নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণ : নারকেল জিঞ্জিরার দেশে তিনদিনের রোমাঞ্চগাঁথা

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫



সাগর শব্দটার মাঝে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে যেন ! রোমাঞ্চিক কিংবা দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের তাই চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, সুবিশাল মহাসাগর । আমরা রোমাঞ্চিক কিংবা দুঃসাহসিক হয়তো অতটা নই, তবে আমরা অভিযাত্রী । সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি চাক্ষুষের অভিযাত্রী ।
গত শীতে বৃহস্পতি থেকে শনি, জানুয়ারীর ১৪ থেকে ১৬ তারিখ, প্রায় বাহাত্তর ঘন্টার মতো অভিযাত্রী ছিলাম আমরা । ভ্রাতৃত্ব-বন্ধুত্বকে নতুন করে উপলব্ধি করেছি এই তিনদিনে । আমাদের চারপাশের অতি চেনা কিছু মুখকে নতুন ভাবে চিনেছি । কত কি দেখেছি, জেনেছি, শিখেছি !
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই ক্লাবের উদ্যেগে আয়োজিত তিনদিনের 'চট্টগ্রাম টু সেন্ট মার্টিন' যাত্রায় সুযোগ হয়েছিল অভিযাত্রী হওয়ার । রোমাঞ্চকর সেই তিনদিন স্মৃতিতে অমলিন হয়ে বেঁচে থাকবে অনেক অনেক দিন, হয়তো চিরদিনই ।


যাত্রা হলো শুরু :
বুধবারের মধ্যরাত । ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তখন বৃহস্পতিবার প্রবেশ করেছে । একে একে একত্রিত হচ্ছিলাম জমিয়াতুল ফালাহর বিশাল মাঠটায় । ছোট্ট একটু দিক-নির্দেশনা, তারপরই শুরু হলো বাসযাত্রা । ওয়াসা মোড় টু নাফ নদীর তীর মানে টেকনাফ ।

শিপযাত্রা, সমুদ্র দর্শন, গাংচিল আর গান :
এবার শুরু হলো জলযাত্রা, শিপে করে । নাফ নদী পেরিয়ে শিপ ঢুকে পড়ে সুবিশাল মহাসাগরে । আহা, সমুদ্র ! এত্ত বিশাল !
দুধের মতো সাদা গাংচিলদের দিকে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে । শিপের সাথে তাদের সে কী দৌড় প্রতিযোগিতা ! ফ্লায়িং ক্যাচে ঠোঁটে চিপস তুলে নেয়াটা দেখার মতো দৃশ্য বটে ! গাংচিলদের সারি সারি উড়ে যাওয়া দেখে মনে পড়ে যায় সামিনা চৌধুরীর ‘ঐ ঝিঁনুক ফোঁটা সাগর বেলা’ গানের সেই লাইন, ‘দূরের ঐ গাংচিলেরা নামবে দলে দলে’ ।
চারপাশের সে কী মুগ্ধকরা সৌন্দর্য্য ! অস্থির করে দেয়, পাগল করে দেয়, উন্মাতাল করে দেয়, হরণ করে নেয় চিত্ত, উচাটন করে দেয় হৃদয়-প্রাণ-মন এর সবটুকু । আহা, সাগরের সে কী রুপ ! এমনই তার রুপ যে, সহ্য করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় ।
বড় ভাইরা শুরু করলেন গান । কত-শত গান । কে বলে, এই প্রজন্ম কেবল ভিনদেশী গানের প্রতি আকৃষ্ট ? প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর ‘বায়োস্কোপ’ থেকে শুরু করে, আধুনিক-দেশাত্নবোধক কত বাংলা গান গাইলেন তাঁরা ! ‘টুনির মা’ যেমন গেয়েছেন তেমনি গেয়ে উঠেছিলেন ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ এর মতো গান । স্যাররাও গলা মিলিয়ে গানের আসরটাকে দিয়েছিলেন অন্যমাত্রা ।
মাঝখানে হঠাৎ বলে উঠা ‘আহা, জবা নারকেল তেল’ কিংবা ‘প্রাণ মিল্ক ক্যান্ডি ইয়া ইয়া ও’ মনে করিয়ে দিয়েছিল শৈশব । ‘ঢাকা টু খুলনা’র মতো গানগুলি দিয়েছিল নির্মল বিনোদন । এত কিছুর পর আবার দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়াটা ছিল এক ইউনিক ভাবনা !

অবশেষে সেন্ট মার্টিন :
চারদিকে সুনীল জল থৈ থৈ করছে । দূর দিগন্তে নীল আসমান আর নীল সাগরের কি চমৎকার মিতালী ! সাগর পাড়ের সে কী মিষ্টি হাওয়া । যেন মনে করিয়ে দেয়, কিংবদন্তী শিল্পী জিনাত রেহানার ‘সাগরের ঐ তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে...’ সেই বিখ্যাত গান
সৌন্দর্য্যের সে এক বিশাল জগত । এখানে-সেখানে প্রকৃতির রুপ উপচে পড়ছে যেন ! মার্টিন সাহেব কে পেলে কোলে তুলে নিতাম, এমন এক সুন্দরের সাম্রাজ্যের খোঁজ দিয়েছিলেন বলে ।
নীল সাগরের জল দেখে কখনো মনে হয় গ্যালন গ্যালন কেরোসিন তেল বুঝি ঢেলে দেয়া হয়েছে সেখানে ! আবার কখনো মনে হয়, আকাশের নীলকে কেউ জলের সাথে মিশিয়ে দেয়নি তো ! সুনীল সাগর, সুনীল আসমান... আহা বুকটা কেমন উথলে উঠে ! ইচ্ছে করে সব ভুলে যাই, এই অপার সুন্দরে আকন্ঠ নিমজ্জিত হই ।

ছেঁড়া দ্বীপ দর্শন :
সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে দ্বীপটাকে ছিঁড়ে যাওয়া দ্বীপ বা ছেড়া দ্বীপ বলা হয় । কি স্বচ্ছ, পরিস্কার পানি । পা বাড়ালেই যেন তলা ঠেকবে । নীল পানির বালির তীরে ঘন সবুজ বন, উপরে নীলাভ আসমান । সূর্যের সোনালী আলো নীল জলে মিশে চিক চিক করে সৃষ্টি করছে অন্য এক সৌন্দর্য্য । আহা, কি সুন্দর কি সুন্দর ! বাংলা সাহিত্যে এই জন্যেই কি ‘অসহ্য সুন্দর’ কথাটার অস্তিত্ব আছে ?
কাঁটা কাঁটা কি এক গাছ আছে, তার ফলটাও অদ্ভুত । দেখার মতো বটে !

বড়-ছোটর ঐশ্বরিক মেলবন্ধন :
বড়রা না কেবল বড়গিরি দেখায় ? বড়রা না কেবল ভাব দেখায় ? বড়রা না কেবল সিনিয়রিটি দেখায় ? হুঁহ, কে বলে এসব ! আমরা তো দেখেছি, বড়রা কেবল ছুটছেন আর ছুটছেন । ছোটদের মুখে খাবার তুলে দিতে বিরামহীন ছুটছেন । সবাই রুম পেল কি না, দেখতে ছুটছেন । পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, খাওয়া হয়েছে কি না ! নিজের পরিচয়, মর্যাদা ভুলে গিয়ে নির্দ্বিধায়-নিঃসংকোচে খাবার তুলে দিচ্ছেন ছোটর মুখে ।
কাঁধে হাত রেখে হাঁটছেন, কথা বলছেন । যেন কত দিনের চেনা-জানা, কত পুরনো বন্ধুত্ব দুজনের মধ্যে ! ছোটদেরও যেন সব সংকোচ-জড়টা কেটে গেছে কোন এক জাদুবলে । হয়তো বড়দের নীরব প্রশ্রয়ে ।

শ্রদ্ধেয় চতুষ্টেয় :
তাঁরা চারজন পুরো অভিযাত্রায় আমাদের গাইড করেছেন, নির্দেশনা আর নির্ভরতা দিয়ে । মাথার উপরে ছিলেন ভরসা হয়ে আবার মিশে গিয়েছিলেন আমাদেরই একজন হয়ে । উদ্যাম আনন্দ আহরণে দিয়েছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা । আবার সীমানা ডিঙ্গানোর চেষ্টায় ঘোষণা করেছিলেন সতর্কতা ।
কখনো ছোটখাটো রসিকতায় যোগ দিয়েছেন, কখনো গানের সাথে গলা মিলিয়েছেন, কখনো ফুটবল খেলেছেন, কখনো ছবি তুলেছেন... । গুরু-শিষ্যের জটিল সব সমীকরণ কে তাঁরা বদলে দিয়েছিলেন সহজ-সরল সমীকরণে ।

গেম শো, এবং কিছু কথা :
চোখ বেঁধে বল ঝুড়িতে ফেলা কিংবা ফুটবল দিয়ে বোতল ফেলা দুটি খেলা-ই দিয়েছিল দারুণ আনন্দ । উচ্ছাস আর উল্লাসে ভরিয়ে দিয়েছিল কিছুটা সময় ।
স্যারদের কথামালা, বড় ভাইদের অনুভূতি সম্মোহিত করে রেখেছিল কিছুক্ষণ । অনেক পেছনের গল্প, অজানা কথা, বাঁধা-বিপত্তি জয় করে সফলতায় উদ্ভাসিত হওয়া... কত কিছুই না শোনালেন তাঁরা !
‘ইইই ক্লাব’ নিয়ে কত স্বপ্ন দেখালেন আরও কত স্বপ্নের বীজও বুনে দিলেন !

এবার ফেরার পালা :
বিদায় আনে বেদনা । শিপে দাঁড়িয়ে যখন নারকেল জিঞ্জিরার দেশটাকে বিদায় বলছিলাম, তখন বুকের কোথায় একটা বেদনার উপস্থিতি স্পষ্ট টের পেয়েছিলাম । অনেকে বলে, সেন্ট মার্টিন ছোট্ট একটা দ্বীপ । নিমেষেই দেখা হয়ে যায় । আমার তো তিনদিনেও দেখা শেষ হলো না । আরো কত কি দেখার ছিল !
টেকনাফ এসে গ্রুপ ফটোতে আমাদের অভিযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটলেও রাতের একটায় বাসায় ফেরার পরই শেষ হয়, রোমাঞ্চকর এক অভিযাত্রার । আহা, কি সব মূহুর্ত এসেছিল জীবনে !



সবশেষে, ইইই ক্লাবের আয়োজকদের ধন্যবাদ । শিক্ষাগুরুদের ধন্যবাদ । সিনিয়র ভাইদের ধন্যবাদ । ধন্যবাদ জুনিয়রদেরও । বন্ধুরা তো দুর্দান্ত ছিল, তাদের কথা আর কি বলবো !
অসাধারণ, অনবদ্য, অভুলনীয়, অমুছনীয়, দুর্দান্ত এক অভিযাত্রা উপহার দেয়ায় সব্বাইকে অনেকগুলো ধন্যবাদ ।
এবং ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা মহা ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তাকে । তিনি সাগরের সুনীল জলরাশি স্থির রেখেছিলেন, মেঘমালাকে অস্থির হতে দেননি । প্রকৃতিকে অশান্ত করেননি । বরং প্রকৃতি আমাদের কাছে হয়ে উঠেছিল, অপরুপ, অপূর্ব ও অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের আধার ।
আহা, প্রকৃতির সে কী রুপ !

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: যেতে ইচ্ছে লাকছে

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৬

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: :)

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:৩১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
লেখা ভাল লাগলো।

ছবি আরো কয়েকটা হলে বেশ ভালই হত।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৭

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: জ্বী, ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪

আমি মাধবীলতা বলেছেন: লেখা এবং ছবি - অসাধারণ ! কী ভীষণ সুন্দর সে নীল ! যাওয়ার ইচ্ছেটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলেন.....
খুব ভালো লাগলো !

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৮

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: ধন্যবাদ।
সময় ও সুযোগ হলে ঘুরে আসতে পারেন। ভাল লাগবে, আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.