নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়তে ভালবাসি

প্রফেসর মরিয়ার্টি

পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ..

প্রফেসর মরিয়ার্টি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তার সুইপার বনাম তথাকথিত সুশীল সমাজ

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৩

শীতের দিনে সাধারণত বাতাসে ধূলা-বালি বেশি উড়ে। আর আমাদের দেশে রাস্তা মানেতো ডাস্টবিনেরই অপর নাম। কিছুদিন আগে অফিসে যাওয়ার পথে দেখলাম কয়েকজন সুইপার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাস্তার ধূলা-বালি ও ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশ দিয়ে দশ-বারো হাত দূরে দূরে স্তুপাকারে জমা করছে। এতদিন ময়লাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে তেমন বুঝা যেতনা, এখন তা অনেক দৃষ্টিকটু লাগছে। মনে মনে ভাবলাম, যাক এবার মনে হয় রাস্তা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। তারপর প্রায় একমাস হতে চলল, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ময়লা সরাবার কোনো উদ্যোগ গ্রহণের নাম-গন্ধ দেখা গেলনা। আস্তে আস্তে ময়লার স্তুপ আবার রাস্তায় ছড়িয়ে গেল।
আজ সকালে আবার দেখলাম রাস্তায় ময়লা জমা করা হচ্ছে। কৌতুহলবশত আমি এক সুইপারের দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা, কয়েক দিন আগেওতো দেখলাম, আপনারা রাস্তায় ময়লা জমাচ্ছেন, কিন্তু তাতো পরিস্কার করেননি।”
উত্তরে সে বলল, “আমাদের কাজ শুধু রাস্তার ময়লা একসাথে জমা করা।”
- তাহলে শুধু শুধু জমা করে লাভ কি?
- পরিস্কার করার জন্য অন্য লোক আছে। তারা তাদের কাজ না করলে আমরা কি করব? আর পরিস্কার না করলেতো আমাদেরই লাভ। কয়েকদিন পর পর ময়লা জমা করার জন্য কাজ করে কিছু টাকা পাব।

এভাবেই রাস্তার সুইপার তার নিজের কাজ করে যেতে থাকে, আর রাস্তায় ময়লার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে।

আমাদের দেশের টক-শোর বক্তা কিংবা তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন চ্যানেলের টক-শো, পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সমস্যা নিয়ে বড় বড় বাণী দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার বিদেশে থেকে দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হা-হুতাশ করেন। এতে করে রাস্তায় স্তুপাকারে জমাকৃত ময়লার মত আমাদের দেশের সমস্যাগুলো আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। কিন্তু তারা এইসব সমস্যা্র কোনো সমাধান দিতে পারেননা অথবা সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য কোনো পরিবর্তনের ডাকও দিতে পারেননা। আবার কেউ পরিবর্তন করতে চাইলে, তাকে সাপোর্টও করেননা। তাদের কাজ শুধু সমস্যা চিহ্নিত করা, সমাধান হোক বা না হোক।

বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী সুশীলদের কথা মনে হলেই আমার মুখে থুথু জমে উঠে। এইসব সুশীলরা একসময় বাংলাদেশেই খেয়ে-পড়ে বড় হয়েছেন, তারপর একদিন স্কলারশীপ কিংবা কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী পেয়ে বাইরে চলে গেছেন। এখন যদি তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়- “আপনিতো দেশের সমস্যা নিয়ে অনেক ভাবেন এবং তা দূর করার জন্য অনেক জ্ঞানমূলক উপদেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি দেশে ফিরে নিজে চেষ্টা করতেছেন না কেন?”
তাদের উত্তরগুলা হয় সাধারণত এরকম-
- আসলে দেশে কর্মসংস্থানের ভাল ব্যবস্থা নাই। এখন বাইরের মোটা অংকের বেতনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে দেশে আসলে আমি অত টাকা রোজগার করতে পারবনা। তখন আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।(নিজের বেতনের দিকে যখন এতই নজর, তাহলে দেশ নিয়ে শুধু শুধু লাফালাফি করার কি দরকার!)
- আমার সন্তানেরা এখন পড়ালেখা করছে। বাংলাদেশে এসে তারা এইসব নোংরা পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারবেনা। তাদেরকেতো আমি জেনেশুনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারি না।(আরে শালার ভাই, তুই কি এই দেশ থেকে পড়ালেখা করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারিসনি?)

এইসব বিদেশে বসবাসরত সুশীলরা হচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার লস্কর বাড়ির ছেলে-মেয়েদের মত, যারা একা একা অপরকে দেখিয়ে লেবেঞ্চুষ চুষে আর নিজের সুখের কথা ভেবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। এইসব সুশীলরা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিতে দিতে চায়- ‘দেখ, তোমরা বাংলাদেশে কত সমস্যায় আছ। আমি বাইরে চলে এসে বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।’

মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয়, তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চান না যে, দেশের সমস্যাগুলি সমাধান হয়ে যাক। যদি সবকিছুই ইতিবাচিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাহলে টক-শো গরম করার মত কিংবা পত্রিকায় টক-ঝাল-মিষ্টি কলাম লেখার মত কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবে কলাম লেখা কিংবা রাতের টক-শো বন্ধ হয়ে গেলে অনেকের মধ্যরাতের টু-পাইস কামানোর ধান্দাও শেষ হয়ে যাবে।

যাই হোক, রাস্তায় ময়লা জমা কিংবা দেশের সমস্যা চলতে থাকুক, অন্তত কিছু লোক খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকুক।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৭

ডিজ৪০৩ বলেছেন: স্যার অনেক ভাল লাগলো, এটাই বাস্তবতা সুশীলদের । কারন তারা বিদেশীদের টাকায় খেয়ে দেশের মানুষদের উপদেশ দিয়ে থাকে। এতই যদি ভালবাসা তাহলে সমস্যার মধ্য থেকে সমাধান করলে খুশী হতাম । তারা কখনও দেশের জন্য নয় , সবসময় নিজেদের জন্য ভাবেন ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: আসলে জনগণকে নিজেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। এই সব সুশীলরা শুধুই দেশের শো-পিস।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৭

প্রেতরাজ বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন।যদি এই সব কিছু পরিবর্তিত হয়ে যায় তাহলে তাদের টক ঝাল কমে যাবে।ওদেরকে সুশীল না বলে চুশীল বলা উচিৎ বলা দরকার।।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: ওদেরকে সুশীল না বলে চুশীল বলা উচিৎ বলা দরকার।।


গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেট্রোল বোমায় যতজন নিহত বা আহত হয়েছে, তারা কেউই এই তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নয়।

শেষ পর্যন্ত দেশের সমস্যার জন্য জনগণকেই চরম মুল্য পরিশোধ করতে হয়। আবার দেশের উন্নয়নের মূল কারিগরও জনগণই।
তাই এই সব সুশীলদের প্রেসক্রিপশন না শুনে, আমরা আমাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা সঠিকভাবে পালন করলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


যাকে তাকে সুশীল বলবেন না; আমাদের স্কুলের শিক্ষরাই আমাদের সুশীল; বাকীরা দুস্ট

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৭

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: আপনার সাথে আমি একমত। এ কারণেই তাদেরকে আমি "তথাকথিত সুশীল" বলেছি।

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয়, তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চান না যে, দেশের সমস্যাগুলি সমাধান হয়ে যাক। যদি সবকিছুই ইতিবাচিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাহলে টক-শো গরম করার মত কিংবা পত্রিকায় টক-ঝাল-মিষ্টি কলাম লেখার মত কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবে কলাম লেখা কিংবা রাতের টক-শো বন্ধ হয়ে গেলে অনেকের মধ্যরাতের টু-পাইস কামানোর ধান্দাও শেষ হয়ে যাবে।


কঠিন সত্য কথা বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.