নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেখানে সত্য-সুন্দর আধুনিকত্ব, সেখানেই সুবর্ণ আদিত্য।

কবি সুবর্ণ আদিত্য

চেয়েছিলাম আজন্ম সন্ন্যাসী হতে, হতে চেয়েছিলাম নির্জন দ্বীপ। কী হতে পারবো কিংবা পেরেছি, জানিনা, তবে মা বলেন আমি নাকি কোন কালেই মানুষ হবো না। হ্যাঁ, মঞ্চনাটক করি, গল্প-কবিতা পড়ি-লিখি আর পেশায় টেলিভিশন সাংবাদিক। আত্নার খোরাক নানা ভাষার সাহিত্য চর্চা আর বিচিত্র ধরনের বই সংগ্রহ, ম্যূভি দেখা অডিও কবিতা আর রবীন্দ্র সঙ্গীত।

কবি সুবর্ণ আদিত্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প "রক্তস্রোত"

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

জোসনা আজ ঘুমিয়ে পড়েছিল অনেক আগেই। ঘুমিয়ে-ঘুমিয়েই স্বপ্ন দেখছিলো জোসনা। যেন স্বপ্নপরীরা আলোকরশ্নি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে গোলপাতা বাঁধানো এই ছোট্ট ঘরটি। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে আগাগোড়া মোড়ানো একটি স্বচ্ছল সংসার। ওর স্বামী এখন আগের মতো মারধোর করেনা, রাতে মাতাল হয়ে ঘরে আসেনা। ৩ বছরের ছোট্ট ছেলে বিলুকে কোলে নিয়ে আদরও করে। রোজই কাজে যায়। ফিরে এসে আবার ঘরের টুকিটাকি কাজও করে। আর রাতে বিছানায় শুয়ে পান চিবোতে চিবোতে পুরোনো দিনের গল্প করে। আদর করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখে, ভীষন আবেগী কলিম গাজি বিলুর মতো কোরে মুখ গোজে জোসনার বুকে। জোসনার চোখে সুখের জল আসে, ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদে। এ ঘটনা স্বপ্ন নাকি সত্যি বোঝার চেষ্টা করতেই গগন বিদারী শব্দে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল। শব্দের চেয়েও বিকট চিতকার করে জোসনার কোমর তাক করে সজোরে লাথি মারল কলিম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চুলের মুঠি ধরে ছুঁড়ে ফ্যালে দরজার কাছে। গজরাতে গজরাতে বলে, ম্যায়া ছাওয়াল এত্তো ঘুম কিসের! বুকোত অতো ঢেউ ফ্যালায়া কোন রাজ্যে হারায়ে গেছিস! স্বর্গ! স্বর্গে নাচোন-কোদন হচ্চে! তর নাচের গুষ্টি সাফ করব আজ। বিলু এতোক্ষন চুপ ছিলো। মায়ের ঠোঁট বেয়ে রক্তের ফোটা দেখে কান্না জুড়ে দিল। কষে একটা চড় মারল বিলুর গালে। বিলু কান্না না কোরে আশ্চর্যরকম ভাবে থেমে গেল, কোন আওয়াজ নেই কিন্তুু টলটল চোখ বেয়ে মুক্তোর দানার মতো নোনা জল ঝড়ছে। জোসনা কিছু মেলাতে পারছেনা, শুধু ফ্যাল-ফ্যাল কোরে তাকিয়ে থাকলো। এটা যে স্বপ্ন নয় সেটা জোসনা জানে। অন্যদিন জোসনাও চিতকার চেচামেচি করে, কিন্তুু আজ কোন টু শব্দও করলো না। কলিম গাজি কিছুটা আশ্চর্য হলো। ভেবেছিলো জোসনাও তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবে। কিন্তু জোসনার চোখে এখনো স্বপ্নের রেশ। দরজার পাশে শালের খুটিতে দু’পা ছড়িয়ে ঠেস দিয়ে বসে আছে। উসকো খুসকো চুলগুলো এলোমেলো, বুক থেকে আঁচলটা সরে গিয়ে নি:শ্বাসের সাথে কেঁপে-কেঁপে দুলছে। জোসনার এমন অদ্ভুত শ্রী দেখে কলিম গাজি হাতে থাকা বাংলা মদের বোতলটা আছাড় দিয়ে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। বোটকা একটা গন্ধে ছেয়ে গেল ঘর। মেঝেতে মদ ভাসছে।
এ রাতে আর বাড়ি ফিরলোনা কলিম গাজি। সরাফত মন্ডলের বাড়ী থেকে চোরাই এক বোতল ইন্ডিয়ান মদ নিয়ে সোজা নৌকায় ঢুকলো। কলিমের আয়ের একমাত্র উতস এই নৌকা। সে হোক মাছ ধরা কিংবা সুন্দরবনের জ্বালানী কাঠ কাটা। এমন কি মৌমাছির চাক কেটে মধু আনতে গেলেও এই নৌকাই লাগে সবার আগে। আজ মেজাজটা বড়ই তিরিক্ষি। আজ মাছ ধরার রাত কিন্তুু মাছ ধরতে পারছেনা। মাছগুলায়ও যেন মাতাল হয়ে আছে। ওদিকে বড় নদীতে তেলের ট্যাংকার ডুবে গেছে গত ৩/৪ দিন হলো। পানির উপর তেল ভাসতে-ভাসতে ছোট শাখা নদীও ছয়লাব। জোয়ারের সময় বনের ভেতরেও ঢুকে যাচ্ছ্।ে এখন এটা নিয়েই মহা ঝামেলায় আছে কলিম গাজি।
একা-একা চিতকার করে তেলের জাহাজের মালিককে গালি দেয়। ঢকঢক করে কয়েক বার মদ গিলে বোতলটা নদীতে ছুঁড়ে মারে। তেল আর মদ এখন একসাথে ভাসে নদীতে। দুম করে ঝাপিয়ে পড়ে নদীতে। টান-টান পিটানো দানবীয় কলিমের শরীরটা পানিতে দোলে। সাঁতরাতে সাঁতরাতে নিস্তেজ দেহটা ডুবে যেতে যেতে কয়েক ঢোক তেল আর মদ মিশ্রিত পানি খায়। এখন যেন কলিম গাজির জীবন মাছেদের জীবন হয়ে যায়। কিংবা ডলফিন, হাঙ্গর লাল কাঁকড়ার মতো অনুভূতি হয়। কলিম আর সাঁতার কাটতে পারেনা, ধীরে-ধীরে ডুবে যায়। কাঁকড়ার মতো চিংড়ির মতো কাঁদা আঁকড়ে ধরে, সেখানেও তেল। তেল খেয়ে মরে যাওয়া মাছেদের মতো সেও ভেসে ওঠে। তেলের উপর ভাসতে থাকে রঙবেরং-এর অসংখ্য মাছ, ডলফিন আর কলিম। কেউ আর মাছ ধরে না, চিল শকুন বকরাও এ মাছ খায়না। তেল চুপচুপে এ নরমানুষের মাংসের গন্ধে বাঘও পালিয়ে বাঁচে।
জোসনার স্বপ্নও ভেসে আছে শ্যাতসেথে ঘরের মেঝেতে মদের উপর রক্তের উপর। স্বপ্নপরীরা জোসনাকে একফালি সুখ দিয়েছিলো। তিমির আঁধারে স্বপ্ন ছোঁয়া সুখের সাথে কলিমের লাথির আঘাতে কখন যে পাজঁরে বিধেঁ গিয়েছিল লোহার পেরেক, যা স্তব্ধ করেদিলো পৃথিবী জোড়া স্বপ্নসাধ। রক্তের স্রোতে ভেসে গিয়েছিলো আরেক পৃথিবী নদী। একটা কথাও বলতে পারেনী জোসনা; না স্বামীকে, না সন্তান বিলুকে। অথচ রক্তের ঘ্রানে ক্ষুধার্ত বাঘ হানা দিল জোসনার গোলপাতার ঘরে। নিরুপায় জোসনার চোখ বড় হয়ে এলো। কাতর মায়ের চাহুনী ভ্রক্ষেপ করেনী বাঘ। মরনাপন্ন জোসনার চোখের সামনেই বিলুর রক্তস্রোত বয়ে গেল। হয়তোবা এ স্রোত গিয়ে ঠেকবে নদীতে যেখানে তেলের উপর ভাসছে কলিম গাজি....
***শেষ***
২৪.১২.১৪










মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.