নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

কাইকর

ফিল্মমেকার/নাট্যকার, গল্পকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া। ।এক পৃথিবী লিখতে চাই।Facebook/Abdullah AL Mamun(কাইকর)

কাইকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোল্ডেন এ প্লাস(ছোট গল্প)

০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬




আর কিছুদিন পর আমার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। ছাত্রী হিসেবে তুখোড় ছিলাম। স্কুলের সব শিক্ষক থেকে শুরু করে এলাকার সবাই জানত আমি এমনিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাবো। ভাগ্য বলে যে একটা রীতি কথা আছে সেটাও তারা ভুলে গিয়েছিল। তারা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে আমার রেজাল্টের জন্য। আমি খুব হাসিখুশি মেয়ে। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে অনেক ভালোবাসি। অবসর সময়ে ছবি আঁকি। এলাকার সবাই একটা ইনোসেন্ট আর ভালো ছাত্রী হিসেবে আমাকে চিনত। আর আমি এটার যোগ্য ছিলাম।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। কাইকর ছেলেটা আমাকে ভালবাসে। দু'বছর হলো আমার পিছুপিছু ঘুরছে। তবে কখনো আমি সাড়া দেয়নি। স্কুল শেষে আমার পিছু নিত। ছেলেটা অনেক ভালবেসে ফেলেছিল আমাকে। রোজ বিকেলে গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের বাড়ির সামনে। এলাকার সবাই বিষয়টা খেয়াল করতো। কিন্তু কাইকরের বাবা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলত না। সাথে আমাকে সবাই ভালো জানতো।

সবাই আমাকে নিয়ে অনেক আশা করলেও, আমি নিজেই নিরাশায় ভুগছিলাম! আমার বড় ধরনের একটা রোগ ধরা পড়েছে! এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবার আগে বাবাকে জানায় বিষয়টা কিন্তু বাবা কোন প্রকার ডাক্তারি পরামর্শ নেয়নি। সে আরো রাগান্বিত হয়ে আমাকে বলেছিল," বাহানা বাদ দিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা কর। ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া কর এমনিতেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বাবা খুব রাগী তাই মুখের সামনে আর কিছু বলতে পারলাম না। পান থেকে চুন খসলেই গায়ে হাত তুলতো। তাই পরীক্ষার আগে আর ভয়ে বলিনি। রোজ বিকেলে পুকুর পাড়ে বসে ঢেউয়ের খেলা দেখি। একটু তীব্র বাতাস বইলেই ঢেউগুলো একে অন্যের উপরে উপচে পড়তো স্বার্থপরের মত। হঠাৎ করে সবকিছু নৈঃশব্দে পরিণত হলো। তীব্র বাতাস মৃদু বাতাসে পরিণত হলো। পুকুরের পানি ঘুমিয়ে পড়ল। পুকুরের ঘোলা পানিতে গাছের সারির ছায়া দেখে অনেক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম। মনে মনে মনকে জিজ্ঞেস করলাম, " জীবন এমন কেন? এত রং পাল্টায় কেন? এত স্বার্থপর কেন? ভিতরে ভিতরে ঐ রোগ নামক শত্রুকে নিয়ে ভুগছি আর রেজাল্টের চিন্তা নিয়ে সারাদিন আনমনা হয়ে থাকি।

এক বিকেলে কাইকর। সবার চোখের সামনে আমার হাত ধরে ইংরেজি স্টাইলে আমাকে প্রপোজ করে বসল। আমি নিরীহ মেয়ের মতো মুখ চেপে ওখান থেকে বিদায় নেই। এলাকার সবার চোখে পড়ে বিষয়টা। হয়তো এটাই সবচেয়ে ভুল ছিল আমার। এই সামান্য একটা তুচ্ছ ব্যাপারটা এলাকার সবাই বড় বানিয়ে ফেললো। কেউ কেউ তো আগ বাড়িয়ে বলা শুরু করে দিল," মেয়েটাকে যত ভালো মনে করেছি আসলে ততটা ভাল না। ভিতরে ভিতরে ঠিকই মধু খায়। কথাগুলো আমার কানে এসে বাড়ি খাচ্ছিল। নিজেকে খুব পাপী মনে করছিলাম। পাশে থাকা মানুষগুলো হলুদ দাঁত বের করে শয়তানি হাসি হাসল কিছুক্ষন। হাসিগুলোও আমার কানে এসে বাড়ি খাচ্ছিল। মনে হচ্ছে মহা বড় পাপ করে ফেলেছি আমি। বাঙালি ভালো কথা কে কুকথা বানিয়ে বাতাসের সাথে মিশিয়ে দিতে পারে ভালো। বিষয়টা আমার বাবার কান অব্দি যায়। হয়তো দুদিন পর মেয়ের রেজাল্ট দিবে বলে ভিতরে থাকা রাগটাকে মনের মধ্যে পুষে রাখলো।

আজ একটু আগে আমার রেজাল্ট বের হয়েছে। সবার আশাকে নিরাশা বানিয়ে আমি দ্বিগুণ রেজাল্ট খারাপ করেছি। গোল্ডেন এ প্লাস তো দূরে থাক! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবার মত রেজাল্ট হয়নি। আমি আগে থেকেই জানতাম রেজাল্ট অনেক খারাপ হবে। প্রতিদিনের মত আজকেও নিশ্চুপ হয়ে বসে রয়েছি। ভিতরে থাকা রোগটা দিনে দিনে শেষ করে দিচ্ছে আমাকে। বাবা বাসায় এসেই হাতের সামনে যে বড় বেতের লাঠিটা পড়েছিল তা দিয়েই খুব করে মনের পুষে রাখা রাগটাকে মেটাচ্ছিল। মা বাধা দেয়নি! মার পাশ থেকে বলছিল," নষ্টা মেয়ে। অন্য পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়ালে কি রেজাল্ট ভাল হবে! নষ্টা মেয়ে! তোর এই মুখ দেখতে চাই না আর আমি। বাবা শরিলে যতক্ষণ শক্তি ছিল আমাকে ততক্ষণ গরু পেটা করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মা চুলের মুঠি ধরে গালের এপাশে-ওপাশে কোষে-কোষে থাপ্পর দিয়ে বলল," আজ থেকে সব কিছু বন্ধ তোর। নষ্টা মেয়ে, কোথাকার কেন যে এমন মেয়ে পেটে ধরেছিলাম। আমি মায়ের মুখে এই কথা শুনে নিজেকে খুব পাপী মনে করলাম। চোখ থেকে আড়াই ফোটা জল ফেলে রুমের মধ্যে ঢুকে খিল মেরে দিলাম।

এভাবে তিন দিন কেটে যায়। কারো খোঁজ নেবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি যে তাদের মেয়ে সেটাও ভুলে গেছে তারা। তাদের রেজাল্ট দরকার, আমাকে না! ভিতরে থাকা ওই রোগ নামক ভাইরাসটা আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হয়তো তিনদিন যাবৎ কিছু খায় না হয় এজন্য। চতুর্থ দিন না খাওয়া অবস্থায় তৃষ্ণায় যখন আমার যায় যায় অবস্থা, আমার বাবার তখন হুশ ফেরে। সে ডাক্তারকে ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। অনেক ধাক্কাধাক্কি করে রুমের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, জিরো পাওয়ারের সবুজ রঙের ডিম লাইট জ্বলছে রুমের মধ্যে। তারা স্তব্ধ হয়ে পুরো ঘরের চারদিকে তাকিয়ে থাকে। লিপিস্টিক দিয়ে চার দেয়ালের প্রতিটা কোণায় বড় বড় করে় লেখা, এই সমাজ কে আমি ঘৃণা করি। আমার বাবা একজন সুবিধাবাদী অমানুষ। এই সমাজের মুখের উপর একদলা ঘেন্না মাখা থুতু মেরে গেলাম।

আমি তখনো দেয়ালের মাঝে পাগলের মত লিখতে ছিলাম। আম্মা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। বাবা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে আমাকে বলে, মাগো দুইহাত জোড় করে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেছি। যা শাস্তি দেবার তুমি আমাকে দিও।" বাবাকে খুব বলতে মন চাইতে ছিল," আমি নির্দোষ ছিলাম, আমি তোমাদের নষ্টা মেয়ে না।আমি কোন পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করিনি। আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে ভিতরে থাকা ওই ভাইরাসটার জন্য। যা তোমরা কখনও গুরুত্বের সাথে দেখনি। শুধু গোল্ডেন এ প্লাস চেয়েছ। কিন্তু ভিতরে থাকা এই জমাট কষ্টগুলো বলতে দিল না আমাকে ভাইরাসটা। আমি এই সমাজের মুখের উপর একদলা থুতু ফেলে, মায়ের নষ্টা মেয়ে হয়েই বাবার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম।

। " ভালো থেকো গোল্ডেন এ প্লাস"।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: রি পোষ্ট.....ভালো। এ গল্পটা শুরুর দিকে দিয়েছিলেন।

০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

কাইকর বলেছেন: হুম।তখন প্রথম পাতায় ছিলাম না

২| ০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: এই গল্পটা ভালো লিখেছেন! এমন গল্প আরও লিখুন।

০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬

কাইকর বলেছেন: অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

উদাস মাঝি বলেছেন: আগেই পড়েছিলাম । এরকম গল্প কিন্ত ভাল লাগে ।

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১০:২১

কাইকর বলেছেন: অনুপ্রেরণা। লেখার চেষ্টা করবো

৪| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: আহারে----

আজকের এই দিনে , ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে , মাত্র ৩১৩ জন মুসলিম ১০০০ বিধর্মীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হন। আহা! সেই মুসলিম কোথায়???

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১০:২৩

কাইকর বলেছেন: তা ঠিক বলেছেন।কিন্তু এই গল্পের সাথে এই মন্তব্য কেন???

৫| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আরে, এটাতো একবার পড়েছি।


শুভ কামনা রইল।

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১০:২২

কাইকর বলেছেন: প্রথম পাতায় আসার আগে দিয়েছিলাম। তাই আবারো দিলাম

৬| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

মৌরি হক দোলা বলেছেন: গল্পের বর্ণনা খুব ভালো লেগেছে :)

শুভকামনা :) :)

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১০:২২

কাইকর বলেছেন: অনুপ্রেরণা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.