নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য গল্প : ক্রিকেটবোদ্ধা বধু

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১৪

আমার বউ দারুণ বুদ্ধিমতী। খুব স্মার্ট। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনাটা তাঁর মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের। এই ক্রিকেটের জন্য কত ঝামেলায় যে সে পড়েছে তা বলার মতো নয়। নিজে তো ঝামেলায় পড়বেই, সাথে আহ্লাদ করে আমাকেও ফেলবে। বিয়ে, দাওয়াত, পারিবারিক-সামাজিক সব ধরণের অনুষ্ঠান পানসে হয়ে যায়, ওর ক্রিকেট-পাগলামোর জন্য।

একবার গ্রামে গেলাম। ওর এক খালাতো বোনের গায়ে হলুদ। দুপুরের দিকে এসে আমাকে বললো, ‘একটু পর বাংলাদেশের খেলা শুরু হবে। কারেন্ট নাই। কি করি?’ ও তখন উন্মাদ-প্রায়। আমি আবার বউ-অন্তঃপ্রাণ খুব। বউয়ের এমন অবস্থা আমার একদম সহ্য হলো না। বিস্তর ছোটাছুটি করে, ওকে বাজারে নিয়ে এসে, ল্যাপটপে নেট দিয়ে ওর খেলা দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম সেবার। বাকী আত্নীয়-স্বজন সবাই হৈ হৈ করে গায়ে-হলুদ করছে, আর এদিকে আমরা বসে বসে দেখছি বাংলাদেশের খেলা! ভাগ্যিস, সেবার বন্ধু শফিক ওর দোকানে একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল!

আপনাদের মনে হতে পারে, ও শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ভক্ত। নারে ভাই, তাহলে তো বেঁচে যেতাম কিছুটা। ও ক্রিকেটেরই একান্ত মন্ত্রশিষ্য। কত কি যে জানে! ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেট তো আমরাও দেখেছি। তা বলে এতকিছু কি জানি? টিভিতে একবার ফিলিপ হিউজের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিবেদন দেখছিলাম। ও ধুম করে আমাকে কি বলে উঠল জানেন? ‘জানো? আর্চি জ্যাকসনও না হিউজির মতো অল্প বয়সে মারা গিয়েছিল!’ আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, ‘এই জ্যাকসনটা আবার কে?’ আমার কথা শুনে সে এমনভাবে তাকাল, যেন আমি বলেছি, সাকিব আল হাসানটা আবার কে? মোটামুটি আমাকে গবেট পর্যায়ের শিষ্য জ্ঞান করে, আর্চি জ্যাকসন সম্পর্কে ঝাড়া পনেরো মিনিটের এক লেকচার শুনিয়েছিল সে।

ওর এত ক্রিকেট পাগলামি দেখে একবার খুব বিরক্তি নিয়ে বলেছিলাম, ‘তোমার কোন ক্রিকেটারের সাথে বিয়ে হলে ভালো হতো।’ সাথে সাথে আহ্লাদী হয়ে বলে উঠেছিল, ‘না-গো না। স্টার ক্রিকেটারের সাথে বিয়ে হলে কি, ওদের তোমার মতো এমন জ্বালাতে পারতাম!’ বোঝেন অবস্থা! আমি সব শুনে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। যে তাকানোকে সোজা বাংলায় ‘বোকা বোকা চাহনি’ বলে।

এই তো ওয়েলিংটন টেস্টের কথা বলি। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার আগে বললাম, ‘কি আছে দাও তাড়াতাড়ি।’ ও কি জবাব দিল জানেন? ‘এই টেস্টও কেউ হারে?’ টিভিতে বাংলাদেশের অবস্থা আর টিভি সেটের সামনে রীতিমতো বিধ্বস্ত বউ’কে দেখে বুঝলাম, আজ বাসায় নাস্তা হয়নি। তো আর কি? খালি পেটে অফিসে গমন।

তার কিছুদিন পরের কথা। ছুটির দিনে, সকালে নাস্তা করছি। মাত্র দুটি রুটি খেয়েছি। তিন নাম্বারটি হাতে নেব সেই সময় পেটে গুতো দিয়ে বলে উঠল, ‘সব একসাথে খেয়ে লাভ কি? সকালে একটা, দুপুরে একটা, রাতে একটা ভাগ-ভাগ করে খেলেই তো পারো।’ কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। রুটিটাও আর খাওয়া হয়নি। দুপুরেও একই অবস্থা। ভাত দ্বিতীয়বার নেব এমন সময় আবার বলে উঠল, একই কথা। জিজ্ঞেস করলাম, ‘হচ্ছেটা কি? তোমার সমস্যা কোথায়?’ কোন জবাব না পেয়ে বিরক্তি নিয়ে খাওয়া থেকে উঠে ফেসবুকে চোখ রাখতেই দেখি, ‘বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাকি বলেছেন, রান ভাগ-ভাগ করে করলেই ভালো।

বোঝেন অবস্থা! তাঁর যত রাগ, আক্ষেপ, হতাশা সব বুঝি আমার উপরই ঝাড়তে হবে!

শততম টেস্টের কথা-ই বলি। বিকেলে অফিসে ফোন করে বলে উঠল, ‘আসার সময় বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসো। কেমন!’ কথাগুলো বলার সময় যেন খুশীতে ডগমগ করছিল। মোটামুটি এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি জানি, বাংলাদেশ হারলেও আমার কপাল পুড়বে, জিতলেও পুড়বে। পার্থক্য হচ্ছে, হারলে পেট খালি, আর জিতলে পকেট খালি! মানে আনন্দ বা বিস্বাদ যা-ই হোক, দুটো ঝড়ই আমার উপর দিয়ে যাবে।

একদম সাম্প্রতিক একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করছি। জুমুয়ার নামায পড়ে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়েছি। সে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে বলতে শুরু করল, ‘ঘটনা শুনেছ? ধোনী তো অবসর নিয়েছে।’
আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম, ‘সে তো টেস্ট ক্রিকেট থেকে অনেক আগে নিয়েছে।’
‘আরে, ওডিয়াই, টি-টুয়েন্টি থেকেও অবসরে গেছে।’
‘বলো কি? হঠাৎ? কেন?’
আমার প্রশ্নের জবা না-দিয়ে বলতে লাগল, ‘পাকিস্তানের আজহার আলীও ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছে। এ্যালেস্টার কুকও টেস্ট থেকে অবসরে গেছে।’
ঘুম-টুম বাদ দিয়ে উঠে বসলাম। ‘কি হলো? হঠাৎ সবাই মিছিল করে অবসরে যাওয়ার কারণ কি!’ কিন্তু আমাকে সংশয়ের আবর্তে রেখে, সে আসরের নামায পড়তে বসে গেল। উত্তর দিল না।
আমিও তাড়াতাড়ি নামায পড়তে চলে গেলাম। নামায শেষে এসে ফেসবুক-ক্রিকইনফো, পত্রিকা-টেলিভিশন তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম। নাহ, কোথাও কোন খবর নেই। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কই, কোথাও তো কিছু দিচ্ছে না?’ সে তাঁর বিখ্যাত সেই ‘দূর্বোধ্য’ নির্বাক চাহনি দিল। আমার আর ওকে ঘাঁটানোর সাহস হলো না। এদিকে কিছু বুঝতেও পারছি না। কি যে করি!
সন্ধ্যায় খবর দেখতে গিয়ে পরিষ্কার হলো বিষয়টা। খেলার খবরে দেখলাম, বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলছেন, মাশরাফি নাকি অবসর নেয়নি। শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছে।

বুঝতে বাকী রইল না, আমার বউ অবসর মানে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়াকেই নির্দেশ করেছে। কিন্তু সে তো বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন। এখানে আমার কি করার আছে?

আপনাদের বলেছিলাম না, আমার বউয়ের যত রাগ-অনুরাগ সব আমার উপর দিয়েই যায়। এই হলো তার নমুনা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৪

মন থেকে বলি বলেছেন: মজা পেলাম

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৪৮

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: :)

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

পড়লাম।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৪৯

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: আচ্ছা :)

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫

ইফতি সৌরভ বলেছেন: :-B B-)) =p~

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: :)

৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।


ধন্যবাদ মোঃ ইয়াসির ইরফান।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০০

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: কৃতজ্ঞতা আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.