নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারা দর্শন

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা ছাড়িয়েছে । চোখে ঘুম নামি নামি করছে । তবু প্রবল আগ্রহ নিয়ে বসে থাকা, ঘুমকে আরো কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করানো । একটু পরই যে শুরু হবে ওয়ার্ন ওয়রিয়র্সের ব্যাটিং । শচীন ব্লাস্টার্সের হয়ে বোলিং সূচনা করবেন, এই গ্রহের সবচেয়ে দ্রুততম একজন বোলার । চল্লিশ পেরোনো তিনি, এখন কেমন বোলিং করেন তা না-দেখে, কি করে ঘুমাই ?

শোয়েব আকতার আসলেন এবং চমকে দিলেন । গায়ের জোর আগের মতো হয়তো নেই, তবে যা আছে তাতেই ক্যালিস কে ভড়কে দেয়া সম্ভব হলো । ইনিংসের তৃতীয় বল, শর্ট লেংথ ডেলিভারী, ক্যালিস কিছুটা লাফিয়ে উঠলেন । বল ক্যালিসকে তো ফাঁকি দিলই, ফাঁকি দিল মঈন খানের মরচে ধরে যাওয়া হাতকেও । দুটি রান বাই পেল ‘ওয়ার্ন ওয়ারিয়র্স’ । পরের বলটা যেন আরো মারাত্নক । ছুটন্ত গোলাটা ক্যালিসের ব্যাটের কোনায় লেগে কিপার ও স্লিপের মাঝখান দিয়ে চলে গেল । সব দাঁত বের করে দিয়ে সে কী হাসি, শোয়েবের । স্বার্থক হলো যেন মধ্যরাতের জেগে থাকা !

হঠাৎ যেন বছর কয়েক পেছনে ফিরে গেলেন, পন্টিং । সতীর্থ হেইডেনের বিদায়ে নামলেন, প্রিয় পজিশন নাম্বার থ্রীতি । নেমেই দেখালেন, সেই ছটফটে পন্টিংকে । কিছুই যেন বদলায়নি । পয়েন্টের পাশ দিয়ে ঠেলে দিয়ে ছুটলেন রান নিতে । ক্যালিস হয়তো একটু বেশীই তৎপর ছিলেন, নিতে গেলেন দুই রান । ফলাফল, মুরালীর থ্রো সরাসরি মঈনের হাতে । সেই হাত বল ধরেই নির্দয়ের মতো ভেঙ্গে দিল স্ট্যাম্প । রান আউট হলেন ক্যালিস ।
মুরালী ! সেই বিশাল চোখের মুরালী ! ছোট বাচ্চারা ভাত না-খেলে, যে চোখ দেখিয়ে ভাত খাওয়ানো যেত । সেই চোখ দিয়ে কত ভয়ংকর ব্যাটসম্যানকেই তো ‘ভস্ম’ করলেন ! চুলগুলো কেমন জানি হয়ে গেছে, ঝাঁকড়া কিংবা কোঁকড়ানো । যখন বোলিং করছিলেন, পেছন থেকে দেখতে ‘অদ্ভুত’ লাগছিল । ক্যালিসকে রান আউট করে সে কী হাসি, বিশাল চোখগুলোও যেন হাসছিল !

কার্ল হুপার লোকটাকে বোধহয় প্রায় এক-যুগ পর দেখলাম । প্রথম দেখেছিলাম, সেই কবে সম্ভবত ১৯৯৯-২০০০ এর দিকে । আব্বু চিনিয়ে দিয়েছিলেন । জিমি এডামসকে সরিয়ে ‘ক্যাপ্টেন’ করা হয়েছিল তাকে । সেই হুপারকে খেলা ছাড়ার পর আর দেখিনি । কোথায় ছিলেন, কে জানে ! খোলা মাথায় ব্যাট করতে আসলেন । তাঁর সেই বিখ্যাত হ্যালমেট হয়তো বহুদিন অবহেলায় কোথায় হারিয়ে গেছে, আর খুঁজে পাননি । ব্যাটিংটা অবশ্য ঠিক উপভোগ্য ছিল না । তবে অফ স্পিনটা আছে, প্রায় আগের মতোই ।

সাইমন্ডসের যেন কোন পরিবর্তন নেই । ঠোঁটে সেই জিংক-অক্সাইড আছেই, সঙ্গে কার্যকরী অফ স্পিন । শুধু মনে হলো, একটু মুটিয়ে গেছেন যেন ! সাইমন্ডসকেই মাহেলা মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন । এক বল পরেই ‘মধুর’ প্রতিশোধ নিলেন তিনি । মাহেলাকে আগারকারের ক্যাচ বানিয়ে আউট করলেন । ও হ্যাঁ, আগারকার । তিনি অবশ্য একাদশে ছিলেন না । সাবস্টিটিউট ফিল্ডার হিসেবে খেলেছিলেন । এই আগারকারকে তখন চূড়ান্ত বিরক্তিকর মনে হতো ! আম্পায়ার যদি তাঁর আপিলে সাড়া না-দিতেন, ‘ভস্ম’ করে দেয়া এক চাহনি দিতেন । এখন আর সেই আগারকার নেই, নিপাট ভদ্রলোক হয়ে গেছেন মনে হলো !

শচীন ব্লাস্টার্সে শোয়েবের সঙ্গে বোলিং সূচনা করেছেন, শন পোলক । যাকে খেলোয়াড়ি জীবনে ‘পোলার’ আইসক্রিম ডাকতাম । লোকটার কোন পরিবর্তন নেই । যেই পোলক, সেই পোলকই আছেন । স্বাস্থের কোন উন্নতি নেই । পোলক ব্যাটিংয়ের সময় বেশ একখান মজার ঘটনা ঘটল । স্বদেশী ডোনাল্ডকে লগ অন দিয়ে ছক্কা মারার পরই ক্যাচ তুলে দিলেন, আর ক্যাচটি লুফে নিলেন জ্যাক ক্যালিস । শন পোলক আউট : বল ডোনাল্ড কট ক্যালিস । পুরো একটা আফ্রিকান প্যাকেজ !

ওয়ালশকে সে কী বেধড়ক পিটুনী দিলেন, বীরু । ক্যালিসের প্রতিও প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল যেন ! বোঝাই যাচ্ছিল, এই লোক অনায়াসে আরো কিছুদিন খেলে যেতে পারতেন । শেওয়াগ স্ট্যাইলে করলেন, বাইশ বলে পঞ্চান্ন । ড্যানিয়েল ভেট্টরীর আর্মারে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে, বিনোদিত করে গেলেন স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের । পনের বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে যা নিত্য-ই করে এসেছিলেন ।
‘দ্যা গ্লাস ম্যান’ ড্যানিয়েল ভেট্টরী । এই লোক বুঝি কখনো বুড়ো হবেন না । পঁচিশ বছরের টগবগে তরুণ যেন ! বোলিংয়ের ধার কমেনি এতটুকু !
পঞ্চাশোর্ধ ওয়াসিম আকরাম দেখালেন, বুড়ো হাঁড়ে এখনো একটুও মরচে ধরেনি ! চার ওভারে ষোল রান দিয়েছেন । তার চেয়েও বড় কথা, সে কী লাইন-লেংথ ! চাইলেই যেন অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ইচ্ছামতো ইয়র্কার করে যেতে পারবেন, এখনো !

কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি এমব্রোস । এই দুই ক্যারীবিয়ানের মাঠের সময়টা হয়তো ভালো যায়নি । হয়তো দুই জন দুই দলে খেলছেন বলে ! তবু বলতে হয়, এই বয়সে তাদের বল হাতে দৌড়াতে দেখার মতো সুখকর আর কিছু বুঝি হয় না !
লক্ষণ, লারারা ঠিক নামের প্রতি সুবিচার হয়তো করতে পারেননি । কিন্তু এত দিন পর তাদেরকে ব্যাট হাতে দেখাটা-ই ছিল অনেক বড় পাওয়া । যাতে মনে হয়েছে, লক্ষণের ওজন কিছু বেড়ে গেছে । কিন্তু লারা যেন সেই আগের মতোই আছেন ।
জন্টি রোডস ব্যাটিংয়ের সময়, সুইপের মতো করে কি এক ছক্কা হাঁকালেন । বোঝার উপায় নেই, এই লোক প্রায় এক যুগ আগে ব্যাট তুলে রেখেছেন । পন্টিং বুঝি, মাঠেই নেমেছিলেন নিজেকে প্রমাণ করতে ! সেই পুরনো পন্টিং-ই যেন ছিলেন, পুরো ইনিংস জুড়ে । হাস্যরসে মেতে থাকা হেইডেন সেই ‘ভি’ অঞ্চলকে টার্গেট করার আগেই শোয়েবের শিকারে পরিণত হলেন !
কুমার সাঙ্গাকারা ! এই লোক অবসরে গেল কেন, এটা একটা গবেষণার বিষয় বস্তু হতে পারে । অনায়াসে খেলে যেতে পারতেন, আরো কিছুদিন । খেললেন তাঁর মতো করেই রাজসিক কিছু শট !

আমেরিকান দর্শকদের কাছে ভাল একটা কুইজ হতে পারে, শেন ওয়ার্নের বয়স কত ? থুরথুরে বুড়ো হয়ে গেলেও, এই লোক নির্ঘাত বলকে নাইন্টি ডিগ্রী বাঁক খাওয়াতে পারবেন । শচীন, লারা, লক্ষণ... তিনজনকেই ফেরালেন ‘দ্যা ম্যাজেশিয়ান’ । অবস্থাটা একবার দেখুন, খেলোয়াড় জীবনে ওয়ার্নিকে ঘোল খাওয়ানো তিনটা প্লেয়ারকেই ঘোল খাইয়ে ফেরালেন তিনি ! শৈল্পিক বোলিংয়ের সাথে ছিল, পুরো মাঠ জুড়ে তাঁর সপ্রতিভ অধিনায়কত্ব । এর সঙ্গে যোগ করতে পারেন, ওয়ার্নির ‘এভারগ্রীন’ টাইপ লুক । ম্যাচ চলাকালে শিবানির সাথে ছোট্ট এক ইন্টারভিউতে অংশ নিয়েছিলেন । সেই সময় ভাবছিলাম মাঠের ওয়ার্নি ফিরছেন যখন, তখন সেই ‘রোমিও’ ওয়ার্নিও কি ফিরবেন ?

সারাটা সময় হাসিটা যেন, শচীনের মুখে আঠা দিয়ে সাঁটা ছিল ! কখনো কখনো উচ্ছল হাসিতে মেতে উঠেছেন । ওয়ার্নির বলে আউট হয়ে যাওয়ার পরও, তাঁর হাসিটা মুখ থেকে কেউ কেঁড়ে নিতে পারেনি । খেলেছেনও মোটামুটি, তবে তাঁর মতো হয়তো ছিল না । যা খেলেছেন, মুগ্ধ হওয়ার জন্য তা-ই ছিল যথেষ্ট ।

বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় শুরু হয়েছে, তারাদের এই মিলনমেলার উৎসব । ঠিক মধ্যরাত । খেলা দেখে মনেও হলো তাই । যেন মধ্যরাতের কোন এক সুখস্বপ্ন ! একটা মোহ, একটা ঘোর, একটা বিভ্রম, একটা মায়া... একটা কি যেন !
হঠাৎ ক্রিকেটাকাশের সব নক্ষত্ররা আকাশ ছেড়ে যেন ক্রিকেট মাঠে (পড়ুন, বেসবল মাঠে) নেমে এলেন ! কাকে রেখে কাকে দেখি ! সেই বোলিং এ্যাকশন, ব্যাটিং স্ট্যান্স, মাঠে হঠাৎ খুব পরিচিত ছুটোছুটি । কেমন যেন লাগে ! মুগ্ধতা নেমে আসে দু’চোখ জুড়ে । বড় বড় তারাদের আকাশে দেখার অনুভূতিই এতদিন সঙ্গী ছিল, মর্ত্যে দেখার অনুভূতি ছিল না । অবশেষে পেলাম সেই কখনো না-পাওয়া স্বাদ । মুগ্ধতার রেশ যেন কাটছেই না ।

______

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মিস করেছি! মিস করেছি! আগে বলবেন না!
পোস্টটাও দারুন| আপনি কমেন্টেটর হলে ভাল হত| পোস্ট পড়ে মনে হল, দশ মিনিট লাইভ দেখলাম খেলাটাকে

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: ১১ তারিখ সকাল আটটায় দ্বিতীয় ম্যাচ ও ১৪ তারিখ সকাল সাড়ে আটটায় তৃতীয় ম্যাচ আছে । এখনো সুযোগ আছে, তারকাদের একসাথে আবার ক্রিকেট মাঠে দেখার !

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চ্যানেল?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: স্টারের চ্যানেল যে কোন একটায় দেখাবে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.