নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানালার ওপাশে

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৫



তুমিতো মিশু আর জয়ীতা দুইজনেরই ক্লাশমেট, তাহলে একজনকে ‘তুমি’ আর অন্যজনকে ‘তুই’ করে বলো কেন?” – দীপনের এই প্রশ্নে একটু হতচকিত হয়ে গেল নাহিদ।তাই তো, বিষয়টা তার মাথায় কেন আসেনি? একটু থমকে গেলেও উত্তর দিতে বেশি সময় নেয়না নাহিদ; অবলীলায় বলে ফেলে, “জয়ীতাকে কেন জানি একটু বেশি কাছের মনে হয়।”

স্বভাবজাতভাবেই, দীপন এ নিয়ে আর কথা বাড়ায় না। তবে,নাহিদের মনের ভিতর অনেক কিছুই একসঙ্গে ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া শুরু করে দেয়; অতীতের অনেক ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠে। তবে, সে ঠিক মনে করতে পারে না, প্রথম কবে জয়ীতার সাথে কথা হয়েছিল। বা কোন ঘটনাটি সবচেয়ে পুরনো; পেয়ারা গাছের নিচে আজাদ, মিশু, দীপন, রেজা, হুমায়ুন সবাই মিলে ক্লাশের ফাকে আড্ডা মারাটাই সবচেয়ে পুরোনো মনে হয়। নাকি, কলেজের সামনের রাস্তায় দল বেঁধে সবাই হাঁটছে আর গল্প করছে এবং এরই মধ্যে দু-একজন গানের কলি আওড়াচ্ছে? অথবা, ক্লাশের সামনের বারান্দায় দাড়িয়ে ছোট ছোট জটলা বানিয়ে মাঠে অন্যদের খেলা দেখাই সবচেয়ে পুরনো স্মৃতি?

মুহূর্তের মধ্যেই অনেক কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠে, নাহিদের। একই এলাকায় থাকে বলে পরিচিত কিন্তু কখনো সরাসরি জয়ীতার সাথে কথা হয়নি। অন্য সবার মতই নাহিদ পড়ত বাসার পাশের একটা স্কুলে; স্কুলের ক্লাশ শেষে দৌড়ঝাঁপ আর বাঁদরামির সাথীও ছিলো কয়েকজন।তাই, ছুটির দিন হোক বা স্কুলের দিনই হোক, তার বেশিরভাগ সময় কাটত ওমর, কমলেশ, অর্পণা, আর রানাদের সাথে। কিন্তু জয়ীতা, আজাদ, মিশু শুধুমাত্র এই তিনজন বাসা থেকে একটু দুরের একটা ভালো স্কুলে পড়ত। বন্ধুদের গন্ডিও আলাদা আলাদাই ছিল। এমনকি একই টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গেলেও দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্যে আলাদা আলাদা ব্যাচ ছিলো। তাই, কখনোই এদের কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন পরেনি। তবে, এস এস সির পরে, এখন চারজনই একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। তাই, সকালে কলেজে আসার সময়টা একটু এদিক-ওদিক হলেও বাসায় ফিরে আসতে হয় মোটামুটি এক সাথেই।

ক্লাশ শেষ হলে নাহিদ একটু ও দেরি করে না, সটান হাটা দেয় বাস স্ট্যান্ডের দিকে। বেশীরভাগ দিনেই অন্যরা এসে পৌঁছানোর আগেই সে বাসে উঠে পড়ে। তারপর বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বাকী সবাই গল্প করতে করতে বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে আসছে। অবশ্য, তারা এসে পৌঁছানোর আগেই বাস ছেড়ে দেয়। তাই, নাহিদ সচরাচর একাই বাসায় ফিরে। তবে কখনও কখনও সে বাস মিস করে ফেলে আর পরের বাস আসার আগেই ক্লাশের বাকীরাও এসে পরে বাসস্ট্যান্ডে। তখন সে সবার সাথে একত্রেই একই বাসে উঠে।

ক্লাশ শেষ হয় বিকেলের দিকে। সকালে অফিস বা স্কুলে যাওয়ার যে ভিড় থাকে, সেটা বিকেলে না থাকলেও সাধারণত বাসে সিট পাওয়া যায় না। কারণ, এই রুটে পাবলিক বাস কম। আবার, মিনিবাসগুলো কাছের যাত্রী তুলতে চায়না;বলে,সব জায়গায় থামবে না, এটা না কি ডাইরেক্ট বাস।কোন কোন মিনিবাস আবার ছাত্রদের হাফ ভাড়া নিতে চায়না।তাই নাহিদের তো ছাত্র – ছাত্রী এবং যারা কিনা এই পরের বা কাছাকাছি স্টপেজে নেমে যায়, তারা সাধারনত মিনিবাসে উঠে না, উঠে বড় বাসে; যাকে তারা ডাকে ‘মুড়ির টিন’ বলে। কাঠের বডির এই বড় বাসে উঠলে আরেকটা সুবিধা আছে, সেটি হলো; বাসের ভিতরে যখন বেশীরভাগ দিনেই চাপাচাপি করে দাড়াতে হয়, তখন ছাদে আরামসে বসে বাতাস খেতে খেতে যাওয়া যায়।এমনকি, অনেক সময় কন্ডাক্টর ছাদের যাত্রীদের ভাড়াও চাইতে আসেনা।আসলে ভাড়া চাইতে আসার আগেই তাদের স্টপেজ চলে আসে বলে তারা নেমে পরে। তাই অনেকেই মুড়ির টিন আসা মাত্রই, দৌড়ে ছাদে উঠে পরে; ভিতরে জায়গা আছে কি নেই সেটা দেখার চেষ্টাও করেনা। নাহিদও মাঝে মাঝে ছাদে উঠে পরে, অন্যদের সাথে। বিশেষ করে, যেদিন বাসে দরজায় বেশি লোককে ঝুলতে দেখে, সেদিন সোজা ছাদে উঠার সিঁড়ির দিকে দৌড় দেয়, ভিতরে উঠার চেষ্টা বাদ দিয়ে।

একদিনের কথা তার বেশ মনে আছে। ভিড় একদমই ছিলনা বলে, সে বাসের ভিতরেই উঠেছিলো। তবে বসার জায়গা পাচ্ছিল না, কারণ ‘মহিলা’ লেখা সিট ছাড়া কোন সিট খালি ছিল না। তবে দরজার পাশেই জোড়া সিটের একটাতে জয়ীতা বসেছিল। নাহিদ রেলিং ধরে দাড়িয়ে। হঠাৎ, জয়ীতা নাহিদকে ডাক দেয়,
“এই নাহিদ, দাঁড়িয়ে যাচ্ছিস কেন? বস এখানে।”
ইশারায় নিজের পাশের খালী সিটটা দেখিয়ে, সে একটু জানালার দিকে সরে বসে। কিছুটা সঙ্কোচ হলেও দেরিনা করে নাহিদ বসে পরে।
- ‘আজকে ছাদে উঠলি না যে?’
- ‘ভিতরে ভিড় কম মনে হলো, তাই।’
- ‘আমার না মাঝে মাঝে তোদের মতো ছাদে উঠতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, মেয়ে বলে সাহস পাইনা।’

নাহিদ ভেবে পায়না, কি বলবে। বলে কি এই মেয়ে! একটু ভেবে-চিন্তে উত্তর দেয়, ‘না উঠাই ভালো; নামার সময় পাওয়া যাবে না। মেয়েরা তো আর ছেলেদের মতো জাম্প দিতে পারে না। দেখা যাবে, ছাদে উঠার সিঁড়িতে দাড়িয়ে নামার চেষ্টা করতে করতে পরের স্টপেজে চলে এসেছে।’ ইচ্ছে করেই, ভাব বাচ্যে উত্তর দেয়। কারণ, এখন ও বুঝে উঠতে পারছে না, ‘তুই’ বলবে না ‘তুমি’ বলবে। ক্লাসমেট কে ‘তুই’ বলা যায়, কিন্তু যে মেয়েকে গত প্রায় দশ বছর ধরে একই এলাকায় দেখেও কোনদিন কথা বলেনি, তাকে প্রথম কথা বলার দিনই ‘তুই’ বলার মতো সাহস করে উঠতে পারে না নাহিদ। তবে, মনে মনে খুশি হয়, জুতসই একটা উত্তর দিতে পেরে। অবশ্য বুঝতে পারে না, তার এই উত্তরে জয়ীতা খুশি না বেজার হয়েছে।

ভাবনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, জয়ীতার পরের প্রশ্নে,
- “তোরা কি ফ্রি’তে যাওয়ার জন্যে ছাদে উঠিস?”
- “না, না। তা হবে কেন? ছাদের ভাড়া তোলার জন্যে আলাদা কন্ডাক্টর আছে।”
- “আমি ভেবেছিলাম, ছাদে উঠলে ভাড়া দিতে হয় না।”

প্রত্যুত্তরে কিছু বলার আগেই কন্ডাক্টর তাগাদা দেয়, ‘ভাইজান ভাড়াটা?’ নিজের পকেটে শুধুমাত্র একটা আধুলি আছে, নিজের ভাড়া দেয়ার জন্যে। পাশে জয়ীতা বসেছে, তার ভাড়া না দিলে অভদ্রতা হয়ে যায়; কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতেই জয়ীতা এক টাকার নোট কন্ডাক্টরের দিকে এগিয়ে বলে, দুইজনের ভাড়া রাখেন, পরের স্টপজেই নামবো।

এর পরে আর কথা বলার সুযোগ হয় না, কারণ নামতে হয় খুব তাড়াতাড়ি করে। নেমেই জয়ীতা দ্রুত পায়ে মিশুর কাছাকাছি গিয়ে একত্রে বাসার দিকে হাটতে শুরু করেছে। আর নাহিদ একটু পিছনে পিছনে একই দিকে এগুতে থাকে। তবে সামনের দুইজনের সাথে কথা বলা হয়ে উঠে না। কারণ, পিছন থেকে দৌড়ে আজাদ তাদের সাথে যোগ দেয়। আজাদ মনে হয় ছাদে উঠেছিলো, তাই নামতে একটু দেরি করে ফেলেছে। আজাদকে ওদের সাথে যোগ দিতে দেখে, নাহিদ হাটার স্পিড কমিয়ে দেয় ইচ্ছে করেই, যাতে সামনের তিনজনের সাথে দূরত্ব আরেকটু বাড়ে।

আরো কয়েকদিন পরে, বাসের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে জয়ীতার পাশাপাশি আজাদ আর মিশুর সাথেও কথা হয় নাহিদের। তবে, কেন জানি মিশু নাহিদকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে, প্রথমদিন থেকেই। তাই, নাহিদও তাকে ‘তুমি’ই বলে। খুব শীগগিরই ঐ ত্রয়ীর বন্ধুত্বের গণ্ডিতে স্থান হয় নাহিদের। এরপরে, ধীরে ধীরে তাদের আড্ডা কলেজের ক্যাম্পাস হতে বাসার ড্রয়িং রুমে গড়ালেও সম্পর্কের এই চিকণ পার্থক্যটা কিভাবে যেন স্থায়ী হয়ে যায়। তাই, মিশুকে সে আজো ‘তুমি’ বলেই সম্বোধন করে। কিভাবে কিভাবে যেন, জয়ীতা ছাড়া ক্লাসের আর কোন মেয়েকেই সে এখনো ‘তুই’ বলেনি, তাদের সবার সাথে সম্পর্কটা ‘তুমি’তেই স্থায়ী হয়ে গেছে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভাল হয়েছে। শুভ ব্লগিং।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪২

মাহের ইসলাম বলেছেন: উৎসাহিত বোধ করছি।
ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৫

ওমেরা বলেছেন: সুন্দর হয়েছে। স্বাগতম ব্লগে । আরো বেশী বেশী লিখুন।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার উৎসাহিত করার জন্যে ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:

সুন্দর সাবলীল গল্প। নাহিদ একটু বেশি লাজুল ছিল..... !:#P

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
নাহিদ বেচারা আরেকটু সপ্রতিভ হলে ভালো হত।

শুভ কামনা রইল।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: মিষ্টি গল্প, ভাল লেগেছে।
গল্পের চরিত্রগুলোর মাঝ দিয়ে গল্পকারের চরিত্রেরও কিছুটা আভাস পাওয়া যায়।
গল্পে ভাল লাগা + +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.