নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটি মানবিক পাখি, প্রকৃতি ও প্রেমিক কর্তৃক আহূত হয়ে হঠাৎ হঠাৎ আছড়ে পড়ি ভূ-পৃষ্ঠে তবুও মানুষের জীবনে ফিরে আসার সাধ নাই আর।

চন্দ্রনিবাস

খসে পড়া নক্ষত্রের দেহে পুনঃসংযুক্ত হইবার আশায় চন্দ্রপথে একাকি খুঁজিতেছি অতীত।

চন্দ্রনিবাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাঁইজি লালনের বাণীর ভেদ

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০

সেদিন আমার এক কাছের মানুষ লালনের সাথে আমার ভালবাসা-বোধের বৈপরিত্য প্রকাশের আশায় লালন শাঁইজির গানের নিচে বিশ্লেষণকৃত গানটির বরাত দিয়েছিলেন। লালনের ভাব বোধের সাথে প্রেম আমার অনেক জনমের। যদিও লালনকে জানার আগে থেকে নিজেকে জানার প্রচেষ্টা শুরু হয় বলেই লালন শাঁইজির বোধ বোধগম্য হবার দুয়ার সামান্য হলেও উন্মুক্ত হয়। লালনের জ্ঞানের ও বোধের ভাব বা আত্মতত্বে্র ব্যখ্যা বিশ্লেষণ সাধারণ বৈষয়িক-মনুষ্য কর্ম নয় যদিও একান্তই নিজের জ্ঞানের সীমার মাঝে লালন শাঁইজির একটি কালামকে বুঝার জানার চেষ্টা করছি। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

“মিলন হবে কতদিনে
আমার মনের মানুষের সনে
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছি কালো শশী
হবো বলে চরণদাসী
ও তা হয়না কপালগুণে“


শাঁইজির গানে “মনের মানুষ” বারবার এসেছে। মনের মানুষ বলতে সাধকেরা পরমাত্মাকে বুঝান। লালন পরমাত্মাকে আরো বলেছেন অচিন পাখি। পরমাত্মাসম যে পাখি জীবাত্মার ভেতরই আসে আর যায়। সাধকেরা ওই পরমাত্মাকে ধরতে চেয়েছেন। মনবেড়ি পড়াতে চেয়েছেন মোক্ষ লাভের আশায়। পরমাত্মাই বাউল সাধনার সেই অচিন পাখি, মনের মানুষ। মনের মানুষের সনে মিলনের জন্যই সাধকের সব সাধন ভজন।

“মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ,
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে”


শাঁইজি তার বাণিতে চাতক পাখির সাথে বাউল সাধকের সাধনাকে রুপক হিসেবে এনেছেন। সাধনা করতে হয় চাতক পাখির মতো। সাইজি বলেছেন, সমুদ্রের কিনারে গিয়ে জল বিনে চাতকী মরলো। চাতক এমনই সাধকপাখি যে মেঘের জল ছাড়া অন্য জল পান করবে না এই শর্তে তার সাধনা চলতে থাকে। কিন্তু কপাল গুণে এমন সাধনা মানুষ করতে পারেনা। কারণ মনের মানুষ এমনই অধরা যে মেঘের বিদ্যুতের মতো আচমকা লুকিয়ে যায়, তারে আর অন্বেষণে পাওয়া যায় না। মনের মানুষের খোঁজ প্রকৃতই বড় জটিল বাবু মশাই। এই দেখা যায় আবার পরক্ষণেই হারিয়ে যায়।

“যখন ও-রূপ স্মরণ হয়,
থাকে না লোকলজ্জার ভয়
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে
আমার মনের মানুষের সনে”


শাঁইজির বাণীর শেষে শাঁইজি নিতান্ত সহজ সুলভ উপস্থাপনের মাধ্যমে মনের মানুষের সনে প্রেম হয়ে গেলে যে আত্মদর্শনের সর্বোচ্চ দুয়ার উন্মুক্ত হয় এমন আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ করেছেন এইভাবে, "ও প্রেম যে করে সে জানে, আমার মনের মানুষের সনে।" প্রেম একবার হয়ে গেলে মোক্ষ লাভের দুয়ার খুলে গেলে আর কোনো লোক লজ্জার ভয় থাকেনা। লালন প্রকৃতপক্ষে শাস্ত্রজ্ঞানের চাইতে মনের মানুষকে বেশী তার অন্তরে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। এরুপ প্রেমে মজে আপনার আপনি ফানা না হলে মনের মানুষের ভেদ জানা যায় নাহ।

বর্তমানে যদিও শাঁইজিকে সবাই নিজ নিজ মাজহাবের লোক বলে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে তাদের বেনিয়া দৃষ্টিভঙ্গির কর্পোরেট উপযোগিতা খুঁজে পান। তাই তাদের ব্যাখ্যায় পরমাত্মাকে নিজ নিজ ধর্মের স্রষ্টা নামে তারা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাউলেরা স্রষ্টা আর সৃষ্টির সম্পর্কের মাঝের দৃশ্যত যে অধরার দূরত্ব তাকে টেনে এনে স্রষ্টা আর সৃষ্টির এমন এক মহামিলন ঘটিয়েছেন, একাগ্র প্রেমের বাঁধনে বেঁধেছেন এমনভাবে যে স্রষ্টাকে তার সৃষ্টির মাঝ থেকে আর আলাদা করা যায় না। মানুষই মনের মানুষ হিসেবে বাউলদের কাছে ধরা দিয়েছে, বাউলেরা তাই মানুষেরই জয়গান করেছেন। মানুষের সাধনাই বাউলদের নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায় বলে বিবেচিত হয়।

জয়গুরু।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

অভ্রংনীহ বলেছেন: লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন।তার গানের প্রত্যেকটা লাইনে ভেদাভেদহীন মানুষের জন্য। গানের কলির বিশ্লেষনের জন্য ধন্যবাদ :)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

চন্দ্রনিবাস বলেছেন: আমার ব্লগপোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.