নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

হোলি মোটরস (2012, মুভি) - সুররিয়েলিস্ট, multi-genre ম্যারাথন

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩২

অনেকদিন পর একটা সিনেমা দেখলাম নড়েচড়ে বসবার মতো। প্রতিটি মুহূর্ত প্রাণবন্তু এবং চমকপ্রদ। ফরাসী auteur লিওস ক্যারাক্স ১৩ বছরের বিরতির পর হাজির হলেন হোলি মোটরস নিয়ে। ‘আমার সিনেমা না বানাতে পারার ক্রোধ থেকে হোলি মোটরস এর জন্ম হয়েছে’- বলেছেন ক্যারাক্স। তিনি ছবিটার রাইটার-ডিরেক্টর। ক্যারাক্স অবশ্য নিজেকে এখনো ফিল্মমেকার মনে করেন না।





কাহিনী: সিনেমার শুরুতে আমরা দেখি একজন লোক (ক্যারাক্স) গাংচিল আর শিঙ্গার শব্দে ঘুম থেকে উঠে। সে তার ঘরের দেয়াল হাতড়ে বেড়ায়। দেয়ালে একটা বনের mural. তার হাতের একটা আঙ্গুলের অগ্রভাগ চাবির মতো। সেটা ব্যবহার করে দেয়ালে লুকানো একটা দরজা খুলে ফেলে সে। চৌকাঠ পেরিয়ে প্রথমে একটা জাহাজের করিডোর (আসলে বাড়ি) এবং পরে সিনেমা হলে প্রবেশ করে। ব্যালকনি থেকে দেখতে পায় দর্শকসারির মাঝ দিয়ে একটা শিশু হেঁটে যাচ্ছে। তারপর একটা কুকুর, ধীরলয়ে হেঁটে যায় ক্যামেরার দিকে। চমকের এটা কেবল সূত্রপাত। শুরু হয় একটা সম্মোহনী মাল্টি-ঝানরা ম্যারাথন। যেন অকাল মৃত্যুর আগে কোন পরিচালক তার না বানানো ভবিষ্যৎ সব ছবির ট্রেইলার দেখাচ্ছে। লোকটা কি আসলেই জেগেছে, নাকি স্বপ্ন দেখছে !



আমরা দেখি মসিয়ো অস্কার (ডেনিস লেভাঁ), একজন ধনী ব্যবসায়ীর রূপে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে। ছেলেমেয়েরা তাকে বিদায় জানায়। একটু হেঁটে একটা লিমুজীনে উঠে পড়ে। স্বল্পভাষী শোফার (এডিথ স্কব) তাকে জানায় আজ তার নয়টি অ্যাপয়নমেন্ট আছে। গাড়ীটা প্যারিসময় ঘুরে বেড়ায় আর মেকাপ, কস্টিউম ব্যবহার করে নানান ভাবে সেজে একটার পর একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় অস্কার- ভিক্ষুক বুড়ী, স্পেশাল ইফেক্ট স্টান্ট, পাগল, খুনী, মৃত্যুপথযাত্রী বুড়ো। সবাই তার নিজ নিজ সিনেমার তারকা। ক্রাইম থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, মনস্টার মুভি, কামিং অব এইজ ড্রামা, মিউজিকাল, রোমান্স - সব ঝানরা-ই আছে।





সিনেমার স্মরনীয় একটা সিকোয়েন্স-এ অস্কার শ্মশ্র“ধারী, হাতে লম্বা নখ, সাদা চোখের এক খ্যাপাটে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই খেয়ে ফেলছে। ফুলের তোড়া খেতে খেতে দ্রুত সে চলতে থাকে প্যারিসের বিখ্যাত সেমিট্রি প্যার লেশেইজ দিয়ে যেখানে শায়িত অস্কার ওয়াইন্ড, মলিয়েঁ, চোপাঁ, জিম মরিসন এবং কোলেত। হোলি মোটরস-এ সমাধি প্রস্তরে নাম দেখা যায় না। লেখা- ‘ভিজিট মাই ওয়েবসাইট’।





সেমিট্রিতে এক সুপার মডেল (ইভা মেন্ডেস)- এর ফটোশুট চলছিলো। পাগলাটে লোকটা সেখানে এক তরুনীর আঙ্গুল কামড়ে ফেলে দেয়, মডেলের কাখতলি চেটে দেয়, মডেলকে তুলে তার গুহায় নিয়ে আসে। মডেলকে নগ্ন করার বদলে বোরখার মতো আচ্ছাদিত করে। এটা তাকে ফুল ইরেকশন দেয়। অস্কার মডেলের চুল ছিঁড়ে খায়। তারপর তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মডেল তাকে ঘুমপাড়ানি গান শোনায়। পুরোটা সময় মডেল একজন মডেল হয়েই থাকে- কোনরকম আবেগ বা মতামত প্রকাশ না করে।



আরেকটা সিকোয়েন্স-এ অস্কার এক কিশোরীর বাবা। মেয়েটা পার্টিতে এসে বাথরুমে লুকিয়ে ছিলো। তার ভয় অন্যরা তাকে পছন্দ করেনা। বাবা তাকে তিরষ্কার করে। আরো ইজি-গোয়িং হতে বলে। ঠিক যেন একজন শিল্পীর ভেতরের চিরন্তন দ্বন্দ - আমি কি আমজনতার রুচি মেনে কাজ করবো নাকি নিজের মনের মতো?



ছবিতে আমার প্রিয় সিকোয়েন্স একটা অনট্রাক্ট। মেকাপহীন লেভাঁ একটা ফাঁকা বিল্ডিং-এ অ্যাকর্ডিয়ন বাজিয়ে হাঁটতে থাকে। সে হাঁটছে আর তার সাথে যোগ হচ্ছে আরো অনেকে, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। সংগীতের মূর্চ্ছনায় চারদিক মাতিয়ে তোলে তারা। তারা বেপরোয়া, যেন সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে চায়।



হোলি মোটরস- এর আরেকটা চমক অস্কারের প্রাক্তন প্রেমিকার চরিত্রে অস্ট্রেলিয়ান পপ তারকা কাইলি মিনোগের দুর্দান্ত অভিনয় আর গান। দু’জনের দেখা হবার পর মিনোগ একটা পরিত্যক্ত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। সিনেমার অন্যান্য ঘটনার মতোই এই মৃত্যুর কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে আগের বছর ক্যারাক্সের স্ত্রীর আত্মহত্যার সাথে একে সম্পর্কিত করা যায়।



অস্কার চরিত্রে বছরের সেরা অভিনয়টি করেছেন ডেনিস লেভাঁ। এগারোটি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লেভাঁ- সবগুলোর মর্মে রয়েছে একটা প্রচ্ছন্ন বিষন্নতা। চোখের পলকে একটা থেকে আরেকটা চরিত্রে আমাদের নিয়ে যান লেভাঁ। নি:সন্দেহে তিনি বড় মাপের একজন অভিনেতা। হোলি মোটরস তাকে দিয়েছে অভিনয় ক্ষমতার পুরোটুকু ব্যবহারের এক বিরল সুযোগ।



ইন্টারপ্রিটেশন: একেকজন একেকভাবে ইন্টারপ্রিট করেছেন মুভিটিকে। অনেকের মতে এটা সিনেমা নিয়ে সিনেমা। কিংবা অভিনয় নিয়ে - ক্যামেরার সামনে বা বাইরে আমরা যে অভিনয় করি দর্শক বা নিজের জন্য। ছবির শেষ দৃশ্য যেন ছবির শেষ নয়। এযেন ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাওয়া বা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।



এটা একটা সুররিয়েলিস্ট ভ্রমন। ডিজিটাল যুগে সেকেলে সিনেমার হারিয়ে যাওয়া, একজন শিল্পীর শিল্পের হারিয়ে যাওয়া, একজন মানুষের পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া - সব কেমন একটা অদ্ভুত, নিখুঁত সুতোয় গাঁথা ক্যারাক্সের সুররিয়েলিস্ট বিশ্বে।



ক্যারাক্স অবশ্য মানতে নারাজ যে এটা সিনেমা নিয়ে সিনেমা। তার ভাষ্যমতে, ক্ল্যাসিক্যাল ন্যার‌্যাটিভ ব্যবহার না করে মানব জীবনের সব রকমের অভিজ্ঞতাকে একদিনের একটা গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘'এটা একই সাথে সিনেমার প্রতি একধরনের প্রেমপত্র এবং ট্র্যাডিশনাল সিনেমার শোক গাঁথা’' - এমন মন্তব্যের জবাবে ক্যারাক্স বলেন - "It's a miracle cinema exists. It's a miracle it was invented. The primitive power of cinema had to deal with this huge machine, three cameras at a time. I still think, when a camera would follow a man, you had the feeling that it was god watching him. If you had the same shot today on YouTube, you won't have this feeling. But that's okay. Cinema has always had to reinvent itself to find that power again.”





এটা নিশ্চিত যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা বা জনপ্রিয় পুরষ্কার এ ছবির ভাগ্যে জুটবে না। কিন্তু এরা টিকে থাকবে যতদিন ফিল্ম মাধ্যমটি টিকে থাকবে। আপনার হোলি মোটরস দেখার অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, খুব সহজে একে আপনি ভুলে যেতে পারবেন না।



আমার রেটিং : ৫/৫।

বছরের সেরা মুভি : হোলি মোটরস।

সেরা পরিচালক : লিওস ক্যারাক্স।

সেরা অভিনেতা : ডেনিস লেভাঁ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.