নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন তাঁর আকাশছোঁয়া

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৯

‘ড্যান্সিং ডাউন দ্যা উইকেট’ ফাষ্ট বোলারের বিপক্ষে কোন বাংলাদেশী সন্তান করছেন, এদেশের মানুষকে এমন সুখদৃশ্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনিই । পোর্ট অব স্পেনে মাত্র আঠারো বছর বয়সে প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স’ এর ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/ স্পর্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি’ লাইন ক’টিকে । করবেন না-ই বা কেন ! তিনি যে সুকান্ত’র দেশেরই মানুষ । একজন বঙ্গসন্তান, সাহসী বীরপুরুষ । নাম তাঁর, তামিম ইকবাল খান । চট্টগ্রামের বিখ্যাত ‘খান’ পরিবারের তৃতীয় টেস্ট ক্রিকেটার । ১৯শে মার্চ ১৯৮৯ সালে মিষ্টার ও মিসেস ইকবাল খান দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেন তিনি ।


‘আচ্ছা পঞ্চাশ করলে হয় না ?’ লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তোলার জন্য তাঁর সে কী শিশুসুলভ প্রশ্ন ! উত্তর পেলেন, না, নাম তুলতে হলে তোমাকে একশই করতে হবে । সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ় আত্নপ্রত্যায়ের সাথে তাঁর জবাব, ‘ঠিক আছে, তাহলে একশ-ই করব’ । এবং বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন তখন তাঁর বয়স মাত্র একুশ ! আরো আশ্চর্য্যের বিষয় একুশ বছর বয়সী সেই ছোকরাটাই পরদিন লর্ডসের অনারারী বোর্ডে উঠে গেছেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ।
সেই সেঞ্চুরীরও কি বাহার ! এন্ডারসন-সোয়ানদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছাড়বেন তেমন কোন প্রতিজ্ঞা-ই বুঝি নিয়েছিলেন । ৮৬ থেকে চোখের পলকে পৌছলেন একশ তে, এবং নিজেই মাঠ থেকে বোর্ড এঁকে দেখিয়ে দিলেন ‘নাও, এবার আমার নামটি তোমাদের বোর্ডে তুলে দাও’ । রাজসিক শতক আর কাকে বলে !

ইংলিশ বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে পরের টেস্টেও তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরী । হয়েছিলেন সে বছরের উইজডেন এর বর্ষসেরা । ইংলিশ অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা-ই মেনে নিয়েছিলেন, সে বছর ইংলিশ সামারে তামিমের মতো এত দাপুটে ব্যাটিং আর কেউ করতে পারেনি ।

২০১২ এশিয়া কাপের আগ মূহুর্তে হঠাৎ আবিস্কার করলেন, তিনি দলে আর অপরিহার্য সদস্য নন । তাকে বাদ দেয়া হয়েছে পনেরো জনের স্কোয়াড থেকে । চাপের মুখে, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নির্বাচক প্যানেল বাধ্য হলো তাকে দলে নিতে । তারপর বাকীটা ইতিহাস ! টানা চার ম্যাচে তুলে নিলেন ফিফটি, দেশকে উপহার দিলেন স্মরণকালের সেরা এশিয়া কাপ ।

এই তো গত বছরই টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ইমরুল কায়েসের সঙ্গে তিনশতাধিক রানের জুটিতে উপহার দিয়েছেন ‘টেস্ট ইতিহাসের-ই অন্যতম সেরা ফাইটব্যাক’ । সেবার ওয়ানডে সিরিজে করলেন পরপর দুই সেঞ্চুরী, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে ধবল ধোলাইয়ে ।

জিম্বাবুয়ের তিন শতাধিক রান চেজ কিংবা স্কটল্যান্ডের ৩১৮, কভেন্ট্রির ১৯৪ এর জবাবে ১৫৪ কিংবা কোয়েটজারের ১৫৬ এর বিপরীতে ৯৫... সবটাতেই ছিলেন একজন তামিম ইকবাল । কদিন আগে বিশ্ব টি-টুয়েন্টির আসরে করলেন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরী । সাথে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরী করা বিরলতম কয়েকজনের একজনও হয়ে গেলেন তিনি ।


কঠিন আত্নপ্রত্যায়ী এই লোকটাকে দাম্ভিক কিংবা অহংকারী জ্ঞান করে অনেকেই ভুল করেন । অনেকেই তাঁর নিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেন । অথচ কেবল ও কেবলমাত্র দেশের ডাকে দু’দিনের শিশু সন্তান কে রেখে যোগ দিয়েছিলেন দলের সাথে, দেশের প্রয়োজনে ।
তাঁর স্বপ্ন যেমন আকাশ সমান, আত্নবিশ্বাসও তাঁর তেমনি পর্বত প্রমাণ । এদেশের ক্রিকেটে, নিজের স্বামর্থ্য আর বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখতে প্রথম শিখিয়েছিলেন তিনিই ।
তিনি স্বপ্ন দেখেন, দলের ৬ বলে ৩৬ দরকার । আর ছয়টি ছয় মেরে তিনি দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন । আপনার কাছে হাস্যকর কিংবা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে । কিন্তু তামিম ইকবাল নামের এই লোকটির কাছে এই স্বপ্নটুকু আগামীর ইতিহাস গড়ার পাথেয়, জ্বালানী । এবং অনেক স্বপ্ন পূরণের মতো এই স্বপ্ন-ও যে একদিন পূর্ণ করে বসবেন না, তা কে বলতে পারে !

শুভ জন্মদিন, একজন নিবেদিত-প্রাণ ক্রিকেটার । শুভ জন্মদিন, দুঃসাহসের আতুঁড়ঘর ।
শুভ জন্মদিন তামিম ইকবাল খান ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.