নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফিল্মমেকার/নাট্যকার, গল্পকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া। ।এক পৃথিবী লিখতে চাই।Facebook/Abdullah AL Mamun(কাইকর)
মা প্রায় সকালবেলা ভাতের সঙ্গে লালশাক মাখিয়ে খাইয়ে দেয় আমাকে। স্কুলে যাবার আগে লাল চিকন চিরুনি দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দেয়। দেখতে আমাকে দিব্বি 'তেরেনাম' মুভির সালমান খানের মতো দেখা যায়। ইচ্ছে করেই স্কুলের গেট দিয়ে না ঢুকে লাফ দিয়ে দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করি। মনে মনে ভাবি হয়তো সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দুই ফুট উঁচু জায়গা থেকে লাফ দিয়েও ভাব দেখায় যেন পাহাড় থেকে লাফ দিয়েছি।
বাবা অটো ড্রাইভার। সারাদিনে যা কামাই তা দিয়ে সাংসারিক যাবতীয় জিনিস কিনেও আমার জন্য বাজার থেকে কিচুমিচু কিনে নিয়ে আসে। তাদের সংসারের সুখের ভেলাটা আমি। মা জাদুকরী ভাবে জাদুকরী মাটির বক্সে প্রতিদিন দু-চার টাকা করে রেখে জমায়। মাস ছয়েক পরপর জাদুকরী বক্স ভেঙ্গে যা পায় তা দিয়ে নতুন কোন ড্রেস কিনে দেয় আমাকে মা।
প্রতিদিনের মতো আজকেও স্কুলে যায়। তবে, অন্য দিনের চাইতে ভাবটা আজকে একটু বেশি। আব্বায় বাজার থেকে পাইসের মত সাদা দেখতে নতুন স্কুল ড্রেস কিনে দিয়েছে। ভাবটা তাই আজ শাহরুখ খানের মতো। আজকে ধুম-থ্রি'র আমির খানের মতো দেয়াল থেকে লাফায়। পায়ের গোড়ালি মচকে গেছে বুঝতে পেরেও কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব ধরে ক্লাসের দিকে আগায়। তবে, ঠিকই টের পেয়ে যায় আমার একমাত্র শত্রু সেঁজুতি। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। দেখতে জাতি লাউ গাছের ডগার মত। মাত্রাতিরিক্ত আইসক্রীম খাবার ফলে দাঁতে পোকা দল বেধেছে। আমি সেজুঁতিকে দাত পোকা, দাত পোকা বলে সবার সামনে প্রায় ক্ষেপায়। একদিন তো কান্নাই করে দিয়েছিলো।
আমার এই নাজেহাল অবস্থা দেখে ক্লাসের সবার সামনে সেঁজুতি মুখ ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলে, পা বেকা শাহরুখ খান, পা বে কা শাহরুখ খান। রাগ সহ্য না করতে পেরে সেজুঁতির নাক টেনে দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে সোজা কালু মামার টং দোকানে যাই। দোকানের পিছনে ময়লা নোংরা যুক্ত জাইগায় দাড়িয়ে জীবনের প্রথম কাঁপা হাতে সিগারেটে টান দেই। সেঁজুতির উপর খুব অভিমান করে সিগারেট টাই দেই। আর আমার মত সুন্দর পোলা এই এলাকায় একটাও আছে নাকি। আমাকে বলে, পা বে কা শাহরুখ খান। মনকষ্টে সালমান খানের মতো টান মারতেই কাশতে থাকি। আমি যেই টান দেই এইটা হইলো " ভু "টান। ভু টান অর্থ ( মুখের মধ্যে নিয়ে বের করে দেওয়া) সালমান খান বোধহয় সুখ টান দেয়।
পরদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাসার সামনে লেবু গাছের গোড়ার অংশটা অদ্ভুত ভাবে রাঙিয়ে আছে। পুরো গ্রাম কেমন একটা গুমোট ভাব। আকাশের বেশ উপর দিয়ে কয়েকটা পাখি তাড়াহুড়া করে অপরাধী ভঙ্গিতে কোথায় যেন উড়ে চলে যাচ্ছে! হঠাৎ বাতাসে আমার চুলগুলো উঠতে থাকে। ঝড় শুরু হয়ে গেছে ভাবতে ভাবতে আমি খালি পায়ে দৌঁড়াতে থাকি মায়ের রুমের দিকে। ধারালো কিসে যেন আমার পা কেটে যায়। প্রাকৃতিক আলতা পরা এক উদ্ভান্ত বালকের আকুতি মাখা চোখ দেখতে মা সেদিন বেঁচে ছিলনা। বাবা মুখ বুজে কান্না করছে এক কোণায় বসে। চারিদিকে বিষন্ন বাতাসের তোড়জোড়।
দেখতে দেখতে তের বছর পার হয়ে গেল। আকাশের চাঁদটা দেখছি খুব মন দিয়ে পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে। গভীর রাত। চারিদিক নিস্তব্ধ। মিহি একটা বাতাস শরীরের এখানে সেখানে চুমু খেয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিল। রঙিন চাঁদের আলোয় আজও আমি মাকে খুঁজি। আমার মাকে খুঁজি।
আমি বিশ্বাস করি, একদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবো সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পরম নিশ্চিন্তে মা আমাকে লাল শাক দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। বাবা জানালার পাশে বসে রবীন্দ্র সংগীত গাইছে। দুপুরে ঝোলা মাংসের সাথে খিচুড়ি খাবো। আজ আমাদের কোথাও যাবার তাড়া নাই।
০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪৩
কাইকর বলেছেন: মন শহরের কষ্ট।
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০২
স্রাঞ্জি সে বলেছেন:
পড়ব না। মন্তব্যও করবোনা।
০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪
কাইকর বলেছেন: কেন ভাই রাগ করেছেন??
৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: কাইকর গল্প ভালো হয়েছে।
০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫
কাইকর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১১
এস.এম এরফান বলেছেন: আর আমি বাবাকে খুঁজি।