নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

‪এ ট্রিবিউট টু লেজেন্ডারি ক্যারেক্টার মিঃ ডব্লিউ জি গ্রেস‬

২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৪



ভদ্রলোকের মুখে ইয়া বড় বড় গোঁফ-দাড়ি । আজকালকার যুগে এই লোককে দেখলে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হতো কি না, কে জানে !

সে যাকগে । লোকটাকে অনেকেই হয়তো চেনেন, অনেকেই চেনেন না । ভদ্রলোকের নাম ডব্লিউ জি গ্রেস । পুরো নাম উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস । ফাদার অব ক্রিকেট বলা হয় তাকে । বলা হয়ে থাকে ক্রিকেট খেলাকে উনিই জনপ্রিয় করেছিলেন । এবং উনার কারণেই নাকি ক্রিকেট শখের খেলা থেকে সিরিয়াস খেলায় রুপান্তর হয় ।


আচ্ছা এতসব তত্ত্বকথা বাদ দিই । তার চেয়ে এই লোকের কিছু মজার উক্তি শোনা যাক, কি বলেন ? জি গ্রেস ক্রিকেটের মহান এক চরিত্র ঠিকই সাথে মজার এক চরিত্রও বটে !

১... জি গ্রেসের বহুল জনপ্রিয় একটা উক্তি আছে । "যদি তুমি টসে জেতো, তাহলে ব্যাটিং নাও । যদি তোমার মনে কোন সংশয় থাকে, তাহলে একটু চিন্তা করো । এবং ব্যাটিং নাও । যদি তোমার মনে বিশাল কোন সংশয় থাকে, তাহলে তুমি তোমার টিমমেটদের সাথে আলোচনা করো । এবং তারপর ব্যাটিং নাও" ।

২... সেবার একটা ম্যাচে জি গ্রেস শুরুতেই বোল্ড আউট হয়ে গেলেন । তিনি ব্যাট দিয়ে স্ট্যাম্প ঠুকে আবার ব্যাটিংয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন । বললেন, "দর্শকরা আমার ব্যাটিং দেখতে এখানে এসেছে, তোমার বোলিং দেখতে নয়" । এরকমই আরেকটা ঘটনার কথা উল্লেখ আছে, আম্পায়ারকে নিয়ে । আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রেগে উঠেন জি গ্রেস । বলেন, "সবাই আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে, তোমাকে নয়" ।

৩... সেই ম্যাচেই ৪০০ করেছিলেন গ্রেস । সবগুলো রান নিয়েছিলেন দৌড়ে । গ্রেস আসলে করেছিলেন ৩৯৯ । কিন্তু স্কোরারকে জোর করে বাধ্য করেছিলেন ৪০০ লিখতে ।

৪... আরেকবার প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলেন । সাথে সাথে জি গ্রেস বলে উঠেন, "ট্রায়াল বল হিসেবে ভালই ছিল । এবার তবে খেলা শুরু করা যাক" ।

৫... একবার জি গ্রেসের বিপক্ষে একটাও লেগ-বিফোর দিচ্ছিলেন না, আম্পায়ার । প্রচন্ড হতাশ ও রাগন্বিত বোলার বোল্ডই করে বসলেন, গ্রেসকে । দুটি স্ট্যাম্প দু'দিকে উপড়ে ফেলেন বোলার । বলেন, "এখনো একটা স্ট্যাম্প দাঁড়িয়ে আছে । তুমি নিশ্চয় যাবে না, ডক্টর ?" মুচকি হেসে গ্রেস কি উত্তর দিয়েছিলো জানেন ? বলেছিলেন, "এতে আর আশ্চর্য্যের কি আছে !" অতঃপর আবার ব্যাটিং করতে দাঁড়িয়ে গেলেন ভদ্রলোক ।

৬... একদিন আউট হয়ে যাওয়ার পর গ্রেস আম্পায়ারের কাছে গিয়ে বলছিলেন, "আসলে বাতাস একটু জোরে হওয়ায় বেলটা পড়ে গেল" । আম্পায়ার ভদ্রলোকও ছিলেন রসিক । জবাবে বলেছিলেন "বাতাসটা আরেকটু জোরে হোক । তাহলে ডাক্তার সাহেবকে ড্রেসিংরুমে পৌছতে সাহায্য করতে পারবে" । গ্রেস একজন ডাক্তারও ছিলেন যে !

ছয়টা তো হয়েই গেল । মানে এক ওভার । এবার তাহলে শেষ করি । ওহ, একটা যদি নো বল হয় তাহলে তো সাতটি বল করতে হয় । তাই না ? তাহলে একটা নো বল-ই হোক ।

৭... ভদ্রলোক বোলিং করার সময়ও মজা করতেন । ব্যাটসম্যানকে সূর্যের দিকে দেখতে বলে, বলতেন "আকাশে কত পাখি উড়ে যাচ্ছে, দেখো" । ব্যাটসম্যান দেখতো । ফলে ব্যাটসম্যানের চোখে ধাঁধা লেগে যেতো । এবং পরের বলেই আউট হতো !

নো বল সহ ওভারটা এবার শেষ হলো, তাহলে !

তিনি ছিলেন একগুঁয়ে, রগচটা । একদম আউট হতে চাইতেন না । রগচটা, বদমেজাজী বলে আম্পায়াররাও সহজে আউট দিতো না । ব্যাটিং করেই যেতে চাইতেন শুধু । সেই সময়ের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, তাকে সেই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় । অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য প্রতিভা যাকে বলে আর কি !

তবে ক্রিকেটটা ভালবাসতেন মন-প্রাণ উজার করে । ভালবাসতেন বলেই হয়তো সেই যুগে দিনের পর দিন একটানা ক্রিকেট খেলে গেছেন । খেলা শেষের সময় বলছিলেন, "আই ক্যান স্টিল ব্যাট, বাট ক্যান্ট ব্যাট মাই বডি" ।
এই কথা যখন বলছেন তখন তাঁর বয়স ৫১ বছর !

৫৫৩০৯ রানের সাথে ২৮১৮ উইকেট । প্রায় ৩৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার । তবু যেন 'ক্লান্তি' নামক কোন শব্দ তাঁর অভিধানে ছিল না। এমনি এমনি কি আর তাকে 'দ্যা চ্যাম্পিয়ন' বলা হতো !


ইংলিশ ক্রিকেটে তাঁর অবদান বর্ণনাতীত । বলতে গেলে পুরো ক্রিকেট খেলাটাতেই তাঁর অবদান কোনভাবেই পরিমাপযোগ্য নয় । যদিও অজিদের ডন, উইন্ডিজের ওরেল, কিউইদের হ্যাডলি, পাকিস্তানিদের ইমরান, ভারতীয়দের শচীন, শ্রীলংকার রানাতুঙ্গা, প্রোটিয়াদের ক্রনিয়ের সাথেই উচ্চারিত হয় গ্রেসের নাম । সেটা দেশের ক্রিকেটে কোন একক প্লেয়ারের অবদান বিবেচনায় ।
কিন্তু গ্রেসের অবদান এজন্যই অতুলনীয় ও অপরিমেয় যে, গ্রেস না হলে এদের কারোরই ক্রিকেটের গ্রেট বা স্বদেশের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়ে উঠা হয়তো হতো না ।

উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস ! ক্রিকেট খেলার জন্যেই যার জন্ম । যার হাত ধরেই জন্ম ক্রিকেটের । তাই তো তিনি ফাদার অব ক্রিকেট ! দ্যা ট্রু চ্যাম্পিয়ন ।

জন্ম : ১৮ই জুলাই ১৮৪৮, ডাইনইন্ড, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড ।
মৃত্যু : ২৩শে অক্টোবর ১৯১৫, মট্টিংহ্যাম, কেন্ট, ইংল্যান্ড ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

অশ্রুকারিগর বলেছেন: ট্রু চ্যাম্পিয়ন এন্ড লিজেন্ডারি ক্যারেকটার অফ ক্রিকেট। ডব্লু গ্রেসের এই মজার তথ্যগুলো আগেও পড়েছি তবে আপনার মত এতো সুন্দর করে উপস্থাপনা ছিল না। সুন্দর হয়েছে পোস্ট।

২১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৪

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: পড়ার জন্য, মন্তব্যের জন্য এবং প্রশংসার জন্য এত্তগুলো ধন্যবাদ । :)
"পুরনো মদ নতুন বোতলে" ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ছিল । ভাল থাকবেন । B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.