নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাকসুদ আলম মিলন

মাকসুদ আলম মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

#মি_টু আন্দোলন এবং “দেবী”

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৪




সম্প্রতি #মি_টু আন্দোলনের ঝড় বইছে ভারতে। অভিনয় শিল্পী এবং সাংবাদিকদের যৌন হেনেস্তার বোমা ফাটানো মন্তব্যে রীতিমতো তুলপাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,অনলাইন প্রোটাল এবং মিডিয়া হাউজ গুলোতে। অভিযোগ উঠেছে গুনী পরিচালক,অভিনেতা,শিল্পী এমনকি ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিরূদ্ধেও। আন্দোলনের স্রোত শূধু অভিযোগে থেমে নেই যৌন হেনস্তার অভিযোগে ভারতে প্রথম মন্ত্রীত্ব হারিয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। চার পরিচালকের বিরূদ্ধে অভিযোগ উঠায় চারটি সিনেমার স্যুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। এই চার পরিচালকের মধ্যে আছে ‘হাউজফুল ফোর’ সিনেমার পরিচালক সাজিদ খান এবং এই ছবিতে অভিযুক্ত গুনী অভিনেতা নানা পাটেকরের স্থূলসিক্ত করা হয়েছে অনিল কাপুরকে,‘সুপার থার্টির’ পরিচালক বিকাস বহেল,‘মুঘল’ সিনেমার পরিচালক সুভাষ কাপুর এবং “দে দে প্যায়ার দে” সিনেমার পরিচালক লাভ রঞ্জন। #মি_টু আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গুনী ব্যক্তিদের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখোস উন্মোচিত হচ্ছে এবং নারীরা প্রতিবাদী এবং সোচ্চার হচ্ছে।

সারাবিশ্বে হলিউডের পর সিনেমা জগতে রাজত্ব করে বলিউড। #মি_টু আন্দোলনের সূত্রপাত হলিউড পাড়া থেকেই হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়েইনস্টেনের বিরূদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ তুলেন ইটালিয়ান অভিনেত্রী আসিয়া আর্জেন্টোর আর সেখান থেকেই সূচনা #মি_টু আন্দোলন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যৌন হয়রানি,ধর্ষনের কারণ খোঁজতে গিয়ে যদি এই সিনেমা জগতের দিকেই আঙুল তোলা হয় তাহলে ব্যপারটা সর্ষের মধ্যেই ভূত মিশে থাকার আলামত সামনে আসে। বাণিজ্যিক ভিত্তিক হলিউড,বলিউড,টালিউড এমনকি বাংলা সিনেমা ইন্ড্রান্টি ঢালিউড সিনেমা গুলোতে যৌনবস্তু হিসেবে নারীকে উপস্থাপন,পুরুষের পেশী এবং অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখিয়ে সিনেমা নির্মাণকারীরা লগ্নি টাকা দর্শকের কাছ থেকে ফেরত আনতে উঠেপরে লাগে। আর এভঅবেই পাঠার বলি হচ্ছে নারীরা।

সিনেমাকে সমাজের আয়না বলা হয়। হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস অবলম্বনে অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় দেবী সিনেমাটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এবং বেশ প্রশংসাও কুড়াচ্ছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় রানু চরিত্রে জয়া আহসান,মিসির আলী চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী এবং নীলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া এদের অভিনয় দক্ষতায় দেবীর বাস্তবিক রূপ দেখেছে দর্শকরা। সিনিমাতে দেখানো হয়েছে, কিশোরী বয়সে রানুকে ধর্ষন করতে গ্রামের জামাল উদ্দিন নামের এক লোক মন্দিরে নিয়ে যায় সেখান থেকে রানুর হয়ে প্রতিরোধ করে মন্দিরে থাকা দেবী মূর্তি। সেই থেকে রানুর উপর ভর করে দেবী মূর্তি এবং সে ভবিষৎ বলে দিতে পারে। রানুর বিয়ের পর অদ্ভুত এবং উদ্ভট আচরনে তার স্বামী আনিস বিখ্যাত চিন্তাবিদ,যুক্তিবিদ,গোয়েন্দা মিসির আলীর সরনাপন্ন হন। একদিকে মিসির আলী তার তীক্ষ্ন যুক্তি বিশ্লেষন করে প্রমাণ করতে চান দেবী কিংবা ভূত বলে কিছু নেই সব হ্যালোসিনেশন অন্যদিকে রানু দেখাতে চান তার উপর যে দেবী ভর করেছে সেটাই ঠিক এবং পরিশেষে নীলু,রানুর মতো যৌন হেনেস্তার স্বীকার হওয়ার উপক্রম হয় সেখান থেকে রানুর উপর ভর করা দেবী স্থূলসিক্ত হয়ে নীলুকে রক্ষা করে। ফলে মিসির আলীর যুক্তি আর টিকে না। বলে রাখা ভালো, সিনেমার শেষে প্রধাণ চরিত্রকে আত্নহুতি দিয়ে পরিচালক পার্শ্বচরিত্রকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেন।

সিনেমাটি কাল্পনিক,ভৌতিক কিংবা রহস্য ধর্মী মনে হলেও এর বাস্তব দিক হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা সর্বদা পৌরষিক ক্ষমতা জাহির করতে নারীরা বিভিন্ন ভাবে অবহেলিত নিগৃহিত যৌন হেনেস্তার স্বীকার হয়। যখন নারীরা এর বিরুদ্ধে মূখ খুলতে শুরু করে,প্রতিবাদ করতে শুরু করে তখন পুরুষদের স্বপক্ষে প্রতিষ্ঠিত আইন কায়েম করতে চায়,যুক্তির মারপ্যাচে নারীকে পেঁচিয়ে ধরে কিন্তু প্রতিবাদ করা থেমে থাকে না,অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিবাদের প্রবর্তক হিসেবে কেউ না কেউ দাড়াবেই আর এটাই বাস্তবতা। দেখা যাচ্ছে, ‘দেবী’ সিনেমার প্রেক্ষাপট এবং #মি_টু আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হুবুহু মিলে যাচ্ছে। সিনেমাটিতে নারীর ক্ষমতায়নের কথা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার,প্রতিবাদী হওয়ার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এব্ং সচেতন হওয়ার বার্তাটি দিয়েছে।

#মি_টু আন্দোলনে নারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন,প্রতিবাদ এবং সোচ্চার হচ্ছেন। নারীরা মুখ বুঝে পুরেুষের স্বৈরাচার গিলতে নারাজ,তারা এখন অনুগ্রহের,নিগৃহের পাত্র নন। আন্দোলন জোরালো হওয়াতে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন,অনেক গুলো সিনেমার কাজ বন্ধ হয়েছে। আন্দোলনের ভালোদিক হচ্ছে নারীর পাশাপাশি পুরুষকেও আন্দোলনে সামিল হতে দেখা যাচ্ছে। এই আন্দোলন শুধু ভারতের নয় সারাবিশ্বে বিস্ফোরিত হোক। এই আনেদালন পুরুষের বিরুদ্ধে নয় পুরুষ নামে হিংস্র পশুর বিরুদ্ধে। আন্দোলন চলুক পাশাপাশি নারী বিদ্বেষী আইন হোক কঠোর । যৌনবস্তু হিসেবে নারীকে সিনেমায় উপস্থাপন না করে সচেতনবোধ বৃদ্ধি করতে,চেতনা বোধ জাগ্রত করতে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যম হিসেবে “দেবী”র মতো সিনেমা হোক আরো বেশী। যেন ধর্ষণের কারণ হিসেবে সিনেমার দিকে আর আঙুল না তুলে সচেতন এবং ধর্ষণ নিধন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় সিনেমা জগত।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২২

সোহানী বলেছেন: অসাধারন রিভিউ সাথে #মি টু আন্দোলনকে যুক্ত করা যুক্তিকে স্বাগত জানাই। মি টু আন্দোলন নিয়ে অনেক আগে লিখাটি লিখলে ও তার সিরিয়াল নিয়ে লিখার ইচ্ছে কিন্তু সময়ের অভাবে লিখতে পারছি না। আপনার লিখ ভারত এর বর্তমান চিত্র তুলে ধরে এবং এ আন্দোলন এর মূল বিষয় নিয়ে লিখা দেখে ভালো লাগছেঅ কারন অনেকে এখনো জানে না এ আন্দোলন কেন হচ্ছে।

আমার লিখাটা শেয়ার করার লেঅভ সামলাতে পারলাম না।
#MeToo...মেয়ে তুমি একা নও, আমি ও আছি।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬

মাকসুদ আলম মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
নারীরা মুখ খুলুক।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭

মাকসুদ আলম মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৫

মুক্তা নীল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার এই # মি টু পোস্টের জন্য। ভারতে এই আন্দোলনে নারী,পুরুষ,সাংবাদিক,সম্পাদক,বিচারক সবাই সোচ্চার আপনাদের মতোন মানুষরা সবাই যদি এই বিষয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে কিছু সাধারণ মানুষও এই আন্দোলন যোগ দেওয়ায় সাহস পাবে। ভাই, আপনি তো জানেন আমদের দেশের অধিকাংশ নারীরা ঘরে/বাইরে নিযার্তিত। সবাই প্রতিবাদ করুক। ১৮ই অক্টোবর অনল চৌধুরী #মি টু আন্দোলন নিয়ে প্রথম লিখে ছিলেন, তখন খুব ভালো লেগেছে। আর, আজও খুব ভালো লাগলো।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬

মাকসুদ আলম মিলন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.