নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়ের পরে প্রেম (ছোটগল্প)

০১ লা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

'তুমি আমারে বিয়ে করলা কেন্?'
'আমি কি জোর করছি তোমাকে? '
'তুমি জোর করো নাই, আমার বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিছে আমারে'
'তার মানে তুমি আমাকে পছন্দ করো নাই! '
'শোন, কথা ঘুরাবা না, আমি কি ওইটা বলছি তোমারে? তুমি বিয়েটা পরে করতে পারতা না? আমরা কয়েকমাস প্রেম করতাম, তারপর বিয়ে করতাম...কত সাধ ছিলো জীবনে একটা প্রেম করবো! দিলা সব নষ্ট কইরা'
'এতই যদি শখ ছিলো, তো আগে করলা না কেন্‌? ইউনিভার্সিটিতে পড়ছো তুমি, কত পোলাপান ছিলো প্রেম করার! সাধ মিটায়া প্রেম করতা'
'কী বল্লা তুমি! কী বল্লা? আবার বলো তো ......কত্ত সাহস তোমার, আমারে অন্য ছেলের সাথে প্রেম করতে বলো! আর যদি তুমি ফোন দিছো আমারে' বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় মিতু।

রায়ান চুপ করে বসে থাকে, মিতুর উপহার দেয়া আইফোনটা হাতে নিয়ে। মিতুর সাথে ওর বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হলো। বিয়ে বলতে আক্দ হয়েছে, ওয়ালিমা হয়নি। সুতরাং মিতু থাকছে বারিধারায় তার বাপের বাড়িতে, আর রায়ান তাদের ধানমন্ডির বাসায়। বিয়েটা হয়েছে পারিবারিকভাবে, আগে জানাশোনা ছিলো না। মেয়ের বাবার বন্ধুর ছেলে আর রায়ানের মামাতো ভাই একসাথে পড়ে। সেই সূত্র ধরে কিভাবে যে এটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ালো ভেবে পায়না রায়ান। মিতুকে ওর প্রথম দিন দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিলো। মামাকে ব্যস এটুকুই জানিয়েছে, আর কিছু করতে হয়নি, দু'সপ্তাহের মাথায় আক্দ হয়ে গেছে। মিতু বয়সে ওর দশ বছরের ছোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছে, সব প্রথম শ্রেণী। এখন একটা নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। রায়ানের বাবার লেদারের ব্যবসা, ও সেখানে জিএম হয়ে আছে। রায়ান জানে যে বাবার কপালের উপর সওয়ার হয়েই ওর ভাগ্যের চাকা ঘুরছে। এতো কোয়ালিফাইড একটা মেয়ে কেনো তাকে পছন্দ করলো সেটা তাই তার মাথায় ঢুকে না।
আক্দ এর পর থেকে এই চলছে। মিতুর প্রেম করার শখ পূরন না করার ভিলেনের তালিকায় তিনজন - মিতুর বাবা, মা আর রায়ান। অন্য দু'জনকে কিছু বলার সাহস নেই, মনের সব ঝাল সে তাই নতুন স্বামীটির উপরই ঝাড়ে। মাঝে মধ্যে রায়ানের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, 'তুমি ইউনিভার্সিটির টিচার হলে কিভাবে! তোমার মধ্যে তো কোনো ম্যাচুরিটি আসে নাই'
'ম্যাচুরিটি আসে নাই মানে! তুমি হইলা একটা বুইড়া, তোমার সাথে আমার কয় জেনারেইশন গ্যাপ জানো! সবাই ধরে বেন্ধে আমারে একটা বুইড়ার সাথে বিয়ে দিছে।'
'তুমি না করলেই পারতা'
'কেউ কি আমার মতামত নিছে? আর আমি কি বলছি যে আমি তোমারে অপছন্দ করি? '
'পছন্দ করো এমন কিছুওতো বলো নাই'
'ধানি মরিচ একটা, আবার বুঝে না কিছু! ' মিতু লাইন কেটে দেয়।

৮ই মার্চ ঘুম থেকে উঠেই বউয়ের এসএমএস পেলো রায়ান, 'গুড মর্নিং! আজকে ইন্টারন্যাশনাল উইমিন্স ডে, আমাকে উইশ করো'
'হ্যাপি উইমিন্স ডে, মাই রিজাইনা! বি আওয়্যার অব ইয়োর রাইট্স অ্যান্ড রিসপন্সিবিলিটিস।' লিখে পাঠালো সে।
'রাইট্ এর সাথে রিসপন্সিবিলিটি লাগাইছো কেন্? শুধু রাইট্, বুজছো? ' মিতুর ত্বরিত জবাবে বুঝতে দেরী হলোনা রায়ানের, ছোট্ট করে লিখে পাঠালো, 'হুম'। একটা ছাড়া যে আরেকটা ইনজয় করা যায়না সেটা এই নির্বোধকে কে বুঝাবে! যাহোক, সেদিন তাদের দেখা করবার কথা। মিতুর আবার মিটিং আছে ইউনিভার্সিটিতে।

একটার দিকে মিটিং শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ভার্সিটির সামনে থেকে সিএনজি নিলো মিতু, ধানমন্ডি হয়ে বসুন্ধরা যাবে। রায়ানও বাসা থেকে বের হয়ে একটু এগিয়ে মূল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। মিতু আসছে, ওকে তুলে নিয়ে ঘুরতে যাবে, এটা ভাবতেই কেন জানি খুব ভাল লাগছে তার। একটার পর একটা সিএনজি কাছে আসে, আর সে ভাবে এই বুঝি তার সামনে এসে থামবে। পরপর নয়টা সিএনজি চলে গেলো, মিতুর দেখা নেই। অধৈর্য হয়ে ফোন করলো, 'কী ব্যাপার, কই তুমি? এটুক জায়গা আসতে এতক্ষণ লাগে? '
'জ্যামে আটকা পড়ছি জান্টুশ, এই আর দশ মিনিট'
অবশেষে মিতু আসলো। একটা লাজুক প্রাণখোলা হাসি দিয়ে সিএনজির দরজাটা খুলে ধরলো। রায়ান উঠে বসে স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে বললো, 'বাহ্, আমার বউকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে'
'হু, বিউটি পার্লার থেকে আসছি তো! ' মুখ টিপে হাসে মিতু। রায়ান অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এত সুন্দর করে মানুষ কিভাবে হাসে! কার চোখে, ঠোঁটে এত না বলা কথা খেলে বেড়ায়!
'কী দেখো?'
'তোমাকে'
'না দেখে বিয়ে করছিলা! ' চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে মিতু।
'তুমি একটু হাসো, ঠোঁটটা একটু নাড়াও, চোখটা একটু ঘুরাও আর তোমার চেহারা বদলাতে থাকে। মনে হয় পঞ্চাশ-ষাটটা মেয়েকে বিয়ে করছি' মিতুর কানে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে রায়ান, কানের পাশে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো তার ঠোঁটে আদর বুলিয়ে দেয়। মিতু খল খল করে হাসে, সে হাসিতে মুক্তো ঝরে। তারপর মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে, 'আর কারো দিকে যদি নজর দিছো, চোখ তুলে ফেলবো একবারে'
কারো দিকে, কোন দিকে নজর দেয়ার সময় রায়ানের নেই। সে অপলক চোখে মিতুকে দেখে।
'জিজ্ঞেস করলা না মিটিং এ কি হইলো! '
'কি হলো? '
'আমার ব্যাপারে তোমার কোনই উৎসাহ নাই, জোর করে শোনাতে হয়।' একটু দম নিয়ে, 'প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে ভিসি টিচারদের একটা বয়ান দেয়...বুজছো... পাক্কা দেড় ঘন্টার স্লাইড শো-ওয়ালা বয়ান। একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শুনতে শুনতে কান পইচা গেছে'
'হরতালের মধ্যে না আসলেই পারতে'
'আরে না, এইসব মিটিং এ থাকতে হয়। তুমি এগুলা বুজবা না, করো তো বাপের অফিসে চাকরী'
'হুম' বউয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে।
বিয়ের পর এই প্রথম দেখা ওদের, অথচ মনে হয় যেন কত দিনের চেনা! আর হবেই না বা কেন! সংসার তো ওরা করছেই - রোজ চার-পাঁচ ঘন্টা ফোনে কথা বলা কি পাশাপাশি থাকার অভিজ্ঞতার চেয়ে কম! দেখতে দেখতে হালকা জ্যাম পেরিয়ে বসুন্ধরা শপিং মলে পৌঁছে যায় ওরা। রায়ান ভাড়া মেটাতে গেলে বাধা দেয় মিতু, 'রাখো, আমি দিবো।' এটাও রায়ানের ভালো লাগে - ছোটখাট আদেশ, নিষেধ, শাসন মেনে বউয়ের কথা মতো চলা। ওর খুব ইচ্ছে রিসেপশনের পর লং ড্রাইভে যাবে - মিতু গাড়ী চালাবে আর ও পাশে বসে থাকবে। মিতু কি ড্রাইভ করতে জানে? এই ইচ্ছের কথাটা কখনো বলা হয়নি ওকে।
লিফ্টে উঠতে গেলে মিতু না করলো। সে এস্কেলেটরে যাবে, প্রতিটা ফ্লোর ঘুরে ঘুরে দেখবে। শপিং রায়ানের ভয়ানক অপছন্দ, কিন্তু কেনো যেন আজ খারাপ লাগছেনা। ডান হাতে ওর বাঁ বাহু জড়িয়ে ধরে হাঁটছে মিতু। আড়চোখে দেখে রায়ান, ওর চোখেমুখে রঙিন আভা খেলে যাচ্ছে।
'আর কত হাঁটবা! '
'তোমার কি ধারণা এমনি এমনি হাঁটছি? কাজ আছে।'
'কী কাজ? '
'চুপ থাকো। তুমি কিন্তু কোনো কথা বলবা না'
প্রথমে মাথায় ঢুকলো না রায়ানের। কিন্তু মিতু যখন ওকে নিয়ে ডায়ামন্ড ওয়ার্ল্ডে ঢুকলো ওর বুঝতে বাকী রইলো না।
'এটা কিন্তু ঠিক না মিতু'
'চুপ থাকতে বলছিনা তোমারে! আমি যা বলবো তাই হবে, বুজছো? '
না বুঝলেও বুঝে রায়ান, এই মেয়ের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।
'আমার বাপ-মা'র পছন্দ পুরা খ্যাত, নাইলে তোমার মতো জামাই পাই! রিং দিছে একটা গোল্ডের, আজকাল এগুলা মানুষ পরে! আমি তোমারে ডায়ামন্ডের রিং কিনে দিবো। দোকানে ঢুকতেছি, কোনো কথা বলবানা, আমার পছন্দই তোমার পছন্দ। বুজলা? '
'হুম, বুজছি'
দোকানের ভেতর আধাঘন্টার রীতিমতো একটা ঝড় তুলে রিং পছন্দ করলো মিতু। বাইরে এসে বারবার রায়ানের হাত ঘুরিয়ে দেখে নিজের পছন্দে নিজেই মুগ্ধ হতে লাগলো।
'এই, তিনটা বাজে, আমাকে খাওয়াবানা! '
'খিদা লাগছে তোমার? আগে বলবানা! '
'আগে বলবো কেন? তোমার বউয়ের খিদা লাগছে কি লাগে নাই এটা জিগানো তোমার রিসপন্সিবিলিটি না? '
'কী খাবা, বলো? '
'তুমি কী খাবা? '
'আমি তো কতকিছুই খাইতে চাই'
'ফাইজলামি রাখো, সাহস আছে তোমার? বিলাই একটা। পুরুষ সিংহ হইলে এতদিন উপাস থাকতা না'
'তা ঠিক, সাহস নাই। কী করবো বলো?'
'তাহলে বইসা থাকো, মুখের সামনে আসলে খাইও'
'হুম, বিড়াল হইছি কী আর করার'
'লজ্জা লাগেনা তোমার! '
'হ্যা, অনেক লজ্জা লাগে। কিন্তু এখন তোমার খিদা লাগছে, এটার প্রায়োরিটি বেশি।' ফুড কোর্টের দিকে এগুলো ওরা। সেখানে গিয়ে রায়ান অবাক। বাসের হেলপারদের মতো কর্মচারীরা কাস্টোমারদের ডাকছে। কায়দা করে বেশ কয়েকটাকে এড়িয়ে মোটামুটি পছন্দসই একটাতে বসলো। ওয়েটার মেনু নিয়ে এলে রায়ান মিতুকে বললো ‘আজকে তোমার পছন্দ মতো খাবো। যে আইটেমগুলো তোমার ভালো লাগে সেগুলো নাও।'
মিতু খুব উৎসাহের সাথে কাজটা করতে লাগলো। অনবরত কথা বলছে সে, রায়ান শুনছে, ভুলছে আর ভালো লাগায় ডুবে আছে। খাবার মিতুরটা আগে এলো। মিতু খেপে গেলো।
‘দেখছো, এরা খাবারটা পর্যন্ত ঠিকভাবে দিতে জানে না। দু‘জনের খাবার এক সাথে দিবে না! এটাই শেষ, আর আসবো না এখানে।'
রায়ান মাথা নাড়ালো, ‘হুম’, তার খাবারটা এলো পাক্কা দশ মিনিট পর। ওরা খাওয়া শুরু করলো, একজন আরেকজনেরটা শেয়ার করে। রায়ানের খিদাটা মনে হয় একটু বেশিই লেগেছিলো, সে-ই বেশি খেলো। মাঝে মধ্যে মিতুর মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো। মিতু বেশ লজ্জা পেয়ে প্রথম চামচটা নিলো। তারপর সহজ হয়ে যেতে দেরি হলো না। কিন্তু কোনোভাবেই সে রায়ানের মুখে একটা চামচ দিতে রাজী হলো না।
‘এতো লজ্জা তোমার?’
‘তো! তোমার মতো বেহায়া আমি?’ চোখ ঘুরিয়ে হাসতে হাসতে জবাব দেয় মিতু।খাওয়া শেষ হলে বসুন্ধরা থেকে বেরিয়ে আসে ওরা।
‘এই আমরা তো সেলফি তুললাম না। দাওতো তোমার মোবাইলটা। ’ রায়ান মোবাইল বের করে মিতুর হাতে দিলো। মিতু দু‘জনের সেলফি তুলতে লাগলো। ‘তুমি একটু হাসতে পারো না? রাম গড়ুড়ের ছানা নাকি! আজব তো! হাসো..... দেখি আমাকে এক হাতে জড়ায়ে ধরো..... সব বলে দেয়া লাগে!’ তার বিরক্তি, আনন্দের শেষ নেই। মোটামুটি খানবিশেক সেলফি তুলে ক্ষান্ত হলো সে, তারপর আবার সবগুলো দেখে যেগুলো তার পছন্দ হয়নি সেগুলো মুছে ফেললো।
‘দেখোতো সুন্দর হইছে না?’
‘হুম’
‘হুম হুম হুম’ রায়ানকে ভেঙ্গায়, ‘তোমার কি কথা বলতে কষ্ট লাগে? খালি হুম হুম হুম।’
‘আচ্ছা তোমার স্টুডেন্টরা যদি দেখে যে ম্যাডাম একটা ছেলের সাথে এইভাবে সেলফি তুলতেছে তাহলে?’
‘সমস্যা কী? আমি আসছি জামাইয়ের সাথে। ওরা তো আসবে লাভার নিয়া, লজ্জা পাইলে ওরা পাবে।’
‘হুম’
‘আমি ভাবতেছি সেলফির একটা বাংলা দরকার’
‘ইন্ডিয়াতে কী জানি একটা করছে শুনছি।’
‘আমরা আরেকটা করবো, ওদেরটা নেবো কেনো?’
‘তা ঠিক।.... কী বানাবা .... স্বছবি, নিজছবি, নিজি - এইটাইপের কিছু? ’
‘দাঁড়াও ভাবতে দেও।’
হাত ধরাধরি করে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে গেলো।
‘এই নীলক্ষেত যাবা?’ রায়ান এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করে।
‘নীলক্ষেত কেন?’ মিতু অবাক হয়।
‘আজকে তোমাকে নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ঘুরবো।’
মিতু একটু আশ্চর্য হয়, ভার্সিটিতে ঘোরার ব্যাপারে রায়ান আগে কিছু বলেনি। ভাড়া ঠিক করে রিকশায় উঠে ওরা - প্রথমে মিতু, তারপর রায়ান। বাঁ হাত দিয়ে রায়ানের ডান বাহু ধরে রাখে, মিতুর বাম স্তনটা রায়ানের গায়ে লেগে আছে। রায়ান ইচ্ছে করেই একটু চাপ দেয়, মিতু ওর দিকে তাকায়। ওর হাসি, চাহনী সব কেমন জানি বদলে গেছে। কান চুলকানোর ভান করে রায়ান বেশ জোরে চাপ দেয়, মিতু হাতটাকে জোর করে বুকের কাছে ধরে রাখে। রিকশার চাকা ঘুরে, মিতুর ভেতরে ঝড় বইতে থাকে।
ইস্টার্ন প্লাজার জ্যাম ঠেলে নীলক্ষেত পৌঁছায় ওরা। ভাড়া চুকিয়ে হাত ধরে হাঁটতে থাকে। ছয় বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে মিতু, কখনো কারো হাত ধরা হয়নি, এভাবে হাওয়ায় ভেসে হাঁটা হয়নি। এত চেনা, এত জানা এই বিশ্ববিদ্যালয়টা তাই পুরো অন্যরকম লাগছে তার কাছে।
'চলো সেগুনবাগিচা যাই'
'কেন, ওদিকে কী? ' রায়ানের কথায় আশ্চর্য হয় মিতু।
'কিছুনা, কাকরাইল থেকে তোমাকে সিএনজি তে তুলে দিবো'
'সিএনজি তো এখান থেকেই নিতে পারি'
'চুপ থাকোতো, তুমি কাকরাইল থেকে যাবে।' রায়ানের ধমক খেয়ে মিতুর অদ্ভুতরকম ভালো লাগে, সে কিছু বলে না, কেবল হাতটা শক্ত করে ধরে থাকে।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে ততক্ষণে। সেগুনবাগিচার নির্জন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে রিক্সা। বিপরীতমুখী একটা গাড়ি, তারপর দু'টা কি তিনটা রিক্সা চলে গেলো। রায়ান বাঁ হাতে মিতুকে ধরে আছে। আচমকা ডান হাতে মিতুর থুতনি ধরে মুখটা তুলে, নিজের মুখটা নামিয়ে এনে একটা চুমু খেলো প্রবলভাবে, যেন চুমুতেই চুরমার করে দিতে চায় মিতুকে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে কেঁপে উঠে মিতুর শরীর। নিঃশ্বাস নেয়া মাত্রই আরেকটা, তারপর আরেকটা। রিক্সা মূল সড়কে পৌঁছালে রায়ান থামে, মিতু সে সময়ে আদরে অসাড়।
বাসায় ফিরে রাত চারটা অবধি ফোনে কথা বলল ওরা। সকাল ন'টায় মিতুর ক্লাস আছে, তবু অভিসারের আশনাই মেটে না। মিতু বলছে রিসেপশন পিছিয়ে দিতে যেন তারা কমপক্ষে ছ'মাস এরকম প্রেম করে কাটাতে পারে। রায়ান অনেকটা জোর করে ফোনের লাইন কেটে ওকে বিছানায় পাঠায়।
সকালে ইউনিভার্সিটি যেতেই অ্যাটেন্ডেন্ট জানালো 'ভিসি স্যার' মিতুকে দেখা করতে বলেছেন। ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল, তাই সাড়ে দশটায় ক্লাস শেষ করে ভিসি অফিসে গেলো সে। বেশ গম্ভীর স্বরে তিনি মিতুকে বসতে বললেন। আরেক শিক্ষক সেখানে ছিলেন। তার কাজ শেষ করে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যেতেই কালো, মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া উপাচার্য গর্জে উঠলেন, 'আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষককে কেবল শ্রেণীকক্ষেই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকের মান-মর্যাদা রক্ষা করে চলতে হবে। যারা রাস্তাঘাটে বেলেল্লাপনা করে বেড়ায় তাদের কোন স্থান নেই এখানে।'
মিতু অবাক হয়ে যায়, 'স্যার, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।'
উপাচার্যের রাগের পারদ যেন একলাফে কয়েক মাত্রা বেড়ে যায়, 'বুঝতে পারছো না মানে! কাল সন্ধ্যায় সেগুনবাগিচায় রিক্সায় কী করছিলে? '
এবার মিতুর মাথা নিচু হয়ে আসে, কোনমতে বলে, 'স্যার ও আমার হাজব্যান্ড।'
জবাব শুনে উপাচার্য কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলেন। বললেন, তাই বলে রাস্তায়! বাসায় কী সমস্যা? '
লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মিতু কেবল বলতে পারল, 'আমাদের আক্দ হয়েছে, এখনো রিসেপশন হয়নি'
রায়ানের ঘুম ভাংলো বেশ বেলা করে, এগারোটায়। গত রাতের হ্যাংওভার কাটতে চায়না। বিছানায় শুয়েই বউকে ফোন লাগালো, 'হ্যাল্লো বে-ই-বি-ই-ই-ই।' তীক্ষ্ণ জবাব এলো ওপাশ থেকে, 'নিকুচি করি তোমার বেবির, এক সপ্তাহের মধ্যে রিসেপশনের ব্যবস্থা করো।' বলেই ফোন কেটে দিয়েছে মিতু। আগের সন্ধ্যার পুরুষসিংহ আবারো বিড়ালে নেমে এসে বউয়ের কিনে দেয়া আইফোন হাতে নিয়ে, বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে।
ঢাকা, মার্চ ২০১৫।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

রাশা নোয়েল বলেছেন: ভালো লেগেছে।

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

এম এম করিম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। অনুপ্রাণিত হলাম।

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: অসাধারণ একটা গল্প । মুগ্ধ হয়ে পড়লাম :)

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২১

এম এম করিম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা সার্থক হল।

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: খুব ঝরঝরে লেখা। একটানে গড়গড় করে পড়ে গেলাম।
খুব ভালো লাগল দুটো মানুষের ভালবাসায় ডুবে থাকার এ কাহিনী।

ধন্যবাদ আপনাকে।

ভালো লিখুন ও ভালো থাকুন।

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:১৬

এম এম করিম বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম আপনার মন্তব্যে।

ভাল থাকবেন, শুভকামনা সতত।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহা! পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো 8-|

গল্পটা একটু বেশি মাত্রায় লুতুপুতু হৈছে।

১০ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৮

এম এম করিম বলেছেন: হাহা, একটা লুতুপুতু মার্কা গল্প লিখতে চাইছিলাম, মনে হয় টার্গেট মিস করি নাই !!!

ঈদের শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৬

কালীদাস বলেছেন: ইন্টারেস্টিং প্লট। হা হা :D

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১২

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ।

শুভকামনা।

৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৭

দিলের্‌ আড্ডা বলেছেন: একসময় আবেগ ছিলো।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৯

এম এম করিম বলেছেন: আহারে সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.