউকে কিছু না বলে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে করাচী চলে যান এবং মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মাত্র ছয়দিন পর পোর্টফোলিও নিয়ে অসন্তোষের জন্যে পদত্যাগ করেন। এবং সেইদিন রাতেই আইয়ুব খাঁন সামরিক আইন জারি করেন ।সে রাতেই গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিব।তাই এটা পরিস্কার হয়ে যায় ইসকান্দার মির্জা যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেন এবং বঙ্গবন্ধু বুঝে হোক না বুঝে হোক সেই রাজনৈতিক ফাঁদে পা দিয়ে নিজেতো পতিত হনই ।পাকিস্তানের গণতন্ত্র অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখেন।
ছয়,সবশেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই মুক্তিযুদ্ধে সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদানকারী তাজউদ্দিন আহমেদকে দল থেকে বিতাড়ণ ছিল বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল। এ বিষয়ে খুব আলোচনার প্রয়োজন নেই কারণ মোটামুটি সবাই আমরা জানি।
সর্বশেষঃ বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনোই তাঁর নিজ দলের মধ্যেই সর্বজনীন নেতা হতে চাননি বা হতে পারেননি।তাই আমরা দেখি সেই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খাঁন,আবুল মনসুর আহমদ এবং সবশেষে তাজউদ্দিন আহমেদের মত মেধাবী দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ কেউই শেষ জীবন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। কেউ রাজনীতিকে বিদায় জানিয়েছেন কেউবা অন্য দলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
অনুসিদ্ধান্তঃ উপরে উল্লিখিত কারণ সমূহ বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু নিজ দলের মধ্যেই সর্বজনীন নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।অন্য দলকে তিনিতো কখনোই গ্রাহ্যই করেননি।তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে কোনো বিরোধী নেতা থাকা। না থাকা মানে কাউকে বিরোধী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া। এটা কিন্তু সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের রেকর্ড।
পরিশিষ্টঃপ্রশ্ন হচ্ছে এত কিছুর পরেও সৈয়দ আশরাফের প্রস্তাবের ভালো দিকই বেশি।তবে এতে আওয়ামী লীগকে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক খোলস হতে বের হতে হবে। আর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে তাদের সিন্দুক হতে মুক্ত করে দিতে হবে।তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনকে বিশ্লেষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাঁকে মহামানব থেকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আর মানুষ ভুল শুদ্ধ , ভালো , মন্দ, কল্যাণ, অকল্যাণ সব করে । কারণ সে মানুষ।আর এসব গূনাবলীর মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে সর্বজনীন করে তোলেন।
তাই আওয়ামী লীগ যদি বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসে সর্বজনীন নেতা হিসেবে দেখতে চায় ,তবে তাদেরকে আগে মহামানব নয় মানুষ হিসেবে দেখতে হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৯

বিলুনী বলেছেন: আগে বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীন মানেন । তাহলে দেখবেন কলম থেকে এত বকবকানী ঝড়বেনা, কলমটা অনেক সংযত হবে । মনে রাখবেন তিনি মানুষ হতেই মহামানব হয়েছেন । তিনি এখন ভুল শুদ্ধের বাইরে । বিশ্বাস না হলে টুংগীপারাতে গিয়ে দেখে আসতে পারেন , তিনি কবরে শায়ীত , সেখানে তার ভুল শুদ্ধের সুযোগ নাই । তিনি যে কর্ম রেখে গেছেন তার ফল স্বাধীন বাংলাদেশ । একজন মানূষের জন্য তার জাতির কাছে মহামানব হ ওয়ার জন্য এটাই যথেস্ট । তবে এটা ঠিক ছাগু জাতীয়দের কাছে তিনি মানূষৈল থেকেও নীচের কিছু হয়ে থাকবেন তিনি যত কিছুই করেন না কেন । ছলের কলের অভাব হয়না । তাই ধানাই পানাই না করে নীজের মনের হীনতা আগে দুর করাই বেহেতর ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.