নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ম্যাক্সিম

ম্যাক্সিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের সমস্যাঃ প্রতিকারের অনুশীলন

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২৯


ভাই, খুব ঝামেলার মধ্যে আছি। কোন কাজই ঠিকমত করে উঠতে পারছিনা। যাতেই হাত দিই শেষ পর্যন্ত সেটাই বিগড়ে যায়।

ভাই, এই মাসে এত টাকা খরচ করে ফেলেছি। কোথায় খরচ করেছি কিছুই জানিনা। টেনশানে তো ভাই শেষ হয়ে গেলাম।

ভাই, চাকরি নিয়ে আমি খুব হতাশ। দেশের যে অবস্থা কী যে হবে আমার!!

ভাই, চাকরিতে নাকি এত এত টাকা ঘুষ দেওয়া লাগে। আমার তো টাকা নেই। শেষ পর্যন্ত কী করে যে খাব !!



এরকম আরো অনেক কথা আমরা প্রতিনিয়তই বলে থাকি। আমাদের জীবনে সমস্যার শেষ নেই। কেউ যদি আপনাকে তার সমস্যার কথা বলার সুযোগ পায়, তাহলে সে ফিরিস্তি আর সহজে শেষ হয় না। আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের আশেপাশের বন্ধু বা পরিচিতজনদের এ ব্যাপারগুলো বলে থাকি। বন্ধু বান্ধবদের সাথে সিরিয়াস আড্ডায় শতকরা নব্বই ভাগ সময় আমরা শুধু আমাদের হতাশা ও সমস্যার কথাই বলি।



সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে বিভিন্ন কথা হয়ত আমরা জানি। কিন্তু যখন সমস্যায় পড়ি তখন আমাদের মাথায় তাৎক্ষনিক সমাধানের রাস্তা আর আসে না। পরিনামে আমরা সব সময় হাতাশায় ডুবে থাকি। কেউ হয়ত এই হতাশার কথা বেশী প্রকাশ করে, কেউ কম। কিন্তু কোন না কোন সময় আমরা হতাশা প্রকাশ করেই থাকি।



এখন প্রশ্ন হল আমাদের জীবনের চলার পথে এই সমস্যা গুলো উত্তরণের আসলে পথ কী? কয়েকটি পয়েন্টে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।


• আমরা জানি ধৈর্য্য একটি মহৎ গুন। প্রতিটি ধর্মেই এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমরা যারা মুসলমান তারা বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে জানি।
আল্লাহ তয়ালা বলেছেন, "হে মুমিনগন তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।" (২-সূরা আল বাক্বারা:১৫৩)
আমরা মুখে সবাই বলি, আল্লাহ সর্বশক্তিমান। কিন্তু আমরা অন্তর থেকে ব্যাপারটি শতভাগ বিশ্বাস করি কি? করি না। যদি এটা বিশ্বাস করা যায় তাহলে শত বিপদে বা প্রতিকূলতায় আমরা হতাশ হতাম না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি ধৈর্য্যশীলদের সাথে থাকেন তাহলে বিপদে পড়ে যে ধৈর্য্য ধারন করে তার বিচলিত হওয়ার আসলে কিছুই থাকে না। মূল কথা হল বিপদ থেকে উত্তরণের প্রথম পথই হল আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য্যধারন করা।



• আপনি যখন আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে ধৈর্য্যধারন করছেন তখন আপনি মানসিকভাবে অনেকটা হালকা হয়ে যাচ্ছেন। ফলে আপনার দুশ্চিন্তা কম হচ্ছে। এখন দায়িত্বটা আপনার। আপনি যেহেতু সহজ মেজাজে আছেন এবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন এটা থেকে আপনার উত্তরণের সম্ভাব্য পথগুলো কী হতে পারে। চিন্তা করে আপনি কিছু না কিছু একটা বের করবেনই। পরিকল্পনা করুন। আপনার দ্বারা যেভাবে যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যান।
একটা কথা মনে রাখা খুব গুরুত্বরপূর্ণ। আমরা জানি আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ছাড়া কোন সমস্যার সমাধানই সম্ভব নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু চেষ্টা করা। ফলাফল তিনিই নির্ধারিত করেন। আমাদের চেষ্টার যেখানে শেষ, তার রহমতের সেখানে শুরু।



• Every problem must have an opportunity. আমরা জানি দুর্যোগের মধ্যেই সুযোগ থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ দেখান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত।" (৬৪-সূরা তাগাবুন: ১১)
অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, "অামি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের (ধৈর্য্যশীলদের)। যখন তারা বিপদে পড়ে, তখন বলেঃ নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই কাছে ফিরে যাব।" (২-সূরা আল বাক্বারাঃ ১৫৫-১৫৬)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় বিপদে তার উপর বিশ্বাস থাকাটা কত জরুরী। তার উপর বিশ্বাস করলে বা তার উপর ভরসা করলে তিনি যদি আমাদের সৎ পথ দেখান তাহলে বিপদে তাকে স্মরণই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?



• সমস্যায় পড়লে তাড়াহুড়া করা অস্থির হয়ে যাওয়া আমাদের একটি বদ অভ্যাস। তাড়াহুড়া এবং অস্থিরতা দুটিই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মস্তিষ্কে মানব জীবনের সমস্যা সমাধানে অফুরান শক্তি দিয়েছেন। যখন আমরা তাড়াহুড়া করি বা অস্থির হই তখন সে শক্তি আমরা কাজে লাগাতে পারি না। তাই অনেক সময় দেখা যায় সমস্যার সহজ সমাধান আমাদের মাথায় আসেনা। জীবনের যে কোন পর্যায়ে তাড়াহুড়া এবং অস্থিরতা অবশ্যই পরিত্যায্য হওয়া উচিৎ।

আমাদের এরকম কোন অবস্থা তৈরী করা উচিৎ নয় যাতে সেটা ম্যানেজ করতে তাড়াহুড়া করা লাগে। এজন্য সব কাজই নির্দিষ্ট সময়ে করা জরুরী।



• Time is the solution machine. সময় সব সমস্যাকেই গ্রাস করে নেয়। সময় হল সমস্যা সমাধানের ছাঁচ স্বরূপ। সব সমস্যাই এই ছাঁচে পড়ে সমাধানের দিকে যায়। কোন সমস্যা সমাধানে সময় বেশী নেয়, কোন টা কম। আজকের সমস্যার যে তীব্রতা তা একটা সময়ে ক্ষীণ হয়ে যায়। কোন সমস্যাই সমান তীব্রতা নিয়ে দীর্ঘদিন এক্সিস্ট করে না।
আমরা আমাদের জীবনের পাঁচ বছর আগের কোন সমস্যার কথা যদি ভাবি তাহলে দেখা যায় তা এখন সে সময়ের মত আর আমাদের দুশ্চিন্তায় আবেদন রাখে না। আমাদের কাজ শুধু ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে উত্তরণের চেষ্টা করে যাওয়া।



আল্লাহ তায়ালা আমাদের ধৈর্য্য ধারন করে সমস্যার মোকাবেলা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।


সবশেষে একটি হাদীস উল্লেখ করতে চাই।
"হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ধৈর্য্যধারনের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য্যের শক্তি প্রদান করবেন। আর ধৈর্য্য হতে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।" (বুখারী ও মুসলিম)





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৪৬

জাফরুল মবীন বলেছেন: খুব সুন্দর কথা বলেছেন ভাই।প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ভালো থাকুন আর এরকম চমৎকার সব পোস্ট উপহার দিন।

অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪২

ম্যাক্সিম বলেছেন:
জাফরুল মুবীন ভাই, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করুন, সঠিক বুঝ দান করুন। অামীন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.