নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাগতম আফগানিস্তান

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২০



এক.
গত নভেম্বরের শীতের শিশির-সিক্ত সন্ধ্যাগুলোর পর আবারো গ্যালারী হবে উন্মাতাল। বহুদিন পর গ্যালারীতে আবার সুর উঠবে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ কিংবা ‘সাকিব-সাকিব, তামিম-তামিম, মাশরাফি-মাশরাফি’। প্রতিদিন দুপুর-বেলা নিয়ম করে ঘুমানো সুবোধ-বালকটির ঘুমানো চলবে না, ক্লাসের ভাল ছাত্রটির সন্ধ্যার নিয়মিত পড়া তৈরী করা হবে না, এই ক’দিন। আপাদমস্তক সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ চাকুরীজীবিও হয়তো এই ক’দিন কাজে ফাঁকি দেবেন খুব। ফেসবুক-টুইটার, পত্রিকা-টেলিভিশন, আড্ডা-গল্প সর্বত্রই আলোচ্য বিষয়রুপে হয়তো জায়গা করে নেবে, মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সি, তামিমের কনসিস্ট্যান্সি, সাকিবের অলরাউন্ড সুপ্রিমেসি কিংবা কোন এক কন্সপাইরেসি...।

প্রায় দশ মাস পর দেশে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। প্রায় অর্ধ-বর্ষ পর, সকালে আপনার ঘুমই ভাঙবে হয়তো, ‘আজ তো বাংলাদেশের খেলা’ এমন কোন এক সুখকল্পে বিভোর হয়ে।

তিন ম্যাচের ওডিয়াই সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে আফগানিস্তান। তাদের আসার সাথে ক্রিকেটের জোয়ারও কি তাঁরা ফিরিয়ে আনছে না ? ক্রিকেট নামক অমীয়-সুধা রসে মত্ত হওয়ার সুযোগও কি তাঁরা করে দিচ্ছে না ?

তাই, স্বাগতম আফগানিস্তান।

দুই.
‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করেই বাঁচতে চাই।’ আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় একটা স্লোগান। তবে স্লোগানটিকে সম্ভবত সবচেয়ে ভালভাবে মনে-প্রাণে ধারণ করে আফগানরা। আরো বিশেষ করে বলে আফগান ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটে আফগানিস্তানের উত্থান অনেক রুপকথার গল্পকেও হার মানাতে পারে।

মোহাম্মদ নবী, শাহজাদ, গুলবদিন নাইব, স্টানিকজাইরা যেন এক-একজন কোন এক রুপকথার গল্প থেকে উঠে আসা রাজকুমার। কি এক জাদুর স্পর্শে একের পর এক খুশীর উপলক্ষ এনে দেন স্বদেশের নিপীড়িত-শোষিত জনগোষ্ঠীকে। কোন এক মন্ত্রবলে একের পর এক দূরতিক্রম্যে বাঁধা পেরিয়ে যান, অনায়াসে-নিঃসংকোচে।

আপনার ঘুম ভাঙে হয়তো আযানের সুললিত সুরে অথবা বাবা-মায়ের অম্ল-মধুর ডাকে। অথচ আফগানদের ঘুম ভাঙে কিভাবে জানেন ? বোমার বর্ষনে, গুলির গর্জনে কিংবা কোন এক যুদ্ধবিমানের ভয়ংকর কোন আওয়াজে ! স্বজন হারানোর করুণ আর্তনাদ-চিৎকার, বাস্তুহারাদের সব-হারানোর দীর্ঘশ্বাস সেখানখার আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায় সারাটি ক্ষণ !

তবু সেই ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েও যারা দেখেন নতুন দিনের স্বপ্ন, নব দিগন্ত সূচনার, তাঁরাই আফগান ক্রিকেটার। ক্রিকেটকে বেঁচে থাকার অবলম্বন আর অস্ত্র-বোমার বদলে ব্যাট-বল হাতে তুলে নিয়ে যারা আফগানিস্তানকে বিশ্বের দরবারে চেনাচ্ছেন নতুন করে, নব রুপে, ভিন্ন আঙিকে।

এই লড়াকু আফগান ক্রিকেটাররাই আমাদের এবারের অথিতি। মাঠের বাইরের আতিথেয়তায় নিশ্চয় কোন ঘাটতি থাকবে না, বরাবরের মতো। সাথে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে, সময়ের প্রয়োজনে। তবে মাঠের ক্রিকেটে, লড়াকু আফগানদের সাথে বহুদিন মাঠের-লড়াই থেকে দূরে থাকা বাংলাদেশ কোন আতিথেয়তা অবশ্যই দেখাতে চাইবে না।

ভয়ডরহীন ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর’ বনে যাওয়া বাংলাদেশের সাথে লড়াকু আফগানিস্তানের লড়াইটা উপভোগ্যই হওয়ার কথা। নাকি ?

এমন এক জমাটি লড়াইয়ের আবহ এনে দেয়ায়, স্বাগতম আফগানিস্তান।

তিন.
মাস তিনেকের ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে দশ ওডিয়াই ম্যাচের ছয়টিতে পরাজিত করে টানা দুইটি সিরিজ জিতেছে তাঁরা। টানা চারবার টি-টুয়েন্টিতে হারিয়ে দুই সিরিজেই জিম্বাবুয়েকে করেছে শ্বেত-ধোলাই। নিজেদের ‘হোম গ্রাউন্ড’ ইউএই তে জিম্বাবুয়েকে পর্যদুস্ত করার আগে জিম্বাবুয়েতে গিয়েও ঊড়িয়ে এসেছেন আফগান-বিজয় পতাকা। আর সেই জিম্বাবুয়েকেই ছিটকে দিয়ে বিশ্ব আসরের মূল পর্বে জায়গাও করে নিয়েছিল তাঁরা, তৃতীয়বারের মতো।

অথচ তাদের এই পর্যায়ে এই উত্তরণ, এত সহজে আসেনি। কঠিন-দূর্গম পথ বেয়ে অসম-দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্ব আসরে নিজেদের অবস্থান সদম্ভে ঘোষণা করেছে তাঁরা, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই। সেই ২০০৮- এ ডিভিশন-ফাইভ থেকে নিজেদের নিয়ে আসা, ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টির কোয়ালিফাইংয়ের মঞ্চে। সেখান থেকে ২০১০-এ তৃতীয় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে গড়ে ইতিহাস। তারপর ২০১২তেও খেলে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ । ২০১৩তে পেয়েছে ওডিয়াই স্ট্যাটাস। পরের বছরই এশিয়া কাপে হারিয়ে দেয়, টেস্ট খেলুড়ে দল বাংলাদেশকে। ২০১৫তে পেয়ে যায় ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি যুগল সিরিজ জয়ের অমৃত-স্বাদ। ২০১৫ এর দশম ওডিয়াই বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে আরো একটা ইতিহাস রচনার পর, ২০১৬তে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে সেরা আট দলের সাথে যোগ দিয়ে খেলেছে বিশ্বকাপের মূল আসরও।

মাত্র আট বছরের ব্যবধানে সারা বিশ্বকে যেন দেখিয়ে দিল, কঠিন পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তির বলে অসম্ভব নয় কোন কিছুই।

অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোর দেখানো দলটিকে খেলতে হবে এখনখার অদম্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর বাংলাদেশ দলটির সাথে। লড়াইয়ের এই অদম্য বাসনা দেখানোয়, স্বাগতম আফগানিস্তান।

চার.
বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়ের বিরাটত্ব উপভোগ করেছি, কেন উইলিয়ামসনের উইলোর কমনীয়তা মন ভরে দেখেছি, জো রুটের রুঢ়-মোহনীয়তা আশ্চর্য্য হয়ে উপলব্ধি করেছি। দেখেছি ইয়াসির শাহের লেগস্পিন-শিল্প, রঙ্গনা হেরাথের বাঁ-হাতের ভেল্কী... আমরা দেখেই গেছি শুধু। এই ক’টা মাস ভিনদেশীদের ক্রিকেট-কারিকুরি দেখে আমরা ক্রিকেটের অমৃত-নির্যাস পেয়েছি ঠিকই, তবে তা বুঝি কিছুটা নিষ্প্রাণ, হাহাকার মতো ছিল। নইলে ইয়াসির শাহকে দেখেই কেন জুবায়েরের কথা মনে পড়বে ? কেন অশ্বিনের কীর্তিতে সাকিবের জন্য হতাশা লাগবে ? টানা ক্রিকেট দেখলেও বাংলাদেশের খেলা নেই কেন, তা নিয়ে বারবার আক্ষেপ ঝরে পড়বে কেন?

আমাদের আক্ষেপের পালা বুঝি ফুরালো। আফগানিস্তান এই অপেক্ষার অবসান ঘটানোয়, তাঁরা ধন্যবাদ প্রাপ্তির দাবী রাখে নিশ্চয়। ধন্যবাদ দাবী করতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে আফগান-ক্রিকেট দলকে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত তো তাদেরই ছিল।

আমাদের এতদিনকার অপেক্ষা ও প্রতীক্ষার প্রহরগুলোর অবসানে, বিসিবির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়ায়, স্বাগতম আফগানিস্তান।


পাঁচ.
মূল লক্ষ্য অবশ্যই ইংল্যান্ড সিরিজ। তবে আফগানিস্তানকে হেলা করার সুযোগ নেই। ওরা লড়াকু জাতি। লড়াই-সংগ্রাম ওদের রক্তে মিশে আছে। পার্থক্য হলো ওরা কখনো লড়াই করে রণাঙ্গনে, অস্ত্র-সমেত । ভিনদেশী আগ্রাসনের বিপক্ষে, আমেরিকা-সোভিয়েতের বিরুদ্ধে। আর কখনো লড়াই করে ক্রিকেট মাঠে। প্রতিপক্ষের বোলারদের সপাটে চালিয়ে খেলে কিংবা ব্যাটসম্যানদের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে। ওরা আজন্ম লড়াকু জাতি। লড়াই ওদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, কোষ-কণিকায়, লোম-কূপের গোড়ায়। লড়াই আছে ওদের শিরায় শিরায়। তাই হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই মোটেই।

এক সময়ের রাজাধিরাজদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে, আফগানিস্তানের সাথে খেলে নিজেদের ভুল-ত্রুটি খুঁটিয়ে পরখ করে দেখার সুযোগ আমাদের সামনে। নিজেদের আরো শাণিত, পরিণত ও নির্ভুল করার সুযোগ আমাদের সম্মুখে।

আমাদের এমন সুযোগের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়ায়, স্বাগতম আফগানিস্তান।

এতদিনকার ক্রিকেট-হাহাকার ঘুচিয়ে দেয়ায়, স্বাগতম আফগানিস্তান।

প্রথম কোন পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আমাদের আতিথ্য গ্রহন করায়, স্বাগতম আফগানিস্তান।

__________

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

নোমান প্রধান বলেছেন: সুস্থ ক্রিকেটীয় শুভেচ্ছা

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
ভালই লিখেছেন।

তবে, আফগানিস্তান ক্রিকেট কিন্তু বাংলাদেশকে খর্ব করতে চায় সবসময়ই। এইতো গতদিনই একটা ন্যাশনাল পুল করেছিল তারা - 'কে সেরা অলরাউন্ডার? নবী নাকি সাকিব?'
তাই আফগানিস্তানের প্রতি আবেগ অতটা কাজ করছে না। ওরা আগেও আমাদেরকে যথেষ্টই খর্ব করেছে।

ওদেরকে জাস্ট অপোনেন্টই মনে হচ্ছে আমার, এর থেকে বেশি কিছু না।

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:১৪

নিউ সিস্টেম বলেছেন: দেখা যাক........... কি হয় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.