নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলোর হতাশায়

১১ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:২৯


মন খারাপ হলে জয়ীতা কেন জানি খুব অসহায় বোধ করে; গম্ভীর হয়ে যায়। কারো সাথে কথা বলতে পর্যন্ত ইচ্ছে করে না। একবার মনে হয় চুপচাপ একাকী কিছুটা সময় কাটালে হয়তবা মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু হয় না। আগে এমন হলে সে বই খুলে বসে যেত – কিন্তু এখন আর বই পড়ার ধৈর্য থাকে না। পড়তে বসলেই রাজ্যের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়, পড়ায়ও মনোযোগ থাকে না। তাই, বই পড়ার আনন্দ এখন আর নেই।

তবুও একটা বই নিয়ে বসে আছে সে; কয়েকদিন আগে বই মেলা থেকে কিনেছে। আগের মতোই বই মেলায় গিয়ে বই কেনার অভ্যেস রয়ে গেছে, যদিও পড়া হয়ে উঠে না; তবুও বই মেলায় ঘুরোঘুরি করে বেশ কিছু বই কিনে এনেছে এবার। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে যথারীতি মাথায় দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা- ভাবনা ভর করে। বই বন্ধ রেখে চোখ বন্ধ করে, কিছুক্ষন ভাবার চেস্টা করছে – কি এমন হয়েছে আজ, যে সে এত হতাশ ফিল করছে!

আজ সকাল থেকেই তার মন খারাপ – ভীষণ রকমের মন খারাপ। অথচ, এত মন খারাপ করার মত বড় কিছু ঘটেনি। অন্য আর দশটা সাধারন দিনের মতোই ছিল আজকের দিনটা। তবে এক্কেবারে, একই রকম না; কিছুটা ভিন্নতা আছে। সকালটাই শুরু হয়েছে, বুয়া না আসার দুঃসংবাদ দিয়ে – যা ছিলো মন খারাপ করার দেশলাইয়ের কাঠির আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো। যেখান থেকে একে একে নাস্তা তৈরির ভোগান্তি, এরপর দুপুরে দীপনের সাথে খুবই তুচ্ছ একটা ব্যাপারে ঝগড়া এবং সবশেষে বেশ ঝাঁঝালো তর্কাতর্কি।

কিছুক্ষন ধরে নিজেই নিজের আচরণ সমালোচনার দৃস্টিতে দেখার চেষ্টা করছে, সে এখন। কোথায় সে ভুল করেছে, কেন আজকের দিনটি এমন বাজে ভাবে কাটাতে হচ্ছে? অথচ, সপ্তাহে এই একটা ছুটির দিনের অপেক্ষায়ই সে থাকে; অন্যদিনগুলি কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠেই দুজন দু’দিকে ছুটে বের হয়ে যায়। এই যাওয়া ঠিক জীবিকার সন্ধানে বলা যাবে না, একজনের আয়েই তাদের বেশ চলতে পারার কথা। তবু, দুজনই জব করে – কিছুটা ইগো এর মধ্যে জড়িয়ে আছে, সেটা নিশ্চিত। আর বাকিটা কি সচ্ছলতা নাকি বিলাসিতার প্রয়োজনে, সেটা এখনো জয়ীতার কাছে অতটা পরিষ্কার নয়। অনেক দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সে আর চাকরিটা করবে না; কিন্তু তার বাবার কথা ভেবে ছাড়তে পারেনি। এই চাকরিটা ছাড়লে দীপন যতটা না খুশি হবে, তার থেকে অনেক অনেক গুন বেশি কস্ট পাবে তার বাবা। বাবাকে সে কষ্ট দিতে চায় না বলেই এখনো চাকরিতে ঝুলে আছে, ছাড়তে পারছে না। অবশ্য ঝুলে আছে বলাটা অন্যায় হবে, একজন মহিলা হিসেবে সে যথেষ্ট সুনামের সাথেই কাজ দায়িত্ব সামলে যাচ্ছে। বাস্তব চিত্রটা এমনই যে, অনেক পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় সে দ্রুত প্রমোশন পেয়েছে, তার নিজের কর্মদক্ষতায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই কিছু কিছু প্রতিকুলতা জয় করেই।

এভাবেই দিন যাচ্ছে দু’জনের। সকালের পরে সারাদিনে দেখা নেই- শুধু মোবাইলে প্রয়োজনে কিছু কথা হয়। দিনের শেষে বাসায় ফিরে যখন দেখা হয় তখন আবার দুই রকমের ব্যস্ততা – একজন টিভি নিয়ে বসে আর জয়ীতাকে ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। অবশ্য রান্নাঘরে সে স্বেচ্ছায়ই যায়, অনেকটা দীপনের প্রতি ভালবাসার টানে। দীপনের জন্যে রান্না করতে তার ভাল লাগে, বিশেষ করে তাজা মাছের ভাজা দীপনের খুব পছন্দ। জয়ীতা তার শাশুড়ির কাছ থেকে এই রান্নাটা শিখে নিয়েছে। এখন, সে চেষ্টা করে অন্তত সপ্তাহে একদিন দীপনকে মাছ ভেজে খাওয়ানোর। তাই, ছুটির দ্দিনগুলোর জন্যে সে রীতিমতো অপেক্ষা করে। কখন একটা ছুটির দিন আসবে, আর তারা দুজনে কিছুটা সময় নিজেদের মত করে কাটাবে।

অথচ, একটা ছুটির দিন পেয়েও আজ সে একা, মন খারাপ করে বসে আছে। হাতে বই, মাথায় রাজ্যের চিন্তা; আর, দীপন রাগ করে কোথায় যেন গিয়েছে সেই সকালে, এখনো ফিরেনি। ডিপ ফ্রিজ থেকে সেই কোন সকালে মাছ বের করে ভিজিয়ে রেখেছে, অথচ হাত দেয়া হয়নি। আজ বোধহয় আর মাছগুলো ভাজা হবে না, আবার ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু জয়ীতার একটুও ইচ্ছে করছে না উঠে বাল্বগুলো জ্বালিয়ে দিতে। থাকুক না অন্ধকার, এত আলো দিয়ে কি হবে? নিজের এই বিষণ্ণ চেহারা দেখা ছাড়া একা একা আর কিই বা করবে সে আলো দিয়ে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.