নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেট-স্মৃতিকথা (পর্ব-দুই)

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৬


বাদির টেক এলাকার সেই দোস্ত মোহাঃ বিল্ডিংয়ে আমরা ছিলাম প্রায় চৌদ্দ বছর । তার মধ্যে চার বছরের মতো আমরা তৃতীয় তলায় ছিলাম, বাকী সময়টা ছিলাম দ্বিতীয় তলায় । আমার শৈশব, কৈশোর, এমন কি তারুণ্যের সূচনার সময়টাও কেটেছে সেই ত্বি-তল দালানটায় ।
তিন তলায় আমি ও আমার বন্ধু তারেকের বাসা ছিল পাশাপাশি । আমাদের বাসার সামনে লাল বারান্দা ছিল, যেখানে প্লাস্টিক বলে আমরা ক্রিকেট খেলতাম । আমাদের এক বন্ধু ছিল, মুন্না । আমি আর তারেক খেলতাম এক দলে । আর মুন্নাকে দিতাম দুইবার ব্যাটিং । মুন্নার সাথে আমাদের খেলাগুলো জমতো ভীষণ ।
মুন্না অবশ্য পরে ভারত চলে গিয়েছিল । সে আমাদের কথা দিয়েছিল, সে আসবে । আমরাও বারবার তার থেকে কথা নিয়েছিলাম, সে অবশ্যই আসবে । কিন্তু সে আসেনি । ৯৮-৯৯ এর দিকে সেই যে গেল, ২০১০ পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ পাইনি । এখনও ওই এলাকায় যাই, সে এসেছে তেমন কোন খবর আজও পাইনি । সে থাকত মামার বাসায় । তার মামা ছিলেন ‘শিবু আংকেল’ । মুদির দোকান করতেন । আমাদের মুদি বাজার শিবু আংকেলের দোকান থেকেই আসত । সেই শিবু আংকেলও চলে গেলেন, বছর পাঁচেক আগে । শিবু আংকেল থেকে কতবার জিজ্ঞেস করেছি, মুন্নার কথা । বলতেন, সে নাকি সেখানে স্কুলে ভর্তি হয়েছে ।
মুন্নার দেখা হয়তো আর কোনদিন পাব না ! কি জানি, আমাদের শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো সে মনে রেখেছে কি না ! নাকি ভারতে গিয়ে নতুন বন্ধু পেয়ে, নতুন স্মৃতির আড়ালে আমাদের ও আমাদের স্মৃতিগুলো ভুলে বসে আছে । ভুলে যাওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক ।

১০
যখন তিন তলায় থাকতাম, তখন আমাদের বাসায় ছিল সাদা কালো টিভি । বিটিভিতে তখন মাঝে মধ্যে কি সব টেস্ট ক্রিকেট দেখানো হতো । সেই টেস্টগুলো চললে আমি আর আমার বোন সবচেয়ে বেশী খুশী হতাম । নাহ, কোন ক্রিকেটপ্রেমের জন্য নয় । টেস্ট ম্যাচগুলোর ফাঁকে ফাঁকে যে ‘মীনা কার্টুন’ দেখানো হতো । আমরা মীনা কার্টুন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম, কখন খেলায় বিরতি আসবে !

১১
সেবার বাংলাদেশের সাথে কার জানি খেলা পড়ল । সম্ভবত কেনিয়ার । আমার বন্ধু তারেক কোত্থেকে এসে আঞ্চলিক ভাষায় আব্বুকে বলতে লাগল, ‘আংকেল, বিদ্যুৎ গিয়ই’ (আংকেল, বিদ্যুৎ চলে গেছে) । আমি তখন বিদ্যুৎ বলতে কারেন্টকেই বুঝতাম । পরে জেনেছিলাম, এই বিদ্যুৎ সেই বিদ্যুৎ নয় । তিনি হলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ । তখন সবার নাম পুরো পুরো জানতাম । কিংবা পুরো নামে ডাকা হতো সবাইকে । যেমন, মেহরাব হোসেন অপি, হাসিবুল হোসেন শান্ত, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, হাবিবুল বাশার সুমন... ইত্যাদি ইত্যাদি । আমাদের সমস্যা হতো পাইলট ও সুজনকে নিয়ে । দুজনই ছিলেন খালেদ । শিশু মনে গুলিয়ে ফেলতাম, কে সুজন আর কে পাইলট । আর পাইলট কিভাবে পাইলট হলেন, সেটাও বেশ একখান ভাবনার বিষয় ছিল, আমাদের কাছে । বড়রাও দেখতাম, এটা নিয়ে কনফিউশানে ভুগতেন । কেউ বলতেন তিনি বিমানের পাইলট ছিলেন, কেউ বলতেন জাহাজের !
আরেকজন ছিলেন জাভেদ ওমর । তাঁর নামটা নিয়ে আমরা বেশ মজা পেতাম । জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু । হা হা হা ।

১২
আমি আর আমার বন্ধু তারেক বেশ খেলা পাগল ছিলাম । আমাদের ফ্লোরে এক বাসায় ক্যাবলের সংযোগ ছিল । আমরা তাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতাম । তিনিও হয়তো আমাদের মতোই ছিলেন । যতক্ষণ বাসায় থাকতেন, খেলা দেখতেন । সুযোগ পেলে আমরাও তাঁর সঙ্গী হতাম । সাঈদ আনোয়ারের একটা ইনিংসের কথা এখনো মনে আছে, অস্ট্রলিয়ার বিপক্ষে । সম্ভবত ৭৫ বলে ৪৮ করেছিলেন । বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে ফিফটি মিস করেছিলেন । অনেক কিছুই মনে নেই, কিন্তু কিভাবে জানি এই স্মৃতিটা মস্তিষ্কের এক কোণে জমা রয়ে গেছে ।
আমরা দ্বিতীয় তলায় শিফট হওয়ার মাসখানেক পর আমাদের বাসায় রঙিন টিভি এসেছিল, ক্যাবলেরও সংযোগ এসেছিল । কিন্তু তার আগে এই মাসখানেক আমরা আরেকটা বাসায় খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম । আমি আর তারেক মিলে পূজাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতাম । পূজার এক মামা ছিলেন । তিনি আমাদের ভেতরে বসে খেলা দেখতে বলতেন, কিন্তু আমাদের শিশু মনে অন্যের বাসায় বসে খেলা দেখা সাহসে কুলোত না । পূজা তখন সদ্য হাঁটতে শিখেছে । দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে, এই ধরণের একটা বাচ্চা মেয়ে ।

১৩
ছোট থাকতে নিউজিল্যান্ডের এক ব্যাটসম্যানকে ভীষন কঠিন মনে হতো । মনে হয়, বেভান-হাসিদের তখনকার সংস্করণ ছিলেন । দেখলেই মনে হতো, এই ব্যাটসম্যানকে বুঝি আর আউট করা যাবে না ! ভদ্রলোকের নাম ছিল রজার টুজ ।ইংল্যান্ডের গ্রাহাম থর্পকেও ঠিক এই ধরণের ভয়ংকর লাগত । থর্পকে তো টেস্টে আউট করা-ই যাবে না, মনে হতো ।
তখন ইংল্যান্ডের বোলিং ওপেন করতেন অ্যান্ডি ক্যাডিক ও ড্যারেন গফ । আমাদের বাসার সামনে একটা বড় মাঠ ছিল । তখন আমরা কালে-ভদ্রে সেখানে খেলতে যেতাম । বড় ভাইরা সেখানে খেলতেন । এক আব্বাস ভাই ছিলেন আমাদের । দারুণ একজন অলরাউন্ডার ছিলেন । আমরা তখন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম, আব্বাস ভাইয়ের ন্যাশনাল টিমে সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতা আছে । কেবলমাত্র লিংকের অভাবে পারছেন না । এই আব্বাস ভাইয়ের বোলিং এ্যাকশনটা ড্যারেন গফের সাথে মিলে যেতো ।
ইংল্যান্ডের আরেকজন প্লেয়ার ছিলেন, ডমিনিক কক । লোকটার বোলিং এ্যাকশান, মাঠে তাঁর চলন, রান-আপের জন্য বোলিং এন্ডে যাওয়া সব দারুণ লাগত আমার । ইংল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ারটা কতটা সমৃদ্ধ ঠিক জানি না, পরিসংখ্যান ঘাটলে হয়তো বোঝা যাবে । তবে মনে হয় না খুব বেশী কিছু করতে পেরেছেন ! কিন্তু কাউন্টি ক্রিকেটের একজন লেজেন্ডই বলা যায়, ভদ্রলোককে ।

১৪
‘৯৯ এর বিশ্বকাপের কথা । শ্রীলংকা বনাম ভারতের ম্যাচ চলছিল । শুরুর দিকেই ভারতের প্রথম উইকেট চলে গিয়েছিল । ছয় রানে এক উইকেট দেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । সন্ধ্যার দিকে যখন আব্বুর ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম, তখন উঠেই যেন স্বপ্ন দেখলাম । ভারতের রান চলে গেছে কল্পনারও বাইরে । সৌরভ গাঙ্গুলি চোখ রাঙাচ্ছেন সাঈদ আনোয়ারকে ।
আমার জীবনে সেই প্রথম দেখলাম, মুরালী-ভাসদের মতো বোলাররাও কতটা অসহায় হয়ে পড়েন ! শেষ পর্যন্ত সৌরভ অবশ্য সাঈদ আনোয়ারকে টপকে যেতে পারেননি । আটকে গিয়েছিলেন ১৯৪ থেকে ১১ রান দূরে, ১৮৩ তে ।
সেই ম্যাচের একটা স্মৃতি আজও মনে পড়ে । সেই দৃশ্য নিয়ে অনেক ক্রিকেট-আড্ডায় বেশ হাসাহাসিও করতাম তখন । ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল শ্রীলংকার বিশাল পরাজয় । শ্রীলংকাও কোনমতে মাঠ ছাড়তে পারলেই বাঁচে, এই অবস্থা । উইকেট মুরালীধরণ, বোলিংয়ে কে ছিলেন আজ আর মনে নেই । মুরালী বলটাকে আকাশে তুলে দিলেন । শচীন টেন্ডুলকার বলটা লুফে নিলেন কি নিলেন না, সাথে সাথেই দৌড় ! ব্যাটসম্যান, বোলার, ফিল্ডার, আম্পায়ার... সবাই মিলে সে কী দৌড় !
না-দৌড়ে করবেনটা কি বলুন । মাঠে যে শয়ে শয়ে লোক ঢুকে পড়ছে তখন !
সে এক মজার স্মৃতি বটে !

প্রথম পর্ব

_____

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৬

মহা সমন্বয় বলেছেন: ক্রিকেট!!!! হায়রে ক্রিকেট !!! এই ক্রিকেট নিয়ে যে কত হাজার স্মৃতি জমা আছে তা আর মনে করতে চাই না শুধু কষ্টই বাড়ে। :|
আপসুস বাংলাদেশ আমারে চিনল না মস্ত বড় জ্ঞানী এক ব্যাটসম্যান হারাইল। LOL =p~

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৪

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: আপনার জন্য অনেকগুলো সমবেদনা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.