নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম

মাঝে মধ্যে লিখি

এম এম করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেখক হতে চান? আপনার জন্য (নোবেল না জেতা) হারুকি মুরাকামির টিপস

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০২



প্রতিদিন আমি ঠিক ঐ জায়গায় থামি যেখান থেকে আমি জানি যে আরো লিখতে পারবো। এটা করুন, পরেরদিনের কাজটি আর্শ্বযরকমের সহজ হয়ে যাবে। খুব সম্ভবত আর্নেস্ট হেমিংওয়ে-ও তাই করতেন। ক্রমাগত লেখার জন্য ছন্দ বজায় রাখা জরুরী। দীর্ঘ-মেয়াদী প্রজেক্টের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। [পৃষ্ঠা ৫]

আমার মতে, নভেলিস্টের প্রফেশনে হার-জিত বলে কিছু নেই। বইয়ের বিক্রি, পুরস্কার, সমালোচকদের প্রশংসা – এগুলো সাহিত্যে বাহ্যিক অর্জন, এর কোনো কিছুই আসলে জরুরী নয়। জরুরী হচ্ছে আপনার লেখা আপনার নিজের সেট করা স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করলো কি না। সেটা না করলে নিজের কাছে নিজেকে কৈফিয়ত দিতে হয়।… নিজেকে বোকা বানানো কঠিন।… মূলত একজন লেখকের ভেতরের একটা নিশ্চুপ মোটিভেশন আছে, বাইরের দৃশ্যমান বৈধতার দরকার হয় না। [পৃষ্ঠা ১০]

এটা কি কখনো সম্ভব যে একজন প্রফেশনাল রাইটারকে সবাই পছন্দ করবে? আমি জানি না। হয়তো পৃথিবীর কোথাও এটা সম্ভব, সাধারণীকরণ কঠিন। লেখক হিসেবে আমি ভাবতে পারিনা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ আমাকে পছন্দ করছে। বরঞ্চ মানুষ আমাকে অপছন্দ, ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য করছে- এটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়। [পৃষ্ঠা ২১]

চারপাশের মানুষের সাথে মেশা নয়, বরং যে জীবন আমাকে লেখায় ফোকাস করতে দেয় আমি তাকেই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়েছি। আমার মনে হয়েছে কোনো ব্যক্তি বিশেষের সাথে নয়, অগুনতি পাঠকের সাথে আমার যে সম্পর্ক সেটাই অপরিহার্য। আমার দৈনন্দিন জীবন যদি এমন হয় যে প্রতিটি লেখা আগেরটির চেয়ে ভাল হচ্ছে, অনেক পাঠকই আমি যে জীবনই বেছে নিই না কেন স্বাগত জানাবে। [পৃষ্ঠা ৩৭]

ম্যারাথন দৌড় যেমন সবার জন্য নয়, উপন্যাসিক হওয়াও সবার কর্ম নয়। কেউ কখনো আমাকে উপন্যাসিক হতে পরামর্শ দেয়নি বা চায়নি – বরং কেউ কেউ থামাতে চেয়েছে। আমার ইচ্ছে করেছে, আমি হয়েছি। [পৃষ্ঠা ৪৪]

তেত্রিশ – আমার বয়স যখন আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। এখনো যথেষ্ঠ তরুণ, কিন্তু তরুণ নই। যে বয়সে যীশু খ্রীস্ট মারা গিয়েছিলেন, যে বয়সে স্কট ফিতজেরাল্ডের পতন শুরু হয়েছিল। হতে পারে এই বয়সটা জীবনের কোনো সন্ধিক্ষণ। ঠিক সেই বয়সেই আমি দৌড়বিদ হিসেবে আমার জীবন শুরু করলাম এবং উপন্যাসিক হিসেবে আমার বিলম্বিত, কিন্ত প্রকৃত, যাত্রা শুরু করলাম। [পৃষ্ঠা ৪৭]



প্রতিটি সাক্ষাৎকারে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে দরকারী গুন কোনটি। উত্তর খুব সহজ – ট্যালেন্ট। লেখায় যত আগ্রহ বা চেষ্টা থাকুক না কেন, লিটারেরি ট্যালেন্ট না থাকলে ঔপন্যাসিক হবার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এটা প্রয়োজনীয় গুণ নয়, বরং পূর্বশর্ত। জ্বালানী না থাকলে সবচেয়ে ভাল গাড়িও চলবে না। ট্যালেন্টের সমস্যা হচ্ছে এর পরিমাণ বা গুণ মানুষ নিয়ন্ত্রন করে না। …আমাকে যদি বলা হয় তার পরে কোন গুনটি থাকতে হবে, আমি বলবো সেটার উত্তরও সহজ – ফোকাস – আপনার লিমিটেড ট্যালেন্ট নিয়েই প্রয়োজনীয় বিষয়টিতে পূর্ণ মনোযোগ দেয়া। এছাড়া মূল্যবান কিছু অর্জন সম্ভব নয়। আপনি যদি কার্যকরভাবে ফোকাস করতে পারেন আপনার অনিয়মিত বা ঘাটতি ট্যালেন্ট পুষিয়ে নিতে পারবেন। আমি সাধারনত প্রতিদিন সকালে তিন/চার ঘন্টা কাজে মনোনিবেশ করি। আমি আমার ডেস্কে বসি এবং পুরোপুরিভাবে ফোকাস করি আমি যা লিখছি তার উপর। আমি আর কিছু দেখি না, আর কিছু ভাবি না।… তারপরের গুনটি নিশ্চিতভাবেই সহ্যক্ষমতা। আমি যদি প্রতিদিন তিন/চার ঘন্টা নিয়ম করে লেখায় মনোযোগ দেন এবং এক সপ্তাহ পরেই হাঁপিয়ে উঠেন, আপনি বড় দৈর্ঘ্যের কিছু লিখতে পারবেন না। ফিকশন লেখকদের ছ’মাস বা এক বছর বা দুই বছর ধরে একটি লেখায় ফোকাস করার শক্তি থাকতে হয়। ……সৌভাগ্যক্রমে ফোকাস এবং সহ্যক্ষমতা ট্যালেন্টের মত নয়, ট্রেনিং এর মাধ্যমে এদের অর্জন করা যায় এবং শান দেয়া যায়।…উপন্যাস লেখা আমার কাছে এক ধরনের শারীরিক শ্রম। লেখা একটি মানসিক শ্রম কিন্তু একটি বই শেষ করা শারীরিক শ্রমের কাছাকাছি।…যেসব লেখক ট্যালেন্ট দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট নয়, তাদের কষ্ট করে নিজেদের শক্তি বানিয়ে নিতে হয়। [পৃষ্ঠা ৭৬-৮০]

মূলত আমি এই ধারণার সাথে একমত যে উপন্যাস লেখা একটি অস্বাস্থ্যকর কাজ।...শুরু থেকেই আর্টিস্টিক কাজে এমন উপাদান বিদ্যমান যা অস্বাস্থ্যকর ও অসামাজিক। আমি এটা স্বীকার করবো। [পৃষ্ঠা ৯৭]

কিছু লেখক তাদের যৌবনে আশ্বর্যরকম সুন্দর ও শক্তিশালী লেখা লিখেছেন, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছার পর হঠাত্ শ্রান্তি ভর করেছে। তাদের পরবর্তী কাজগুলোও সুন্দর কিন্তু এটা স্পষ্ট যে তাদের ক্রিয়েটিভ এনার্জি পড়তির দিকে। আমার বিশ্বাস এর কারণ শারীরিক শক্তি আর আগের মত না থাকা। [পৃষ্ঠা ৯৮]

আমি যতই লিখি না কেন, উপসংহারে পৌঁছতে পারি না। যতবারই আবার লিখি না কেন, গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। [পৃষ্ঠা ১২০]

এই বইয়ের নামটা আমার প্রিয় একজন লেখক, Raymond Carver এর ছোটগল্প সংগ্রহ ‘হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট লাভ’ থেকে নেয়া। সেটাকে এভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেবার জন্য তার বিধবা পত্নী Tess Gallagher এর নিকট কৃতজ্ঞ। [পৃষ্ঠা ১৭৯] [এর থেকে ‘ডুব’ সংক্রান্ত বিষয়ে ফারুকীর শেখবার ব্যাপার আছে – এমএমক]


মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

প্রামানিক বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই, ভাল থাকবেন।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম।

লেখাটির জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়তে নেবার জন্য।

শুভকামনা জানবেন।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: আমার কাছে, যুক্তিগুলো মানতে কোন সমস্যা নেই। গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলোই বলেছেন তিনি। আমার মতে সঠিক সিদ্ধান্তই সব।

জানার সুযোগ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল ভাই।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুভকামনা জানবেন।

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট, ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৪৮

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুভকামনা নিরন্তর।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৩৮

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: আমার মতে, নভেলিস্টের প্রফেশনে হার-জিত বলে কিছু নেই। বইয়ের বিক্রি, পুরস্কার, সমালোচকদের প্রশংসা – এগুলো সাহিত্যে বাহ্যিক অর্জন, এর কোনো কিছুই আসলে জরুরী নয়। জরুরী হচ্ছে আপনার লেখা আপনার নিজের সেট করা স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করলো কি না। সেটা না করলে নিজের কাছে নিজেকে কৈফিয়ত দিতে হয়।… নিজেকে বোকা বানানো কঠিন।… মূলত একজন লেখকের ভেতরের একটা নিশ্চুপ মোটিভেশন আছে, বাইরের দৃশ্যমান বৈধতার দরকার হয় না। [পৃষ্ঠা ১০]


দারুণ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভকামনা জানবেন।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৪০

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: প্রতিটি সাক্ষাৎকারে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে দরকারী গুন কোনটি। উত্তর খুব সহজ – ট্যালেন্ট। লেখায় যত আগ্রহ বা চেষ্টা থাকুক না কেন, লিটারেরি ট্যালেন্ট না থাকলে ঔপন্যাসিক হবার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এটা প্রয়োজনীয় গুণ নয়, বরং পূর্বশর্ত।

বাহ। প্রিয়তে রাখলাম লেখাটা।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:২৩

এম এম করিম বলেছেন: প্রিয়তে নেবার জন্য অনিশেষ ধন্যবাদ।

শুভকামনা নিরন্তর।

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৩

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

৮| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম।


ধন্যবাদ ভাই এম এম করিম।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫২

এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় আবু হেনা ভাই।

শুভকামনা জানবেন।

৯| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:০১

জিদ জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ এ মূল্যবান লেখার জন্য। আশা করি সেটা মানতে পারব।
তবে আমি বিশ্বাস করি একজন সাহিত্যিক যদি পাঠককে চিন্তা করাতে, কল্পনা করাতে, ঘটনাগুলো ছবির মত না দেখাতে, চরিত্রগুলিকে বাস্তব করে তুলতে না পারেন তবে এখানেই সাহিত্যিকের ব্যর্থতা।
কিছু লেখা পড়লে মনে হয় কেমন যেন কুয়াশায় আচ্ছন্ন একটা ভাব। চরিত্রগুলো সামনে ভেসে ওঠছে ঠিকই, কিন্তু তাদের চেহারা ছবি স্পস্ট না।
আবার কিছু উপন্যাস পড়লে মনে হয় চরিত্রগুলাকে যেন আমরা ছুঁয়ে দেখতে পারছি। শ্রীকান্ত পড়েছিলাম, মনে হয়েছিল ইন্দ্র আর শ্রীকান্ত যখন মাছ চুরি করতে নৌকা করে যাচ্ছিল, তখন আমিও বোধ হয় নৌকার এক কোণে বসেছিলাম।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

এম এম করিম বলেছেন: পুরপুরি একমত। আশা করি একদিন আপনিও বড় সাহিত্যিক হয়ে উঠবেন।

শ্রীকান্তে ইন্দ্রের অংশটুকু এক সময় বার বার পড়েছি।

১০| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার !!!
খুব ভালোলাগোল ।
প্রিয়তে রাখলাম ।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৭

এম এম করিম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয়তে নেবার জন্য।

শুভকামনা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.