নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশাপূর্ণা-ক্লাসিক

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৮

আশাপূর্ণা দেবী!
এই লেখিকার লেখনীতে আমি মুগ্ধ, চমৎকৃত, বিমোহিত, বিস্মিত... আরও কিছু বিশেষণ যোগ করার ইচ্ছে থাকলেও শব্দ-ভান্ডারের সীমাবদ্ধতায় সম্ভব হচ্ছে না।
তাঁর সাহিত্যকে আমি নাম দিয়েছি আশাপূর্ণা-ক্লাসিক।


তাঁর বকুল-কথা পড়েছিলাম। আহা, সে এক উপন্যাস বটে! ভাষার সে কী মাধুর্য্য! সুবর্ণলতাও পড়া শেষ করলাম। এক সময়ের নারী জীবনের নানান সংগ্রামের দিনগুলিকে এই একবিংশ শতাব্দীতে জীবন্ত লেগেছিলো, তাঁর লেখার গুণে। বর্ণনার ভঙ্গিতে। ভাষার শৈলীতে।


বকুল-কথা অনেক বেশী ভাল লেগেছিল। সুবর্ণলতাও চমৎকার, অনবদ্য, অসাধারণ, অসম্ভব ভালো। তবে দুটোর মাঝে আমি বকুল-কথা কে এগিয়ে রাখবো। হয়তো বকুল-কথা আমাকে প্রথম আশাপূর্ণা-ক্লাসিকের সন্ধান দিয়েছিল বলে। অথবা লেখিকা বকুল-কথা লেখার সময় অনেক পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন বলে।

এই বইগুলো এই সময়ের প্রত্যেক নারীরই পড়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। আজকের নারীকূলের যে স্বাধীনতা, চাকরির স্বাধীনতা, পড়ালেখার স্বাধীনতা, মতামতের স্বাধীনতা, বিশ্বটাকে নিজের মতো করে দেখার ও বিচার-বিশ্লেষণ করার স্বাধীনতা... এসব তো আর একদিনে আসেনি। এসবের পেছনে কত লাঞ্চনা-বঞ্চনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, অপমান-উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ... কত সংগ্রাম লুকিয়ে আছে সেসব জানা দরকার।
জানা দরকার নারীদের অস্তিত্বের জন্য, শেকড়ের জন্য, নিজেদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার জন্য। এই পুরুষ-তান্ত্রিক সমাজে পুরুষের-অঙ্গুলি নড়াচড়ায় যেন তাঁর জীবন ‘আগাগোড়া আবদ্ধ’ হয়ে না যায়, সে জন্য। স্বাধীনতার মূল ভাব বোঝার জন্য। স্বাধীনতা আর অবাধ্যতার মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য। উচ্ছৃংখল-লাগামছাড়া চলনই যে স্বাধীনতার মাপকাঠি নয় সেসব অনুধাবনের জন্য।

স্বাধীনতার কথা যখন এলো, এই প্রসঙ্গে 'ওরিয়ানা ফালাচ্চি'র একটা উদ্ধৃতি যোগ করতে চাই।
ওরিয়ানা ফাল্লাচ্চি’র কালজয়ী গ্রন্থ, “লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন” বইয়ে স্বাধীনতা নিয়ে সুন্দর একটি কথা আছে, “স্বাধীনতা সম্পর্কে তুমি বহু কথা শুনবে। ভালবাসার মতোই বহুল ব্যবহৃত এবং বহুল প্রতারিত একটা শব্দ।”

আশাপূর্ণা দেবীর ‘বকুল-কথা’ বইয়ের একটা কথা, আমার খুব পছন্দের। “নিভৃত চিন্তায় নিমগ্ন হবার গভীর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবাই।”
এরকম কোড করতে চাইলে অনেক অনেক করা যাবে। দারুণ দারুণ সব লেখা। নোট করে রাখার মতো লেখা। অতসব দেবো না, তবে ‘বকুল-কথা’ বই থেকে আরো একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি। নিদারুণ বাস্তবতা ও নিষ্ঠুর সত্য যে অস্বীকারের উপায় নেই।
“ইহ-পৃথিবীতে আত্নপ্রতিষ্ঠার মূল্য দিতে আত্নবিক্রয় না করছে কে? অর্থোপার্জনের একমাত্র উপায়ই তো নিজেকে বিক্রি করা। কেউ মগজ বিক্রি করছে, কেউ অধীত বিদ্যা বিক্রি করছে, কেউ চিন্তা কল্পনা স্বপ্নসাধনা ইত্যাদি বিক্রি করছে, কেউ বা স্রেফ কায়িক শ্রমটাকেই। মেয়েদের ক্ষেত্রেই বা তবে শরীর বিক্রিকে এমন ‘মহাপাতক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে কেন? বহুক্ষেত্রেই তো তাঁর একমাত্র সম্বল ঐ দেহটাই।”

এবার ‘সুবর্নলতা’-ই ফিরে আসি। এই বইটাতেও অসাধারণ সব কথা, উক্তি, প্রবাদ, শ্লোক... আছে। চিন্তার খোরাক আছে, আত্নার খাদ্য আছে, ভাবনার ক্ষেত্র আছে। এই বই থেকে কিছু কথা কোড করবো। কিছুটা বড় মনে হতে পারে, তবে কথাগুলো বোধগম্য হলে, বুঝবেন এর তাৎপর্য ও পরিধি কতটা অসীমে!
“কবে ঈর্ষাপরায়ণ পুরুষ সমাজ মুক্ত মনে বলতে পারবে, ‘তোমাকে যে স্বীকৃতি দিতে পারিনি সেটা তোমার ত্রুটির ফল নয়, আমার ত্রুটির ফল! তোমার মহিমা কে মর্যাদা দিতে বাধে সেটা আমার দূর্বলতা, তোমার শক্তিকে প্রণাম করতে পারি না সেটা আমার দৈন্য। নিজেকে তোমার “প্রভু” ভাবার অভ্যাসটা ত্যাগ করতে আমার অভিমান আহত হয়। তাই দাস সেজে তোমায় “রাণী” করি। আজো তোমাকে মুগ্ধ করে মুঠোয় পুরে রাখতে চাই, তাই চাটুবাক্যে তোমাকে তোয়াজ করি। আর আমার শিল্প সাহিত্যে কাব্যে সঙ্গীতে যে তোমার বন্দনাগান করি, সে শুধু নিজেকে বিকশিত করতে। তুমি আমার প্রদীপে আলোকিত হও এই আমার সাধ, আপন মহিমায় ভাস্বর হও এতে আমার আপত্তি। তাই তুমি যখন গুণের পরিচয় দাও তখন করুণার হাসি হেসে পিঠ চাপড়াই, যখন শক্তির পরিচয় দাও তখন বিরক্তির ভ্রুকুটি নিয়ে বলি “ডেঁপোমি” আর যখন বুদ্ধির পরিচয় দাও তখন তোমাকে খর্ব করবার জন্য উঠে পড়ে লাগি।
“তোমার রুপবতী মূর্তির কাছে আমি মুগ্ধ ভক্ত, তোমার ভোগবতী মূর্তির কাছে আমি বশম্বদ, তোমার সেবাময়ী মূর্তির কাছে আমি আত্নবিক্রীত, তোমার মাতৃ-মূর্তির কাছে আমি শিশু মাত্র।
“কিন্তু এগুলি একান্তই আমার জন্য হওয়া আবশ্যক। হ্যাঁ, আমাকে অবলম্বন করে যে ‘তুমি’ সেই ‘তুমি’টিকেই মাত্র বরদাস্ত করতে পারি আমি। তবে বাইরের তুমি হচ্ছ বিধাতার একটি হাস্যকর সৃষ্টি।”

আশাপূর্ণা দেবীকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকা। কেউ কেউ 'অন্যতম'র ধার ধারেন না, বলেন 'শ্রেষ্ঠতমা'।
তাঁর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ গ্রন্থটি বিশ্বসাহিত্যেরই অন্যতম একটা সম্পদ। সেই গল্পের প্রধান চরিত্র হচ্ছেন ‘সুবর্ণলতা’র মা ‘সত্যবতী’।

সত্যবতীর মেয়ে সুবর্ণলতা, তাঁর মেয়ে বকুল। এই তিন নারী চরিত্র কে নিয়ে তাঁর তিনটি উপন্যাস, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ ‘সুবর্ণলতা’ ও ‘বকুল-কথা’। তিনটিই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। হয়তো বিশ্ব সাহিত্যেরও।
দুটি পড়া হয়েছে, বাকী আছে একটি। ভবিষ্যতে যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে হয়তো সেটাও পড়বো, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:১৮

মেহেদী রবিন বলেছেন: ধন্যবাদ এই পোষ্টটি শেয়ার করার জন্যে।

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৩৮

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.