নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার জীবনের যে সত্য কথাগুলো কেউ জানে না কিংবা কেউ মানে না সেগুলোই আপনার সম্পদ

মানবানল

Do not Dismiss Your Dreams, to be without dreams is to be without hope To be without hope is to be, without Purpose...

মানবানল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রফেসর ড. জামাল নজরুল : জন্মদিন-মৃত্যুদিন শুধু আসে যায়, কেউ রাখে না খবর!

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

আজ থেকে প্রায় বত্রিশ বছর অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে সোয়া লাখ টাকা বেতনের চাকুরি; কেমব্রিজ ভার্সিটির অধ্যাপক, সম্মানের লেভেলটা বুঝতে পারছেন তো? এই চাকুরি অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার চাকুরিতে। ভাবা যায় কখনও?
আপনি কিংবা আমি হলে এই লোভনীয় সুযোগ হাতছাড়া করতে পারতাম? কেনো ফিরে এসেছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি নিজ দেশকে ভালোবাসি। এজন্য এখানে চলে এসেছি।আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি এখান থেকে নিতে আসিনি, দিতে এসেছি।
স্টিফেন হকিং এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা জীবিত বিজ্ঞানী, যার চরিত্রের ওপর তৈরি করা সিনেমা ‘থিওরি অব এভ্রিথিং’ সমগ্র বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়। এই মানুষটা ছিলেন ছাত্রজীবনে স্টিফেন হকিং এর বন্ধু আর রুমমেট। লেভেলটা কতো হাই বুঝতে পারছেন তো?
১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকে প্রকাশ করেন ‘আল্টিমেট ফেইট অব দ্যা ইউনিভার্স’। তাবৎ দুনিয়ার রথি-মহারথীদের দৃষ্টি একদিকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন, ওই একটিমাত্র এক বই দিয়ে। তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই পদার্থবিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ের সুচনা হয়। তাঁর অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী ওয়েইনবার্গ। তিনি বলেন, ‘‘we are particularly indebted to Jamal Islam, a physicist colleague now living in Bangladesh.For an early draft of his 1977 paper which started us thinking about the remote future.”
ভাবতে পারছেন? কতো উঁচুমাপের মানুষ ছিলেন তিনি? নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘এশিয়ার মধ্যে আমার পরে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পায়, তবে সে হবে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম’ এই মানুষটার মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ১৬ মার্চ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর জন্মদিন। ছিল না কোনো স্মরণ, ছিল না তাঁর কাজের ওপর আলোচনাও। আমরা পারিও বটে। এভাবেই জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন আসে-যায় কেউ খবরও রাখে না তাঁর!
যে জাতি জ্ঞানীদের সম্মান দিতে জানে না, সেই জাতি খুব দ্রুতই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়-ইতিহাস তো তা-ই বলে! ও হ্যাঁ, এই মানুষটাই কিন্তু সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়; স্যারের স্ত্রী কৌতুক সহকারে প্রায়ই বলতেন, ‘সংসার চালাচ্ছি আমি কিন্তু প্রতিমাসের টাকা উনি আমাকে না দিয়ে গরিবদের বিলিয়ে দেন’। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘প্রকৃত অর্থে যারা দেশকে ভালোবাসে তারা শিক্ষক শিক্ষকের ফিল্ডে,ডাক্তার ডাক্তারি ফিল্ডে, কৃষক কৃষকের ফিল্ডে মনে-প্রাণে কাজ করতে হবে। তখনই প্রকৃত অর্থে দেশকে গড়া যাবে’। এছাড়াও তিনি শিক্ষক থেকে শুরু করে গরিবদের বিভিন্ন বিপদ-আপদে উদারহস্তে সাহায্যে-সহযোগিতা করতেন।
স্যারের চরিত্রের আরেকটি বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করেছে তা হলো, স্যারকে চবি’র ভিসি হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। স্যার প্রতিবারই বলেছিলেন, ‘আমার চা’য়ের কাপ রিসার্চ সেন্টারে, প্রশাসনিক অফিসে নয়’।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনগ্রসরমান বাংলাদেশের মতো দেশে জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। এসব মানব কালে-ভদ্রে শুধু একবারই জন্ম নেন। রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি সব সময় দেশ ও উচ্চশিক্ষা গবেষণার কথা ভাবতেন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের তথাকথিত লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতির মতাদর্শী না হওয়ায় স্যারকে এদেশের সুশীল (!) সমাজ কখনও মূল্য দেননি। তিনি তৎকালীন সময়ের লক্ষ টাকার চাকুরি ছেড়ে দেশ ও নাড়ির টানে ফিরে আসলেও এদেশের সরকারও তাকে মূল্যায়ন করেনি। তার মৃত্যুতে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল শোকে মুহ্যমান, সেখানে আমাদের তথাকথিত বোদ্ধারা শুধুমাত্র পত্র-পত্রিকায় ছোট্র বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছেন। তাঁর গবেষণাধর্মী বিভিন্ন বই পুস্তক,জার্নাল উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তকের প্রধান অংশ। সেখানে আমাদের নতুন প্রজন্ম তা থেকে ক্রমশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত হওয়ার স্বার্থে আমাদের তথা আমাদের প্রজন্মকে ড. জামাল নজরুল ইসলামের মতো ব্যক্তিদের স্মরণ রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. জামাল ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ গণিতবিশারদ ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ চট্টগ্রামে মারা যান।
ভালো থাকবেন স্যার ওপারে, আমাদের এ সম্মান দিতে না পারার অপরাধের মার্জনা পাবো নিশ্চয়ই...?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫

বিজন রয় বলেছেন: শ্রদ্ধা।
+++++

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬

মানবানল বলেছেন: ধন্যবাদ। শ্রদ্ধা অবনত মস্তকে।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮

আমিই মিসির আলী বলেছেন: আসলেই উনি আমাদের গর্ব।
শ্রদ্ধা রইলো তার স্মরনে।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৭

মানবানল বলেছেন: যারা গর্ববোধ করে তাঁকে সম্মান জানানোর কথা, তাদেরই খবর নাই। শ্রদ্ধা নিরন্তর

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

বিপরীত বাক বলেছেন: ১৯৮৫ সালে লক্ষ টাকার বেতনের চাকরি ছেড়ে এই চুর বাটপারের দেশে এসেছিল ?
ব্যাটা তো অাস্ত বেকুব ছিল !!
দেশের অনেক বড় ক্ষতি করেছে লোকটা দেখছি।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৮

মানবানল বলেছেন: এই চোর-বাটপারদের দেশে এসে কি ভুলই না তিনি করেছেন, সেটি ওপারে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন! অনেক বড়ো ক্ষতি করেছেন-হয়তো আপনার দৃষ্টিতে

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১৫

বিপরীত বাক বলেছেন: শুধু আমার দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বাস্তবতার নিরীখেও উনি লস করেছেন দেশের। কারণ -
১* এদেশে গবেষণার মেধা আরও অনেক আছে। ওনার সমকক্ষ না হলেও। কিন্তু সমস্যা হলো গবেষণার ফান্ড ও স্কোপ। যেমন- ধরুন নাসা একটা টপিকের উপর কিছু ফলাফলের জন্যে এদেশের বিজ্ঞানীদের দ্বারা কাজ করাইতে চাইলো। না হয় ধরুন জেট প্রোপালশনের উপরেই। কিন্ত যদি ওরা বলে বসে যে ওই কাজ করার উপযুক্ত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব কি তোমাদের আছে? না।
তাহলে শুধু মেধা দিয়ে কিভাবে কাজ হবে। বড়জোর তত্ত্বীয় বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে।

২* রেমিটেন্সের বিচারেও উনি দেশের ক্ষতি করেছে।
৩* তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের ও ক্ষতি করেছেন। যেমন- উনি যে লেভেলে পৌছেছিলেন অন্য কে উ তো তা পারেনি এদেশে। ওনার উচিৎ ছিল ওখানেই থেকে এদেশ থেকে আরও মেধা ওখানে বসিয়ে দেয়া।

আমাদের ফিজিক্সেও বেশ মেধাবী একজন টিচার ছিল। উনি যখনই কোনদেশে পিএইচডি বা অন্য গবেষণায় নামডাক করতো তখন উনি পুরস্কার হিসেবে টাকা না নিয়ে একটা দামী ইক্যুইপমেন্ট দেশে নিয়ে আসতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের জন্যে।
এইভাবে একক প্রচেষ্টায় উনি বেশ কয়েকটা যন্ত্রপাতি এনেছিল।
যেগুলো হয়তো এই গরীব দেশের গরীব বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক) গুলো সহজে কিনতে পারতো না।

জামাল সাহেব অন্তত এ কাজটা করতে পারতো। দেশের স্বার্থে বিদেশে থাকতে পারতো।

যাহোক, আমরা হলাম একটা হতভাগ্য জাতি।

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৪

মানবানল বলেছেন: আপনার চিন্তার গভীরতার প্রসারতা কামনা করি। আসলেই আমরা হলাম একটি হতভাগ্য জাতি! ধন্যবাদ ভাই (বিপরীত বাক)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.