নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশ বড় না জাতি ?

১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:২৬




কোন দেশের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই যদি ঐ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের সহায়তা করে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরেই যদি আবার তারাই তাদের নির্দিষ্ট ভুখন্ডের জন্যে নিজস্ব আইন পরিষদসহ স্বায়ত্তশাসন দাবী করে বসে – তাহলে ঐ জনগোষ্ঠীর প্রতি নব্য স্বাধীন রাস্ট্রের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

প্রশ্ন জটিল না সহজ সেই ঘোরপ্যাঁচে না জড়িয়ে বিষয়টি আরেকটু সহজ করে দিতে পারি। এই প্রশ্নের প্রেক্ষাপট কিন্তু আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এবং সময়কাল ১৯৭১ – ৭২ সাল।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটা ক্ষুদ্র অংশ যখন বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছিল, তখন তাদের একটা বড় অংশ পাকিস্তানী বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তা করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। “উপজাতীয় যুবকদের কিছু সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও অধিকাংশই পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক গঠিত ‘সিভিল আর্মড ফোর্স’ বা ‘সিএএফ’(রাজাকার বাহিনী হিসেবে পরিচিত) এ যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় অংশ নেয়।” (ইব্রাহিম, ২০১১, p. ৭৭)

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য অঞ্চলে তিনজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলন; এরা হলেন, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এম এন লারমা কোন পক্ষাবলম্বন করেন নি। কিন্তু অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। অপরদিকে, তৎকালীন তিন সার্কেল চীফ বা প্রথাগত রাজাদের মধ্যে একমাত্র মং সার্কেলের রাজা মংপ্রু সাইন তাঁর সবকিছু বিলিয়ে দিয়েই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখেন। বোমাং রাজা এবং চাকমা রাজা দুজনই পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন।

বস্তুত, তৎকালীন রাজাকার বাহিনীতে তুলনামুলকভাবে চাকমাদের সংখ্যাই ছিল বেশী। এর মূল কারণ, চাকমাদের রাজার পাকিস্তানপন্থী সক্রিয় ভুমিকা। তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সার্কেলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যে প্রচারনার পাশাপাশি গ্রামের হেডম্যান ও কারবারীদের নির্দেশ প্রদান করেন লোকদেরকে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করানোর জন্যে। অবশ্য বেতন ও অস্ত্রের লোভেও অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। পাহাড়ি যুবকেরা বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পাকিস্তানী ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র চালনা, ওয়্যারলেস সেট চালনা ইত্যাদির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পাহাড়ি রাজাকারের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কি পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা আরেকদিনের জন্যে তুলে রাখা হলো।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ২৯ জানুয়ারিতে রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগ নেতা চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যখন উপজাতিদের জন্যে পৃথক সাংবিধানিক রক্ষাকবচের দাবী জানান, তখন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশ্বাস দিয়েছিলেন যে,

- সরকারী চাকরীতে উপজাতীয়দের ন্যায্য অংশ প্রধান করা হবে।
- উপজাতীয়দের ঐতিহ্য ও কৃস্টি পুরোপুরিভাবে সংরক্ষন করা হবে।
- উপজাতীয়রা তাদের ভূমির অধিকার পূর্বের মতই ভোগ করতে থাকবেন। (ইব্রাহিম, ২০১১)

এর কিছুদিন পরেই, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মংপ্রু সাইন এর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল চার দফা দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। অন্যান্যদের মধ্যে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, এম এন লারমা এবং ত্রিদিব রায়ের মাতা বিনীতা রায়। ‘বাংলাদেশের ভাবি সংবিধানে উপজাতীয়দের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষনের জন্যে’ এই প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করে, যে স্মারকলিপির শেষান্তে উল্লেখ করা হয়ঃ
১। পার্বত্য অঞ্চল একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে এবং এর নিজস্ব আইন পরিষদ থাকবে।
২। উপজাতীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষনের জন্য ‘১৯০০ সালের পার্বত্য চট্রগ্রাম শাসনবিধি’র ন্যায় অনুরূপ সংবিধি ব্যবস্থা (Sanctuary Provision) শাসনতন্ত্রে থাকবে।
৩। উপজাতীয় রাজাদের দফত্র সংরক্ষণ করা হবে।
৪। পার্বত্য চট্রগ্রামের জনগণের মতামত যাচাই ব্যতিরেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিষয় নিয়ে কোনো শাসনতান্ত্রিক সংশোধন বা পরিবর্তন যেন না হয়, এরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকবে। (খীসা, ১৯৯৬)

নব্য স্বাধীনতালব্ধ একটি দেশে কত ধরনের সমস্যা থাকতে পারে, তা জানতে আমাদের বেশী দূর যেতে হবে না। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ের দিকে খেয়াল করলেই বরং বুঝতে সহজ হবে।

এই রকম একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সমস্যা-সঙ্কুল দেশের প্রেক্ষাপটে, প্রারম্ভের প্রশ্নটি নিয়ে ভেবে দেখতে পারেন।
কি করা উচিত ছিলো?
কি করা হয়েছিল?
এখনো কি কি করা হচ্ছে ?

একই সাথে, সেটা ও ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো, এই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী পরবর্তীতে কীভাবে এই দেশের প্রতি তার প্রতিদান দিয়েছিল?

শুধু উত্তরের ক্লু হিসেবে, নিচের তথ্যগুলো খেয়াল করতে পারেনঃ

১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি শান্তি বাহিনী গঠিত হলেও, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকেই (মোর্তোজা, ২০০০ ) । ১৯৭৩ – ১৯৭৪ সালে শান্তিবাহিনীর রিক্রুটিং এর সময় হাজার হাজার উপজাতীয় যুবক শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৭৬ সালে শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।

অনন্যোপায় হয়ে, বাংলাদেশের সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্বত্য চট্ট্রগ্রামে দেশের অন্য স্থান হতে সেনাবিহিনী আনতে শুরু করে। (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 165)

যারা বাঙ্গালীদের কে পাহাড়ের সমস্যার মূল কারণ বলে মনে করেন, তাদের হয়তো জানা নেই যে, সরকারী ভাবে বাঙ্গালীদের পুনর্বাসন শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 148)। স্মরণযোগ্য, শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার তিন বছর পরে।

শুরুর প্রশ্নের সাথে শেষের তথ্যগুলোর কার্যকারণ খুঁজতে গেলে, প্রশ্ন এসে যায় – দেশ বড় না জাতি? প্রকৃতপক্ষে, পাহাড়ের কিছু নেতৃবৃন্দের ভুমিকাই এমন প্রশ্ন উত্থাপনের মূল কারণ। ঐতিহাসিক বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যায় যে, দেশের পরিবর্তে জাতির স্বার্থ দেখতে গিয়ে এই নেতারা তাদের জাতির সাধারণ মানুষের জন্যে বয়ে এনেছেন দুর্ভোগ। যদিও তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে খারাপ কিছু ছিল না, কিন্তু তাদের অদূরদর্শীতা সমগ্র জাতির জন্যে বঞ্চনা আর দুর্দশা নিশ্চিত করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি এই যে, এখনকার নেতৃবৃন্দগণও কেন জানি তাদের পূর্বপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে বদ্ধ পরিকর – যেখানে আবার আমাদের দেশেরই কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী যোগ দিয়েছেন।

তথ্যসূত্রঃ
ইব্রাহিম, ম. জ. (২০১১). পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ- পরিস্থিতির মূল্যায়ন. ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স।
খীসা, প. (১৯৯৬). পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা. ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ।
মোর্তোজা, গ. (২০০০ ). শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন. ঢাকা: সময় প্রকাশন।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩৯

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: দেশ এবং জাতি একে অপরের অপরিহার্য। কেউ কাউকে বাদ দিয়ে নয়। লেখায় খন্ডায়িত যুক্তিগুলি ভালো লেগেছে।

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

মাহের ইসলাম বলেছেন:
ধন্যবাদ।
উৎসাহ পেলাম।

২| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৫২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: জিয়াউর রহমান ওখানে থাকার জন্য বাঙালীদের না পাঠালে এতদিনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আলাদা হয়ে যেত...

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আপনার কথায় যুক্তি আছে।
বাস্তবে, কিছু পাহাড়ী নেতার হঠকারীতায় বাংগালীদেরকে পাহাড়ে পুনর্বাসন করতে তৎকালীন সরকার বাধ্য হয়েছিল।
সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

৩| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৫৩

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন থেকেই পাহাড়ীদের ভূমিকা ছিলো বিতর্কিত। শান্তিবাহিনীরা গেরিলা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। প্রাণহানি ঘটায়। কিন্তু ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা যেমন পার পেয়ে গিয়েছিলো, শান্তি চুক্তির পর তারাও একইভাবে পার পেয়ে গেলো। বাংলাদেশীদের হত্যা করার পর পার পেয়ে যাওয়া মনে হয় খুব সহজ কাজ।

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আপনার পুরো মন্তব্যের সাথে একমত, শুধু শেষ লাইন বাদে।
বাংলাদেশীদের হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়া সহজ নয়। স্বাধীনতার চার দশক পরে রাজাকারের শাস্তিই তার প্রমাণ।

আসলে, সরকার যথেষ্ট ধৈর্যের সাথে পাহাড়িদের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে আন্তরিক চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর উদারতা এবং সরকারের আন্তরিকতার যথাযথ মর্যাদা দেয়ার জন্যে পাহাড়িদেরও চেস্টা থাকা প্রয়োজন।

৪| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ২:২১

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আমি চাকমাদের গ্রামে থেকেছি। কত কি খাওয়ালো?
ওরাতো খুব অমায়িক!!!B:-)


বরং বাঙালীরাই(পাতি নেতা) জায়গা নিয়ে ঝামেলা করে।

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

মাহের ইসলাম বলেছেন:
সহমত।

বাস্তবে, অধিকাংশ পাহাড়ী সরল হৃদয়ের এবং শান্তি প্রিয়।
অল্প কিছু বাঙ্গালী নেতা যেমন নষ্টের গোড়া, পাহাড়ীদের ভিতরেও তেমনি কিছু মানুষ আছে। যারা পাহাড়ীদের ভুল বুঝিয়ে এসেছে দীর্ঘদিন।

৫| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ৩:১৫

পিকো মাইন্ড বলেছেন: ভাল লিখেছেন

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

মাহের ইসলাম বলেছেন:
সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ‘শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। গোলায় কোনও খাদ্য ছিল না,রাস্তাঘাট কিছুই ছিল না। সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি নানা পদক্ষেপ নেন।
এখন প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সময়োপযোগী বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাম্পেইন।
বাংলা-
দেশ কারো পৈএিক সম্পওি নয়। যদি এমনটি মনে করে তাহলে সেই টা হবে চরম ভুল সিদ্ধান্ত। ইতিহাস থেকে সবার শিক্ষা নেয়া একান্ত আবশ্যক। কারন ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

১৪ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

মাহের ইসলাম বলেছেন:
একমত।
ইতিহাস কাউকে কখনই ক্ষমা করেনি।

বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর উদারতা এবং সরকারের আন্তরিকতাকে অবজ্ঞা করা বড় ভুল হবে।
বরং নিজস্ব সবাতন্ত্র বজায় রেখেই দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সাথে মিলে মিশে বসবাস করার চেষ্টা থাকতে হবে।
সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

৭| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪০

ching বলেছেন: কেন বোমাং রাজা এবং চাকমা রাজা দুজনই পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন?

১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৮

মাহের ইসলাম বলেছেন:
তাদের পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনের কারণ নিয়ে মতভিন্নতা আছে।

বোমাং সার্কেলের রাজা মুসলিম লীগের টিকেটে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। তার পরিবারের লোকজন ও পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন।

একটা ধারনা প্রচলনের চেস্টা আছে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে পার্বত্য চট্রগ্রামে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপকতা ছিল না। তাই, মুক্তিজুদ্ধের প্রারম্ভকালীন সময়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বন কে ‘ভাবাবেগের রাজনীতি’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকতে পারেন।

ধারনা করা যেতে পারে যে, পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন সদস্য পাকিস্তানের অখন্ডতার বিষয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক পরিপক্কতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার মত যথেষ্ট অনুপ্রাণিত বোধ করা বা প্রয়োজন মনে করেনি।
অনেকে এও বলে থাকেন যে, পাকিস্তান সরকার তাদেরকে লোভ বা ভয়ভীতিও দেখিয়ে থাকতে পারেন।

তবে, চাকমা রাজার হিসেব কিছুটা ভিন্ন।
(এই অংশের জন্যে আমি প্রিয়জিৎ দেবসরকার এর অনুসন্ধানী বই ‘দ্য লাষ্ট রাজা অব ওয়েস্ট পাকিস্তান’এর সাহায্য নিচ্ছি।)

"রাজা ত্রিদিব রায় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ত্রিদিব রায়-এর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব এবং স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন।"

ভারতীয় কংগ্রেসের নীতি ছিল এই যে, স্বাধীন ভারতে কোন ধরনের স্থানীয় রাজা-রাজকুমার বা রাজকীয় ক্ষুদ্র রাজ্য তারা বরদাশত করবে না । তাই, মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করলে তৎকালীন চাকমা রাজা নালিনক্সা রায় খুশিই হয়েছিলেন।

রাজা ত্রিদিব রায়ও মনে করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করবে। এজন্যে শুরু থেকেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক আমলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর, পূর্ব পাকিস্তানের উদীয়মান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকে তিনি কম গুরুত্ব দেন।

এজন্যেই, ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে শেখ মুজিব তাকে আওয়ামী লীগ-এর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবার অনুরোধ জানালেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হননি। এমনকি, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবের ব্যাপক বিজয়-এর পরেও তিনি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করেন নি। বরং, ভেবেছিলেন ইয়াহিয়া খান হয়তো নির্বাচনের ফলাফলকে কোন না কোন ভাবে নাকচ করে দিতে পারবেন।

আরো একটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে, “উনি যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদেরকে অনেক উন্নত মানের বাহিনী মনে করতেন, তিনি ভেবেছিলেন যে তাদের বিরুদ্ধে বিদেশী কোন হুমকি কাজ করবে না এবং তারা সব কিছু সামলে নিতে পারবে,”।

৮| ১৪ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩০

ching বলেছেন: মং সার্কেলের রাজা মংপ্রু সাইন তাঁর সবকিছু বিলিয়ে দিয়েই আজ অবহেলিত , বৈষম্য। এই হল প্রতিদান

১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:১৭

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আমি মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধে মং সার্কেলের রাজার নিঃস্বার্থ আত্নত্যাগ এবং যাবতীয় অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ।

শুনেছিলাম, কিছুদিন আগে খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে উনার নামে একটি ছাত্র বৃত্তির প্রকল্প চালু হয়ছে। যদিও আমার দৃস্টিতে এই উদ্যোগ নিতান্তই ক্ষুদ্র, তবুও শুরুর প্রচেষ্টা হিসেবে এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়।

এ ধরণের আরো উদ্যোগ নিয়ে মং সার্কেলের রাজা এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে এমন সকল পাহাড়ীর জন্যে স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৯| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:০৫

অনল চৌধুরী বলেছেন: আমি চাকমাদের গ্রামে থেকেছি। কত কি খাওয়ালো?
ওরাতো খুব অমায়িক!!!



বরং বাঙালীরাই(পাতি নেতা) জায়গা নিয়ে ঝামেলা করে।- সামান্য কিছু সন্ত্রাসী ছাড়া সংখাগরিষ্ঠ পার্বত্য উপজাতীরা সৎ।তারা কঠোর পরিশ্রম করে,কিন্ত চুরি করে না।তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে বাংলাদেশে অভাব-দারিদ্র-দুর্নীতি বলে কিছু থাকতো না।
সেনাবাহিনী না থাকলে বহু আগে ওই এলাকা আলাদা হয়ে যেতো।এখনো সেনাবাহিনী সেখানকার সব উন্নয়ণ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।এদর কারণেই সন্ত১র সন্ত্রাসীরা অবাধে সব অপকর্ম করতে পারছে না।তাই সেনা প্রত্যাহার চায়।
শান্তিবাহিনী নির্মূল না করা পর্যন্ত পার্বত্য এলাকায় হত্যা,চাদাবাজি অঅর নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০২

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগল।
আমি আপনার কথার সাথে ১০০% একমত।
কিন্তু, দেশের সাধারণ মানুষের খুব অংশই পার্বত্য চট্রগ্রামের এই বাস্তবতা জানে না।

১০| ২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৪৬

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ৫০০ বছর আগের মতো এখনো জানেনা যে তারাই এদেশের মালিক।তারা মনে করে,তারা প্রজা মাত্র।অার রাজা নেতা-নেত্রীরা।

২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৩০

মাহের ইসলাম বলেছেন:
এর পিছনে কি আমাদের শিক্ষা আর সংস্কৃতির অবদান আছে না ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.