নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য গল্প : ক্রিকেটবোদ্ধা বধু-০২

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

আমার বউ দারুণ বুদ্ধিমতী। খুব স্মার্ট। আপনাদের বলেছিলাম তো তার কথা! মনে নেই? ক্রিকেট নিয়ে কী সব ভয়ানক কান্ড ঘটায় সে সম্পর্কেও আপনাদের জানিয়েছিলাম তো! ভুলে গেছেন নাকি?
এটা অবশ্য মনে রাখার মতো কোনো ব্যাপারও না। জগতের কত বড় বড় ঘটনা নিত্যদিন বেমালুম ভুলে যাই, বিস্মৃতির মগডালে উঠে বসে থাকি! সে হিসেবে এটা তো নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। যাই হোক, আপনারা ভুলে গেলেও আমার তো আর ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ে সওয়ার হয়ে বসে আছে; ভোলার সুযোগ কই, বলেন?

কিছুদিন আগের ঘটনা। সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছি। হঠাৎ কোত্থেকে এসে বলে উঠল, “টনসিলটা কেন যে গেল? অবশ্য সে যাবে নাই-বা কেন! ওষুধ-পথ্য খেয়ে আমরাই তো তাকে বিদায় করার সব বন্দোবস্ত করেছি। আহা! এখন থাকলে কথা কম বলা যেত! কাজ টাজ না করে শুয়ে থাকা যেত! অবশ্য আমরা না চাইলে সে থাকবেও-বা কেন?”
তাজ্জব হয়ে ওর দিকে তাকালাম। টনসিলের ব্যথায় দু’রাত নিজে ঘুমাতে পারেনি, আমাকেও ঘুমাতে দেয়নি। আর এখন টনসিলের জন্য দরদ উথলে উঠছে! “তোমার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?”
আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে উঠল, “ওটা তো টনসিল ছিল না, আরো মারাত্নক ব্যধি ছিল। ভালো হয়েছে গেছে।” কিসের সাথে কি বলছে, আগা-মাথা ধরতে না পেরে চুপ করে গেলাম।
এতদিন সংসার করে আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছি এই মেয়ে ভয়াবহ মাত্রায় এ্যাডিক্টেড। ক্রিকেট এ্যাডিক্টেড। তাই ও কোন খেয়ালে কি বলে আমি কখনোই বুঝতে পারি না। কিন্তু পত্রিকা পড়তে গিয়েই, খেলার পাতায় পেয়ে গেলাম ওর টনসিল-দরদ হেতু!
“আমরা না চাইলে হাথুরু থাকবে কেন?”

এ্যাশেজ চলছে না এখন? সকালে উঠেই টিভি ছেড়ে দেয়। ফজরের নামাযের পর যে একটু ঘুমাবো সে সুযোগও দেবে না। কত কাকুতি-মিনতি করে বোঝালাম, আমার সারাদিন অফিস করতে হয়। সকালের এই ঘন্টা-কয়েক ঘুম যেন যেতে দেয়! কে শোনে কার কথা! পরে বললাম, ঠিক আছে মিউট করে যেন দেখে। নাহ, তাও দেখবে না। তার নাকি ধারাভাষ্য শুনতে হবে! ঘর কাঁপিয়ে ক্রিকেট কমেন্ট্রী শুনবে, আর নীতি বাক্য আওড়াবে “আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ, মেকস অ্যা ম্যান হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ।”
সহ্য হয়? বলেন?
একদিন রাতে দেখি খুব ভালো মানুষের মতো বলছে, “তোমার ঘুম নাকি ক্রিকেট? কোনটাকে গুরুত্ব দেবো?” আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আস্তে করে স্বগতোক্তি করে, “ভাবছি...”
সকালে ঠিকই ছেড়ে দিল। মার্ক নিকোলাস ওর ফেভারিট, সেজন্য বোধহয় সাউন্ডটাও বাড়িয়ে দিল। ক্ষেপে গিয়ে বললাম, “এটাই যদি করবে তো রাতে এত নাটকের কী দরকার ছিল?” হেসে হেসে জবাব দিল, “ওমা! রাতে তো টেস্ট একাদশ নিয়ে কত কী ভাবা হয়! কিন্তু সকালে কি মুমিনুলের জায়গা হয়?” টুইট-ইঙ্গিতটা ধরতে পারলেও ভালো লাগেনি এই রসিকতা। অত ভোরে কোন রসিকতাটা ভালো লাগে, বলেন?

আমিও অবশ্য ছেড়ে দিই না। সুযোগ পেলেই ফোঁস করার চেষ্টা করি। কিন্তু বুঝলেন, পারা যায় না। ফোঁস করলে যে ছোবলটা খেতে হয়! ওই যে দক্ষিন আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের যাচ্ছে তাই অবস্থা হলো। ওকে ক্ষ্যাপাতে বলেছিলাম, “হুঁহ, খুব তো বলেছিলে হ্যান করেগা ত্যান করেগা। কিন্তু করেছে টা কী? আড়াই দিনও তো খেলতে পারেনি!” এক-দুইবার বলার পর কিছু বলেনি। তৃতীয়বার দেখি রেগে আগুন। “ভালো হবে না একদম। পোড়া ভাত আর আধা-সেদ্ধ আলু খেতে হবে কিন্তু!”
এমন হুমকীর পর কি আর কিছু বলা যায়? তবু খুব সাহস সঞ্চয় করে মিনমিনে গলায় যা একটু বলার চেষ্টা ছিল, সেটাও ধুম করে “ইতিহাসে ছয় ঘন্টার কম সময়েও ম্যাচ শেষের নজির আছে। বুঝলে?” পরিসংখ্যান শুনিয়ে থামিয়ে দেয়।

গতকালের কথা বলি। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে নাস্তা সেরে চা-টা হাতে নিয়েছি, এই সময় বলে উঠল, “পাঁচ হাজার টাকা দাও।” স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
“জরিমানা।”
অবাক হলাম। “কিসের?”
“আরে, ওইদিন আম্মাদের সামনে তুমি বলেছিলে, আমি নাকি চা-তে চিনি কম দিয়েছি।” চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে জবাব দিলাম, “তা তো দিয়েছিলেই।”
“সেটার জরিমানা দাও। এতে আম্মাদের সামনে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ওরা পরের বার আমি চা দিলে যদি চা না খায়! অন্যদের যদি বলে, আমি চা বানাতে জানি না! তখন কি আমাদের বাসায় মেহমান আর আসবে? আমার চা কেউ খাবে? আমি তো আর কখনো চা-ই বানাতে পারবো না।”
মিটি মিটি হাসিটা আটকে রাখতে না পেরে ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে উঠি। সে-ও হেসে দেয়। ওহ, তামিম! আপনি কোথায়? দেখে যান, আপনার জরিমানা নিয়ে কি গল্প ফেঁদে বসেছে আমার বউ!
স্বীকার করতে বাধ্য হই, ওর ক্রিকেট সেন্সের মতো হিউমারটাও অসাধারণ।

ক্রিকেটবোদ্ধা বধু-০১

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: :)

বাহ বেশতো! ক্রিকেটিয় দাম্পত্য জীবন ;)

++++++

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৫

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: :)

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৪

শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৫

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: :)
ভালো থাকবেন।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২০

অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: ক্রিকেটে তো দেখছি দুজনই বেশ মশগুল হয়ে আছেন।ভালো থাকবেন।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন। :)

৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:১৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এমন বধু কখন যে গুগলি দেবে বোঝাই যাবে না :-P

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: একদম :)

৫| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাদের জন্য শুভ কামনা।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৩

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: ধন্যবাদ :)
শুভকামনা আপনার জন্যেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.