নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

কাইকর

ফিল্মমেকার/নাট্যকার, গল্পকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া। ।এক পৃথিবী লিখতে চাই।Facebook/Abdullah AL Mamun(কাইকর)

কাইকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জান্নাত (ছোট গল্প)

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০


আমার নাম কাইকর। খুব ছোটবেলা থেকে অন্যের পাছায় কাচি লাগাইতে ভালবাসতাম। স্কুল জীবনে টিচার থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব আমাকে খাজা বলে ডাকত। আমি ছিলাম ব্রিটিশদের মত ফাজিল। যাকে বলা হয়, অন্যের পাছায়় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া। উস্কোখুস্কো জমাট বাঁধা চুল ও সাদা পোশাকে আফ্রিকান রংমাখা ড্রেসে যেতাম স্কুলে। আমার কাছে ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু খানিকটা একই মনে হতো। ছেলে বন্ধুকে যে ভাষায় গালি দিতাম, মেয়ে বন্ধু কেউ ঠিক একই ভাষায় গালি দিতাম।

পড়াশোনায় তেমন জুড়ি ছিল না। বলা যায় মাঝ বেঞ্চের ছাত্র। প্রতিদিন বৈকালিক আড্ডা দিতাম শাওনদের বাড়ির ছাদে। চার বন্ধু লুঙ্গি কুচি মেরে বসে তাস খেলার সাথে সিসায় দম দিতাম একমনে। আমাদের আড্ডা দেখতে ছাদের পাশের বুড়ো বড়ই গাছটায় কাক ভিড় জমাতো। কাকের কা কা শব্দের সাথে মিশে যেত এক ঘ্রাণ।

রোজ সকালে সূর্যের আলো গায়ে মেখে ঘুম থেকে উঠা। আদামাদি পুরনো স্কুল ব্যাগ কোনরকম কাঁধে বাধিয়ে দৌড় দিতাম কলেজে। রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা মহিলা কুকুরের পাছায় হাত দিয়ে দিতাম দৌড়। আহা....কি আনন্দ আকাশে, বাতাসে মনেপ্রাণে।

বন্ধু রুবেলের গার্লফ্রেন্ড ছিল টুম্পা। প্রতিদিন গোধূলি লগনে শাওনদের বাসার ছাদের কার্নিশে বসে কিছুমিছু প্রেম করত দুজন। তাস খেলার সাথে বাকি বন্ধুরা মজা নিতাম খুব করে ওদের দুজনের সাথে। আমার আবার ওইসব মিছেমিছি মনকষাকষি প্রেম-ভালোবাসায় জুড়ি নেই। বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা ও রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা মহিলা কুকুরের পাছায় হাত দেওয়া নীছক প্রেম- ভালবাসার চাইতে কম কীসে!!

এক বৈকালিক সন্ধ্যায় আসর জমিয়েছিলাম খুব করে শাওনদের বাড়ির ছাদে। আমি বুড়ো বরই গাছে থাকা কাকগুলোকে পাছা দেখাচ্ছি উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে। এতো কা কা কিসের। দেখ এবার বোকা শালারা আমার গোলগাল কালো পাছা। বন্ধুরা আমার লীলা দেখে সবকটি হলুদ দাঁত বের করে হাসছিল। হঠাৎ করে টুম্পা খোলা থেকে সবেমাত্র ভাপওঠা ভাপা পিঠার মত দেখতে একটা মেয়েকে নিয়ে আসলো ছাদে। টুম্পার নাকী কাজিন। কার কাজিন আর ফাজিন ওসবে আমার যায় আসেনা। কুকুরের পাছায় হাত দেওয়া অভ্যেস এক মহান পুরুষ আমি। মুখ চেগিয়ে মেয়েটাকে বললাম, ওই মাইয়া এইহানে কী। যা যা এইহান থাইকা নাম। টুম্পা গলা খিকরি দিয়ে বলল, জান্নাত তুই কিছু মনে করিস না। কাইকর একটু পাগল কিসিমের৷ টুম্পার কথা শুনে আমার রান হাটুর রাগ মাথায় উঠে গেল। আমি আরো বেশী উলটপালট কথা বলার আগেই পাশ থেকে রুবেল নরম গলায় বলল, জান্নাত আমার শালীরে বাইনচোদ। মাথা ঠান্ডা কর। আমি ডিপজলের এক হাসি হেসে বললাম, তাইলে তো ভালোই। টুম্পারে ছাদ থাইকা নামাই দে। তোর শালীরে নিয়া একটু ফুটবল খেলি। জান্নাত এসব কথা শুনে এক নিমিষে ঘেমে উঠলো। রুবেল পাশ থেকে, এই শালারপুত চুপ কর বলে চেচিয়ে উঠলো।

মাস তিনেক পর কেমন যেন আচমকা পরিবর্তন হয়ে গেলাম। বিশুদ্ধ বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ। চিরযৌবনা চাঁদের আলো গায়ে মেখে কোন রমণীর পাশে বসাটা অনুভব করলাম। কোন মেয়ের সাথে কিচুমিচু প্রেম হলেও করতে হবে আমায় এমটা ভাবলাম। আকাশে বাতাসে শরীরে ভাব ওঠা প্রেমের গন্ধ ছেড়ে দিলাম চাঁদের বুড়িকে সাক্ষী রেখে।

এক বিকেলে রুবেল ও টুম্পা আমাকে কষে-টষে বেঁধে নিয়ে গেল ছাদের উপর। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুবেলের শালী জান্নাত আমাকে বলিউড স্টাইলে প্রপোজ করে বসে। মন সাগরে তখন আমার প্রেমের ঢেউ। তাকে ফিরিয়ে দেই কিভাবে। মনে হয় বিশুদ্ধ বাতাসে ছেড়ে দেওয়া আমার প্রেম বাতাস তার গায়ে লেগেছিল। যাকে বলা হয় প্রেম বাতাস।

প্রেমে পড়লে মানুষ পরিবর্তন হয় শুনেছি। কিন্তু আমার মত জাত পাগল পরিবর্তন হয়ে যাবো ভাবিনি। তার মন সাগরে ডুব দিয়ে কুকুরের পাছায় হাত দেওয়া তো দূরে থাক তার চার সীমানাতেও যাইনি। প্রেমে এত সুখ আগে জানলে জন্মের তিন দিন পর ওই যে কোন ভাবে একটা প্রেম করার চেষ্টা করতাম।

জান্নাত দেখতে তিলের মত সুন্দরী। ভাপ ওঠা ভাপা পিঠার মত দিব্বি দেখতে। আমাদের সাপ্তাহিক মুঠোফোনে একবার করে কথা হতো তাছাড়া টুকটাক মেসেজে। জান্নাত এক রাতে মুঠোফোনে প্রমিজ করে বলে, সে নাকি তার শরীরের গন্ধ দিয়ে আমাকে কফি বানিয়ে খাওয়াবে। এমন পাগল কিসিমের মানুষকে এমন ভালবাসবে কে জানত। মাঝে মাঝে মন খুশিতে ধুলো জমে থাকা মুঠোফোনে চুমু খায় তাকে ভেবে।একদিন তারাবী নামাজ না পরে তার কল ধরেছিলাম দেখে সে কি রাগ। রাগলে জান্নাত আমাকে তুমি করে শুধায় তাছাড়া আপনি। আমাদের চাচাছোলা ভালবাসা ভালোই জমে উঠলো।

ঈদের সাত দিন আগে হঠাৎ করে জান্নাত আমাকে ফোন দিয়ে বলল, কাইকর সাহেব। আমি বিয়ে খেতে কুমিল্লা যাবো কিছুদিনের জন্য।তাই আপনার সাথে মেসেজ ও ভয়েস কলে কথা হবে না কিছুদিন। আপুনি একটু মানিয়ে নিয়েন কিছুদিনের জন্য। আমি নরম গলায় উত্তর দিলাম,আচ্ছা। সে একটু গরম গলায় বলল, আর সাহেব শুনেন ভুলেও যদি সিগারেট খান। তাইলে খবর করে ছাড়বো। ভাল থাকবেন।

কোনভাবে ঈদ পার করলাম। কথা বলতে না পারায় বুকের মধ্যে শ্বাস কষ্ট শুরু হতে লাগল। প্রেম বুঝি এমনই হয়। খুব রাগ হলো জান্নাতের উপর। কিছু দিনের কথা বলে আর কোন খবর নেই। দিন পনেরো পরে রুবেলকে ফোন দিয়ে রাগী গলায় বললাম, জান্নাত কি আমার সাথে রিলেশন রাখবে না?ভালো না লাগলে না করতে বল। বালের এইসব কাহিনী ভাল লাগেনা। রুবেল ব্যাপারটা দেখবে বলে ফোনটা রেখে দিল। পরে টুম্পাকে কল দিয়ে যাতা বলে ফোন রেখে দেই।

সাতসকালে রুবেল কল দিয়ে বলল, দোস্ত আজ হাসপাতলে যাব। রেডি হয়ে আয় জলদি। আমি বদমাইশি একটা হাসি দিয়ে বললাম, শালা পেগনেট করে ফেলছিস নাকি টুম্পারে। আইতাছি।
রুবেল ও আমি হাসপাতালের নিচ থেকে করা করে দুইটা রং চা খেয়ে ভিতরে ঢুকলাম। হাসপাতালে ঢুকতেই দেখি টুম্পা। ভাবলাম বোকা শালা বুঝি সত্যিই কাম দাগাইছে। টুম্পার মন ভার। আরেকটু ভিতরে ঢুকতেই দেখি জান্নাতে আব্বু বসে আছে। জান্নাতের বাবাকে দেখে মনডায় টান দিল। পাশ থেকে রুবেল পিঠের উপর হাত রেখে কেবিনের সামনে নিয়ে গেল। কেবিনের পাশে বসে জান্নাতের আম্মু অঝোরে কান্না করছে। কেবিনে শুয়ে আছে জান্নাতের ভাই সাগর। বাইক এক্সিডেন্ট করে হাত-পা ভেঙে ফেলেছে। জান্নাতের কথা জিজ্ঞেস করতেই রুবেল আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। কুমিল্লা যাবার পথে বাইক এক্সিডেন্টে সাগর বেচে গেলেও জান্নাত নাকি ফেরেনি। এক আকাশ ভালোবাসা নাকি রাস্তার ধূলিকণার সাথে মিশে গেছে। শুনে বুকের মধ্যে মোচড় দেয়। খুব কষ্ট পাবো দেখে রুবেল ও টুম্পা এতদিন গোপন রেখেছিল বিষয়টা।

এখন প্রায় রাতে মিছেমিছি মুঠোফোনে কথা বলি জান্নাতের সাথে। মাঝেমধ্যে ধুলো জমে থাকা মুঠোফোনে চুমু খায় তাকে ভেবে। কেউ বুঝবে না এই কষ্ট। মন শহরের কষ্ট। বুকের মধ্যে পাথর ভাঙার শব্দ কেউ শুনে না। বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট নিয়ে এখনো চলি,চলছি। বুকের কষ্ট, মনের কষ্ট, বাহিরের কষ্ট মিলেমিশে এখন একাকার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১০

এ.এস বাশার বলেছেন: বেশ আরাম লাগলো ........মজা এবং ট্রািজিডি দুটোই অসাধারন লেগেছে....

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮

কাইকর বলেছেন: অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ ও ভালবাসা রইলো

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬

রঞ্জন রয় বলেছেন:

এত কষ্ট বুকে নিয়া কেমনি বাঁচবা। :||

যদি তুমিও ওপাড়ে.....

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮

কাইকর বলেছেন: এক বুক কষ্ট। বোকা শহরের কষ্ট।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

ভাইয়ু বলেছেন: আহারে! ভালবাসা বুঝি এমনই হয়.।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:২৩

কাইকর বলেছেন: হুম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.