নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই.............
বাংলা সিনেমা জগতে বর্তমানে "আয়নাবাজি" জয়জয়কার সর্বত্র । আমি ও এই মুভির ট্রেলার দেখে অনেক আশা নিয়ে বসে ছিলাম।কবে বের হবে ? কবে দেখব ! বের হওয়ার সাথে সাথে দেখার ইচ্ছা বাড়লো শতগুন । কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার জন্য প্রথম কয়েক সপ্তাহ এর মধ্যে দেখা হয়ে উঠে নাই ।
অবেশেষে গত সপ্তাহে দেখে ফেললাম , 'আয়নাবাজির' কারিশমা । সিনেমাটা গতানুগতিক সিনেমা থেকে অনেকাংশ ভাল একটা প্লট এ তৈরি হওয়া ছবি । তবে যতটুকু আশা ছিল, তা সম্পূর্ন করতে পারে নাই । অনেক গুলো অসংগতি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
প্রথমেই বলে নেই , আমি কোন চলচিত্র বোদ্ধা নই । তবু নিজ জ্ঞানে আমার কাছে প্রত্যাশা পূরন হওয়ার মতো হয় নাই । অনেকটা সেই প্রবাদ এর মতোঃ- 'যত গর্জে , তত বর্ষে না '
অনেকে বলতে পারেন কেন এত প্রত্যাশা ? আরে ভাই হবে না কেন ! পরিচালক ও প্রযোজক এই প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে ।
এবার আশা যাক কেন এত প্রত্যাশা এবং আয়নাবাজি কেন বাংলার ঘরেঘরে মানুষের মুখে মুখে যতটা না মুভির জন্য তার থেকে বেশি এর মার্কেটিং প্লান এর কারনে ।
আয়নাবাজির পরিচালক অমিতাভ রেজা ও প্রযোজক গাউসুল আলম শাওন তাদের মুভি কে মার্কেটিং করে, এমন পর্যায় নিয়ে গেছে এখানে গাউসুল আলম শাওন এর ভূমিকা সব থেকে বেশি , কারন তিনি হচ্ছেন "গ্রে" ব্যাবস্থাপনা পরিচালক । তার কানেকশন বা মার্কেটিং প্লান কত সুদূর প্রসারী তা আমরা কয়েকটি বিষয় খেয়াল করলেই বুঝতে পারব।
* বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হাইসিকিউরিটি জেল কাশিমপুর কারাগারের ভিতরে ও কনডেম সেল শুটিং । ঢাকা পুরাতন জেলের ভিতরে শুটিং , নবনির্মিত কেরানীগঞ্জ জেলখানায় শুটিং । তাও আবার জেলের অনিয়ম নিয়ে ! সো বুঝতেই পারছেন ।
* সাথে আসল পুলিশ , আসল কারারক্ষী ও পুলিশ ভ্যান ।
* বাংলাদেশ খেলার দিন , স্টেটেডিয়াম পুরা আয়নাবাজির মার্কেটিং দখল । এমন কি অফিসিয়াল মাইক ও !
* বাংলাদেশের ক্রিক্রেট টিমের রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য পুরো দল কে আয়নাবাজি দেখানোর ব্যবস্থা করা ।
* সর্বোপরি সকল মিডিয়া সমান তালে কাভারেজ ।
* আর অনলাইনে পরিচালক নিজে ও আমরা তো আছিই ।
* পাইরেসির ফাঁদ আর প্রশাসন তৎপর ।
এতো কিছু এক সাথে আর কোন মুভির জন্য হয় নাই। সো মুভি যতটা না তার নিজ গুনে প্রসিদ্ধ হয়েছে , তার থেকে বেশি হয়েছে মার্কেটিং প্লান এর জন্য ।
আর সবথেকে বড় তুরুপ এর তাশ ছিল 'রবি' এর কাছে তিনদিনের জন্য গ্রাহক দের দেখার ব্যবস্থা । যেখান থেকে পাইরেসি হয় ।
এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত । এই পাইরেসি টুকু হবে , এটা পুরো আয়নাবাজির টিমের মার্কেটিং এর অংশ বলা যায় প্রি-প্লান । যাস্ট প্রচারনা গরিলা মার্কেটিং বলা যায়।
৩০ শে সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া ছবি , যার ব্যয় ৬০ লক্ষটাকা।
কিন্তু আয় হয়েছে সাড়ে ৬ কোটির ও বেশি!
আর কিছু কি বাকী থাকে ?
যারা দেখার তারা হলে যেয়ে দেখে ফেলেছে , বা যারা আসলে হলে গিয়ে দেখবে তারা ওই রেজুলেশন দেখার চাইতে হলে গিয়েই দেখবে। আর আয়নাবাজি ২০~৫০ টাকার টিকিটের হলে মুক্তি দেওয়া হয় নাই । ওদের টাকা টা একবারে রবির মাধ্যমে উঠে আসলে ক্ষতি কি ।
বুঝেন নাই ব্যাপারটা !
এবার আশা যাক আয়নাবাজির পারফরমেন্স নিয়ে ।
অভিনেতাঃ চঞ্চল চৌধুরী , জর্জ , গাউসুল আলম শাওন , মাসুমা নাবিলার অভিনয় শৈলি আয়নাবাজির প্রাণস্বরুপ হয়ে ধরা পড়েছে । বিশেষ করে চঞ্চল অন্যবদ্য ।
স্টোরিঃ এখানেও ওই গাউসুল আলম তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন । বাংলাদেশের গতানুগতিক সিনেমা থেকে ব্যতিক্রম।
ক্যামেরা ও সিনেমোটোগ্রাফিঃ এখানেই মুভিটির যত মুন্সিয়ানা বলেন আর শৈল্পিকতাই বলেন রাশেদ জামান তার পুরোটাই ঢেলে দিয়েছেন । আমার মতে রাশেদ জামান না থাকলে আয়নাবাজি এর বাজি টা আর হতো না ।একজন রাশেদ জামান থাকলে সেই ছবির পরিচালক আর কিছু নিয়ে ভাবা লাগবে না ।
পরিচালকঃ অমিতাভ রেজা তার দুর্দান্ত কাজ দেখিয়েছে এই ছবিতে , ছোট ছোট গল্প (এ্যাড) বানাতে বানাতে তিনি একটি বড় কাজ করে ফেলছেন। যা অবশ্যই প্রশংসা দাবিদার ।
কিন্তু
আয়নাবাজির ১৪৪ মিনিট এর প্রথম পর্ব শেষ পর্যন্ত ঠিকই ছিল গল্পের ধারাবাহিকতা অনুযায়ি। কিন্তু শেষ পর্বে পরিচালক বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে, মনে হয় শেষ করার জন্য বড় তাড়া । একান্ত ব্যক্তিগত মত অবশ্য ।
আমার কাছে মনে হয়, আয়না চরিত্র যখন নিজাম চৌধুরীর ক্যারেক্টারে প্রবেশ করল । ঠিক তখনই ছিল চরম ক্লাইমেক্স যা পরিচালক ধরে রাখতে পারে নাই।
আয়না টাকার জন্য কাজ করে, যদিও পরবর্তী তার প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য নয় কারন 'মা' তারা মারা গেছে বহুআগে। তারপর ও যখন সে নিজাম চৌধুরী ক্যারেক্টার ইন হলো ধরে নিলাম তার প্রেমিকা ও তার ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্যে । তার গুনের মধ্যে অন্যতম হলো অন্যকে কপি করা । সো সেই চরিত্র টা আর কিছুক্ষন প্লে হলে ভালো হতো ।
এবার একটু অবাধ্যতাঃ
বুড়ো কারারক্ষী কে কয়েকমিনিট এ কথায় হিপনোটাইজ করে তাকে ব্যবহার করে জেল থেকে পলায়ন এ কোন ক্রিয়েটিভিটি নাই ।
ক্রিয়েটিভিটি হতো, আয়না নিজেকে নিজাম চৌধুরীর জায়গায়টা দখল করে ফেললে। নিজাম চৌধুরী কে নিজ বুদ্ধিগুনে জেলে এনে তাকে আয়না বানিয়ে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে । সমাজে নিজেকে নিজাম চৌধুরী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেলে সেটা হতো ক্রিয়েটিভিটি । যেখানে নিজাম চৌধুরী ক্লিন ইমেজ তৈরি করে সে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠা পেত সেটা হত আয়না চরিত্রের সাফল্য যেখানে তার চরিত্র কপি করার ক্ষমতা সম্পূর্নতা পেত ।
একটা জায়গায় বিশাল আপত্তি ! "আয়নাবাজি" কে পারিবারিক ছবি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হলেও আমি তা মানতে পারছি না । বরং ১৮+ ছবি বলা উচিত ছিল । জর্জ (কুদ্দুস) এর ডায়লগ , একজন নারীর ব্যাকসাইড এর ক্লোজ শর্ট এ হাটা, একজন শিশু শিল্পি কে দিয়ে মডেল এর বাতাস দেওয়া , জেলে ভিতরে পরিবেশ এর অংগভঙ্গি কখন ও পারিবারিক হয়ে উঠে নাই, এখন ও আমাদের বাংলাদেশে পরিবারে।
পরিশেষে বলব, ছবিটা ভালো লাগার মতো । তবে যেভাবে প্রচার ও প্রসার হয়েছে তাতে যতটুকু আমার আশা ছিল পুরন করতে পারে নাই ।
চঞ্চল চৌধুরী কে অশেষ ধন্যবাদ এই রকম একটা অভিনয় উপহার দেওয়ার জন্য সেই সাথে অমিতাভ, গাউসুল, ও রাশেদ ভাই কে ও ধন্যবাদ ।
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত মত একান্ত ব্যক্তিগত । কারো সাথেই না মিলতে পারে। আর বর্তমানে ৯০% বেশি মানুষ দেখে ফেলেছে তাই ক্লাইমেক্স গুলো প্রকাশ করে ফেলেছি ।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৫
মিঠুন_বিশ্বাস_রানা বলেছেন: ধন্যবাদ
আসলেই , মনপুরা ও মনের মানুষ এটার থেকে বেস্ট ছিল।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪০
আখেনাটেন বলেছেন: ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশের বলাকা হলে বসে সিনেমাটা কয়েকজন বন্ধু মিলে খুব উৎসাহ নিয়ে দেখতে বসেছিলাম। দেখার পর যারপর নাই বিরক্ত। যেটা মনে হয়েছিল পরিচালক এখনো টেলিফিল্মের ছায়া থেকে পুরোপুরি বেরুতে পারেন নি। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ছবি থেকে সহজেই ছেঁটে ফেলা যেত। হলের ভিতরে অনেককে বিরুপ মন্তব্য করতে শুনলাম।
ছবি সফলতার পেছনে বলা যায় উনারা ফিল্ম মার্কেটিং এর হলিউডি-বলিউডি স্টাইলটা কিছুটা ধরতে পেরেছেন। তবু ভালো। এতে করেও যদি হলের ছবি বিমুখ তরুনরা ছবি দেখতে উৎসাহ পায়।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০২
মিঠুন_বিশ্বাস_রানা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৬
কুহুক বলেছেন: চঞ্চল চৌধুরী কে অশেষ ধন্যবাদ এই রকম একটা অভিনয় উপহার দেওয়ার জন্য এই ছবিটায় চঞ্চলের অভিনয় ছাড়া আর তেমন কিছুই ভালো লাগিনি । আসলে পুরটাই ছিল মার্কেটিং আপনার ব্যাখ্যা ভালো ছিল । এর চেয়ে মনের মানুষ ও মনপুরা ভালো ছিল । পরিচালক নাটক থেকে বের হতে পাইনি ।। মনের মানুষের পরিচালনা অনেক ভালো ছিল ওটা দেখে কখনো মনে হইনি ওটা সিনেমা না ।