নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি আমার গাড়ী বাচাইছি।

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:১১



জুন ২০১৭ এর কোনো একদিন।
রাঙ্গামাটির স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিধ্বসের কিছুদিন পরের কথা।

খাবার বিতরন চলছে, রাঙ্গামাটির উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
পাশেই কয়েকটা প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা। সেই চেয়ারগুলোতে শুয়ে এক শিশু একমনে ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের খেলনা গাড়ী চালাতে ব্যস্ত। যে কেউ খেয়াল করলেই উপলব্ধি করতে মোটেও দেরী হবে না যে, আশে পাশের মানুষ বা খাবারের আয়োজনের দিকে তার মোটেও নজর নেই। তার সমস্ত মনোযোগ জুড়ে রয়েছে ছোট্ট এক প্লাস্টিকের খেলনা গাড়ী।

শিশুটির একাগ্রতা নজরে পড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের এক ভলান্টিয়ার্স, শাফিনের।
ইউল্যাবে পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় থাকলেও শাফিনের বাড়ী রাঙামাটিতে। আত্নীয়-স্বজন, শৈশবের লেখাপড়া, বন্ধু-বান্ধব সব কিছু রাঙ্গামাটি কেন্দ্রিক। তাই রোজার বন্ধে সে রাঙামাটিতে নিজের পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের সাথেই দিন কাটাতে এসেছিল। পরে ভুমিধ্বসের ভয়াবহতায়, তার মতো আরো অনেকের সাথেই যোগ দিয়েছে ভলান্টিয়ার্স হিসেবে, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।

আরো কিছুক্ষণ দেখার পরে, ধীর পায়ে শাফিন তার কাছে এগিয়ে যায়।
নিঃশব্দে পাশে বসে পড়ে।
মনোযোগ দিয়ে খেলায় ব্যস্ত থাকলেও শিশুটি কিছুক্ষণের মধ্যেই শাফিনের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। কিন্তু কোন ভাবান্তর নেই। আগের মতোই প্লাস্টিকের চেয়ারে উপুড় হয়ে শুয়ে গাড়ী চালাতে থাকে।

একটু সময় নিয়ে শাফিন তার সাথে আলাপচারিতা শুরু করলো।
নাম, বাবার নাম, বাড়ী কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এক পর্যায়ে জানতে চাইল,
- “এই গাড়িটা কার ?”
- “এইটা আমার গাড়ী।” শিশুটি উত্তর দেয়, প্রশ্নকর্তার দিকে না ফিরেই।
- “তুমি এখানে কেন, তোমাদের বাড়িঘরের কি হইছে?”
- “আমার ঘর ভাইঙ্গা গেছে। স-অব কিছু নষ্ট হইয়া গেছে, আমার ঘরের। কিন্তু আমি আমার গাড়ী বাচাইছি।” যেন শিশুটি কোন এক দৈব বলে জানতো - অনাগত প্রশ্ন কি হতে পারে। আর তাই, প্রশ্ন করার আগেই জানিয়ে দেয় কিভাবে সে তার প্রিয় গাড়িটাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

পুরো আলাপচারিতায় শিশুটি একবারের জন্যেও শাফিনের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে না। মাথা নিচু করে, নিবিষ্ট মনে গাড়ী চালাতে চালাতেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যায়। তারপরে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার গাড়ীকে নিয়ে। যে গাড়ীটিই তার কাছে এখন সবকিছু। যার সাথে জড়িয়ে আছে ফেলে আসা ঘরবাড়ী কিংবা শৈশবের মধুর স্মৃতি। কে জানে, এমনকি পরিবারের প্রিয় কোনো সদস্যও।
কথা বাড়ানোর মতো আর কিছু খুঁজে পায় না, শাফিন।

মন ভারী হয়ে উঠে। দৃষ্টি সরিয়ে নেয় দূর পাহাড়ের অস্পষ্ট সবুজের দিকে।
হাতের কাছেই লাইনে দাঁড়ানো নারীপুরুষ কিংবা খাবার বিতরণে ব্যস্ত অন্য ভলান্টিয়ার্সদের কেউ ব্যাপারটি খেয়াল করে না। খেয়াল করার উপায়ও নেই তাদের। কিভাবেই বা তাঁরা জানবে যে, এই মাত্র এক শিশুর কাছ থেকে মমত্বের এক অবিস্মরণীয় উদাহরণ শিখেছে এই তরুণ।

ছবিঃ শাফিন মাহামুদ চৌধুরী প্রিয়।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:১৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় মাহের ভাই,

পোস্টটি ইতিপূর্বে পড়া । গল্প গল্প হলে এক রকম। জীবনের গল্প যে সাক্ষাৎ জীবনবেদ। ++
আজও ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

শুভকামনা ও ভালোবাসা জানবেন।

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে খুশী হলাম।
অনেক ধন্যবাদ।

এটা বাস্তব জীবনের গল্প, ছবিটাও বাস্তব।

ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: বর্ষা কালে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এসময়টায় পাহাড় ধ্বস বেশি হয়।
প্রতি বছর দূর্ঘটনা ঘটে। সরকার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন??

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: সরকার ব্যবস্থা নেয়। এবারও নিয়েছে।
তবে ২০১৭ সালে যা ঘটেছিল, তা অদৃষ্টপূর্ব ছিল।

শুভ কামনা রইল।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৮

করুণাধারা বলেছেন: আজকালকার তরুণরা কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে শাফিন কিছুটা ব্যতিক্রম। ওর মমত্ববোধের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হলাম। আপনাকে ধন্যবাদ গল্পটি শেয়ার করায়।

০৫ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪১

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল।

শাফিন একা নয়। তাঁর মতো আরো ৭৩ জন ভলান্টিয়ার্স রাংগামাটির ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেছে। রোজার ছুটিতে, এমনকি ঈদের দিনেও তারা প্রতিদিন কেন্দ্রের বিভিন্ন কাজ করতো। যে সমস্ত কাজ, তারা নিজেদের বাসায় করেনি, যেমন টয়লেট পরিষ্কার করা, এমন কাজও তারা করেছে।

হ্যাটস অফ টু দেম।

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫০

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: মন ছুয়ে গেছে কিছু কথা,ভূমিধসে ঐ সব ভলান্টিয়ার্সদের সালাম,যারা নিজেকে উজাড় করে সেবা দিয়েছে।

০৬ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার কথা শুনে ভালো লাগলো।
ভলান্টিয়ার্সদের প্রতি আমারও শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রয়েছে।
তাদের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:১২

আখেনাটেন বলেছেন: টুপি খোলা শুভেচ্ছা সেচ্ছাসেবীদের। আমি নিজেও জড়িত এই সকল কাজে। এগুলোর মাধ্যমে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার তুলনা বলে প্রকাশ করা যাবে না।

বিশেষ করে অসহায় মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকালে নিজের জন্যই করুণা হয়। কত ভাবে যে মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে ভাবায় যায় না।

১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো।
সত্যি বলতে কি, সেই সব তরুণতরুণীদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার তুলনায় আমার এই লেখা অতি নগণ্য একটা চেষ্টা মাত্র।
তাদের এবং আপনাদের মতো সকল ভলান্টিয়ার্সদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.